মা যদি আমাদের ভালো না বাসতেন, আদর না করতেন, যত্ন না করতেন- তাহলে আমাদের জীবন এতটা সুন্দর ও মধুময় হয়ে উঠত না। কীভাবে? টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আহমেদ রিয়াজ
মায়ের ভালোবাসা তুলনাহীন
এটা কেবল মানুষ নয়, প্রাণীদের বেলায়ও সত্যি। মানুষ থেকে হাতি (হাতিদের গর্ভধারণের সময় ২২ মাস), এমনকি ওরাংওটাংও (যারা সন্তান জন্মের চার মাস পর্যন্ত সন্তানকে চোখের আড়ালও করে না), মেরু ভালুক (যারা গর্ভধারণের সময় দ্বিগুণ ওজনের হয়ে যায় এবং আট মাস না খেয়ে থাকে), বাঘ, সিংহ, সিলমাছ, তিমিসহ প্রত্যেক প্রাণীর মায়েরা সন্তানদের জন্য কত কিছু যে করে। এই সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মায়েদের কত রকমের শারীরিক ধকল যে সইতে হয় জীবনভর, তার হিসাব কি কেউ করেছি কখনো। সন্তানের প্রতি মায়ের এই ভালোবাসা তুলনাহীন।
মাতৃত্বে বদলে যায় মায়ের মস্তিষ্ক
এক গবেষণায় দেখা গেছে সন্তান জন্মের চার মাস পর মায়ের মস্তিষ্কে অনেক বেশি গ্রে ম্যাটার দেখায়। এই গ্রে ম্যাটার হচ্ছে মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের মাঝামাঝি প্রয়োজনীয় এক ধরনের টিস্যু। এই টিস্যু মানসিক অবস্থা, শ্মরণশক্তি, আবেগ এবং চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্কে হরমোন প্রবাহের কারণে এটা ঘটে- যেমনটা টিনএজ হরমোনগুলো তাদের মস্তিষ্ক বিকাশের দিকে নিয়ে যায়।
সন্তানও মাকে আজীবনের সুরক্ষা দেয়
সন্তান জন্ম দেওয়ার মাধ্যমে মা ও সন্তানের শরীরের কোষ অদলবদল হয়। এবং মায়ের শরীরে এই কোষগুলো কয়েক দশক ধরে থাকে। গবেষকরা বলেন এসব কোষ কোনো নারীকে কয়েক ধরনের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দেয়। এর মধ্যে আলঝেইমার এমনকি হার্টের নানা রোগ থেকেও রক্ষা করে।
মা কাছে থাকলে মানসিক চাপ কমে যায়
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মা কাছে থাকলে, এমনকি ফোনে মায়ের কণ্ঠ শুনলে অক্সিটসিন বেড়ে যায় এবং কর্টিসল স্তর কমে যায়- যা শিশুদের শান্ত করে দেয় এবং এমনকি টিনএজারদের আরও বেশি দায়িত্বশীল করে তোলে। তিন মাস বয়সী শিশুর সঙ্গে মায়ের হৃদস্পন্দনে সমন্বয় ঘটে, যখন মায়ের কাছ থেকে সামান্যতম আদরের ছোঁয়াও পায় শিশু- এমনকি মায়ের হাসিতেও।
জন্মের আগেই মায়ের কণ্ঠ চিনতে পারে শিশু
গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভে থাকার সময় মায়ের কণ্ঠ শুনলে শিশুর হৃদস্পন্দর বেড়ে যায়, যেটা অন্য কারও কণ্ঠ শুনলে হয় না। মায়ের হৃদস্পন্দনের শব্দ এবং মায়ের কণ্ঠ শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে বিশেষ সহায়ক হয়, এমনকি জন্মের পরও।
সবার আগে
অন্য কেউ উপলব্ধি করার আগে মা তার সন্তানের কান্নার শব্দ টের পেয়ে যান, কারণ সন্তানের জন্মের পর মায়ের অক্সিটসিন স্তর বেড়ে যায়। এই পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে সন্তানের শব্দ মায়ের শ্রবণ প্রক্রিয়া আরও বেশি অনুভূতিশীল হয়।
শিশুরা মায়েদের যে নামে ডাকে
ইংরেজ শিশুর কাছে ‘মম’, চাইনিজ শিশুর কাছে ‘মামা’, আইসল্যান্ডের শিশুর কাছে ‘মাম্মা’, হিব্রু শিশুর কাছে ‘এম’, ভিয়েতনামি শিশুর ‘মি’, ভারতীয় শিশুর কাছে ‘মা, বাংলাদেশের শিশুর কাছেও ‘মা’- ভাষার যত বৈচিত্র্যই থাকুক না কেন, যে কোনো শিশুর প্রথম শব্দই ‘মা’।
কঠোর মা বনাম কোমল মা
যেসব মা খুব বেশি কঠোর নন, তাদের কাছে শিশুরা অনেক বেশি মমতায় বেড়ে ওঠে। কঠিন শাসনে থাকা শিশুর চেয়ে, কঠিন শাসনে না থাকা শিশুদের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক বেশি ভালো হয়।
অ্যান্টিবডি
শিশুর প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি মায়েরাই উৎপন্ন করেন। শিশুর শরীরে নানান রকম ব্যাকটিরিয়া অথবা ভাইরাস তৈরি হয়, মায়ের দুধে সেগুলোর ক্ষতিকর উপাদান সরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এমনকি মা যখন শিশুকে আদরে চুমুও দেন, সেটাও শিশুর শরীরের ক্ষতিকর উপাদানগুলো হটিয়ে দেয়।
মায়ের আদর
যে কারও জীবনে মায়ের আদর ও ভালোবাসা কেবল মানসিক নয়, শারীরিক সক্ষমতাও তৈরি করে। যে সক্ষমতার কারণে আজ যারা টিনএজার, হেসে-খেলে, দৌড়ে, ছুটে বেড়াচ্ছ, মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা না পেলে কি সেটা সম্ভব হতো? আর এ থেকেই প্রমাণিত হয়, দুনিয়ায় মায়ের চেয়ে বড় বন্ধু আর কেউ নেই। কাজেই সন্তানের কাছ থেকে ভালোবাসা মায়ের প্রাপ্য- মা দিবস কেবল এক দিন নয়- প্রতিদিন।
জাহ্নবী