ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

জীবনের প্রয়োজনে

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৪১ এএম
জীবনের প্রয়োজনে

দীর্ঘক্ষণ জ্যামে বসে থাকায় বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে বলে উঠলাম,  মামা, আপনি এ রাস্তায় না এসে সামনের ওই গলি ধরে গেলে এতক্ষণ পৌঁছে যেতাম। আপনি বরং রিকশা ঘুরিয়ে ওই গলি দিয়েই চলেন।

এখন সব রাস্তাই ভিড়। কোনদিক যাব কন?

রিকশাওয়ালার এ কথা শুনে হতাশ হয়ে চুপ করে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে স্ক্রলিং করে যাচ্ছি। যখন কোনোকিছুতে মন বসে না, বর্ষার আকাশের মতো বিষণ্ণ থাকে মনটা, তখন ফেসবুকিং করেই দিব্যি সময়টা কাটিয়ে দেওয়া যায়। কে কী পোস্ট করল, কোন বন্ধু কার সঙ্গে ঘুরতে গেল, কোন বান্ধবী নতুন শপিং করে স্টোরি দিল সেসবের দিকে আর মনোযোগ থাকে না। সময় কাটনোর জন্যই হয়তো এ এলোপাতাড়ি ফেসবুকিং অন্যতম একটা মাধ্যম হতে পারে।

সকালে ক্লাস করতে গিয়ে হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারও ফোনকল পেলে মানুষের মাঝে স্বর্গীয় সুখানুভূতি লাভ করে। আবার কারও ফোনকল পেলে বিরক্তিতে মাথা গরম হওয়ার জোগাড়। আমার বেলায় হয়েছে দ্বিতীয়টা। খুব বেশি মাথা গরম না হলেও একটু যে বিরক্ত হয়েছি সেটা অস্বীকার করে পাপের ভাগিদার হওয়ার ইচ্ছে নেই। ইব্রাহিম ভাই ফোন দিয়ে জানতে চাইল ফ্রি আছি কি না। ফুফাতো ভাই অনেকদিন পর ফোন দেওয়ায় মনে একটু আনন্দ পেলাম। ভাবলাম, ভাই হয়তো সিলেট থেকে আমার ক্যাম্পাসে এসে খোঁজ নিচ্ছে আমার। দেখা-সাক্ষাৎ করবে, ভালো লাগবে। শহুরে একলা জীবনে বদ্ধপরিবেশে আপনজনদের কাছে পেলে মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। কিন্তু ভাই তার গুরুত্বপূর্ণ কাজের একাংশ আমার ওপর চাপিয়ে দিল। ভাই নিজে বই লেখেন, এডিটিং করেন। সুদূর সিলেট থেকে ঢাকার বাংলাবাজারে এসে পেপারপত্র কেনা, প্রিন্টিং পাবলিকেশন, বাঁধাই করা সবসময় উনার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই ছোট ভাই হিসেবে মাঝে মাঝে সে কাজের দায়িত্ব অর্পিত হয় আমার ওপরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাবাজার খুব বেশি দূরে না বলে আমাকেই যেতে হয়।

তবে আজ হঠাৎ করেই বিরক্তি চেপে বসল মাথায়। বিরক্তিটা আরও চরম হয়ে উঠল যখন জুয়েল আমার সঙ্গে যেতে অস্বীকার করল। ঢাকা শহরের এই যানজটপূর্ণ পরিবেশ, ধুলাবালি জ্যামের কারণেই একা যেতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু অসুস্থতার  অজুহাত দেখিয়ে না করে দিল জুয়েল। তাই বাধ্য হয়ে একাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ক্লাস শেষে গোসল, দুপুরের খাবার, নামাজের পরেই বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে ফুলবাড়ী বাসস্যান্ডের উদ্দেশে সোজা হাঁটা ধরলাম।

এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সময় কিছুটা গেলেও রিকশা বিন্দুমাত্র চলার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। বাবুবাজার থেকে শাহ পার্কে আসতে যে সময় লাগল, তার থেকেও চার-পাঁচ গুণ বেশি সময় ধরে রিকশা দাঁড়িয়ে আছে পিলারের মতো। জ্যামের গুমোট পরিবেশ আর যানজটের শব্দে মাথায় বোম ফাটার মতো অবস্থা। বিরক্তি এবং অস্থিরতা দূর করতে ভাবলাম রিকশাওয়ালা মামার সঙ্গে একটু গল্প করি। যেটা সচরাচর সব রিকশাওয়ালার সঙ্গেই করা হয় আমার। বিশেষ করে যখন রিকশায় একা যাতায়াত করি। এই প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে যতবেশি মেশা যায়, তাদের যত গভীরে যাওয়া যায়, ততই জীবনের মানে বোঝা যায়। জীবনকে উপলব্ধি করা যায় নতুন আঙিকে, নতুন অবয়বে। এই উপেক্ষিত মানুষগুলো সবার কাছে নিজেদের তুলে ধরে না। যদি কেউ তাদের জানতে চায়, বুঝতে চায় তখন এই মানুষগুলো তাদের সবকিছু উন্মুক্ত করেই উপস্থাপন করে। নিজের দুঃখের কাহিনি অন্যের কাছে প্রকাশ করলে যেমন ব্যক্তির দুঃখের কিছুটা হলেও লাঘব হয়, তেমনি শ্রোতাও নতুন করে জীবনকে উপভোগ করতে পারে, নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে নতুন করে। তাই, বিশেষ করে রিকশা-মামাদের সঙ্গে আমার আত্মিক বন্ধনটা একটু বেশি।

মামা, আপনার দেশের বাড়ি কই?
কুষ্টে।

ভাষা শুনে বুঝলাম কুষ্টিয়া। সব মানুষই আঞ্চলিক ভাষায়  নিজের পরিচয় তুলে ধরতে খুশি হয়। এ রিকশাওয়ালাও অন্যের থেকে ব্যতিক্রম নয়। 
বললাম, এ যে আমার পাশের জেলা। আমার বাড়ি ঝিনাইদহে।

মামা একটু কৌতূহল প্রকাশ করে বলল, ঝিনাইদার কনে আপনার বাসা?
মহেশপুর।

আপনার এলাকায় তো প্রায়ই যাই। সেদিনও বারোবাজার গিছিলাম অটো নিয়া।

রিকশা-মামার উপজেলার নাম জানতে চাওয়ায় বলল, তার বাড়ি দৌলতপুর উপজেলায়।

এবার আমার একটু অবাক হওয়ার পালা। জিজ্ঞেস করলাম, মামা আপনার অটো কই আর আপনি গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় কেন?

দেখলাম মামার মুখটা মলিন হয়ে গেল। বুঝলাম ভাগ্য তার সঙ্গে খেলা করেছে। মানুষের জীবনে এমন অনেক ঘটনা লুকায়িত থাকে, যা তার বাহ্যিক অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই। দেখলে বলা যাবে না যে, এই লোকটা সর্বহারা। গ্রামের সর্বস্ব হারিয়ে শহরের উদ্বাস্তু সে। তেমনই এক ভুক্তভোগী এই রিকশা-মামা।

গ্রামে থাকতি অটো চালাতাম। এক রাতি অটো নিয়ে বাড়িতে আসার পথে ডাকাতের খপ্পরে পড়ছিলাম। বলে, গাড়ি দে! না হলি তোক মাইরে ফেলব।
আমি ভাবলাম, গাড়ি নিয়ে যাক নিক। জীবনে বাঁইচে থাকলি গাড়ি কত আসপি। আমি মইরে গেলি আমার বৌ-বাচ্চার কিডা দেখপি, কি হবি তাগার। ডাকাতরা আমাক গাছের সঙ্গে বাঁইধে গাড়ি নিয়ে চইলে গেল।

আমি জানতে চাইলাম, থানায় মামলা করেননি?

মামলা কইরে আর কি হবি! গরিবের জন্যি কি আইন আছে? যার টাকার দেমাগ আছে, আইন তাগের জন্যি। আর মামলা করতিও তো টাকা লাগে, এত টাকা কনে পাব?

আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। ভাবলাম কিছু বলব। কিন্তু ভাষা খুঁজে পেলাম না।

জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এবার মামা নিজেও বিরক্ত হয়ে গেল। এবার রিকশা ঘুরিয়ে আমার বলা গলির দিকেই চলতে শুরু করল। এদিকেও ভিড়। তবে তুলনামূলক কম। এবার মামা নিজেই বলতে শুরু করল। বাঁধ ভেঙে গেলে পানির স্রোতকে যেমন আটকে রাখা কঠিন হয়ে যায়, মানুষও তেমন দুঃখ ভাগ করার মানুষ পেলে সবটুকু উগলে দিয়ে বলতে শুরু করে।

আমি পাঁচ-সাত দিন হইলো ঢাকা আইচি। বাড়ি থেইকে আর কি হবি! জমিও নাই যে চাষ করব। আগেও ঢাকায় রিকশা চালাতাম। তাই আবার চলে আলাম। বাড়ি থাকলি পরিবার নিয়ে না খায়া মরা লাগত।

এখানে পরিবারের কেউ নেই?

