ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

মন খারাপের আবহেও ভিড়

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১১:৩২ এএম
মন খারাপের আবহেও ভিড়
ছবি: খবরের কাগজ

খাসির হালিমের দাম শুনে চোখ কপালে উঠবে আপনারও। তবে ঠিকই জিভে জল আসবে; খাসির হালিম বলে কথা। গ্রিন কোজির ভয়ংকর সেই অগ্নিকাণ্ডের শোকের রেশ না কাটলেও রাজধানীর বেইলি রোডে ঐতিহ্যবাহী ও বাহারি ইফতারের পসরা বসেছে এবারও। প্রতিবারই রমজান মাসে বেইলি রোডজুড়ে থাকে মুখরোচক বাহারি ইফতারের জমজমাট আয়োজন। তবে সে আয়োজনে যেন আলাদা মাত্রা যোগ করে এই খাসির হালিম।

প্রতি কেজি হালিম বিক্রি হচ্ছে মাংস এবং মানভেদে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় । তবুও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে এই খাসির হালিম। উপকরণের দাম বেড়েছে। ফলে হালিমের দাম বাড়লেও তাতে চাহিদায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। প্রতিদিন দুপুরের পর পরই হালিম কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষ, কখনোবা লাইনে দাঁড়িয়ে তারা হালিম কিনছেন। দাম যতই বাড়ুক, সবার যেন হালিম চাই-ই চাই। ঘুরে ঘুরে দেখছেন এ দোকান ও দোকানে।

স্বাদ ও গন্ধের দিক দিয়েও বেইলি রোডের এই খাসির হালিম অতুলনীয়। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ইফতারের আগে মানুষ ছুটে আসছেন এখানকার হালিমের খোঁজে। বেলা গড়ানোর আগেই মজুত শেষ। অন্যান্য মুখরোচক খাবার তখনো ডালাভর্তি রয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশিত হালিম না পেয়ে অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে।

শাহজাহানপুর থেকে বেইলি রোডে হালিম কিনতে আসা সুরাইয়া আক্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই বেইলি রোডে আগুনে কতগুলো জীবন শেষ হয়ে গেল। তবু জীবন তো চালাতে হবে। রোজার দিনে প্রতিবার এখানে এসে খাসির হালিম নিয়ে যাই। তাই এবার মন খারাপ নিয়েও এলাম।’

বিক্রয়কর্মী সুমন বলেন, খাসির হালিমের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন ক্রেতারা। এবারও ভিড় আছে, তবে আগের তুলনায় কম।

অযত্ন-অবহেলায় ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপত্য

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ০৫:০০ এএম
অযত্ন-অবহেলায় ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপত্য
মোঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর দেউলটির গায়ে খচিত টেরাকোটার চিত্রকর্ম ও স্থাপত্যশৈলী। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত মথুরাপুর দেউল।

ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধে নির্মিত এ দেউলটি শুধু স্থাপত্য নয়, বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত। তবে কালের বিবর্তনে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে স্থাপনাটি।

এটি ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফরিদপুরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে মধুখালী-বালিয়াকান্দি আঞ্চলিক সড়কের পাশেই এর অবস্থান। রাস্তার বিপরীতে শান্তভাবে বয়ে চলেছে চন্দনা নদী। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ মনোমুগ্ধকর দেউলটি দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীরা। অথচ, পর্যটকদের জন্য নেই কোনো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা। ফলে তাদের মুখোমুখি হতে হয় নানারকম বিড়ম্বনার।

