রমজান মাসে বাঙালির ইফতারে থাকে নানা খাবার। মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি তৃপ্তি ও প্রশান্তি দেয় এমন খাবারও অনেকেই রাখেন ইফতারির তালিকায়। সেই তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে বিউটি লাচ্ছি অ্যান্ড ফালুদার ফালুদা। শত বছরের বেশি সময় ধরেই পুরান ঢাকার ভোজনরসিকদের তৃপ্তি মেটাচ্ছে এই ফালুদা।
ফালুদা আমাদের দেশীয় কোনো খাবার নয় তবে বর্তমানে নানা আয়োজনে ফালুদা ছাড়া যেন অর্থহীন মনে হয়। ফালুদার জন্ম পারস্যে। পারস্যের লোকেরা ফালুদেহ নামে একটি ডেজার্ট খেয়ে থাকেন যা সেখানে খুবই বিখ্যাত। ভারতবর্ষে এর আগমন মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে। তবে ফালুদার তীর্থস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়।
১৯২২ সালে ঢাকার ফুটপাতে প্রথম ফালুদার ব্যবসা শুরু করেন আব্দুল আজিজ মিয়া। চার পুরুষ ধরে চলমান রয়েছে সেই ব্যবসা। জনসন রোড, নাজিরাবাজার, লক্ষ্মীবাজারে শাখা রয়েছে বিউটি লাচ্ছি অ্যান্ড ফালুদার। শুরু থেকেই শরবত ও ফালুদা বিক্রি করে বেশ সুনাম অর্জন করেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি।
ইফতারের আগে এবং পরে ফালুদার জন্য বিশেষ চাহিদা থাকে ভোজনরসিকদের। ফালুদার জন্য অনেক সময় লম্বা লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয় ক্রেতাদের। স্পেশাল ও রেগুলার দুই ধরনের ফালুদা পাওয়া যায় এখানে। স্পেশালের দাম ১২০ এবং রেগুলার দাম ৯০ টাকা।
বিউটি লাচ্ছিতে যারা ফালুদা তৈরি করেন তাদের একাধিক কারিগরের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিনিধি। তারা খবরের কাগজকে এর স্বাদের রহস্য জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে সব ফ্রেশ আইটেম দেওয়া হয় এবং পরিমাণেও বেশি দেওয়া হয়। অন্যদের চেয়ে আমাদের ফালুদার গুণগত মান ভালো এবং আমাদের কারিগররা অনেক বছরের অভিজ্ঞ।’
ফালুদাতে সাধারণত জেলি, গোলাপ জল, সেমাই বা নুড্লস, আনার, কিশমিশ, কলা, পেপে, দুধের মিশ্রণ দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে আইসক্রিম ও বরফ। বিউটি লাচ্ছির ফালুদায়, দইয়ের ওপরে ছোট ছোট করে কলা দেওয়া হয়, সঙ্গে দেওয়া হয় বাদাম, কিশমিশ, নুড্লস, সাবুদানা, আনার, আপেল, গোলাপ জল, জেলিসহ বিভিন্ন উপকরণ। রেগুলার আইটেমের সঙ্গে স্পেশাল আইটেমের পার্থক্য শুধু আইসক্রিমে।
ইফতারের জন্য ফালুদা কিনতে এসেছিলেন কুলুটোলা লেনের বাসিন্দা হাসিব রহমান। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখানকার ফালুদা প্রায়ই খেয়ে থাকি। অনেক আগে থেকেই ইফতারে আমাদের ফালুদা আইটেম থাকে। মাঝে মাঝে স্টারের ফালুদাও খেয়ে থাকি।
শাহজাহানপুর থেকে ফালুদা খেতে আসা আনিস আহমেদ বলেন, প্রায়ই ফালুদা খেতে আসি বিউটি লাচ্ছিতে। ইফতার করে বা রাতে বন্ধু-বান্ধব মিলে চলে আসি।
এ বিষয়ে বিউটি লাচ্ছির লক্ষ্মীবাজার শাখার মালিক জাবেদ হাসান বলেন, আমাদের রোজায় সবকিছু বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে, তবে ফালুদাটা এখন বেশি চলে। আমাদের কারিগররা যত্ন নিয়ে ফালুদা তৈরি করেন। আমরা মান ও গুণ ধরে রেখে এগিয়ে যেতে চাই।