ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

একাত্তরের কিশোর গেরিলা জামি

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৬ পিএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ পিএম
একাত্তরের কিশোর গেরিলা জামি
১৯৭১ সালের নভেম্বরে অপারেশনে যাওয়ার আগে সহযোদ্ধা জামি, টুনি, বাবলু, ইফু, ওমরদের সঙ্গে কমান্ডার বাচ্চু ভাই পরিকল্পনা করে নিচ্ছেন

তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি। তবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানান আলামতে টের পাওয়া যাচ্ছিল, ভয়ংকর কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। আগে থেকেই বুঝতে পেরে গড়ে উঠল ঢাকায় প্রথম গেরিলা গ্রুপ। দুর্ধর্ষ সেই গেরিলা গ্রুপে ছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর। নাম তার জামি। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েছেন পাকিস্তানিদের হাতে, বন্দি ছিলেন দীর্ঘ সময়, ভোগ করেছেন অসহনীয় নির্যাতন, সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখী হয়েও একসময় মুক্তিও পেয়েছিলেন। আর মুক্তি পাওয়া মাত্রই দেশপ্রেমিক এই তরুণ ছুটলেন রণাঙ্গনে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন তপন দেবনাথ

ডাক নাম জামি। পুরো নাম জাহিদুল ইসলাম মাহমুদ। পৈতৃক নিবাস বরিশাল মুসলিম গোরস্থান রোড। বাবা ছিলেন বরিশাল বিএম কলেজের বাংলার শিক্ষক রফিক। জামির জন্ম ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি। বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন পাঠশালায় লেখাপড়া শুরু। তৃতীয় শ্রেণিতে এসে ভর্তি হলেন বিএম স্কুলে। ১০ বছর বয়সে বরিশাল থেকে চলে এলেন ঢাকায়। ভর্তি হলেন ঢাকার সেগুনবাগিচা স্কুলে। এই স্কুল থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর এইচএসসিতে ভর্তি হলেন ঢাকা কলেজে। আর ঢাকা কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে, কিন্তু তার আগেই ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানান কার্যকলাপে অনেকেই বুঝে ফেলেন, মুক্তিযুদ্ধ আসন্ন। আর এই বুঝতে পারা কিছু তরুণ ফেব্রুয়ারি মাসেই ঢাকায় গড়ে তুললেন দুর্ধর্ষ এক গেরিলা বাহিনী। এই দুর্ধর্ষ গেরিলা বাহিনীর এক সদস্য হলেন জামি।

১৯৭১ সালের নভেম্বরে অপারেশনে যাওয়ার আগে কমান্ডার বাচ্চুর সঙ্গে জামি

উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার মাধ্যমে এ দেশের সংস্কৃতি ধ্বংসের যে পরিকল্পনা করেছিল পশ্চিম পাকিস্তান, বাঙালিরা সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়নি। নানাভাবে বাঙালিরা এর প্রতিবাদ করে গেছে। জামি জানাচ্ছেন-
‘১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১। সকাল ১০টার সময় আমরা ৭-৮ জন মিলিত হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। আমাদের লক্ষ্য বি.এন.আর (Bureau of National Reconstruction) যেটা কার্জন হলের পূর্ব দিকে, সেখানে ডা. হাসানুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে আরবি হরফে বাংলা লেখার গবেষণা চলছে। আমি তখন ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রের জবাবে বি.এন.আর ভবন আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয় এবং আমাদের মাতৃভাষার ওপর কোনো আঘাত আমরা সহ্য করব না বলে সিদ্ধান্ত নেই। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে সেটাই ছিল আমাদের চরম বার্তা। বেলা ১১টার দিকে আমরা ছয়জন কার্জন হলের সামনে দিয়ে হেঁটে রাস্তা পেরিয়ে বি.এন.আর ভবনে প্রবেশ করি। অভিযানের যিনি নেতৃত্বে ছিলেন তিনি বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা একসঙ্গে পেট্রোল এবং দেশি বোমা চার্জ করি। প্রচণ্ড শব্দে আটটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। পুরো ভবনে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। অপারেশন শেষে আমাদের মধ্যে খান নামে একজন বোমা বিস্ফোরণে ভীষণভাবে আহত হয়। তার সারা শরীরে রক্ত ঝরছিল। তোপখানা রোডের কোনায় বর্তমান বৈদেশিক মন্ত্রণালয়, প্রেস ক্লাবের উল্টো দিকে ছিল। সেখান থেকে অনেক পুলিশ দৌড়ে আসছে। তক্ষুনি আমি খানকে উঠিয়ে রাস্তার একটা রিকশা নিয়ে কার্জন হলের সীমানার মধ্যের রাস্তা ধরে শাহবাগের রাস্তা ধরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ছেলেমেয়ে অবাক বিস্ময়ে আমাদের দেখছিল। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এমন গেরিলা আক্রমণ হয়নি। শাহবাগের সামনে থেকে রিকশা বদলিয়ে বেবিট্যাক্সি নেই। আমি জানি হাসপাতালে গেলে বিপদ। তাই আমার নিজের এলাকা পল্টনে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার দেখে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে বলল। নিয়ে গেলাম সোজা হলিফ্যামিলি হাসপাতালে। স্ট্রেচারে করে খানকে যখন ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি ওই বেবিট্যাক্সিতে বের হচ্ছিলাম, পুলিশের জিপ তখন সেখানে ঢুকছিল।’

