![মিশন মেট্রিকুলেশন](uploads/2024/03/19/1710827030.r ja 23.jpg)
আমার দাদা এলাকার প্রথম মেট্রিক পাস ব্যক্তি হওয়ায় ছোট থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল আমিও মেট্রিক পাস করব। তখন আমার ধারণা ছিল দেশের পড়াশোনার সর্বশেষ লেভেল হলো মেট্রিকুলেশন। কিন্তু দশম শ্রেণিতে উঠে দেখলাম মেট্রিকুলেশন তার নাম আকিকা দেওয়া ছাড়াই এসএসসি বানিয়ে ফেলেছে।
দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষার পর স্কুলের পরীক্ষার্থী ব্যাচ হিসেবে সবার কাছে একটু বাড়তি গুরুত্ব পেতাম আমরা। স্যাররা কোচিং ক্লাসের মাধ্যমে স্পেশাল কেয়ার নিচ্ছিলেন। কেয়ার নিচ্ছিলেন আমার মা এবং দাদিও। দাদি প্রতি শুক্রবার মিছরি পড়া এনে আমাকে খাওয়াতেন। তবে পরীক্ষার আগের লাস্ট শুক্রবার বাতাসা কিনে মিলাদ দেবেন বলে নিয়ত করলেন।
আমার মেট্রিক পরীক্ষার প্রধান সুপারভাইজার ছিলেন আমার মা। তার গাইডলাইন মতো সব কিছু করতে হতো। আমার নানা একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়ার কারণে মা খুব কাছ থেকে টিচিং প্রফেশন দেখেছেন। তার সেই দেখতে দেখতে শেখা মেথড আমার ওপর প্রয়োগ করতেন। তার সবচেয়ে নির্দয় মেথড ছিল ভোর রাতে ডেকে তোলা। আমি তাকে অনেক বুঝালাম, পরীক্ষার হলে তিন ঘণ্টা ফাইট দিয়ে একটা সম্মানজনক জিপিএ নিয়ে বের হয়ে আসতে পারব কিন্তু তিনি নির্বিকার। প্রতি রাতেই ৩টার দিকে চুল ধরে টেনে তুলে আমাকে পড়ার টেবিলে বসিয়ে দিতেন।
এভাবে শেষ রাতের ঘুমকাতুরে ঢুলু ঢুলু চোখে আমার পরীক্ষার দিন চলে এল। সকাল সকাল গোসল করে রেডি হয়ে নিলাম। বাড়ির মুরুব্বিদের কদমবুসি শেষে প্রবেশপত্র বগলদাবা করে পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে রওনা দিলাম। পকেটে গুজে নিলাম প্রিয় রেডলিফ কলম। বাড়ি থেকে বের হতেই কেমন যেন সবকিছু গোলমাল লেগে গেল। রাস্তায় কোনো ভ্যান-রিকশা পাচ্ছিলাম না, এদিকে পরীক্ষার সময় সমাগত। সময় বাঁচাতে এত দ্রুত দৌড়াচ্ছিলাম কিন্তু সামনে এগোতে পারছিলাম না। কোনোরকম হাচড়েপাচড়ে পৌঁছালাম তখন পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা বেজে গেছে।
প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে মনে হলো হিব্রু ভাষায় লেখা। পাস নম্বরও কমন পড়েনি। পকেট থেকে কলম বের করতে গিয়ে দেখি কালি বেরিয়ে পকেটে লেপ্টে গেছে।
বন্ধুর থেকে কলম ধার নিয়ে কয়েক মিনিট লিখতেই দেখি একটা কাগজের বল পিংপং বলের মতো ড্রপ করতে করতে আমার পায়ের কাছে এসে স্থির হলো। তখনই স্যার এসে কাগজটা এবং আমার খাতা টান দিয়ে নিয়ে গেলেন। আমি ডিরেক্ট স্যারের পায়ে পড়ে লজ্জা শরম ভুলে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। কিন্তু স্যারের মন গলল না।
কান্নারত অবস্থায়ই পিঠে কারও আলতো হাতের ছোঁয়া পেলাম। মাথা তুলে দেখি পাশে মা দাঁড়িয়ে, আমি আমার পড়ার টেবিলেই বসে আছি। জানালা দিয়ে সকালের তকতকে রোদ আমার টেবিলে এসে পড়েছে, অশ্রু ফোটাগুলো মুক্তোদানার মতো ঝকমক করছে।
কলি