দেশের ইতিহাসে মুঘল সাম্রাজ্যের যেসব স্মৃতি বিদ্যমান, তার মধ্যে এ দেউলটি অন্যতম। সরকারের উদাসীনতার কারণে দেউলটির ইতিহাস ধরে রাখতে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। কাগজে-কলমে ইতিহাসে থাকলেও বাস্তবিক অর্থে নেই কোনো সংরক্ষণের ব্যবস্থা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৪০ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিস্তৃত ৮০ ফুট উচ্চতার দেউলটির গায়ে খচিত টেরাকোটার চিত্রকর্ম ও স্থাপত্যশৈলী।  প্রাচীন ইট ও চুন-সুরকির মিশ্রণে নির্মিত এ দেউলের দেয়ালে ফুটে উঠেছে হিন্দু পুরাণের রামায়ণ ও কৃষ্ণলীলা, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, পবনপুত্র হনুমান ও যুদ্ধদৃশ্যের নিপুণ চিত্র। প্রতিটি কোনের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম মুখাবয়ব, যা সেই যুগের শিল্পভাবনার পরিচায়ক।

দেউলটির একমাত্র প্রবেশপথটি দক্ষিণমুখী এবং এটি বারো কোনাবিশিষ্ট, যা বাংলার স্থাপত্যধারায় বিরল। রেখা প্রকৃতির এ দেউল বাংলায় নির্মিত একমাত্র এরকম কাঠামো বলেই প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

দেউলটি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত। সূত্রমতে, সংগ্রাম সিং নামে এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেন। ১৬৩৬ সালে ভূষণার জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিংকে এ অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার পর তিনি মথুরাপুরে বসবাস শুরু করেন এবং এক স্থানীয় বৈদ্য পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারই উদ্যোগে এ দেউলটি নির্মিত হয়। 

ঐতিহাসিক পলাশী দিবস আজ

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১১:৫০ এএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫, ১১:৫৪ এএম
ঐতিহাসিক পলাশী দিবস আজ
ঐতিহাসিক পলাশী দিবস

ঐতিহাসিক পলাশী দিবস সোমবার ( ২৩ জুন)। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দোলার পরাজয়ের মধ্যদিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য দীর্ঘদিনের জন্য অস্তমিত হয়ে যায়। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, নবাব আলীবর্দী খানের পর তার দৌহিত্র সিরাজউদ্দোলা বাংলা, বিহার ও ওড়িশার সিংহাসনে বসেন। এ সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নবাব সিরাজউদ্দোলার দূরত্ব তৈরি হয়। তাকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে যোগ দেন তার সেনাপতি মীর জাফর এবং আপন খালা ঘসেটি বেগম।

এরপর ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে নবাবের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

যুদ্ধে সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হন নবাব সিরাজউদ্দোলা।

এরপর কোম্পানি শাসনের সূচনা হয়।

অযত্ন-অবহেলায় মুঘল স্থাপত্য

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১০:০১ এএম
অযত্ন-অবহেলায় মুঘল স্থাপত্য
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুরের মথুরাপুর দেউল- খবরের কাগজ

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুরের মথুরাপুর দেউল। এ যেন ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধে নির্মিত এই দেউলটি শুধু স্থাপত্য নয়, বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত। তবে কালের বিবর্তনে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে স্থাপত্যটি। 

জানা যায়, ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল এই দেউলটি। ফরিদপুরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে, মধুখালী-বালিয়াকান্দি আঞ্চলিক সড়কের পাশেই এর অবস্থান। রাস্তার বিপরীতে শান্তভাবে বয়ে চলেছে চন্দনা নদী। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা এই মনোমুগ্ধকর দেউলটি দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীরা। অথচ পর্যটকদের জন্য নেই কোনো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা। ফলে দর্শনার্থীদের মুখোমুখি হতে হয় নানা রকম বিড়ম্বনার। 