এরপর ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান সংসদ বাতিলের ঘোষণা দিলে সে রাতেই জামি, নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ কয়েকজন গেরিলা মিলে সচিবালয়ে বোমা চার্জ করে এক্সটেনশন ভবনের ছাদ গুঁড়িয়ে দেন। এরপর ৭ মার্চ, রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার না করায় সন্ধ্যায় জিপে করে রেডিও স্টেশনের ভেতরে বোমা ছোড়েন জামিরা। ২৭ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে সংগ্রহ করা আটটি রাইফেল, স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত চারটি বন্দুক নিয়ে জামি, শহীদ মানিক, নাসিরউদ্দিনে ইউসুফ বাচ্চু, আলী আফসার, নাট্যশিল্পী আসাদ, টুনিসহ গেরিলা গ্রুপটি বুড়িগঙ্গার ওপারে কোনাখোলায় ক্যাম্প স্থাপন করে। ১ এপ্রিল গানবোটের সাহায্যে এবং এয়াররেইড করে পাকিস্তান সৈন্যরা জামিদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। এই আক্রমণে টিকতে না পেরে জামিরা দলের কিছু গেরিলাকে কলাতিয়া বাজারে রেখে ও অস্ত্র দিয়ে, মাত্র আটটি বন্দুক নিয়ে গভীর রাতে কার্ফুর মধ্যে ঢাকায় ফেরেন।

এপ্রিল মাসে টুনি ও আলী আফসারসহ মাদারীপুর যান জামি। মাদারীপুর সদর থেকে ১০-১২ মাইল দক্ষিণ-পূর্বের একটি গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য কৃষকদের সংগঠিত করেন। ২৪ এপ্রিল মাদারীপুর থেকে ঢাকায় রওনা দেন। একাত্তরের মে মাসে জামি, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ছেলে মিতু, আলী আফসার ও টুনি বঙ্গভবনের ভেতরে হাতবোমা ছুড়ে ঢাকা শহরে মারাত্মক আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এই আতঙ্ক সৃষ্টি করা ছিল কৌশল। যাতে পাকিস্তানিরা বাইরের বিশ্বকে দেশের ভিতরে চলা যুদ্ধাবস্থাকে আড়াল করতে না পারে। এরপর আজিমপুরের পাক আর্মি ট্রেনিং সেন্টারে বোমা চার্জ করেন জামি ও তার দল। ২৪ মে শান্তিকমিটির মিছিলে যে গাড়িতে চড়ে বোমা চার্জ করেন- যদিও সে বোমা বিস্ফোরিত হয়নি, তবে সেই গাড়ির চালক ধরা পড়ে যান পাকিস্তানিদের হাতে। সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। কিন্তু জামিসহ প্রায় সবার পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়। আত্মগোপনে চলে যান জামি।

এর মধ্যেই পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ায় জামিদের বাড়িতে পুলিশ ও আর্মির হামলা হয়। জামিরা তখন থাকতেন শান্তিনগরে শিল্পাচার্জ জয়নুল আবেদিনের পাশের বাড়িতে। সেনাবাহিনীর ভয়ে মাত্র তিন দিনের নোটিসে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয় বাড়িওয়ালা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বোন, সাত ও ১৪ বছর বয়সী দুই ভাই নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান জামির মা। জামির বড়ভাই মনিরুল ইসলাম মণি তখন বরিশালে আর মেজো ভাই মঈদুল ইসলাম চুনি তখন আগরতলার মেলাগড়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণরত ছিলেন।

জামিলের এক বন্ধু বাবুলের বাবা ছিলেন আনসারের কর্মকর্তা। বন্ধুর বাবার অফিসিয়াল পিস্তল গেরিলা যুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য বাবুলকে নিয়ে খিলগাঁও সরকারি কোয়ার্টারে যান জামি। কিন্তু গেট দিয়ে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আর্মির হাতে ধরা পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বাবুল দৌড়ে পালিয়ে যান। জামি ও এমরান বন্দুকসহ পাকিস্তানি আর্মির হাতে ধরা পড়েন।