না, সবাই গিরামে আছে। ঢাকা শহরে যে খরচ। নিজেরই প্যাট চলে না আবার বাড়ির লোকে!!

কে কে আছে আপনার পরিবারে?

তিন মেয়া আছে। সবাইরে বিয়ে দিইচি। এক ছাওয়াল আছে। সে মাদরাসায় সেভেনে পড়ে।

রিকশা কি নিজের মামা, নাকি ভাড়া নিছেন?

মামা একটু শুকনো হাসি হেসে বলল, নিজে রিকশা কোনে পাব কন? ভাড়ায় চালাই। নিজে কিনলিও দুই দিন পর ছিনতাই হয়ে যাবি। গেরেজ থাকি নেওয়া আসি। কাজ শেষে ওকেনেই রাইখে দিই।

অবশেষে আমরা মা-বাবা প্রিন্টিংয়ের সামনে পৌঁছালাম। ভাইও ইতোমধ্যে ফোন করে জানতে চাইল কাজ কতদূর শেষ হয়েছে। কাগজগুলো দোকানে রেখে মামাকে বললাম, চলেন কোথাও বসে চা-টা খাই,
না মামা, আপনে খান। আমার আবার অন্য জাগায় যাওয়া লাগবি।

আমি আর জোর করলাম না। উনার কাছে আমার চায়ের অফার থেকে নতুন যাত্রী ধরা বেশি প্রয়োজন।

পকেটে হাত দিয়ে দেখি টাকা এখনো অতিরিক্ত কিছু আছে। ভাই খরচ বাবদ কিছু বেশি টাকা দিয়েছে আমায় বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য। গুনে দেখলাম ৫০০-এ মতো। তাই বড়োলোকি ভাব ধরে রিকশা-মামাকে বললাম আমায় পার্কের বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিতে।

সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে। আসরের ওয়াক্ত ইতোমধ্যে কাজা হয়ে গেছে। মাগরিবটা যেন কাজা না হয় তাই দ্রুত পা চালিয়ে বাসে উঠে বসলাম। উদ্দেশ্য হলো (ছাত্রাবাস) মসজিদে মাগরিব নামাজ পড়া। লোকাল হলেও বাসটা মোটামুটি খালি। মাঝামাঝি একটা সিটে বসে পড়লাম। ফোনটা বের করে ফেসবুকিং করে জ্যাম ও ক্লান্তিটা দূর করার চেষ্টা করতে যাচ্ছিলাম। তখনই মনে পড়ে গেল সেই রিকশা-মামার কথা। আসার সময় অবশ্য ভাড়া থেকে অতিরিক্ত আরও ২০ টাকা বেশি দিয়ে আসছি। উনার করুণ দশার জন্য নাকি একজন রিকশাচালক বলে টাকাটা দিলাম তা জানি না। তবে ভাবলাম দেওয়া উচিত।

নিয়তি মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। পরিবেশ, পরিস্থিতি মানুষকে পরিবর্তন হতে শেখায়। নিয়তির কারণেই গ্রামের অটোওয়ালা আজ ঢাকার রিকশাওয়ালা। গ্রামের মেধাবী ছেলেটা শহরের নামমাত্র বেতনের চাকরিওয়ালা। পেটের দায়ে, জীবনের প্রয়োজনে দুটি ভিন্ন শ্রেণির মানুষ একই পথের পথিক। কেউ-বা রিকশা চালিয়ে জীবনের প্রয়োজন মেটায়, কেউ-বা পেপারপত্র বিক্রি, প্রিন্টিং করে।

জীবন এক রহস্যময় পর্দায় ঘেরা। রয়েছে হাজারো স্তর। এই স্তর ভেদ করতে করতে উপস্থিত হয় জীবনের যবনিকাপাতে।

দর্শন বিভাগ 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাহ্নবী

গাজার পথে গ্রেটা থুনবার্গ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
গাজার পথে গ্রেটা থুনবার্গ
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী তরুণ জলবায়ুকর্মী হিসেবে পরিচিত মুখ গ্রেটা থুনবার্গ। ২০১৮ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’ নামক এক জলবায়ু আন্দোলন দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন থুনবার্গ। এরপর থেকে শুধু পরিবেশ নয় মানবাধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়েই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি হামলার বর্বরতা নিয়েও সরব হয়েছেন বেশ কয়েকবার।