স্থানীয়রা জানান, দেশের ইতিহাসে মুঘল সাম্রাজ্যের কিছু স্মৃতি বিদ্যমান আছে। এর ভেতর এই দেউলটি অন্যতম। সরকারের উদাসীনতার কারণে দেউলটির ইতিহাস ধরে রাখতে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। কাগজ-কলমে ইতিহাসে থাকলেও বাস্তবিক অর্থে নেই কোনো সংরক্ষণের ব্যবস্থা। 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিস্তৃত, ৮০ ফুট উচ্চতার দেউলটির গায়ে খচিত টেরাকোটার চিত্রকর্ম ও স্থাপত্য শৈলী। এমন দৃশ্য দর্শনার্থীদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। প্রাচীন ইট ও চুন-সুরকির মিশ্রণে নির্মিত এই দেউলের দেয়ালে ফুটে উঠেছে হিন্দু পুরাণের রামায়ণ ও কৃষ্ণলীলা, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, পবনপুত্র হনুমান ও যুদ্ধসদৃশের নিপুণ চিত্র। প্রতিটি কোণের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম মুখাবয়ব, যা সেই যুগের শিল্পভাবনার পরিচায়ক। দেউলটির একমাত্র প্রবেশপথটি দক্ষিণমুখী এবং এটি বারো কোনাবিশিষ্ট, যা বাংলার স্থাপত্যধারায় বিরল। রেখা প্রকৃতির এই দেউল বাংলায় নির্মিত একমাত্র কাঠামো বলেই প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

এদিকে দেউলটি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত। এক সূত্রমতে, সংগ্রাম সিংহ নামে এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেন। ১৬৩৬ সালে ভূষণার জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিংহকে সেই অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার পর তিনি মথুরাপুরে বসবাস শুরু করেন এবং এক স্থানীয় বৈদ্য পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন। ধারণা করা হয়, তারই উদ্যোগে এই দেউলটি নির্মিত হয়েছে।
অন্য এক মত অনুযায়ী, মুঘল সম্রাট আকবরের বিখ্যাত সেনাপতি রাজা মানসিংহ রাজা প্রতাপাধিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের স্মারক হিসেবে এটি নির্মাণ করেছেন। সেই হিসেবে এটি একটি বিজয় স্তম্ভ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ সময় অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকা দেউলটির পুনর্জীবন ঘটে ২০১৪ সালে, ফরিদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোর্শেদ জামানের ব্যক্তিগত আগ্রহে। তার উদ্যোগে জেলা প্রশাসন দেউলটির সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে হাত দেন। সেই বছরেরই মার্চ মাসের শেষ দিকে সংস্কার কাজ শেষ হলেও এরপর থেকে আর কোনো উল্লেখযোগ্য সংরক্ষণ কার্যক্রম হয়নি।

বর্তমানে মথুরাপুর দেউল প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সরকারের আওতাভুক্ত একটি সংরক্ষিত ঐতিহাসিক সম্পদ হিসেবে এটি তালিকাভুক্ত। তবে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা না গেলে এই ঐতিহাসিক সম্পদ তার যথার্থ গুরুত্বে পৌঁছাবে না এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু রাসেল বলেন, ‘আমরা জেলা পরিষদের মাধ্যমে মথুরাপুর দেউলের জায়গায় একটি বাউন্ডারি ওয়াল এবং একজন কেয়ারটেকার রাখার প্রস্তাব করেছি। আশা করছি, আসছে অর্থ বছরে আমরা সেটা করতে পারব।’

রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থীদের অজানা এক জাদুঘর

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১১:১০ এএম
রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থীদের অজানা এক জাদুঘর
রাজশাহী কলেজে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ব্রিটিশ আমলের এক জাদুঘর। খবরের কাগজ

ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ। দীর্ঘ ইতিহাস আর সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের বাহক এই প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল একটি নিজস্ব জাদুঘর, যা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে তালাবদ্ধ অবস্থায়। অযত্ন, অবহেলা ও অবমূল্যায়নের নিদর্শন হয়ে, গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য এই সংগ্রহশালাটি হারিয়ে যাচ্ছে ধুলো ও মাকড়সার জালে।

এক কক্ষবিশিষ্ট এই জাদুঘরের কথা কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরই অজানা। সাংবাদিকদের একাধিকবার আবেদন ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর এক দুপুরে খোলা হয় এই রহস্যময় কক্ষটি। ধারণা করা হয়, সাংবাদিকদের ঢোকার আগে হঠাৎ করেই কিছুটা পরিষ্কার করা হয়েছে ঘরটি। তবে অযত্নের ছাপ মোছা যায়নি।