সেগুনবাগিচায় মিলিটারি পুলিশ ক্যাম্পে টানা পাঁচ দিন জানালার শিকের সঙ্গে পিঠমোড়া করে বেঁধে রাখা হয় জামিকে। এর মধ্যে দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জামিসহ ছয়জনকে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায়। রাতে ১১তম ইঞ্জিনিয়াঙের কোয়ার্টার গার্ডে সারা রাত নির্যাতনের পর সকালে বন্দিদের নিয়ে যাওয়া হয় জয়দেবপুর রাজবাড়িতে দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের পরিত্যক্ত আবাসস্থানের বন্দিশিবিরে। ওখানে প্রায় ২০০ বন্দি ছিল। কেমন ছিল সেই দিনগুলো?

জামি জানিয়েছেন-
‘প্রত্যেকি দিন সকালে কাজ করার জন্য বের করত, বাথরুমে নেওয়ার সময় ১০ জনের এক একটা লাইন দিতে হতো। তারপর ব্যাঙের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে অথবা ডিগবাজি খেতে খেতে বাথরুমে যেতে হতো। যারা পিছিয়ে থাকত তাদের পিঠের ওপর লাঠির বাড়ি পড়ত।’

দুই মাস এরকম নির্যাতন শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জামিকে ঢাকার ইন্টেলিজেন্সের হেড কোয়ার্টারে নিয়ে আসে মেজর সাইফুল্লা খান। জামি জানান- ‘এখানে টিফিন ক্যারিয়ারের হাতলসহ একটি বাটি সবার জন্য বরাদ্দ থাকত। ওরা এটাকে মিস্টিন বলত। এর মধ্যে দুপুরে এবং বিকেলে একটু জাউ ভাত এবং লবণ ছাড়া সেদ্ধ ধুন্দুল দিত। ওই বাটি নিয়েই বাথরুমে যেতে হতো। ওই উল্টিয়ে মাথার নিচে দিয়ে ঘুমাতে হতো। গুদামের মধ্যেই রাত্রিকালীন বাথরুম ছিল। নবাবপুর স্কুলের নির্মল মাস্টারকে দিয়ে পায়খানা-প্রশ্রাব পরিষ্কার করানো হতো। অত্যাচারে নির্মল স্যার পাগল হয়ে গিয়েছিলেন।’

জামিসহ বন্দি ৩০ জনের কোর্ট মার্শাল শুরু হয়। বিচার শেষে জামিদের জেলে পাঠানো হয়। জেলে জামির সঙ্গে দেখা হয় রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ইকবাল আহমেদ, আগরতলার আসামি শামসুল হক, ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে ধরে আনা হাজী মোর্শেদ, হামিদুল হক চৌধুরীর নাতি আরিফুর ইসলামসহ অসংখ্য দেশপ্রেমিকের।

ইয়াহিয়া খানের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার অভিনব কৌশল হিসেবে ২৫ অক্টোবর জেল থেকে বেশকিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। গেরিলা জামি মুক্তি পান। তবে শর্ত ছিল সপ্তাহে এক দিন আর্মি হেড কোয়ার্টারে হাজিরা দিতে হবে।

জেল থেকে বেরিয়েই গেরিলা যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জামি। এবং আবার গেরিলা দলে যোগ দিয়ে বিজয়ের আগ পর্যন্ত অনেকগুলো লড়াইয়ে অংশ নেন।

জাহ্নবী

সফল টিনএজার হতে  সাত পরামর্শ

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
সফল টিনএজার হতে  সাত পরামর্শ

লেখাপড়া শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করেই সফল মানুষ হয়ে ওঠার প্রসঙ্গ আসে। এসব সফল মানুষের পেছনে পড়ে থাকে স্মৃতিময় টিনএজ বয়সের রঙিন দিনগুলো। কিন্তু অনেক টিনএজারের কাছে তার সময়টি খেলাধুলার মাঠ নয়, টিনএজ বয়স থেকেই তাদের জীবনে সফলতা অর্জনের পথ খুঁজতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাইলে একজন সফল টিনএজার হয়ে ওঠাও অসম্ভব কিছু নয়। যদিও এ বয়সে সফল হওয়াটা সহজ কথা নয়, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই তা সম্ভাবনাময়। এখানে টিনএজ বয়সেই সফলতা লাভের সাতটি পরামর্শ।

স্কুলে ভালো করো: ভবিষ্যৎ কেমন হবে- টিনএজাররা এর পরিচয় রাখে স্কুলজীবনে। তাই লেখাপড়ার কাজটি বেশ মনোযোগের সঙ্গে করা জরুরি। হতে পারে অনেক বিষয়ই ভালো ঠেকছে না; কিন্তু এরপরও সফল হয়ে ওঠার বিষয়টি মাথায় রেখে দারুণ একটা ফল বাগিয়ে নিতে ঝাঁপ দাও।