এবার ইসরায়েলি নৌ অবরোধ ভাঙতে গাজার পথে রওনা দিয়েছেন থুনবার্গ। গত রোববার দক্ষিণ ইতালির সিসিলির কাটানিয়া বন্দর থেকে  ‘ম্যাডলিন’ নামের একটি ত্রাণবাহী জাহাজে করে রওনা দিয়েছেন তিনি। জাহাজটি পরিচালনা করছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা। থুনবার্গের সঙ্গে আছেন গেম অফ থ্রোনস অভিনেতা লিয়াম কানিংহ্যাম, ইউরোপীয় সংসদের ফরাসি-প্যালেস্তাইন সদস্য রিমা হাসান সহ মোট ১২ জন সদস্য। জাহাজ যাত্রার মাধ্যমে গাজা উপকূলবর্তী বিধ্বস্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দিবেন তারা। সেই সঙ্গে গাজার উপর সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে ইসরায়েলি অবরোধের প্রতিবাদ এই যাত্রার উদ্দেশ্য।

ঝুঁকিপূর্ণ এই সফর শুরুর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে থুনবার্গ বলেন, ‘আমরা এটা করছি কারণ, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন, আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, যেই মুহূর্তে আমরা চেষ্টা করা বন্ধ করব, সেই মুহূর্তে আমরা আমাদের মানবতা হারিয়ে ফেলব। এই মিশনটা যত বিপজ্জনকই হোক না কেন, এটি সরাসরি সম্প্রচারিত গণহত্যা দেখেও পুরো বিশ্বের নীরব থাকার মতো ভয়ংকর না।’

এর আগে মে মাসের শুরুতে গ্রেটা প্রথম ফ্রিডম ফ্লোটিলার ত্রাণবাহী জাহাজে করে গাজা সফরের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার পরপরই সংস্থার ‘কনশিয়েন্স’ নামের একটি জাহাজে গাজা যাবার পথে ড্রোন হামলা হলে তা স্থগিত হয়ে পড়ে। এবার কোনোরকম বাঁধা, দুর্যোগ না আসলে সাত দিনের ভিতর গাজা পৌঁছাতে পারবেন বলে আশাবাদী এই তরুণ এক্টিভিস্ট।

না পড়লেই নয়...

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
না পড়লেই নয়...

কৈশোরের সুন্দর অনুভূতিগুলোর মধ্যে অন্যতম নতুন কোনো বই পড়ে রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠা। বইয়ের পাতায় কিশোরের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভিন্ন কোনো জাতি, সংস্কৃতি, ইতিহাসের জগৎ। যেন পড়তে পড়তেই দেখে ফেলা যায় পৃথিবীর অপর প্রান্তের চিত্র। আবার বই পড়তে পড়তে খুলে যায় কিশোর মনের ভাবনা, সৃজনশীলতার জগৎ। কৈশোরে না পড়লেই নয় এমন কিছু বই নিয়ে আজকের লেখা।


‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’
ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহোর বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট।’ উপন্যাসটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সব বয়সী পাঠকের কাছেই সাড়া ফেলে। স্পেনের এক তরুণ মেষপালক সান্তিয়াগোকে নিয়ে এই বইয়ের গল্প। যার স্বপ্ন মিসরের পিরামিডের গোপন ঐশ্বর্য খুঁজে দেখা। বইটি কিশোর-তরুণ পাঠকদের জীবনে উদ্দেশ্য ও স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলার গল্প বলে।

‘দ্য ডায়েরি অব আনা ফ্রাঙ্ক’
আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি মূলত জার্মান বংশোদ্ভূত এক ইহুদি মেয়ের গল্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী কিশোরী আনার দিনলিপির লেখায় উঠে এসেছিল যুদ্ধের বর্বরতা, ইহুদিদের ওপর হিটলারের নাৎসি আক্রমণ, পৃথিবীর মানুষের শঙ্কা, মানবেতর জীবনযাপনের বর্ণনা। এই দিনলিপি প্রকাশিত হলে তা পড়ে কেঁদেছিল সারা বিশ্ব। বইটি জানান দেয় পৃথিবীর সব মানুষেরই আছে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। কিশোরদের ভাষায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বুঝতে ও জানতে দিনলিপিটি এক শক্তিশালী মাধ্যম।

‘দ্য গার্ল হু ড্র্যাংক দ্য মুন’
কৈশোরে কল্পনার জগতে বিচরণ করতে কে না ভালোবাসে। আর যারা ফ্যান্টাসিধর্মী বই পড়তে ভালোবাসে তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কেলি বার্নহিলের ‘দ্য গার্ল হু ড্র্যাংক দ্য মুন’। গল্পের প্রধান চরিত্র লুনা এক সাধারণ কিশোরী। তার বেড়ে ওঠা এক  দয়ালু জাদুকরী জেনের কাছে। জেন লুনাকে চাঁদের আলোর পরশে বড় করে তুলে প্রেম ও ত্যাগের শক্তি দিয়ে। কল্পনামিশ্রিত এই গল্প শেখায় অসাধারণত্ব ও ভালোবাসার গল্প।