সরেজমিনে কক্ষে ঢুকতেই চোখে পড়ে নামফলক ও সালহীন ধুলোমাখা কিছু ছবি। কোনোমতে ফাইলে গুঁজে রাখা পুরোনো নথিপত্র। আর বইগুলো আছে ছড়ানো-ছিটানো। কাঠের পুরোনো আলমারি, ব্রিটিশ আমলের টেবিল ফ্যান, ধুলোমলিন মাইক্রোস্কোপ, প্রাচীন ঘড়ি, আয়না, রেডিও, ঝাড়বাতি এমনকি একটি প্রিন্টিং মেশিন, সবকিছু যেন অবহেলিত, অনাকাঙ্ক্ষিত।

জাদুঘরে থাকা উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ৮টি ঘড়ি, ৩টি রেডিও ও আয়না, ২টি পুরস্কার মেডেল, ৩৪টি কাঠের ওপর ছাপা ঐতিহ্যের ছবি, ২টি মাইক্রোস্কোপ ও ৬টি বিজ্ঞানযন্ত্র, প্রাচীন বই, শিক্ষকদের নামের ফলক ও একটি প্রিন্টিং অলমেট।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব মূল্যবান ঐতিহাসিক সম্পদ সংরক্ষণের নেই কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা। কলেজের লাইব্রেরিয়ান পর্যন্ত জানেন না জাদুঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নেই সচেতনতা।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া ফেরদৌস বিস্ময়ভরে প্রশ্ন করেন, ‘রাজশাহী কলেজে কি জাদুঘর আছে?’ তার মতোই অনেক শিক্ষার্থী এই ঐতিহাসিক স্থাপনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। আরেক শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানার আগ্রহ থাকলেও তা জানার সুযোগ আমাদের হয়নি।’ শিক্ষকরাও জানান, শ্রেণিকক্ষে ইতিহাসচর্চা তেমন হয় না, যদিও লাইব্রেরিতে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক বইপত্র।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, জাদুঘরটিকে আধুনিকভাবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক। কারণ ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গৌরবময় অতীতের সাক্ষী হয়ে আছে আজও।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী বায়জিদ সরকার বলেন, ‘জাদুঘরটি দ্রুত সংস্কার করে আমাদের জন্য খুলে দেওয়া হোক। নাহলে এসব নিদর্শনের বিলুপ্তি আমাদের সাংস্কৃতিক দেউলিয়ার প্রমাণ হয়ে থাকবে।’

জাদুঘর দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ থাকা প্রসঙ্গে কলেজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংস্কৃতিকর্মী অলিউর রহমান বাবু। তিনি বলেন, ‘এই জাদুঘর কলেজের ঐতিহ্য। অথচ প্রশাসন এটিকে অবমূল্যায়ন করে তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. যুহুর আলি বলেন, ‘জাদুঘর উন্নয়নের বিষয়ে এখনো কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। তবে সচেতন মহল ও সরকারের সহযোগিতা পেলে উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।’

শতবর্ষী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এমন জীবন্ত নিদর্শন বছরের পর বছর তালাবদ্ধ ও অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকা শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং এটি প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক চেতনার চরম সংকটের প্রতিচ্ছবি বলে মনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

চলনবিল জাদুঘর কালের গর্ভে বিলীনের শঙ্কা

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
চলনবিল জাদুঘর কালের গর্ভে বিলীনের শঙ্কা
চলনবিল জাদুঘরে সম্প্রতি প্রবেশের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে বিভিন্ন নিদর্শন দেখান সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আবু বকর সিদ্দিক। ছবি: খবরের কাগজ

নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর এলাকায় অবস্থিত চলনবিল জাদুঘর একসময় ছিল এ অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণের প্রাণকেন্দ্র। দেশের সর্ববৃহৎ বিলের নামানুসারে এই জাদুঘরটি ১৯৭৮ সালে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চলনবিলের কিংবদন্তি শিক্ষক আবদুল হামিদ। তবে অব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও সরকারি অনীহার কারণে জেলার একমাত্র এই জাদুঘরটি এখন ধ্বংসের মুখে। জাদুঘরটিতে রক্ষিত দুর্লভ প্রাচীন নিদর্শনগুলোর অনেক কিছুই আর নেই। নিদর্শন না থাকায় লোকসমাগমও নেই আগের মতো। মুঘল আমলের কিছু পুরোনো নিদর্শন নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরটি । অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এমন অবহেলা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