নিজস্বতা তৈরি করো: তুমি যেমন, সবসময় তেমনই থাকো। বড়রা এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও তুমি নিজের মতো থাকার চেষ্টা করবে। এর সঙ্গে যোগ করবে আত্মবিশ্বাস। নিজের সামর্থ্যের ওপর ভরসা করবে। এই গুণগুলোর পরিচর্যা করো। যা নিজের জন্য ভালো বলে মনে হয়, নিজস্বতা নিয়ে তা করতে কোনো দোষ নেই।

মাদক থেকে দূরে থাকো: কখনোই মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। আগ্রহের বশে একটু চেখে দেখার ইচ্ছাও মনে আনবে না। তোমার সব ভালো এবং সম্ভাবনাময় বিষয়ের ইতি ঘটাতে এই একটি বিষয়ই যথেষ্ট। বিন্দুমাত্র মাদকে আগ্রহ না রাখলে তোমার কিছুই যাবে-আসবে না। কাজেই টিনএজারদের মাদককে ঘৃণা করতে হবে।

নিজের গণ্ডিতে ভালো কিছু করো: তুমি যেখানে থাকো তার চারপাশের মানুষ এবং পরিবারের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা চালিয়ে যাও। নিজের লেখাপড়ার ক্ষতি না করেও ছোট ছোট অথচ সমাজের জন্য ভালো অনেক কিছুই করা যায়। এতে করে তুমি সুখী হবে এবং বড় কিছু করার আশা জন্ম নেবে। এর ফলে সম্ভাবনার জানালাগুলো খুলে যাবে, যা তুমি আগে কখনো দেখনি।

জীবনের লক্ষ্য স্থির করো: টিনএজ বয়সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো, জীবনের লক্ষ্য স্থির করা। একবার লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে গেলে নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে যেতে সুবিধা হবে তোমার। লক্ষ্যকে ক্যারিয়ারের সঙ্গে যুক্ত করো। এতে চলার পথের সন্ধান পাবে। এই বয়স থেকেই পথের দিশা পেলে তোমাকে ঠেকায় কে?

ব্যবহার ভালো করো: পরিচিত বা অপরিচিত সবার সঙ্গেই ভালো ব্যবহার করো। এটি তোমার দারুণ এক ব্যক্তিত্ব তৈরি করে দেবে। বন্ধুমহল, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বড়দের পরামর্শ শুনবে। সেখান থেকে নিজের জন্য ভালো মনে হয় এমন পরামর্শগুলো গ্রহণ করো। আচরণ ভালো থাকলে সবাই তোমাকে সুপরামর্শই দেবে।

ভালো বন্ধুমহল তৈরি করো: বন্ধুরা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে যদি ভালোদের সমাগম ঘটে, তবে তোমার জীবনে ভালো কিছু না কিছু ঘটতেই থাকবে। তাই তোমার মতো সফল টিনএজারদেরই বন্ধু হিসেবে পাওয়ার চেষ্টা করো। সুবিধার নয়, এমন বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করো। এসব বন্ধু জীবনটাকে বিষাক্ত করে দেবে।

জাহ্নবী

ভ্রমণকন্যা আসমা আজমেরী

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০২ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০২ পিএম
ভ্রমণকন্যা আসমা আজমেরী
বাংলাদেশের পতাকা হাতে আসমা আজমেরী

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাভেলার্সদের মধ্য অন্যতম এক নাম কাজী আসমা আজমেরী। ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। ইতোমধ্যে ১৪৫টি দেশ ভ্রমণ করছেন। বর্তমানে তিনি গাম্বিয়ায় রয়েছেন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট হওয়ার কারণে তার ভিসা পেতে সমস্যা হয়। তবু বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকার বাহক হিসেবেই ঘুরবেন বিশ্বময়।

আসমা খুলনা শহরে বড় হয়েছেন। কাজী গোলাম কিবরিয়া ও কাজী সাহিদা আহমেদ দম্পতির একমাত্র মেয়ে তিনি। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে স্কুলে আসা-যাওয়া করতেন। এক দিন স্কুল ছুটির পর তার মা নিতে এলেন না। অবশেষে তিনি একাই সাহস করে বাসার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন। হাঁটছেন আর তাকিয়ে দেখছেন আকাশটাকে। আকাশ দেখে তার মনে হলো, সে আকাশের শেষ সীমানা দেখবেন। কিন্তু আকাশের শেষ সীমানা আর দেখতে পাওয়া যায় না। সে দিন তিনি বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হেঁটেছিলেন। পরে এলাকাবাসী তাকে ধরে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দেন।

