মাগরিবের আজানের মাত্র ১৫ মিনিট বাকি, পথচারীদের ব্যস্ততা ঘরে ফিরে ইফতারি করতে হবে। শহরজুড়ে এ সময়টা বেশ ব্যস্ত আর তাড়াহুড়ায় থাকেন অফিস-আদালত ফেরত নগরবাসী। কিন্তু যাদের ঘর-বাড়ি নেই; পথই ঘর, পথই বাড়ি, এমন মানুষের জন্যও আছে আয়োজন।
রোজার প্রথম দিন থেকেই তারা ইফতারি পাচ্ছেন ভালো কাজের হোটেল থেকে। এই ভালো কাজের হোটেলের অবস্থান কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের উল্টোপাশে। সেখানে একটি দেয়ালে লেখা- ভালো কাজের হোটেল। তবে সেখানে নেই কোনো চেয়ার টেবিল, শামিয়ানা অথবা ক্যাশ কাউন্টার। গত সোমবার সেখানে গেলে দেখা যায়, সারি সারি ইফতারের প্যাকেট আর শরবত রাখা। ভালো কাজের প্রতিশ্রুতি দিলেই মিলছে খাবার। কাদের জন্য এই আয়োজন আর কারাই বা পাচ্ছে এসব খাবার, তা খুঁজতে গিয়ে খবরের কাগজের এই প্রতিবেদক জানতে পারেন এসব খাবার দেওয়া হচ্ছে শহরের রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, চা-দোকানদার, পান সিগারেট বিক্রেতা, ভিখারি, বিপদে পডা মানুষ, প্রতিবন্ধী ও রাস্তার ছিন্নমূল শিশুদের।
এই ভালো কাজের হোটেলের উদ্যোক্তা কয়েকজন তরুণ। তারা রাজধানীর ১০টি স্পটে প্রতিদিন ৩ হাজার মানুষকে ইফতারি দিচ্ছেন। মেন্যুতে থাকে শরবতের পাশাপাশি কোনো দিন বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, কোনো দিন ভুনাখিচুড়ি, মাংস, ডিম, আবার কোনো দিন গরুর মাংস, পোলাও। হোটেলের স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন প্রতিদিন শরবতই লাগে ৬২৫ লিটার।
কারওয়ান বাজার ছাড়া রাজধানীর কমলাপুর, মতিঝিল, বাসাবো, সাতরাস্তা, বনানী, কড়াইল বস্তি, রবীন্দ্র সরোবর, মিরপুর ২, মোহাম্মদপুর আর ঢাকার বাইরে শুধু চট্টগ্রামের একটি পয়েন্টে ইফতারি বিতরণ করা হয়।
কারওয়ান বাজার ও রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় ভালো কাজের হোটেল ঘুরে দেখা যায় প্রতিদিনই একই মানুষ খায় ব্যপারটা এমন না। নতুন নতুন মানুষও যুক্ত হচ্ছেন।
কারওয়ান বাজারে ইফতারি করতে আসা রফিক নামের এক ব্যক্তি জানান, জরুরি কাজে ঢাকায় এসেছেন কিন্তু হাতে বেশি টাকাও নেই আবার যানজটের কারণে আত্মীয়ের বাসায়ও যেতে পারছেন না। রোজা রেখে হঠাৎ দেখেন এখানে পথচারীদের জন্যও ইফতারের আয়োজন আছে।
সবির মিয়া নামে একজন ভিক্ষুক বলেন, সবই আল্লাহর রহমত। মেহমানের মতো বসায়ে হাতে তুলে খাইতে দিসে।
কারওয়ান বাজার এলাকার স্বেচ্ছাসেবক রুবেল জানান, গত তিন বছর ধরে নিয়মিত এখানে ইফতারি বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক সচ্ছল মানুষ এখানে কখনো কখনো ইফতারি করেন।
তিনি বলেন, ইফতারি ছাড়াও এসব পয়েন্ট থেকে সাহরিও সরবরাহ করা হয়। কোনো দিন গরুর মাংস, ডিম এবং সাদা ভাত হয়। প্রায় প্রতিদিনই ৫০০ জনের জন্য সাহরি রান্না হয়।
রকি নামে ভাতের হোটেলের একজন সংগঠক জানান, মূলত এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রায় ২ হাজার সদস্য এই সংগঠনের। এই সদস্যদের মাসিক চাঁদায় এসব খাবারের আয়োজন করা হয়। আবার অনেকে বিকাশ করেন, কেউ কেউ মোটা অঙ্কের টাকা দান করেন। সেসব থেকেই আয়োজন করা হয় ইফতারি ও সাহরির খাবার।
২০১৯ সালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রথম চালু হয় ‘ভালো কাজের হোটেল’। সপ্তাহে একদিন খাওয়ানো হতো সেখানে। করোনাকালে প্রতিদিন খাওয়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর একে একে রাজধানীর সাতরাস্তা, বনানী, খিলগাঁও ও বাসাবোতে চালু হয় ‘ভালো কাজের হোটেল’। পান্থপথ মোড়ে পান্থকুঞ্জ পার্কের উত্তর পাশে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি চালু হয় ভালো কাজের হোটেল। রাজধানীতে তাদের এই হোটেলগুলোতে প্রতিদিন গড়ে হাজার-বার শ মানুষকে খাবার দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে সপ্তাহে একদিন প্রতি শুক্রবার এ হোটেল চালু থাকে।
এখানে খাবার মেলে ভালো কাজের প্রতিশ্রুতি দিলে। অর্থাৎ আপনি সারা দিন কী ভালো কাজ করেছেন অথবা আগামীতে কী ভালো কাজ করবেন, এমন কথা বললেই আপনি পাচ্ছেন খাবার।