ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

খুদে উদ্যোক্তাদের বিশ্বসেরা মঞ্চে বাংলাদেশ

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৩ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৩ এএম
খুদে উদ্যোক্তাদের বিশ্বসেরা মঞ্চে বাংলাদেশ

ওদের বয়স ১৩-১৮ এর মধ্যে। স্কুলে যাতায়াতের পথে নিত্য সড়ক দুর্ঘটনা দেখেন। সেই সড়ক দুর্ঘনায় প্রাণ বাঁচাতে নতুন কিছু উদ্ভাবনে জোট বাঁধে পাঁচ কিশোর। ভাবনার শুরুটা আসে চাঁপাই নওয়াবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. ত্ব-সীন ইলাহীর মাথা থেকে। স্বপ্নপূরণের সেই ভাবনায় যুক্ত হন নাটোর সরকারি বালক বিদ্যালয়ের মাহ্দী বিন ফেরদৌস, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের মো. নুর আহমাদ, নওগাঁর নাজিপুর সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের নাদিম শাহরিয়ার অপূর্ব এবং নরসিংদীর ছেলে, রাজধানীর ধানমন্ডির লরেটো স্কুলের এ লেভেল পড়ুয়া মো. সানজিম হোসেন। তাদের উদ্ভাবনে সহযোগী ছিলেন ডুয়েটের যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান।

প্রতিযোগিতায় এ বছর রেকর্ড ৩৪০০ জন অংশ নেন। যেখানে প্রায় শত শত টিম ছিল। এর মধ্যে পুরো বিশ্ব থেকে ৪ ক্যাটাগরিতে ১০টি দলকে বিশ্ব সেরা ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে এই টিম একটি। এই দলের গল্প শোনাচ্ছেন হৃদয় তালুকদার

মো. ত্ব-সীন ইলাহি
দলনেতা 
এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। নাসা কনরেড চ্যালেঞ্জের জয়ী Not a Boring Team-এর অধিনায়ক।

মো. ত্ব-সীন ইলাহির জন্ম ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে। বাবা-মার চাকরির সুবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়ে ওঠে। বাবা মো. ইসাহাক আলী ও মা মোসা. মাসুমা আক্তারের একমাত্র ছেলে ত্বসীন। ২০১৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পিইসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে।

ছোটবেলা থেকে ইলেকট্রনিক্স জিনিসের প্রতি তার বেশ ঝোঁক ছিল। রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি ভেঙে মোটর বের করে ফ্যান, লাইট বানাত। এভাবেই তার প্রজেক্ট বানানোর যাত্রা শুরু। ২০১৮ সালে একদিন স্কুলে সমাবেশ করার পর তার এক বন্ধু এসে বলল ও নাকি একটি এটিএম বানিয়েছে। ত্বসীন চমকে গিয়ে জানতে চাইল যে ওটা সে কীভাবে বানাল। ত্বসীনের বন্ধু বলল ইউটিউব দেখে এসব শেখা যায়। তারপর থেকেই মূলত তার রোবোটিক্সে যাত্রা শুরু। নতুন কিছু আবিষ্কার করার ইচ্ছা, অজানাকে জানার কৌতূহল তাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সবাই একাডেমিক রেজাল্ট, জিপিএ ফাইভ, এ প্লাস নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সে সব সময় ব্যতিক্রমী চিন্তা করে।

ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, গণিত অলিম্পিয়াড, রোবট অলিম্পিয়াড ইত্যাদিতে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পায় সে। তাছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেটও রয়েছে তার ঝুলিতে। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ, জাতীয় শিশু পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছে সে। বর্তমানে তার ঝুলিতে ৭০টি সার্টিফিকেট রয়েছে।

একবার পরিচিত হলো রাজশাহী বিভাগের সেরা কিছু খুদে রোবটবিদের সঙ্গে। তারপর তাদের দলে যুক্ত হলো সে। এরপর একদিন নাসা কনরেড চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে পারল। বিষয়টা গ্রুপে জানানোর পর সবাই অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিল। মূলত তাদের গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তাদের কাজ শুরু হয়।

ত্বসীনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গবেষণার দিকে নজর দেওয়া। সে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষক হতে চায়। নতুন কিছু আবিষ্কার করে মানবজাতির কল্যাণ করতে চায়।

মাহ্দী বিন ফেরদাউস
কো-অর্ডিনেটর 
জন্ম ২০০৮ সালে রাজশাহীতে। বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে উঠেছেন টাঙ্গাইল শহরে। তারপর নাটোরে এসে এখন নাটোর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

বাবা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের শিক্ষক হওয়ায় ইলেকট্রনিক্স-এর প্রতি প্রবল আগ্রহী হয়ে ওঠে। বাবার ছাত্রদের সাহায্য, ইউটিউব এবং নিজের ইচ্ছা থেকেই ইলেকট্রনিক্সের সামগ্রী বানানোর কৌশল আয়ত্ত করে। ছোট ছোট ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী বানিয়ে সহপাঠী ও শিক্ষকদের দেখাত। সেই থেকেই শিক্ষকরা তাকে বিজ্ঞানী বলে ডাকতেন।