আসমা বড় ইকবালনগর গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে স্নাতক এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন। আসমা থাকেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। সেখান থেকে সারা দুনিয়া ঘুরে লাটাই-সুতার টানে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। আবার পাখির মতো উড়াল দেন পরবর্তী না দেখা দেশে।

শুধু জনপ্রিয়তার জন্য নয়, আসমা দেশ ভ্রমণ করেন নিজের শখে। শখের বশে ভ্রমণ শুরু করলেও এখন অনুভব করেন, তিনি ভ্রমণের মাধ্যমে নিজ দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পারছেন। সেটা তাকে বেশ আনন্দ দেয়। তার ইচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব দেশ ভ্রমণ পূর্ণ করবেন। ভ্রমণ বিশ্বে বাংলাদেশি হিসেবে ইতিহাস গড়তে চান তিনি। আসমা বলেন, আমার বিশ্ব ভ্রমণের শুরুটা খুব একটা সুখকর ছিল না। ব্যাপারটা হলো, (আমাদের দেশে এমন একটা ধারণা প্রচলিত) বাংলাদেশের মেয়েরা ভ্রমণ করতে পারে না, কিন্তু ছেলেরা পারলে মেয়েরা কেন পারবে না! 
২০০৯ সালে নেপাল ভ্রমণ দিয়েই আমার বিশ্ব ভ্রমণের যাত্রা শুরু, বলেন তিনি। তবে শুরুতে ইচ্ছা ছিল ৫০টি দেশ ঘোরার, কিন্তু ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তার ছয় মহাদেশে ভ্রমণ করা দেশের সংখ্যা ১৪২টি।

আজমেরি বলেন, প্রথমে আমার পরিবার ভ্রমণের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। আমার আব্বু ভ্রমণ খরচ দিতে না চাইলেও আমার মা তার গহনা বিক্রির টাকায় আমাকে খরচ জোগাতে সাহায্য করেন। তবে এটাই শুধু বাধা ছিল না, আমার পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকেরা আমার একা ঘোরার বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে নেয় এবং আমার বাবাকে তারা অভিযোগ করে যার উত্তরে বাবা আমাকে আমার একা ঘোরার বিষয়টি কাউকে না জানাতে বলেছিলেন। তবে যখন আমি ২০১৮ সালে ১০০টি দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করি, তখন আমার পরিবারের লোকেরা বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে নেয়, বিশেষ করে যারা প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন।

বাংলাদেশি পাসপোর্ট হিসেবে অনেক দেশের ভিসা পেতে নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়, দীর্ঘদিন লেগে যায়। অনেক দেশের ভিসা পেতে খুব সমস্যা হয়ে যায়। সাউথ আফ্রিকার ভিসা পেতে বলতে গেলে আমার দশ বছর লেগে গেছে। প্রথম ২০১০ সালে যেতে চেয়েছি সাউথ আফ্রিকায়, তখন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার জন্য যেতে চেয়েছিলাম। তখন বলা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার কলম্বো থেকে নিতে হবে ভিসা। ২০১১ সালে কলম্বোতে যাই তখন আমাকে বলা হয় ইনভাইটেশন ছাড়া তারা আমাকে ভিসা দেবে না। আমি তাদের বললাম সেখানে তো আমি কাউকে চিনি না, আমি একজন বিশ্ব পর্যটক। তখন তারা আমাকে আমাদের হোম মিনিস্ট্রি থেকে লেটার নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু সে সময় আর হয়ে ওঠেনি। আমি যখন নিউজিল্যান্ডে থাকি তখনো চেষ্টা করেছি, ভিসা পাইনি। সর্বশেষ দিল্লি থেকে ভিসা পেয়েছি। এমন নানান ঘটনা আছে, অনেক দেশ আছে যেগুলো ভিসা পেতে আমার খুব বিড়ম্বনা হয়েছে। সেনেগালের ভিসা পেতে ১৬ মাস সময় লেগেছে, আরও অনেক দেশ আছে যেখানে ভিসা পাওয়া অনেক সমস্যা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য অনেক দেশের ভিসা পাওয়া খুবই কষ্টকর-দুর্লভ, বলতে গেলে পাওয়াই যায় না। সুইডিশ বা অন্য ভালো দেশের পাসপোর্ট হোল্ডার টিকিট কাটছে আর চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই বাংলাদেশি পাসপোর্টে আমরা অনেক দেশেই যেতে পারি না, ভিসা পাই না।

