কবিতা
প্রতিদান
প্রশ্ন: প্রতিদান কবিতার মূলভাব লেখ।
উত্তর: মূলভাব: ‘প্রতিদান’ পরার্থপরতার কবিতা। এ কবিতা ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্যের জন্য নিজেকে নিবেদনের শিক্ষা দেয়। পরার্থপরতাই জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। পরমতসহিষ্ণু, সহনশীল, পরার্থপর মানুষই প্রকৃত সুখী। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান হিংসা-বিভেদ, বৈষম্য, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা দূর করতে না পারলে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। আজকের যুদ্ধ-উন্মত্ত, আধিপত্যবাদী পৃথিবীতে ‘প্রতিদান’ কবিতা শান্তি ও সাম্যের কথা বলে, নিজেকে অন্যের জন্য নিবেদনে উৎসাহ জোগায়। পৃথিবীতে মন্দ মানুষ কষ্ট দিয়ে যাবে এবং আঘাত করে যাবে, অসম্মান করবে। সহনশীল মানুষ এসব সহ্য করেও তাদের ঘৃণা না করে আপন করে নেন এবং একসময় তারাও ভুল বুঝতে শুরু করেন। কবিতায় বর্ণিত হয়েছে- প্রাপ্তিতে নয়, পরোপকারের মধ্যেই রয়েছে সত্যিকারের সুখ ও মানবজীবনের সার্থকতা। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে কবি শত্রু বা সমালোচনাকারীর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। কবি কেবল শত্রুকে ক্ষমাই করেননি; শুভ কামনা করে তাকে শুদ্ধ পথে ফিরিয়ে আনতে সযত্নে প্রয়াস চালিয়েছেন। আঘাতের বিপরীতে কবি ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে প্রীতিময় পৃথিবী গড়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। মন্দের বিপরীতে মন্দ, অসুন্দরের বিরুদ্ধে অসুন্দর, হিংসার বিপরীতে প্রতিহিংসা কখনো পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারে না; কখনো শান্তি আনেনি। তাই ধৈর্য-পরমতসহিষ্ণুতা-সহনশীলতা-কাঁটার বিপরীতে ফুল দান করেই প্রকৃত মানবকল্যাণময় পৃথিবী গড়া সম্ভব। ‘প্রতিদান’ কবিতা সহিষ্ণু মননের মানুষ হয়ে উঠতে শিক্ষা দেয়।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি কাঁটার প্রতিদানে কী দান করবেন?
উত্তর: কবি কাঁটার প্রতিদানে ফুল দান করবেন।
২। ‘প্রতিদান’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘প্রতিদান’ শব্দের অর্থ দানের বদলে দান।
৩। ‘বিরাগী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বিরাগী’ শব্দের অর্থ উদাসীন।
৪। ‘বিষে-ভরা বাণ’ অর্থ কী?
উত্তর: ‘বিষে-ভরা বাণ’ অর্থ কটু কথা।
৫। ‘মালঞ্চ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘মালঞ্চ’ শব্দের অর্থ বাগান।
৬। ‘নিরন্তর’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘নিরন্তর’ শব্দের অর্থ অবিরাম।
৭। ‘ঠাঁই’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘ঠাঁই’ শব্দের অর্থ আশ্রয়।
৮। জসীমউদ্দীনের পিতার নাম কী?
উত্তর: আনসারউদ্দীন মোল্লা।
৯। জসীমউদ্দীন কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: জসীমউদ্দীন ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
১০। জসীমউদ্দীন কোন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন?
উত্তর: ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে জসীমউদ্দীন বিএ পাস করেন।
১১। জসীমউদ্দীনকে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করে কোন বিশ্ববিদ্যালয়?
উত্তর: জসীমউদ্দীনকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করে।
১২। জসীমউদ্দীন কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: জসীমউদ্দীন ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
১৩। ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর: ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থটি জসীমউদ্দীনের লেখা।
১৪। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কার ঘর ভাঙার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির ঘর ভাঙার কথা বলা হয়েছে।
১৬। কবিকে যে পথের বিরাগী করেছে কবি তার জন্য কী করেন?
উত্তর: যে কবিকে পথের বিরাগী করেছে কবি তার জন্য পথে পথে ঘুরেন।
১৭। কবি কাকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান?
উত্তর: কবিকে যে পর করেছে তাকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান।
১৮। ‘প্রতিদান’ কবিতা অনুসারে কে পথের বিরাগী?
উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতা অনুসারে কবি পথের বিরাগী।
১৯। কবি কার মুখ নিরন্তর সাজান?
উত্তর: যে নিঠুরিয়া বাণী উচ্চারণ করে কবি তার মুখ।
২০। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কোন ধরনের ফুলের উল্লেখ আছে?
উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতায় রঙিন ফুলের উল্লেখ আছে।
২১। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির কোথায় আঘাত করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির বুকে আঘাত করার কথা বলা হয়েছে।
২২। ‘বাণ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বাণ’ শব্দের অর্থ তীর বা শর।
২৩। ‘প্রতিদান’ কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: ‘প্রতিদান’, ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
২৪। ‘বাণী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বাণী’ শব্দের অর্থ হলো ভাষণ বা কথা।
২৫। ‘রজনী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘রজনী’ শব্দের অর্থ হলো রাত।
আরও পড়ুনঃ প্রতিদান কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১. নিজের ঘর ভাঙার প্রতিদান দিতে কবি অন্যের ঘর বেঁধে দিয়েছেন যে কারণে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি প্রতিহিংসায় প্রতিশোধ নিতে বিশ্বাস করেন না বলে তিনি নিজের ঘর যে ভেঙে দিয়েছে, তার জন্যই ঘর বেঁধে দেন, হৃদয়ে জায়গা রাখেন।
প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না। প্রতিশোধ নিয়ে সুখী হওয়া যায় না। কেউ কবির ক্ষতির কারণ হলে তারও ক্ষতি করতে হবে, ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি তা বিশ্বাস করেন না। কবি মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল এবং ক্ষমাশীল। তিনি মনে করেন ভালোবাসাই মানুষকে আলোর পথ দেখায়। তাই কেউ কবির ঘর ভেঙে দিলেও কবি সেই অনিষ্টকারীর জন্য ঘর তৈরি করতে চেয়েছেন। আসলে হৃদয়ে ক্ষোভ জমা না রেখে কবি শত্রুকে ক্ষমা করে পরম আশীর্বাদ করেছেন।
লেখক: প্রভাষক, বাংলা বিভাগ
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
জাহ্নবী