বিজ্ঞান মেলায় গিয়ে বিভিন্ন স্টলের প্রজেক্ট দেখত আর তাদের কাছে নানান কিছু জানতে চাইত। করোনাকালীন রোবোটিক্স নিয়ে মাথা ঘামায় এবং আরডুইনোর সঙ্গে পরিচিত হয়। প্রথমে লাইন ফলোয়ার বানায় কিন্তু সফল না হওয়ায় তা ছেড়ে দেয়। পরে ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করে কিন্তু পরে সেখান হতে সরে আসে। এর পর নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় আবার প্রজেক্ট কম্পিটিশনে ২০২২ সালের 6th RUSC Science fest থেকে যাত্রা শুরু। এ পর্যন্ত ২৫টিরও বেশি প্রতিযোগিতায় আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যাযয়ে পুরস্কার পায়।

২০২৩ সালে এসএমসি মনিমিক্স প্লাস খুদে বিজ্ঞানী অ্যাওয়ার্ড পায়। এবং BCSIR, বিজ্ঞান চিন্তা, বিজ্ঞান উৎসব, IUT, RCNSF-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। এই প্রতিযোগিতায় অনেকের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে এবং ইনোভেশন টিম গঠন করে।

এসএসসি টেস্ট পরীক্ষার পর তারা জীবনের সব অভিজ্ঞতা এই Conrad চ্যালেঞ্জ-এর জন্য কাজে লাগায়। এটাই জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং প্রথম অংশ নিয়েই বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। দলের কো-অর্ডিনেটর হয়ে সে খুবই আনন্দিত।

ভালো মানুষ হওয়ার পাশাপাশি টেসলার মতো বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছে তার। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষে নিজের দেশে টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে দেশকে স্মার্ট করতে সাহায্য করা।

নাদিম শাহরিয়ার অপূর্ব
ইনোভেশন ও হার্ডওয়্যার 
নাদিমের জন্ম ২০০৮ সালে নাটোরে। বাবা চক্ষু ডাক্তার। ছোট থেকে ৯ বছর পর্যন্ত তার বাবার কাজের সূত্রে নাটোরেই ছিল। তারপর থেকে সপরিবারে ঢাকায় কিছুদিন থাকার পরে নওগাঁ। নজিপুর সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে বর্তমানে সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার নানা পল্লী বিদ্যুতের বোর্ড সভাপতি ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই নানার ইলেকট্রিক্যাল কাজকর্ম দেখতে দেখতে নাদিমের ইলেকট্রিক্যাল কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় কিছু সাধারণ জিনিসপত্রের মাধ্যমে নাদিম কাজ শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কাজ শেখে এবং রোবোটিক্সের দিকে এগোয়।  
সপ্তম শ্রেণিতে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার জন্যে প্রথম রোবটিক্স প্রজেক্ট তৈরি করে। যদিও করোনা মহামারির কারণে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়নি। তবে করোনা মহামারির সময়ে রোবোটিক্সের মাধ্যমে নিজের অবসর সময় কাজে লাগাত। নবম শ্রেণি থেকে নাদিম বিভিন্ন রোবটিক্স কম্পিটিশনে অংশ নেওয়া শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত ২৫টিরও বেশি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে। ২০২২ সালে এসএমসি মনিমিক্স প্লাস খুদে বিজ্ঞানী অ্যাওয়ার্ড পায়। ২০২৩ সালে রোবটিক্স অলিম্পিয়াডে প্রথম এবং ন্যাশনাল টেকনোলজি ফেয়ারে দ্বিতী হয়। এসব প্রতিযোগিতা থেকেই সবার সঙ্গে পরিচয় এবং দল গঠন করে নাদিম।

এটি তাদের দলের প্রথম এবং প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। দলের এক্সিকিউটিভ এবং ফাউন্ডিং মেম্বার হিসেবে নাদিম গর্বিত। নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় নাদিম। BUET-এ পড়ার মাধ্যমে প্রকৌশলী হয়ে দেশের জন্য কাজ করার স্বপ্ন কার।

মো. সানজিম হোসেন
রিসার্চ এবং অ্যানালাইসিস 
দলের রিসার্চ এবং অ্যানালাইসিস মো. সানজিম হোসেনের জন্ম নরসিংদী জেলায়। বাবা মো. সোহরাব হোসেন এবং মা শারমিন সুলতানা। বিদেশে পড়ার স্বপ্ন থাকায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে। গবেষণাবিষয়ক কাজ করতে তুমুল আগ্রহী। এই আগ্রহের কারণে 
সহপাঠীদের সঙ্গে বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেয় নিয়মিত। পরে পরিচিতির কারণে টিম আপ করে অনেক দলের সঙ্গে। সে নরসিংদী সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ক্লাবের সদস্য। সেই ক্লাবের হয়ে ৪৪তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলাতে প্রথম স্থান অধিকার করে।