তিনি আরও বলেন, আমি জর্জিয়া থেকে আজারবাইজানের ভিসা করেছি, সেটা ছিল আমার ৯৬তম দেশ ভ্রমণ। প্রথমে তো তারা ভিসা দেবেই না, তারা বলেছে দিল্লিতে যেতে হবে। আমি প্রতিদিন জর্ডানের অফিসে যেতাম, অনুরোধ করতাম ভিসা দেওয়ার জন্য। অনেক অনুরোধের পর তারা দিয়েছিল ৩ দিনের ভিসা। তারা দেখেছে আমি অনেক দেশ ঘুরেছি।

এরপর টানা দুই বছর অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি করার পর আবারো জুন মাসে তিনি ভ্রমণে বের হন। ১৭ জুন সেনেগালে ১৪৪তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেন। সেখান থেকে জাহাজে তিনি জিংসুয়াং শহরে যান। ২৭ জুন তিনি গাম্বিয়ায় ফিরে আসেন।

জাহ্নবী

 

টিনএজারদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০০ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০১:০০ পিএম
টিনএজারদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই

পৃথিবীর এখন সবচেয়ে আলোচিত দুটি বিষয়ের একটি হলো রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধ, অপরটি ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েল যুদ্ধ। গত বছরের অক্টোবরে নতুন করে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের যুদ্ধ এখনো চলমান। জাতিসংঘের মতে, এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছে শিশু। অতীত ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, বিশ্বের প্রতিটি দেশের যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছে নারী ও শিশু।

সহিংসতা-সংঘাতের মধ্যে পক্ষ বা বিপক্ষ শক্তির কাছে নারী ও শিশুরা সহজ শিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।  সদ্য গত হওয়া বছরে গাজায় নিহত হওয়া মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু আর নারী। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজায় প্রতি দশ মিনিটে নিহত হচ্ছে একটি শিশু। জাতিসংঘ গাজাকে শিশুদের সমাধি হিসেবে ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গাজাকে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যে শিশুদের হাতে নিহিত রয়েছে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, সেই শিশুরাই এখন হুমকির মুখে।  আজকে জন্ম নেওয়া শিশুটি এক সময় বেড়ে উঠবে। শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে সেই শিশুটি একদিন প্রবেশ করবে তারুণ্যে। একদিন তারুণ্যের দুর্বার শক্তি দিয়ে সব বাধা-বিপত্তি পেছনে ফেলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেবে বিশ্বকে। শিশুরা স্রষ্টার এক অপরূপ সৃষ্টি। তাদের মধ্যে থাকে না অপরের ক্ষতি করার কোনো মনোবাসনা। বিশ্বের কয়েক কোটি শিশুর মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু শিশু তাদের সুন্দর শৈশবটা উপভোগ করতে পারছে। আবার অনেক শিশু বেঁচে থেকেও ধুঁকে ধুঁকে মরছে। আমরা অনাগত কিংবা সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য এখনো নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। পারিনি ছোট্ট মানুষগুলোর জন্য নিরাপদ জায়গা করে দিতে। হয়তো কখনো এটা সম্ভব হবে কি-না জানি না। এই বিশ্ব আজ বড় ব্যর্থ। ব্যর্থতার দায় যতটা না পরিবার বা সমাজের ওপর বর্তায়, বর্তমান সময়ে তার চেয়ে বেশি বর্তায় বিশ্বের ওপর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-সংঘাত এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের ঝনঝনানি আর হিংস্রতার মধ্যে করুণ দিনাতিপাত করছে অনেক শিশু। রাতটা কোনোভাবে পার করলেও, ভোরটা শুরু করছে বোমার শব্দ শুনে। কিংবা নিশ্চিন্তে রাত পার করে যে ভোরের নতুন সূর্য দেখবে, এতটুকু নিশ্চিয়তাও শিশুদের দিতে পারছে না অনেক দেশ। এক দেশ অন্য দেশের প্রতিহিংসার কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। 

বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শিশুদের নানাভাবে অপব্যবহার করছে। বৃহৎ স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে এসব নিষ্পাপ শিশুকে। কোমল মনে ছড়িয়ে দিচ্ছে হিংস্রতার বিষবাষ্প। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ঠেলে দিচ্ছে অপরাধজগতের দিকে। ফিলিস্তিন কিংবা ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বিশেষজ্ঞরা সব সময় সতর্ক করছেন- এসব চলমান ভয়াবহ সংঘাত প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলছে। গাজার চলমান যুদ্ধে নিরপরাধ শিশুরা নিহত হলেও অদ্ভুত হলেও সত্যি যে, এ ব্যাপারে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কোনো উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমনকি জাতিসংঘও এটা বন্ধ করতে ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টা ছোট হলেও গভীর উদ্বেগ আর ভাবার বিষয়। জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন সনদ বা সিআরসিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আমেরিকার মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলো যদি শিশুদের অধিকারের বিষয়ে এভাবে চুপ থাকে, তা হলে আগামী প্রজন্মের জন্য অন্ধকার এক পৃথিবী অপেক্ষা করে আছে। আজ এ দেশ তো কাল ওই দেশ, এভাবে কি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে সংঘাত-সহিংসতার রেশ! যেকোনো সংঘাতে শিশুরা আর কত বলির পাঁঠা হবে? এই প্রশ্ন কি তাদের মনে জাগেনি কখনো। এসব থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রগুলো একটু সচেতন হলেই পারে শিশুদের নির্মম মৃত্যু রোধ করতে। অন্তরে শিশুদের প্রতি এতটুকু ভালোবাসা থাকলে, বিভিন্ন দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অনায়াসে একটি শিশুবান্ধব পৃথিবী সহজে গড়ে তোলা যায়। অন্তত শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো চেষ্টা করলে শিশুদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে আগামী পৃথিবীর কল্যাণের জন্য এতটুকু করতে পারে। শিশুদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। পরিশেষে বলতে ইচ্ছে করে, সংঘাত-সহিংসতা নিপাত যাক- শিশুরা পরিত্রাণ পাক।

জাহ্নবী

রোবট বানান সানি জুবায়ের

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
রোবট বানান সানি জুবায়ের
সানি জুবায়ের ও তার দল

সানি জুবায়ের। দেশকে তাক লাগিয়ে বিজ্ঞানে প্রতিনিয়তই নতুন ইতিহাস গড়ে চলেছেন বাংলাদেশি এই তরুণ উদ্ভাবক। নতুন নতুন আবিষ্কারে যেন বাধাহীন তার পথচলা।

জুবায়েরের স্কুলজীবন কাটে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০২০ সালে এইচএসসি শেষ করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে। বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করছেন। হাতের স্পর্শ ছাড়াই কম্পিউটার চালু, দুর্ঘটনা এড়াতে স্বয়ংক্রিয় ব্রেক, গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে রিসিভারসহ এমন বেশ কয়েকটি চমৎকার প্রযুক্তি আবিষ্কার করে বেশ আলোচিত সানি জুবায়ের। সম্প্রতি ‘ফায়ার ফাইটিং রোবট’ বানিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

ভালোবাসেন গবেষণাধর্মী কাজ এবং রোবটিক্স। গত ৮ বছর ধরে এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। রোবটিক্সের প্রতি ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই। হাতেখড়ি হয়েছে নিজে নিজেই ছোটবেলায়। খুঁজে বেড়ান যন্ত্রের ভেতরের ভাষাকে। রেজিস্টার, ট্রানজিস্টর আর সার্কিট বোর্ড প্রতিনিয়তই তাকে কৌতূহল-উদ্দীপ্ত করত। নতুন কোনো কিছু করার চিন্তা থেকে টুকিটাকি ছোট ছোট জিনিস বানাতে শুরু করেন। অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন আন্তস্কুল ও কলেজ এবং জাতীয় বিজ্ঞান মেলায়। ধীরে ধীরে বানাতে শুরু করেন অত্যাধুনিক কিছু রোবট।

সানি জুবায়ের বলেন, বেশ কয়েকটি অটোনোমাস রোবট এবং মার্স রোভার বানাতে সক্ষম হই। কাজ করেছি অগ্নিনির্বাপণের জন্য ডিফেন্ডার নামক রোবটের ওপর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এই রোবটকে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য এর পূর্বে কাজ করা হয়েছে সিগমা রোবটে, যেটি কি-না ডিফেন্ডার রোবটের প্রাথমিক ভার্সন ছিল এবং সামনেও বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। প্রতিনিয়ত সেসব প্রকল্পের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

সানি জুবায়েরের বানানো রোবট

এই তরুণ উদ্ভাবকের বানানো কিছু রোবট-
FR21 (Fighter Robot)- সামরিক কাজে ব্যবহার উপযোগী একটি রোবট।
Brain Bot- সম্পূর্ণ অটোনোমাস-ভিত্তিক দৈনিক কাজে সাহায্যকারী রোবট।
Atla- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি মঙ্গল রোভার।
Farmover -একটি কৃষি রোবট।
Falcon XXIV - একটি রেসিং রোবট।
Sigma 21- একটি অগ্নিনির্বাপক রোবট।
Atlas AUV -একটি অটোনোমাস পরীক্ষামূলক সাবমেরিন।
Waterbot - সাগরের পানি পরিষ্কারকারক একটি রোবট।
Sigma – আগুন নির্বাপণকারী রোবট।