‘অ্যাঙ্গার ইজ অ্যা গিফট’
মার্ক অসিরোর লেখা অ্যাঙ্গার ইজ অ্যা গিফট কিশোর-তরুণদের জন্য এক শক্তিশালী উপন্যাস। গল্পের প্রধান চরিত্র মস জেফ্রিজ এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ। মস শৈশবে নিজ চোখে বাবাকে অন্যায়ভাবে পুলিশের হাতে নিহত হতে দেখে। ফলে শৈশবে মস বেড়ে উঠে এক ভয়ংকর ট্রমার মধ্য দিয়ে। বড় হতে প্রতিনিয়তই নিজের অস্তিত্ব, বিশ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় নিজের সঙ্গে। সময়ের পরিক্রমায় এই ট্রমাই ইতিবাচক রাগে পরিণত হয়। সমাজে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিরোধের অস্ত্র হয়ে ওঠে এই রাগ।

‘এমিলি অব ডিপ ভ্যালি’
মড হার্ট লাভলেসের লেখা এমিলি অব ডিপ ভ্যালি এমিলি নামের একটি সদ্য তরুণীর গল্প। আর দশজন তরুণীর মতো মুক্ত, স্বাধীন জীবন নয় এমিলির। নিঃসঙ্গ জীবনে বৃদ্ধ দাদার দেখাশোনার একমাত্র দায়িত্ব তার। দায়িত্ব পালনে স্কুল, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে নিজেকে বন্দি করতে হয় চার দেয়ালের ভেতরে। তবে এই দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই এমিলি একসময় খুঁজে পায় জীবনের এক ভিন্ন উদ্দেশ্য, শিক্ষা ও বন্ধুত্ব। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে থেকেও কীভাবে নিজেকে উন্নত ও আনন্দদায়ক করা যায় সেই বার্তা উঠে এসেছে এই গল্পে।

‘লর্ড অব দ্য ফাইলস’
ব্রিটিশ লেখক উইলিয়াম গোল্ডিংয়ের লেখা লর্ড অব দ্য ফাইলস থ্রিলার উপন্যাস। বিমান দুর্ঘটনায় জনমানবহীন দ্বীপে একদল কিশোরের আটকে পড়ার গল্প নিয়ে এই উপন্যাস। প্রতিকূল পরিবেশে কিশোরদের টিকে থাকার লড়াই, নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে ওঠা, সভ্যতার টানাপোড়েন ও নৈতিকতার এক অসাধারণ গল্প বলে উপন্যাসটি।

 

 

শৈশবের স্মৃতি কেন মনে থাকে না

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০৩:২২ পিএম
শৈশবের স্মৃতি কেন মনে থাকে না
ছবি: এআই

কখনো যাচাই করে দেখেছ কি তোমরা ঠিক কত বছর আগের স্মৃতি মনে করতে পার? এর উত্তরে হয়তো পাওয়া যাবে পাঁচ-সাত, বড়জোর তিন বছর বয়সের ঝাপসা কিছু স্মৃতি। শিশুকালের দুই কিংবা এক বছর বয়সের স্মৃতি মনে পড়া বাস্তবে আদতেই অসম্ভব। শিশু বয়সে আমরা ঠিক কী ভাবতাম, কী ভেবে কান্না পেত, আবার কী ভেবেই হাসতাম- এমন কিছু জানার কৌতূহল কিশোর বয়সে সবারই হয়। কিন্তু কেন আমরা শৈশবের প্রথম দিকের স্মৃতি মনে করতে পারি না? ঠিক এমন প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের মনেও। চলো জেনে নেই এখন পর্যন্ত কী কী উত্তর খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা।

অভিযোজন সুবিধা দিতে
শৈশবের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার এই রহস্যকে বলা হয় ‘ইনফ্যান্টাইল অ্যামনেশিয়া।’ মনোবিদ সিগমুন্ড ফ্রয়েড ১৯৩৫ সালে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ফ্রয়েডের মতে, শিশু বয়সের অনেক স্মৃতিই মানসিক বিকাশ ও সামাজিক অভিযোজনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্যই এ সময়ের স্মৃতিগুলো অবচেতন মনেই বাদ হয়ে যায়। ফ্রয়েডের এই ব্যাখ্যা কতটুকু ঠিক বা ভুল নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। আধুনিক বিজ্ঞানীদের অনেকেই এড়িয়ে গিয়েছেন এই ধারণা।