এর পরে সে মালয়েশিয়ায় হওয়া WICE-এ বেস্ট প্রজেক্ট অ্যাওয়ার্ড, গোল্ড মেডেলসহ আরও পুরস্কার পেয়ে দেশের সুনাম বাড়িয়ে তোলে। এর পর পরই সে কনরেড-এ অংশ নেয়। রিসার্চ পেপার নিয়ে অনেক কাজ করেছে সে। এই দক্ষতা এবং প্রবল আগ্রহ তাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। এর পেছনে একটা বিশাল অবদান আছে তার বাবা মায়ের। বাবা মা তাকে সব সময় সব দিক থেকে সমর্থন দিচ্ছেন। ভবিষ্যতে সে গবেষক হতে চায়। বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করার স্বপ্ন দেখে সানজিম।

মো. নূর আহমাদ
এমবেডেড সিস্টেম 
জন্ম ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহীর সদর উপজেলায়। বাবা শফিকুল ইসলাম ও মা নুরজাহান বেগম। পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে নূর ছোট। ২০১৯ সালে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় এবং বর্তমানে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।

ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তার ভালো লাগত। মা তাকে অনেক আগ্রহ ও সাহস জোগান। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও ছিল তার সুনাম। বিভিন্ন ধরনের খেলনা খুলে তৈরি করত ওয়াটার বোর্ড, মোটর ফ্যান ও হরেক রকম জিনিস। ২০১৯ সাল তার বড় ভাই গোলাম মোর্শেদের বানানো বিভিন্ন রোবট ও গেম তাকে আকৃষ্ট করে। তখনই কিছু উদ্ভাবন করার ইচ্ছে জাগে। ভাইয়ের কাছে শিখতে চাইলে তাকে সি প্রোগ্রামিং শেখান এবং পরবর্তী পথের রাস্তা দেখিয়ে দেন। প্রোগ্রামিং-এর প্রতি তার ভালো লাগা গভীর হতে শুরু করে। সময় যেতে না যেতেই দেশজুড়ে লকডাউন হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ সময় কাটত প্রোগ্রামিং নিয়ে। সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আয়ত্ত করে পাইথন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। ফ্রিল্যান্সিংয়েও রয়েছে তার অভিজ্ঞতা। বর্তমানে মেশিন লার্নিং-এর মতো কমপ্লিকেটেড সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করছে সে।

২০২২ সালে রোবটিক্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে সে। নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের রোবট আবিষ্কার করে। অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। তার পাঁচটি ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডসহ (বিসিএসআইআর, রোবকার্নিভাল, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, ইউএসসি সায়েন্স অলিম্পিয়াড, কনরাড চ্যালেঞ্জ) চল্লিশটিরও বেশি সনদ রয়েছে।

বিভিন্ন বিভাগীয় ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দল গড়ে ওঠে।

নূর আহমাদ নেক ও আদর্শ মানুষ হতে চায়। স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে থেকে পড়া শেষ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।


এ আয়োজনে যেভাবে গেছে দলটি

প্রতিযোগিতার আয়োজক কনরেড ফাউন্ডেশন নামক একটি সংস্থা। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিযোগিতাটি প্রত্যেক বছর আয়োজন করা হয়।  বর্তমানে নাসা, ডেল টেকনোলজিস এবং বিশ্বের অনেক নামিদামি টেকজায়ান্ট কোম্পানি এ প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত আছে।

এটি মূলত একটি উদ্ভাবনী এবং বিজনেস কনটেস্ট। এখানে একটি দলকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কাজ করতে হয়। কোনও একটা ফিল্ডের সমস্যা সমাধান করতে হয়। তারপর সেটার মডেল বানাতে হয়। সমাধানটা বাস্তব জীবনে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে হয়। উদ্ভাবন করার পর এই প্রজেক্টকে প্রোডাক্ট এ রূপান্তর করে এর একটি বিজনেস মডেল প্রস্তুত করতে হয়। মূলত উদ্ভাবন এবং পরবর্তীতে বিজনেস রিলেটেড বিষয় সময় নিয়ে কাজ করতে হয়।

এক কথায় এটা খুদে উদ্যোক্তাদের মিলনমেলা। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী বিশ্বের যে কেউ এতে অংশ নিতে পারে। খুদে উদ্যোক্তাদের বিশ্বসেরা মঞ্চ বলা হয় এটিকে। মোট ৪ ধাপে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন হয়।

এর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো তৃতীয় স্টেজ পার করতে পেরেছে। এর আগে ২০১৫ সালে একটি দল প্রথমবারের মতো এ প্রতিযোগিতার ফাইনাল স্টেজে গিয়েছিল। নয় বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো এই তৃতীয় স্টেজ পার করে বর্তমানে অল্টারনেটিভ ফাইনালিস্ট হিসেবে অবস্থান করছে বাংলাদেশের নট এ বোরিং টিম।

তৃতীয় স্টেজে পুরো বিশ্ব থেকে ২৫০ এরও বেশি দল প্রতিযোগিতা করে। যেখানে এই দল বিশ্বের মধ্যে দশম হয় Energy and Environment ক্যাটাগরিতে।

