
ঈদ মানে আনন্দ, ভালোবাসা আর খুশির উৎসব। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুশি উদযাপনের ধরনেও আসে ভিন্নতা। প্রযুক্তি, পরিবেশ, সামাজিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের হাওয়ায় বদলে গেছে কিশোর-কিশোরীদের ইদ উদযাপনের রীতি।
ঈদ কার্ড বনাম ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও কিশোর-কিশোরীদের ঈদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঈদ কার্ড। ঈদের সাত দিন আগে থেকেই কিশোর-কিশোরীরা রংবেরঙের কাগজ, আঠা, গ্লিটার আর রং নিয়ে বসে পড়ত কার্ড বানানোর কাজে। হাতে বানানো এসব কার্ডে লেখা থাকত বাবা-মা, স্বজন ও বন্ধুদের জন্য শুভেচ্ছা বার্তা। ফুল ও স্টেশনারির দোকানগুলোতেও ঈদের আগে পাওয়া যেত নানা ডিজাইন ও ধরনের শুভেচ্ছা কার্ড। মাটির ব্যাংকে জমানো ছোট্ট সঞ্চয় ভেঙে প্রিয়জনদের জন্য ঈদ কার্ড কিনে নিত অনেকে। ২০১০ সালের পর থেকেই মোবাইল ফোনের এসএমএস-এর প্রভাবে কমতে থাকে এর জনপ্রিয়তা। এরপর পুরোদমে শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ার রাজত্ব। তাই ২০০৪ সাল-পরবর্তী জন্ম নেওয়া কিশোর-কিশোরীদের বেশির ভাগের কাছে হাতে বানানো ঈদ কার্ড এক অপরিচিত বস্তু।
শহরমুখী ঈদ
ঢাকার বাসিন্দা নিশাত ও রেজওয়ান সম্পর্কে ভাইবোন। তবে ভাইবোনের মধ্যকার বয়সের তফাৎ অনেকটাই। নিশাত সদ্য মেডিকেল কলেজ পাস করা নবীন চিকিৎসক। অন্যদিকে রেজওয়ান দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাই দুজনের কৈশোরের ঈদ অভিজ্ঞতাটা একদমই আলাদা। নিশাত বলেন, আগে সারা বছর অপেক্ষায় থাকতাম কবে ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে যাব। শৈশরে চাচাতো-মামাতো ভাইবোনেরা একত্রিত হয়ে ঈদ করার আনন্দ আজও স্মৃতিতে অমলিন। তবে রেজওয়ানের অভিজ্ঞতায় নেই এমন আনন্দের অভিজ্ঞতা। এককেন্দ্রিক পরিবারের সংস্কৃতিতে এখন যে যার বাসাতেই ঈদ করে। তবে ঈদের দিন বন্ধুদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া, একসঙ্গে সিনেমা দেখা, হ্যাংআউট বেশ উপভোগ করে রেজওয়ান।
বদলে যাওয়া সাজপোশাক
একটা সময় ছিল যখন ঈদের পোশাক নিজের পছন্দমতো নির্বাচনের খুব বেশি সুযোগ ছিল না কিশোর-কিশোরীদের। বাবার পছন্দে কেনা গজ কাপড় আর মায়ের হাতে বোনা নকশা, সেলাইয়ে তৈরি হতো ভাইবোনদের ঈদের পোশাক। এরপর বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদের পোশাক কিনতে বাজারে যাওয়ার যুগ এলেও ছিল না পোশাকে ব্র্যান্ডের দৌরাত্ম্য। তবে এখন জেন জি ও আলফা যুগের টিনএজাররা বেশ ফ্যাশন সচেতন। কিশোর-কিশোরীদের কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে ঈদ মৌসুমের বড় একটি ফ্যাশন আয়োজন। জেন জি ও আলফারা ঈদে বৈচিত্র্যময় নকশা, রঙের ও ফিউশনধর্মী পোশাক পড়তে ভালোবাসে। পাশাপাশি নিজেদের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সহায়ক পোশাক নির্বাচন করে তারা।
ঈদ সালামির একাল-সেকাল
বহু যুগ থেকে প্রচলিত ঈদ সালামির প্রথা কিন্তু এখনো আছে। সব যুগের মতোই ছোটরা ঈদের দিন বড়দের কাছ থেকে সালামি পেয়ে থাকেন। কৈশোরের ঈদ স্মৃতির মধ্যে সালামি পাওয়ার এই অভিজ্ঞতা ভীষণ আনন্দের। তবে প্রথা থাকলেও বদলে গেছে সালামি দেওয়ার মাধ্যম ও তার মর্ম। ছোটদের সালামি হিসেবে বড়রা আগে বেছে নিতেন দুই থেকে দশ টাকার নোট। সবার কাছ থেকে সালামি সংগ্রহ করে অল্প কিছু টাকা হাতে গুঁজেই কিশোর-কিশোরীরা ছুট দিত প্রিয় সুপারহিরো চরিত্রের স্টিকার কেনার দোকান কিংবা মুদি দোকানে পছন্দের খাবারের কাজে। আধুনিক সময়ে কিশোর-কিশোরীদের কাছে তাদের প্রায় সব চাহিদাই সহজলভ্য। নিত্যনতুন খাবার কিংবা প্রিয় জিনিস কেনার সুযোগ থাকে প্রায় অনেকেরই। তবুও বড়দের কাছ থেকে সালামি প্রাপ্তি যেন অন্যরকম আনন্দ। আবার অনলাইনে টাকা পাঠানোর বিভিন্ন মাধ্যম ঈদকে উপলক্ষ করে আয়োজন করে অনলাইন ঈদ সালামি। টিনএজার ও তরুণদের কাছে এই অনলাইন সালামি বেশ জনপ্রিয়।