দ্রুত স্মৃতি লোপ 
আধুনিক বিজ্ঞানীরা মূলত জোর দিয়েছেন শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ও ধরনের ওপর। মস্তিষ্কে স্মৃতি থেকে যাওয়ার বিষয়টি ঘটে স্নায়ুকোষ সংযোগের মধ্য দিয়ে। স্নায়ু সংযোগ গড়ার দিক দিয়ে শিশুদের মস্তিষ্ক বিস্ময়করভাবে বেশ সক্রিয়। শিশুরা প্রতি সেকেন্ডে ৭০০ স্নায়ুযোগ গড়ে তুলতে পারে। যে কারণে আমরা দেখতে পাই শিশুরা বড়দের তুলনায় অনেক সহজে এবং দ্রুত ভাষা শিখতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিশুদের স্মৃতি ধারণের ক্ষমতাটি হয় ক্ষণস্থায়ী। কিছু সময় পরই তাদের স্মৃতি পুরোপুরি লোপ পেয়ে যায়।
 
মস্তিষ্কের পরিবর্তন
শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের গঠন, কার্যবিধি এক নয়। শৈশবে আমাদের মস্তিষ্ক থাকে অপরিণত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ গঠন সম্পন্ন হয়। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যাবলি ও কাজ করার ধরনও বদলে যায়। যে কারণে শৈশবের স্মৃতি বড়বেলায় উদ্ধার করা সম্ভব হয় না বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

অপরিণত মস্তিষ্কের গঠন
শিশুরা সাধারণত ক্ষুধা, খাওয়া, ঘুমের মতো কাজগুলোই মনে রাখতে পারে। তবে কোনো ঘটনা ঘটলে সেই অভিজ্ঞতা স্মৃতি আকারে হয়তো মনে রাখতে পারে না। অভিজ্ঞতা-জাতীয় স্মৃতি মনে রাখতে সাহায্য করে মস্তিষ্কের প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স ও হিপোক্যাম্পাস নামের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অংশ। শৈশবে প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স ও হিপোক্যাম্পাসের বিকাশ থাকে অসম্পূর্ণ। মস্তিষ্কের এই অসম্পূর্ণতাই শৈশবের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে যৌক্তিক কারণ।

হাঁটা-চলার অক্ষমতা
‘ফ্রন্টিয়াস ইন সাইকোলজি’তে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা দেখান, স্মৃতি ধারণের সঙ্গে রয়েছে চলা-ফেরা ও হাঁটা-চলার সম্পর্কও। প্রবন্ধে বলা হয়, যখন কোনো প্রাণী চলা-ফেরা করতে পারে না, তখন মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের ঘটনা সমন্বয় করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। তাই শিশুরা হাঁটা-চলা করতে শেখার আগের স্মৃতি মনে রাখতে পারে না এমনটাই দেখা যায়।

আত্মপরিচয় ও ভাষাগত অদক্ষতা
স্বভাবতই শিশুদের আত্মপরিচয়ের ধারণা থাকে না। ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকা নিজের সম্পর্কে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত করতে না পারার কারণ বলে মনে করেন গবেষকরা। আর তাতেই বাধ সাধে স্মৃতি তৈরিতে। অন্যদিকে কোনো ঘটনার বিবরণ ও স্মৃতিচারণ করতে প্রয়োজন হয় ভাষার। শৈশবে ভাষাগত দক্ষতা না থাকাও সে সময়ের স্মৃতি মনে রাখতে না পারার সঙ্গে সম্পর্কিত।

তবে কি শৈশবের স্মৃতি হারিয়েই যায়

শৈশবের স্মৃতি লোপ পায়, নাকি মস্তিষ্কেই লুকিয়ে আছে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের সংশয় এখনো কাটেনি। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় শৈশবের স্মৃতির সন্ধানে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন আশার আলো। এতদিন ভাবা হতো অপরিণত হিপোক্যাম্পাস স্মৃতি ধারণে খুব একটা সমর্থ নয়। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে উল্টো কথা। ইয়েল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক হিপোক্যাম্পাসের কার্যক্ষমতা দেখতে পরীক্ষা চালান ৪ মাস থেকে ২৫ মাস বয়সী শিশুদের ওপর। মস্তিষ্কের স্ক্যানের মাধ্যমে এই পরীক্ষায় উঠে আসে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা। ঘটনার স্মৃতি তৈরিতে শিশুদের অপরিণত হিপোক্যাম্পাস প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই সক্ষম। তা হলে শৈশবের স্মৃতি কোথায় যায়? অনেকেই মনে করছেন, হয়তো এসব স্মৃতি লুকিয়ে আছে মস্তিষ্কেরই কোনো অন্তরালে। আর তা খুঁজতেই এখন মনোযোগ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