তারা যেটা নিয়ে কাজ করেছে সেটা হচ্ছে মূলত পরিবেশ এবং শক্তি ক্যাটাগরি। পরিবেশ বাঁচাতে পারে এবং শক্তি সংরক্ষণ করতে পারে এরকম কোনও সমস্যা সমাধানের কাজ করতে হয়েছে। দলটি সড়ক দুর্ঘটনার ফলে পরিবেশ এবং শক্তির কী ক্ষতি হয় সেটি তুলে ধরেছিল এবং সেটার জন্য একটি সমাধানও বের করেছে।

জাহ্নবী

সফল টিনএজার হতে  সাত পরামর্শ

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
সফল টিনএজার হতে  সাত পরামর্শ

লেখাপড়া শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করেই সফল মানুষ হয়ে ওঠার প্রসঙ্গ আসে। এসব সফল মানুষের পেছনে পড়ে থাকে স্মৃতিময় টিনএজ বয়সের রঙিন দিনগুলো। কিন্তু অনেক টিনএজারের কাছে তার সময়টি খেলাধুলার মাঠ নয়, টিনএজ বয়স থেকেই তাদের জীবনে সফলতা অর্জনের পথ খুঁজতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাইলে একজন সফল টিনএজার হয়ে ওঠাও অসম্ভব কিছু নয়। যদিও এ বয়সে সফল হওয়াটা সহজ কথা নয়, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই তা সম্ভাবনাময়। এখানে টিনএজ বয়সেই সফলতা লাভের সাতটি পরামর্শ।

স্কুলে ভালো করো: ভবিষ্যৎ কেমন হবে- টিনএজাররা এর পরিচয় রাখে স্কুলজীবনে। তাই লেখাপড়ার কাজটি বেশ মনোযোগের সঙ্গে করা জরুরি। হতে পারে অনেক বিষয়ই ভালো ঠেকছে না; কিন্তু এরপরও সফল হয়ে ওঠার বিষয়টি মাথায় রেখে দারুণ একটা ফল বাগিয়ে নিতে ঝাঁপ দাও।

নিজস্বতা তৈরি করো: তুমি যেমন, সবসময় তেমনই থাকো। বড়রা এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও তুমি নিজের মতো থাকার চেষ্টা করবে। এর সঙ্গে যোগ করবে আত্মবিশ্বাস। নিজের সামর্থ্যের ওপর ভরসা করবে। এই গুণগুলোর পরিচর্যা করো। যা নিজের জন্য ভালো বলে মনে হয়, নিজস্বতা নিয়ে তা করতে কোনো দোষ নেই।

মাদক থেকে দূরে থাকো: কখনোই মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। আগ্রহের বশে একটু চেখে দেখার ইচ্ছাও মনে আনবে না। তোমার সব ভালো এবং সম্ভাবনাময় বিষয়ের ইতি ঘটাতে এই একটি বিষয়ই যথেষ্ট। বিন্দুমাত্র মাদকে আগ্রহ না রাখলে তোমার কিছুই যাবে-আসবে না। কাজেই টিনএজারদের মাদককে ঘৃণা করতে হবে।

নিজের গণ্ডিতে ভালো কিছু করো: তুমি যেখানে থাকো তার চারপাশের মানুষ এবং পরিবারের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা চালিয়ে যাও। নিজের লেখাপড়ার ক্ষতি না করেও ছোট ছোট অথচ সমাজের জন্য ভালো অনেক কিছুই করা যায়। এতে করে তুমি সুখী হবে এবং বড় কিছু করার আশা জন্ম নেবে। এর ফলে সম্ভাবনার জানালাগুলো খুলে যাবে, যা তুমি আগে কখনো দেখনি।

জীবনের লক্ষ্য স্থির করো: টিনএজ বয়সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো, জীবনের লক্ষ্য স্থির করা। একবার লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে গেলে নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে যেতে সুবিধা হবে তোমার। লক্ষ্যকে ক্যারিয়ারের সঙ্গে যুক্ত করো। এতে চলার পথের সন্ধান পাবে। এই বয়স থেকেই পথের দিশা পেলে তোমাকে ঠেকায় কে?

ব্যবহার ভালো করো: পরিচিত বা অপরিচিত সবার সঙ্গেই ভালো ব্যবহার করো। এটি তোমার দারুণ এক ব্যক্তিত্ব তৈরি করে দেবে। বন্ধুমহল, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বড়দের পরামর্শ শুনবে। সেখান থেকে নিজের জন্য ভালো মনে হয় এমন পরামর্শগুলো গ্রহণ করো। আচরণ ভালো থাকলে সবাই তোমাকে সুপরামর্শই দেবে।

ভালো বন্ধুমহল তৈরি করো: বন্ধুরা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে যদি ভালোদের সমাগম ঘটে, তবে তোমার জীবনে ভালো কিছু না কিছু ঘটতেই থাকবে। তাই তোমার মতো সফল টিনএজারদেরই বন্ধু হিসেবে পাওয়ার চেষ্টা করো। সুবিধার নয়, এমন বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করো। এসব বন্ধু জীবনটাকে বিষাক্ত করে দেবে।