সানি জুবায়ের জানান তার অর্জনের কথা- ১৬টি জাতীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় পদক অর্জন করি। যার মধ্যে ছিল জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ, ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা, জাতীয় রোবটিক চ্যালেঞ্জ, জাতীয় রোবট অলিম্পিয়াডসহ আরও কয়েকটি প্রতিযোগিতা। আন্তস্কুল এবং কলেজ প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৫৫টি পুরস্কার পাই। এর মধ্যে ছিল- নটর ডেম বিজ্ঞান মেলা, আদমজী বিজ্ঞান মেলা, আইডিয়াল বিজ্ঞান মেলা, বিএন এমপিসি আয়োজিত বিজ্ঞান মেলা, ইম্পেরিয়াল আয়োজিত বিজ্ঞান মেলা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার বিজ্ঞান মেলাসহ আরও বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা।

এ ছাড়াও তিনি জানান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় ১৫টি পদক অর্জন করি। এর মধ্যে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ফ্যাব ফেস্ট চ্যাম্পিয়ন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সিএসই ফেস্ট চ্যাম্পিয়ন। আইইউবি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত টেক ফেস্ট চ্যাম্পিয়ন। খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত টেকভ্যাল চ্যাম্পিয়ন। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি আয়োজিত ম্যাক্কেলারেশন চ্যাম্পিয়ন। এনএসইউ আয়োজিত ন্যাশনাল রোবটিক কম্পিটিশন চ্যাম্পিয়ন ইত্যাদি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমি এবং আমার দল বাংলাদেশকে সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করি। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১৮ জন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় প্রতিযোগিতায় আমার দলসহ অংশগ্রহণ করি। আমাদের দলটির মূল উদ্দেশ্য হলো বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের কৃতিত্বকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৌরবের সাথে উপস্থাপন করা। পাশাপাশি দেশের গুরুতর কিছু সমস্যাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা।

জাহ্নবী

তারুণ্যের বিকাশে অনুষ্ঠিত হল ‘শান্তি ও সম্প্রীতি সংলাপ’

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
তারুণ্যের বিকাশে অনুষ্ঠিত হল ‘শান্তি ও সম্প্রীতি সংলাপ’

রাজধানীর গুলশানের ইএমকে সেন্টারে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘শান্তি ও সম্প্রীতি সংলাপ’। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ইয়ুথ এংগেজমেন্ট ইন ডেমোক্রেসি প্রকল্পের আওতায় ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই সংলাপে তরুণ ও অভিজ্ঞদের মিলনমেলা ঘটে।

সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও ইয়ুথ এংগেজমেন্ট ইন ডেমোক্রেসি প্রকল্প সম্পর্কে কথা বলেন ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ সিদ্দিকী। 
দুটি সেশনে আয়োজিত সংলাপে উঠে আসে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে তরুণদের চ্যালেঞ্জগুলো। পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথিরা সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশকিছু পরামর্শ ও সুপারিশ দেন । ‘সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামের প্রথম সেশনে  ড.মাকসুদা সুলতানার সঞ্চালনায় শিল্পী টিপু মুনশি, নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত, অধ্যাপক আফসানা ফেরদৌসি,বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাহী জাবেদ আহমেদ তরুণদের সাথে কথা বলেন। 

‘সাফল্যের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন’ শিরোনামে দ্বিতীয় পর্বে ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক নন্দিত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন কেয়ার গিভিং বিশেষজ্ঞ শিল্পী আক্তার, সাকিব রায়হান, ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বিভাগের প্রধান জাহিদা বেগম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রকল্প বিশেষজ্ঞ মানিক মাহমুদ ও সুপরিচিত বক্তা ও কর্পোরেট ব্যাক্তিত্ব সোলায়মান সুখন। 

অতিথিদের সাথে আলোচনা ও আলাপচারিতায় অভিজ্ঞদের পরামর্শে সম্মৃদ্ধ হয় তরুণরা ।  

সংলাপের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের বিভিন্ন খাতের উদীয়মান তরুণ এবং অভিজ্ঞরা যাতে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন এবং নতুন আইডিয়া ও সমাধান খুঁজে পান। তরুণদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে কিভাবে তাদের শিক্ষায়, কর্মসংস্থানে এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নে সহায়তা করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। 

এছাড়া বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের মধ্যে সমন্বয় করে জীবনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর ওপর জোর দেয়া হয়।

তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশের জন্য জাতীয় সংসদসহ সবক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। সংলাপে বক্তারা তরুণদেরকে সফল উদ্যোক্তা হতে আগে দক্ষতা উন্নয়নের পরামর্শ দেন। 

সংলাপে তরুণদের প্রতিভা, উদ্ভাবনী দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে উন্নত করার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা স্বপ্ন পূরণের পথে এবং বাংলাদেশের আর্থিক-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পান। 

আয়োজনের শেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের বনশ্রী মিত্রা নিয়োগী।