এদিকে এই জাদুঘরের দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য থাকা একমাত্র ব্যক্তি আবু বকর সিদ্দিকও দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে চাকরি স্থায়ী করতে না পেরে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে কর্মরত এই ব্যক্তি অল্প কিছু বেতনে পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বয়সে ততটা প্রবীণ না হলেও তার চোখেমুখে কষ্টের স্পষ্ট ছাপ। তাকে ও জাদুঘরটিকে দেখলেই মনে হয় তারা অযত্ন আর অবহেলায় ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলনবিলের কোল ঘেঁষে খুবজীপুর গ্রামে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটি। এটি ১৯৮৯ সালের ২ জুলাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আসে। চলনবিল জাদুঘর নামে এই সংগ্রহশালাটি শুরুতে দ্বিতল ভবনে যাত্রা শুরু করে। পরে দোতলার কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় বর্তমানে নিচতলার মাত্র দুটি কক্ষেই সীমাবদ্ধ জাদুঘরটি। ওই কক্ষগুলোতেই রাখা হয়েছে উপমহাদেশের প্রাচীন ও দুর্লভ কিছু নিদর্শন। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় নিরাপত্তার অভাবে ও সংস্কার-সংরক্ষণের নামে মূল্যবান অনেক জিনিস নিয়ে যাওয়া হয়েছে বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘরে। পরে সেগুলো আর ফিরে আসেনি। চলনবিল জাদুঘরের স্যাঁতসেঁতে কক্ষগুলোতে রক্ষিত বাকি মূল্যবান দুর্লভ প্রত্নসম্পদগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে কালের সাক্ষী বহন করেই কোনো রকমে টিকে রয়েছে জাদুঘরটি। যেন দেখার কেউই নেই। তাই এতে নেই আগের মতো পর্যটকদের পদচারণ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে খুবজীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ কমপ্লেক্স নামে একটি ফটক। ভেতরে বিশাল খেলার মাঠ। মাঠের চারদিকে বড় বড় বেশ কিছু ভবন। এর মধ্যে খুবজীপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও খুবজীপুর নজরুল প্রগতি সংঘের মাঝে এক কোণে ছোট্ট একটি সাইবোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চলনবিল জাদুঘর। আধুনিক ভবনগুলোর মাঝে জাদুঘরটিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেউ যদি পেয়েও যান প্রথম দেখায় মনে হবে এটা কোনো পরিত্যক্ত ভবন। সাদামাটা একতলা সেই ঘরের প্রথম কক্ষে ঢুকেই চোখে পড়ে চলনবিলের বিভিন্ন পুকুর খননে পাওয়া ৩০০ বছরের পুরোনো মনসামঙ্গল ঘট। প্রায় প্রতিটি ঘটের গায়েই সাপের প্রতিকৃতির মতো নকশা। রয়েছে শিলপাটা, ধাতব তৈজসপত্র ও কড়ি। দেয়ালে সাঁটানো উটের চামড়ার ওপর ১৪০০ শতকের ইসলামি জলসার বর্ণনা। আলমারিগুলো সাজানো বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক ঝিনুক, ১৯৭২ সালে হাতে লেখা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান এবং মিসরের পিরামিড পাথর। ওই কক্ষের তাকে থরে থরে রাখা সত্যপীরের পাঁচালিসহ গাছের বাকলে লেখা সংস্কৃত পুঁথি। পাশেই রয়েছে বাদশাহ আলমগীর ও সম্রাট নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের নিজ হাতে লেখা দুটি কোরআন শরিফ, তুলট কাগজে হাতে লেখা ৩০০-৪০০ বছরের পুরোনো ৮টি সম্পূর্ণ ও ৭টি আংশিক কোরআন শরিফ, ১৫টি হাদিস শরিফ ও মহারানি ভবানীর নিজ হাতে লেখা দলিলসহ ২৫৭টি ধর্মগ্রন্থ। এসবই বন্দি করে রাখা হয়েছে কাচের আলমারিতে। এ ছাড়া রয়েছে ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর হাতে লেখা ব্যক্তিগত ডায়েরিও আছে।