যেভাবে এল পরীক্ষা পদ্ধতি

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১২:১০ পিএম
যেভাবে এল পরীক্ষা পদ্ধতি
ছবি: সংগৃহীত

স্কুল, পড়াশোনা, বন্ধু-সহপাঠী এসবের কোনো কিছুই মন্দ নয়। তবে বছর বছর পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি কে বা কোথায় আবিষ্কার হয়েছিল- এমন একটি প্রশ্ন স্কুল জীবনের কোনো না কোনো সময় প্রায় সবার মাথায় আসে। কখনোবা মনে হয় কিইবা ক্ষতি হতো পরীক্ষা নামক কিছু না থাকলে! কেউ আবার সরাসরি মনের রাগ প্রকাশ করে বসে পরীক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তকের ওপর। তবে কে সেই পরীক্ষা পদ্ধতির আবিষ্কারক সেটি থেকে যায় প্রায় সবার কাছেই অজানা। 

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার শুরু থেকেই পরীক্ষা পদ্ধতির সম্পর্ক ছিল এমনটা নয়। স্কুল-কলেজে আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির আবিষ্কারক বলা হয় হেনরি ফিশেলকে। জার্মান-আমেরিকান এই অধ্যাপক ছিলেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক। তবে হেনরির পরীক্ষা প্রবর্তন ধারণারও অনেক আগে পরীক্ষা প্রবর্তনের ঘটনা ঘটেছিল চীনে। ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে চীনের শুই রাজবংশের অধীনে প্রথম আয়োজিত হয় ‘ইম্পেরিয়াল এক্সামিনেশন।’ এটি ছিল বিশ্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা। তবে এটি কোনো স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছিল না। সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মী বাছাইয়ে সে সময় চীনের রাজা আয়োজন করেন এই লিখিত পরীক্ষার। চীনের বিখ্যাত দার্শনিক কনফুসিয়াসের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছিল বিশ্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার প্রশ্ন।

এর পরে ১২০০ থেকে ১৫০০ শতাব্দীর ভেতর অক্সফোর্ড, প্যারিস ও বলোনিয়ার মতো প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয় লাতিন ভাষায় শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার প্রচলন। তবে সেসময় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়বস্তু ছিল সীমিত। ১৬০০ থেকে ১৭০০ শতাব্দীর ভেতর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রথম যুক্ত করা হয় বিজ্ঞান এবং গণিতের মতো কঠিন, গুরুত্বপূর্ণ দুই বিষয়কে।

আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির প্রথম দিকের উদাহরণ ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের ‘সিভিল সার্ভিস এক্সামিনেশন’ এবং ১৯ শতকের ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট। সিভিল সার্ভিস এক্সামিনেশনটি ছিল মূলত ইংল্যান্ডে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষা। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি, গণিত, ফরাসি, লাতিন, জার্মান, ভূগোল, ইতিহাস প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষা ও বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতি। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা পদ্ধতি তৈরিতে মাথায় রাখা হয় ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্টের ধারণাকে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করে ব্রিটিশরা। তবে সেটি ছিল অনেকটা চীনের প্রাচীন পরীক্ষা পদ্ধতির আদলে তৈরি। যোগ্য সরকারি কর্মচারী খুঁজে পাওয়াই ছিল তাদের প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির উদ্দেশ্য।

আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তক হেনরি ফিশেল। ছবি: সংগৃহীত

 

আবার আসি হেনরি ফিশারের কথায়। সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে আধুনিক যে পরীক্ষার ধরন এখন প্রচলিত তার উদ্ভাবক কিন্তু এই অধ্যাপকই। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লেখা মূল্যায়ন করতে করতে ক্লান্ত অনুভব করছিলেন হেনরি। শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও শেখার দক্ষতাকে কীভাবে আরও সহজে আধুনিকভাবে মূল্যায়ন করা যায় এমনটাই ভাবতে শুরু করেন তিনি। এর থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, আধুনিক সিলেবাস ও যোগ্যতা যাচাইয়ের আধুনিক সংস্করণের ধারণা নিয়ে আসেন হেনরি।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতি। তবে বর্তমানের পরীক্ষা পদ্ধতিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তোমরাও হয়তো লক্ষ করেছ বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কারিকুলাম। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের জন্য পরীক্ষার আদতেই প্রয়োজন আছে কি না এই নিয়েও আছে ভিন্নমত। ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা পদ্ধতি থাকবেই কি না, তাও কিন্তু নিশ্চিত নয়। এমনকি এর পরিবর্তে আসতে পারে মেধা যাচাই ও পড়াশোনার কোনো নতুন উপায়।