জাহ্নবী

ভ্রমণকন্যা আসমা আজমেরী

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০২ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০২ পিএম
ভ্রমণকন্যা আসমা আজমেরী
বাংলাদেশের পতাকা হাতে আসমা আজমেরী

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাভেলার্সদের মধ্য অন্যতম এক নাম কাজী আসমা আজমেরী। ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। ইতোমধ্যে ১৪৫টি দেশ ভ্রমণ করছেন। বর্তমানে তিনি গাম্বিয়ায় রয়েছেন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট হওয়ার কারণে তার ভিসা পেতে সমস্যা হয়। তবু বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকার বাহক হিসেবেই ঘুরবেন বিশ্বময়।

আসমা খুলনা শহরে বড় হয়েছেন। কাজী গোলাম কিবরিয়া ও কাজী সাহিদা আহমেদ দম্পতির একমাত্র মেয়ে তিনি। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে স্কুলে আসা-যাওয়া করতেন। এক দিন স্কুল ছুটির পর তার মা নিতে এলেন না। অবশেষে তিনি একাই সাহস করে বাসার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন। হাঁটছেন আর তাকিয়ে দেখছেন আকাশটাকে। আকাশ দেখে তার মনে হলো, সে আকাশের শেষ সীমানা দেখবেন। কিন্তু আকাশের শেষ সীমানা আর দেখতে পাওয়া যায় না। সে দিন তিনি বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হেঁটেছিলেন। পরে এলাকাবাসী তাকে ধরে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দেন।

আসমা বড় ইকবালনগর গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে স্নাতক এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন। আসমা থাকেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। সেখান থেকে সারা দুনিয়া ঘুরে লাটাই-সুতার টানে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। আবার পাখির মতো উড়াল দেন পরবর্তী না দেখা দেশে।

শুধু জনপ্রিয়তার জন্য নয়, আসমা দেশ ভ্রমণ করেন নিজের শখে। শখের বশে ভ্রমণ শুরু করলেও এখন অনুভব করেন, তিনি ভ্রমণের মাধ্যমে নিজ দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পারছেন। সেটা তাকে বেশ আনন্দ দেয়। তার ইচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব দেশ ভ্রমণ পূর্ণ করবেন। ভ্রমণ বিশ্বে বাংলাদেশি হিসেবে ইতিহাস গড়তে চান তিনি। আসমা বলেন, আমার বিশ্ব ভ্রমণের শুরুটা খুব একটা সুখকর ছিল না। ব্যাপারটা হলো, (আমাদের দেশে এমন একটা ধারণা প্রচলিত) বাংলাদেশের মেয়েরা ভ্রমণ করতে পারে না, কিন্তু ছেলেরা পারলে মেয়েরা কেন পারবে না! 
২০০৯ সালে নেপাল ভ্রমণ দিয়েই আমার বিশ্ব ভ্রমণের যাত্রা শুরু, বলেন তিনি। তবে শুরুতে ইচ্ছা ছিল ৫০টি দেশ ঘোরার, কিন্তু ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তার ছয় মহাদেশে ভ্রমণ করা দেশের সংখ্যা ১৪২টি।

আজমেরি বলেন, প্রথমে আমার পরিবার ভ্রমণের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। আমার আব্বু ভ্রমণ খরচ দিতে না চাইলেও আমার মা তার গহনা বিক্রির টাকায় আমাকে খরচ জোগাতে সাহায্য করেন। তবে এটাই শুধু বাধা ছিল না, আমার পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকেরা আমার একা ঘোরার বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে নেয় এবং আমার বাবাকে তারা অভিযোগ করে যার উত্তরে বাবা আমাকে আমার একা ঘোরার বিষয়টি কাউকে না জানাতে বলেছিলেন। তবে যখন আমি ২০১৮ সালে ১০০টি দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করি, তখন আমার পরিবারের লোকেরা বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে নেয়, বিশেষ করে যারা প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন।

বাংলাদেশি পাসপোর্ট হিসেবে অনেক দেশের ভিসা পেতে নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়, দীর্ঘদিন লেগে যায়। অনেক দেশের ভিসা পেতে খুব সমস্যা হয়ে যায়। সাউথ আফ্রিকার ভিসা পেতে বলতে গেলে আমার দশ বছর লেগে গেছে। প্রথম ২০১০ সালে যেতে চেয়েছি সাউথ আফ্রিকায়, তখন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার জন্য যেতে চেয়েছিলাম। তখন বলা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার কলম্বো থেকে নিতে হবে ভিসা। ২০১১ সালে কলম্বোতে যাই তখন আমাকে বলা হয় ইনভাইটেশন ছাড়া তারা আমাকে ভিসা দেবে না। আমি তাদের বললাম সেখানে তো আমি কাউকে চিনি না, আমি একজন বিশ্ব পর্যটক। তখন তারা আমাকে আমাদের হোম মিনিস্ট্রি থেকে লেটার নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু সে সময় আর হয়ে ওঠেনি। আমি যখন নিউজিল্যান্ডে থাকি তখনো চেষ্টা করেছি, ভিসা পাইনি। সর্বশেষ দিল্লি থেকে ভিসা পেয়েছি। এমন নানান ঘটনা আছে, অনেক দেশ আছে যেগুলো ভিসা পেতে আমার খুব বিড়ম্বনা হয়েছে। সেনেগালের ভিসা পেতে ১৬ মাস সময় লেগেছে, আরও অনেক দেশ আছে যেখানে ভিসা পাওয়া অনেক সমস্যা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য অনেক দেশের ভিসা পাওয়া খুবই কষ্টকর-দুর্লভ, বলতে গেলে পাওয়াই যায় না। সুইডিশ বা অন্য ভালো দেশের পাসপোর্ট হোল্ডার টিকিট কাটছে আর চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই বাংলাদেশি পাসপোর্টে আমরা অনেক দেশেই যেতে পারি না, ভিসা পাই না।

