![এখনো বই পড়ে!](uploads/2024/02/09/1707461052.a6.jpg)
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম একটি উন্নত ধনী দেশ। সুতরাং তাদের অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের জীবনও সুখের হয়। বিশেষ করে শহরে বসবাস করা টিনএজাররা বাবা-মায়ের আর্থিক সংগতি থাকায় তারা পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের টিনএজারদের মতোই জীবনযাপন করে। রাশিয়া একটি বিশালাকার দেশ। এখানে বাস করে বহু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। তাই এ দেশের এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলের সংস্কৃতি একেবারেই ভিন্ন। একেক অঞ্চলের আর্থিক অবস্থাও ভিন্ন। তারপর আছে শহর-গ্রামের ব্যবধান।
তবে রাশিয়ান টিনএজারদের কাছে তাদের পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের অন্যান্য দেশের যেমন টিনএজাররা সমবয়সী লোক বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসে, সেখানে রাশিয়ান টিনএজাররা রান্নাঘরে বসে সারা দিনের গল্প বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার করে। বাবা-মায়েরাও তাদের ছেলেমেয়েদের বেশ শাসনে রাখতে চায়। বাংলাদেশের বাবা-মায়ের মতো তারাও বলতে থাকে, ‘তোদের বয়সে আমরা এসব করতাম, তোদের বয়সে আমরা এসব করতাম না।’ স্বাভাবিকভাবেই টিনএজারদের কাছে এসব কথা ভালো লাগে না। এর মধ্যে আছে আবার স্কুলে শিক্ষকদের শাসন। শিক্ষকরাও বলতে থাকে, ‘তোমরা মোবাইল ফোন নিয়ে পড়ে থেকো না। এসব একেবারেই অর্থহীন, বৃথা, সময় নষ্ট করা।’ রাশিয়ান টিনএজাররা সাধারণত তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকে। বিশেষ করে কলেজ পর্যন্ত। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া পর্যন্ত আবার কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ হলেও বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার রেওয়াজ আছে। এ সময় বাবা-মাই ছেলেমেয়ের পড়াশোনাসহ সব খরচ চালায় (সব সময় নয়)। হয়তো এজন্যই রাশিয়ান ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে চায় না, নিজেই বাবা-মায়ের দেখাশোনা করতে পছন্দ করে। রাশিয়ায় পড়াশোনা প্রায় বিনাপয়সায় বা একদম অবৈতনিক। সে কারণে রাশিয়ান বেশির ভাগ টিনএজার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে। এরা কাজ করে উপার্জনও দেরিতে করতে যায়, কারণ প্রয়োজন পড়ে না।
রাশিয়ান টিনএজারদের বন্ধু ভাগ্য অসম্ভব ভালো। কারণ তারা সেই ৭ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত একই সঙ্গে পড়াশোনা করে। তাই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে শক্ত বন্ধুত্বের বন্ধন। তাই স্কুলের বন্ধুরা সারা জীবনের বন্ধু হয়ে যায়। এদের মধ্যে অনেকেই শেষ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের মতো হয়ে যায়। বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে বন্ধুদের ডাক পড়ে নিয়মিত। এই বন্ধুত্ব অনেক সময় পড়ার চাপে ব্যস্ত থাকা টিনএজাররা যখনই মনে করে একটু রিল্যাক্স করা যাক, তখনই তারা বিভিন্নভাবে সময় কাটায়। এর মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ টিনএজার টিভি দেখে সময় কাটায়, ৪০ ভাগ বই পড়ে, ৩৩ ভাগ বার বা ক্লাবে যায়। তবে তারা বাসায় আসে না। অভিভাবকরা তো সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে কীভাবে পড়াশোনায় ভালো করা যাবে, কীভাবে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে। পড়ার চাপটাও থাকে বেজায়। এরপর স্কুলের এক্সট্রাকারিকুলাম শেষ করতে হয়। এরপর ক্লাবে যাওয়া মানে বেশির ভাগই মিউজিক স্কুল। সেখানে আবার মেয়েরাই যায় বেশি। তারা সেখানে পিয়ানো শেখে। এরপর মেয়েদের সবচেয়ে পছন্দের ক্লাব হলো জিমনাস্টিক ক্লাব। আর ছেলেদের প্রিয় জায়গা হচ্ছে, ‘হকি ফাইট-ক্লাব’। এরপর ‘দাবা ক্লাব’। তবে বেশির ভাগ টিনএজার নিজেদের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসে। তবে এটা কিছুটা আবহাওয়ার ওপরও নির্ভর করে। যেমন গরমকালে যেখানে হোক কিন্তু শীতকালে ক্যাফেতেই বসে। এর মধ্যে আরেকটি জায়গা আছে যেটাকে বলে, ‘এন্টিক্যাফে।’ এখানে আবার শুধু কফি পাওয়া যায় না, এখানে চা পান করা যায়, বিস্কুট খাওয়া যায়, কেক খাওয়া যায়। এখানে টিনএজার এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ অবধি ছাড় দেওয়া হয়। আবার কেউ কেউ ‘হুক্কা’র দোকানে যায়। বেশির ভাগ ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেটে ভিড় করে। এর মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক ছেলেপুলে তাদের স্কুলের পড়ালেখা নিয়ে বসে। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড এখানে ছাত্রছাত্রীরা প্রচুর সংখ্যায় থিয়েটার দেখতে যায় এবং থিয়েটার বিষয়ে পড়ানো হয় সেসব কলেজে যায়। সেখানে তারা সরাসরি বারবার অভিনয়টা দেখতে পারে।
এসব জায়গায়ও ছাত্রদের টিকিটের জন্য ছাড় দেওয়া থাকে আবার কখনো একেবারে বিনাপয়সায় দেখার ব্যবস্থা থাকে। আবার প্রত্যেক ছুটির দিনেই সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ বা ছাত্রদের কোনো সংগঠন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করে। ছাত্রদের এসব সিনেমা দেখতে উৎসাহ জোগানো হয় যাতে তারা এসব চলচ্চিত্র দেখে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। রাশিয়ান টিনএজারদের মধ্যে আরেকটি চমৎকার অভ্যাস আছে। বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে টিনএজার ছেলেমেয়েরা তাদের স্কুল প্রাঙ্গণে বা বাড়ির খোলা জায়গায় সাউন্ডবক্স লাগিয়ে উচ্চৈঃস্বরে গান শোনে। আবার বই পড়ার ব্যাপারেও তারা আগ্রহী। বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে, আহ্ এরা মোটেই বই পড়তে চায় না। কিন্তু আসলে কথাটা সত্যি নয়। ইদানীং টিনএজারদের পাঠাগারে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। পাঠাগারের শান্ত সৌম্য পরিবেশ টিনএজারদের ভালো লাগে। ক্যাফে বা অন্য কোনো জায়গায় কান পাতলেই শোনা যায় টিনএজারদের কথা। তারা বই এবং বইয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। গত ১০ বছরে দেখা গেছে বই পড়ার ব্যাপারটা সিনেমাকেও পিছে ফেলে দিয়েছে। সেখানে লেখকদের জীবনীর ওপর অনেক সিনেমা তৈরি হচ্ছে। টিনএজাররা সেটা দেখছেও। জানা যায়, রাশিয়ান টিনএজাররা বই পড়ে এবং প্রচুর বই কিনেও। টিনএজাররা বয়স ১৮ হলেই মদ কিনতে পারে। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না যায় এবং স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে সেসব টিনএজার ১২ মাস সেনাবাহিনীতে কাজ করা বাধ্যতামূলক।
জাহ্নবী