 

মাটির কারিগর

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১১:৩০ এএম
মাটির কারিগর

শীতের সকাল। সূর্যটা সবে কুয়াশা সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে। বাড়ির উঠানে মাটির চুলার আগুনের পাশে বসে আছে বছর চারেকের এক বাচ্চা আর তার মা। ভালো করে সোয়েটার, চাদর মুড়ি দিয়ে মায়ের কোলঘেঁষে টুকটুক করে লিখে চলেছে ছেলেটা।

থেকে থেকে মায়ের কাছ থেকে শুনে নিচ্ছে লেখা থামিয়ে। লিখতে লিখতে কখনো পেনসিলে হাত শক্ত হয়ে চেপে বসছে। কখনো চোখ ছলছল। ছেলেটা সেই গল্পটাই লিখছে। পাশের বাসার মানুষটা প্রায় প্রতিরাতেই বউকে মারে। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সকে তখন খুব একটা গা করে না মানুষও। যেন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মজার ছলে এ নিয়ে গল্পগুজব করে। মায়ের দুশ্চিন্তা ছেলেকে নিয়ে। এ পরিবেশ দেখে বড় হতে হতে ছেলে আবার এটাকেই স্বাভাবিক ভেবে নেবে না তো? এই ছোট্ট ছেলের মনে দাগ না ফেলে কীভাবে বিষয়টা বোঝানো যায়, তা নিয়ে মায়ের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে। কীভাবে ছোট্ট মনে দাগ না ফেলে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ভাবতে ভাবতে বুদ্ধি এল মায়ের মাথায়।

ছেলের গল্প শোনায় খুব আগ্রহ। একই গল্প বারবার শোনাতেও আপত্তি নেই। এক সকালে ছেলেকে বললেন, অনেক তো গল্প শুনলে। এবার আমরা একটা গল্প লিখব। ঠিক আছে? অভূতপূর্ব এ প্রস্তাবে বাচ্চা ছেলে তো লাফিয়ে উঠল, কখন লিখব আম্মু? কখন? সেই আইডিয়া থেকেই শীতের সকালের ওই দৃশ্য। মা মুখে বলে দিচ্ছে আর ছেলে লিখে যাচ্ছে। গল্পের চরিত্রও তার পরিচিত। অত্যাচারিত বউটিকে নিয়ে গল্প। অত্যাচারের গল্প লিখতে লিখতে রাগে ফুঁসছে ছেলেটা কখনো। কখনো আবার বউটির দুঃখে কষ্ট পাচ্ছে। লিখতে লিখতে শেষে যখন বউটি ন্যায়বিচার পাচ্ছিল, খুশিতে আত্মহারা ছেলে। মায়ের মুখেও হাসি। ছেলের খুশি দেখে কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজটা সোজা হয় মায়ের। নিজের হাতে লেখা গল্পটা হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। ভুলবে না এত সহজে। মায়ের ভাবনাটা ভুল নয়। সেই গল্পের শিক্ষণীয় বিষয়টা ভুলে যায়নি ছেলেটা।

এই হিম মেশানো উষ্ণ স্মৃতিটা আমার গল্প। আমার লেখার হাতেখড়ি থেকে গল্পচ্ছলে ন্যায়-অন্যায় বোধ তৈরি হওয়ার গল্প। আম্মু কখনো জোর করে কিছু চাপিয়ে দিয়ে শেখাননি। সবসময় এরকম গল্পচ্ছলে দেখিয়ে দিয়েছেন সঠিক পথটা। যে কারণে বিষয়গুলো মনে দাগ কেটে থেকে গেছে, হারিয়ে যায়নি কখনো। আম্মুর কোলে বসে গল্প শুনতে শুনতেই রূপকথার রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো শুরু। বইয়ের পাতায় হারিয়ে যেতে শেখা, তার কাছ থেকেই। লেখার হাতেখড়ি থেকে লেখার প্রেমে পড়াটাও তিনিই শিখিয়েছেন। মনের অবুঝ কথাগুলো থেকে শুরু করে আজকালের খটমটে থিসিস লেখার পথটিও আম্মুই শুরু করে দিয়েছিলেন। গল্পের মধ্যদিয়ে কখন আমাকে মানুষ করে তুলছিলেন তাও বুঝতে দেননি। মাটির পুতুল থেকে ধীরে ধীরে মানুষের আকারে গড়ে তোলা আমার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকটি আর কেউ নন, আমার মা।

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়