তিনি আরও বলেন, আমি জর্জিয়া থেকে আজারবাইজানের ভিসা করেছি, সেটা ছিল আমার ৯৬তম দেশ ভ্রমণ। প্রথমে তো তারা ভিসা দেবেই না, তারা বলেছে দিল্লিতে যেতে হবে। আমি প্রতিদিন জর্ডানের অফিসে যেতাম, অনুরোধ করতাম ভিসা দেওয়ার জন্য। অনেক অনুরোধের পর তারা দিয়েছিল ৩ দিনের ভিসা। তারা দেখেছে আমি অনেক দেশ ঘুরেছি।

এরপর টানা দুই বছর অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি করার পর আবারো জুন মাসে তিনি ভ্রমণে বের হন। ১৭ জুন সেনেগালে ১৪৪তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেন। সেখান থেকে জাহাজে তিনি জিংসুয়াং শহরে যান। ২৭ জুন তিনি গাম্বিয়ায় ফিরে আসেন।

জাহ্নবী

 

টিনএজারদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০০ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০০ পিএম
টিনএজারদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই

পৃথিবীর এখন সবচেয়ে আলোচিত দুটি বিষয়ের একটি হলো রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধ, অপরটি ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েল যুদ্ধ। গত বছরের অক্টোবরে নতুন করে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের যুদ্ধ এখনো চলমান। জাতিসংঘের মতে, এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছে শিশু। অতীত ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, বিশ্বের প্রতিটি দেশের যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছে নারী ও শিশু।

সহিংসতা-সংঘাতের মধ্যে পক্ষ বা বিপক্ষ শক্তির কাছে নারী ও শিশুরা সহজ শিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।  সদ্য গত হওয়া বছরে গাজায় নিহত হওয়া মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু আর নারী। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজায় প্রতি দশ মিনিটে নিহত হচ্ছে একটি শিশু। জাতিসংঘ গাজাকে শিশুদের সমাধি হিসেবে ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গাজাকে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যে শিশুদের হাতে নিহিত রয়েছে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, সেই শিশুরাই এখন হুমকির মুখে।  আজকে জন্ম নেওয়া শিশুটি এক সময় বেড়ে উঠবে। শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে সেই শিশুটি একদিন প্রবেশ করবে তারুণ্যে। একদিন তারুণ্যের দুর্বার শক্তি দিয়ে সব বাধা-বিপত্তি পেছনে ফেলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেবে বিশ্বকে। শিশুরা স্রষ্টার এক অপরূপ সৃষ্টি। তাদের মধ্যে থাকে না অপরের ক্ষতি করার কোনো মনোবাসনা। বিশ্বের কয়েক কোটি শিশুর মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু শিশু তাদের সুন্দর শৈশবটা উপভোগ করতে পারছে। আবার অনেক শিশু বেঁচে থেকেও ধুঁকে ধুঁকে মরছে। আমরা অনাগত কিংবা সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য এখনো নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। পারিনি ছোট্ট মানুষগুলোর জন্য নিরাপদ জায়গা করে দিতে। হয়তো কখনো এটা সম্ভব হবে কি-না জানি না। এই বিশ্ব আজ বড় ব্যর্থ। ব্যর্থতার দায় যতটা না পরিবার বা সমাজের ওপর বর্তায়, বর্তমান সময়ে তার চেয়ে বেশি বর্তায় বিশ্বের ওপর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-সংঘাত এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের ঝনঝনানি আর হিংস্রতার মধ্যে করুণ দিনাতিপাত করছে অনেক শিশু। রাতটা কোনোভাবে পার করলেও, ভোরটা শুরু করছে বোমার শব্দ শুনে। কিংবা নিশ্চিন্তে রাত পার করে যে ভোরের নতুন সূর্য দেখবে, এতটুকু নিশ্চিয়তাও শিশুদের দিতে পারছে না অনেক দেশ। এক দেশ অন্য দেশের প্রতিহিংসার কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। 

বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শিশুদের নানাভাবে অপব্যবহার করছে। বৃহৎ স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে এসব নিষ্পাপ শিশুকে। কোমল মনে ছড়িয়ে দিচ্ছে হিংস্রতার বিষবাষ্প। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ঠেলে দিচ্ছে অপরাধজগতের দিকে। ফিলিস্তিন কিংবা ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বিশেষজ্ঞরা সব সময় সতর্ক করছেন- এসব চলমান ভয়াবহ সংঘাত প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলছে। গাজার চলমান যুদ্ধে নিরপরাধ শিশুরা নিহত হলেও অদ্ভুত হলেও সত্যি যে, এ ব্যাপারে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কোনো উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমনকি জাতিসংঘও এটা বন্ধ করতে ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টা ছোট হলেও গভীর উদ্বেগ আর ভাবার বিষয়। জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন সনদ বা সিআরসিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আমেরিকার মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলো যদি শিশুদের অধিকারের বিষয়ে এভাবে চুপ থাকে, তা হলে আগামী প্রজন্মের জন্য অন্ধকার এক পৃথিবী অপেক্ষা করে আছে। আজ এ দেশ তো কাল ওই দেশ, এভাবে কি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে সংঘাত-সহিংসতার রেশ! যেকোনো সংঘাতে শিশুরা আর কত বলির পাঁঠা হবে? এই প্রশ্ন কি তাদের মনে জাগেনি কখনো। এসব থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রগুলো একটু সচেতন হলেই পারে শিশুদের নির্মম মৃত্যু রোধ করতে। অন্তরে শিশুদের প্রতি এতটুকু ভালোবাসা থাকলে, বিভিন্ন দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অনায়াসে একটি শিশুবান্ধব পৃথিবী সহজে গড়ে তোলা যায়। অন্তত শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো চেষ্টা করলে শিশুদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে আগামী পৃথিবীর কল্যাণের জন্য এতটুকু করতে পারে। শিশুদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। পরিশেষে বলতে ইচ্ছে করে, সংঘাত-সহিংসতা নিপাত যাক- শিশুরা পরিত্রাণ পাক।

জাহ্নবী

রোবট বানান সানি জুবায়ের

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
রোবট বানান সানি জুবায়ের
সানি জুবায়ের ও তার দল

সানি জুবায়ের। দেশকে তাক লাগিয়ে বিজ্ঞানে প্রতিনিয়তই নতুন ইতিহাস গড়ে চলেছেন বাংলাদেশি এই তরুণ উদ্ভাবক। নতুন নতুন আবিষ্কারে যেন বাধাহীন তার পথচলা।

জুবায়েরের স্কুলজীবন কাটে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০২০ সালে এইচএসসি শেষ করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে। বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করছেন। হাতের স্পর্শ ছাড়াই কম্পিউটার চালু, দুর্ঘটনা এড়াতে স্বয়ংক্রিয় ব্রেক, গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে রিসিভারসহ এমন বেশ কয়েকটি চমৎকার প্রযুক্তি আবিষ্কার করে বেশ আলোচিত সানি জুবায়ের। সম্প্রতি ‘ফায়ার ফাইটিং রোবট’ বানিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

ভালোবাসেন গবেষণাধর্মী কাজ এবং রোবটিক্স। গত ৮ বছর ধরে এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। রোবটিক্সের প্রতি ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই। হাতেখড়ি হয়েছে নিজে নিজেই ছোটবেলায়। খুঁজে বেড়ান যন্ত্রের ভেতরের ভাষাকে। রেজিস্টার, ট্রানজিস্টর আর সার্কিট বোর্ড প্রতিনিয়তই তাকে কৌতূহল-উদ্দীপ্ত করত। নতুন কোনো কিছু করার চিন্তা থেকে টুকিটাকি ছোট ছোট জিনিস বানাতে শুরু করেন। অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন আন্তস্কুল ও কলেজ এবং জাতীয় বিজ্ঞান মেলায়। ধীরে ধীরে বানাতে শুরু করেন অত্যাধুনিক কিছু রোবট।

সানি জুবায়ের বলেন, বেশ কয়েকটি অটোনোমাস রোবট এবং মার্স রোভার বানাতে সক্ষম হই। কাজ করেছি অগ্নিনির্বাপণের জন্য ডিফেন্ডার নামক রোবটের ওপর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এই রোবটকে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য এর পূর্বে কাজ করা হয়েছে সিগমা রোবটে, যেটি কি-না ডিফেন্ডার রোবটের প্রাথমিক ভার্সন ছিল এবং সামনেও বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। প্রতিনিয়ত সেসব প্রকল্পের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

সানি জুবায়েরের বানানো রোবট

এই তরুণ উদ্ভাবকের বানানো কিছু রোবট-
FR21 (Fighter Robot)- সামরিক কাজে ব্যবহার উপযোগী একটি রোবট।
Brain Bot- সম্পূর্ণ অটোনোমাস-ভিত্তিক দৈনিক কাজে সাহায্যকারী রোবট।
Atla- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি মঙ্গল রোভার।
Farmover -একটি কৃষি রোবট।
Falcon XXIV - একটি রেসিং রোবট।
Sigma 21- একটি অগ্নিনির্বাপক রোবট।
Atlas AUV -একটি অটোনোমাস পরীক্ষামূলক সাবমেরিন।
Waterbot - সাগরের পানি পরিষ্কারকারক একটি রোবট।
Sigma – আগুন নির্বাপণকারী রোবট।