আরেকটি কক্ষে রাখা মানুষের প্রাচীন খুলি, শত বছরের পুরোনো ইটের ওপর মাটির তৈরি তামবুড়া ফল এবং চলনবিলে প্রাচীনকালে ডাকাতদের ব্যবহৃত তলোয়ার এবং ছুরি। এ ছাড়া চার মাথা ও তিন মাথাওয়ালা বাঁশ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। 

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, জাদুঘরের মূল ভবনটি এখন অরক্ষিত। জানালা-দরজা দুর্বল হয়ে ভেঙে যাচ্ছে, ছাদে ধরেছে ফাটল। এতে পানি চুইয়ে পড়ে দেয়ালগুলোতে শ্যাওলা জমেছে। এ ছাড়া সংগ্রহশালাটির দুটি কক্ষই স্যাঁতসেঁতে। ফলে অধিকাংশ মূল্যবান দুর্লভ প্রত্নসম্পদগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে, বাকিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। শুধু তাই নয়, নাজুক এই জাদুঘরে নিজস্ব কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই, নেই ফ্যানের কোনো ব্যবস্থাও। আবার নেই কোনো টয়লেটও। ফলে নেই আগের মতো পর্যটকদের পদচারণ। এতে ইতিহাসের গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে চলনবিল জাদুঘর। 

জাদুঘরটির কর্মচারী আবু বকর সিদ্দিক জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ও সংস্কার-সংরক্ষণের নামে জাদুঘরে রক্ষিত লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কৃষ্ণ মূর্তিসহ বেশ কিছু মূল্যবান নিদর্শন ঢাকা ও বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘরে নেওয়া হয়। যেগুলো আর ফিরে আসেনি। আবার জাদুঘরটিরও কোনো সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হচ্ছে। তিনটি কক্ষবিশিষ্ট দোতলা অনেক আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন একতলা নিয়ে টিকে থাকা ভবনটির ছাদের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। জানালার গ্রিলগুলো মরিচা পড়ে দুর্বল হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। এতে মহামূল্যবান দুর্লভ প্রত্নসম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

জাদুঘরটির মতো নিজেও কষ্টের মধ্যে আছেন জানিয়ে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘২০০১ সালে জাদুঘরটির দেখভালের জন্য দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পাই। দীর্ঘ ২৪ বছরেও চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’ 

খুবজীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘খুবজীপুর একটি অজপাড়াগাঁ হলেও এখানকার অনেক আলোকিত মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্রে আলো ছড়াচ্ছেন। তেমনি একজন ব্যক্তি মরহুম কিংবদন্তি শিক্ষক আবদুল হামিদ নিজ উদ্যোগে চলনবিল জাদুঘরটি করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নানা অজুহাতে জাদুঘরটি অন্যত্র স্থানান্তরের চেষ্টা করছে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবির মুখে তা এখনো সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাদের অসহযোগিতার কারণে দিন দিন ঐতিহ্য হারিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই জাদুঘরটি। তবে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি, জাদুঘরটি যেন কোনোভাবেই কালের গর্ভে বিলীন না হয়। বরং এটা যেন আরও বিকশিত হয়। সে ক্ষেত্রে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’ 

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ‘গুরুদাসপুর তথা নাটোর জেলার ঐতিহ্যবাহী সংগ্রহশালা চলনবিল জাদুঘর। বর্তমান এই জাদুঘরটি অনেক সংকটে রয়েছে বলে জেনেছি। আমাদের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সরেজমিনে পরিদর্শন করে এটি সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’