![কবি জব্বর জসিমের বইয়ের মার্কেটিং](uploads/2024/02/21/1708495534.ron-jae.jpg)
আমরা যারা পেটের দায়ে চাকরি করি, তাদের মাসের শুরুটা কাটে বারবার অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স চেক করতে করতে। অ্যাকাউন্টে বেতন ঢোকার মেসেজ টোন যখন কানে বাজে, তখন ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁর সরোদও বেসুরো মনে হয়। আর এমন একটা শুভ দিনে বউ যদি বইমেলায় যেতে চায়, তখন ‘না’ বলাটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
তো বউয়ের আবদারে এবং বাঙালিয়ানা রক্ষার স্বপ্রণোদিত উদ্যোগে সেদিন অফিস শেষে দুজন বইমেলায় গেলাম। বেশ কিছু স্টল ঘুরে ঘুরে বই পছন্দ করতে না পারলেও আমরা সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছবি তুলে ফোনের মেমোরি কার্ড টইটম্বুর করে ফেললাম।
বউকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে বইমেলার বাউন্ডারি পার হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঝোপের আড়ালে গেলাম জল বিয়োগ করতে। কাজ সেরে ঘুরতেই দেখি মাথায় জট পাকানো এক লোক, মুখে আকর্ণ হাসি।
হেসে বলল, ভাই এদিকে কী মনে করে?
আমি রেগে বললাম, তা দিয়ে আপনার কাজ কী? নিজের কাজে যান।
সে হাসিটা আরও চওড়া করে বলল, দাদো কি বইমেলায় নতুন নাকি?
এতক্ষণে তার কাঁধে চটের ব্যাগ আর অন্য হাতে ধরা ছোরার চকচকে ফলা আমার নজরে এলো। রাগে ফেটে পড়তে গিয়েও মিইয়ে গেলাম।
আমার নরম ভাব দেখে সে ছুরির ফলাটা আরেকটু বের করে ধরল। বিনয় যেন গলে পড়তে লাগল তার চেহারা মোবারক থেকে। বলল, দাদো, আমি কবি জব্বর জসিম। একখানা পাতলা মলাটের বই তার ঝোলা থেকে বের করে বলল, এটা আমার প্রথম বই।
পাশ থেকে একজনকে ডেকে বলল, এই মফিজ কই গেলি? দাদোকে একটা নতুন ব্যাগে বই দে।
অন্ধকারের ভেতর থেকে কবি জব্বর জসিমের সাগরেদ মফিজ একটা চকচকে শপিং ব্যাগে কবিতার বই ধরিয়ে দিল।
এবার কবি আরও বিনীতভাবে হাতের তালু কচলে বলল, ইয়ে মানে দাদো, ৪০০ টাকা হাদিয়া আমার বইয়ের।
বলতে বলতে হাতের তালু কচলানোর ভঙিমায় ছুরিটা শক্ত করে বাগিয়ে ধরল। আমি নিজের অজান্তেই হাত পকেটে ঢুকিয়ে দিলাম। বেতনের নতুন ৫০০ টাকার একটা নোট সুড়সুড় করে বেরিয়ে এলো। সে আমার হাত থেকে নোটটা টান দিয়ে নিয়ে বলল, দাদো আপনার তুলনা হয় না। আমার মতো নতুন আনকোরা একজন কবিকে সম্মান দেখিয়ে আপনি বাড়তি ১০০ টাকা বকশিশ দিলেন। এবার দ্রুত এখান থেকে চলে যান দাদো, আমার আরও কাস্টমার আসছে।
আমার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। ফিরে আসার পর বউ অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার? ওদিকে বৃষ্টি হচ্ছে নাকি?
কলি