সানি জুবায়ের জানান তার অর্জনের কথা- ১৬টি জাতীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় পদক অর্জন করি। যার মধ্যে ছিল জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ, ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা, জাতীয় রোবটিক চ্যালেঞ্জ, জাতীয় রোবট অলিম্পিয়াডসহ আরও কয়েকটি প্রতিযোগিতা। আন্তস্কুল এবং কলেজ প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৫৫টি পুরস্কার পাই। এর মধ্যে ছিল- নটর ডেম বিজ্ঞান মেলা, আদমজী বিজ্ঞান মেলা, আইডিয়াল বিজ্ঞান মেলা, বিএন এমপিসি আয়োজিত বিজ্ঞান মেলা, ইম্পেরিয়াল আয়োজিত বিজ্ঞান মেলা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার বিজ্ঞান মেলাসহ আরও বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা।

এ ছাড়াও তিনি জানান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় ১৫টি পদক অর্জন করি। এর মধ্যে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ফ্যাব ফেস্ট চ্যাম্পিয়ন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সিএসই ফেস্ট চ্যাম্পিয়ন। আইইউবি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত টেক ফেস্ট চ্যাম্পিয়ন। খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত টেকভ্যাল চ্যাম্পিয়ন। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি আয়োজিত ম্যাক্কেলারেশন চ্যাম্পিয়ন। এনএসইউ আয়োজিত ন্যাশনাল রোবটিক কম্পিটিশন চ্যাম্পিয়ন ইত্যাদি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমি এবং আমার দল বাংলাদেশকে সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করি। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১৮ জন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় প্রতিযোগিতায় আমার দলসহ অংশগ্রহণ করি। আমাদের দলটির মূল উদ্দেশ্য হলো বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের কৃতিত্বকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৌরবের সাথে উপস্থাপন করা। পাশাপাশি দেশের গুরুতর কিছু সমস্যাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা।

জাহ্নবী

তারুণ্যের বিকাশে অনুষ্ঠিত হল ‘শান্তি ও সম্প্রীতি সংলাপ’

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
তারুণ্যের বিকাশে অনুষ্ঠিত হল ‘শান্তি ও সম্প্রীতি সংলাপ’

রাজধানীর গুলশানের ইএমকে সেন্টারে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘শান্তি ও সম্প্রীতি সংলাপ’। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ইয়ুথ এংগেজমেন্ট ইন ডেমোক্রেসি প্রকল্পের আওতায় ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই সংলাপে তরুণ ও অভিজ্ঞদের মিলনমেলা ঘটে।

সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও ইয়ুথ এংগেজমেন্ট ইন ডেমোক্রেসি প্রকল্প সম্পর্কে কথা বলেন ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ সিদ্দিকী। 
দুটি সেশনে আয়োজিত সংলাপে উঠে আসে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে তরুণদের চ্যালেঞ্জগুলো। পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথিরা সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশকিছু পরামর্শ ও সুপারিশ দেন । ‘সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামের প্রথম সেশনে  ড.মাকসুদা সুলতানার সঞ্চালনায় শিল্পী টিপু মুনশি, নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত, অধ্যাপক আফসানা ফেরদৌসি,বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাহী জাবেদ আহমেদ তরুণদের সাথে কথা বলেন। 

‘সাফল্যের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন’ শিরোনামে দ্বিতীয় পর্বে ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক নন্দিত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন কেয়ার গিভিং বিশেষজ্ঞ শিল্পী আক্তার, সাকিব রায়হান, ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বিভাগের প্রধান জাহিদা বেগম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রকল্প বিশেষজ্ঞ মানিক মাহমুদ ও সুপরিচিত বক্তা ও কর্পোরেট ব্যাক্তিত্ব সোলায়মান সুখন। 

অতিথিদের সাথে আলোচনা ও আলাপচারিতায় অভিজ্ঞদের পরামর্শে সম্মৃদ্ধ হয় তরুণরা ।  

সংলাপের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের বিভিন্ন খাতের উদীয়মান তরুণ এবং অভিজ্ঞরা যাতে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন এবং নতুন আইডিয়া ও সমাধান খুঁজে পান। তরুণদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে কিভাবে তাদের শিক্ষায়, কর্মসংস্থানে এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নে সহায়তা করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। 

এছাড়া বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের মধ্যে সমন্বয় করে জীবনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর ওপর জোর দেয়া হয়।

তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশের জন্য জাতীয় সংসদসহ সবক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। সংলাপে বক্তারা তরুণদেরকে সফল উদ্যোক্তা হতে আগে দক্ষতা উন্নয়নের পরামর্শ দেন। 

সংলাপে তরুণদের প্রতিভা, উদ্ভাবনী দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে উন্নত করার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা স্বপ্ন পূরণের পথে এবং বাংলাদেশের আর্থিক-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পান। 

আয়োজনের শেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের বনশ্রী মিত্রা নিয়োগী।