ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেইলি রোডের কাবাবে নজর

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ পিএম
বেইলি রোডের কাবাবে নজর
অগ্নিকাণ্ডের পর বেইলি রোডের ইফতার আয়োজন এখনো জমে না উঠলেও প্রতিবছরের মতো এবারও কাবাবের প্রতি বেশি আকর্ষণ ক্রেতাদের।

রাজধানীর বেইলি রোডে এতিহ্যবাহী ইফতার বাজারের অভিজাত নানা পদের মুখরোচক খাবারের পসরা সাজিয়েছেন দোকানদাররা। কিন্তু সেই চিরচেনা রূপ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে একাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ। ইফতার বাজারে অনেকটাই ক্রেতাশূন্য। তার পরও প্রতিবছরের মতো এবারও বেইলি রোডে ‘কাবাব’-এর প্রতি বেশি আকর্ষণ ক্রেতাদের। এ ছাড়া আরও অর্ধশতাধিক বাহারি ও অভিজাত ইফতারের খাবার রয়েছে। 

‘বেইলি বারবি কিউ রেস্তোরা’য় ইফতার কিনতে এসেছেন বেইলি রোডের বাসিন্দা মিসেস দিলারা বেগম। তিনি একজন গৃহিণী, প্রতিবছরই এখান থেকে বাসার ইফতার কেনেন। দিলারা বেগম বলেন, বেইলি বোডের ‘কাবাবে’ বিশেষ স্বাদ রয়েছে। এ ছাড়া অভিজাত নানা পদের ইফতারের খাবারের জন্য সেরা। তিনি বলেন, এবার ইফতারের দাম অনেক বেশি। আগুন লাগার পর এই এলাকায় বাসিন্দা থেকে সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

বুধবার (১৩ মার্চ) বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেইলি রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্যবারের তুলনায় এবার ইফতারে রমরমা আয়োজন নেই। সড়কের দুই পাশে বসেনি কোনো ইফতারের দোকান। ফখরুদ্দীন বিরিয়ানি, সুলতান’স ডাইনিস, চিলক্স, বার্গার এক্সপ্রেস, ক্যাফে জেলাটেরিয়া, সেশিয়েট, নবাবি ভোজ, ভূতের আড্ডাসহ অধিকাংশ রেস্তোরাঁ এখনো বন্ধ রয়েছে। অন্য যারা রেস্তোরাঁ খুলেছেন তারাও ভয়ে ভয়ে চালাচ্ছেন। হাত গ্লোভসসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করছেন। তবে হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের নজর কাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। রেস্তোরাঁগুলোতে দেখা যায়নি ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। কমেছে ইফতার খাবারের নানা পদও। 

রমজানের দ্বিতীয় দিনে বেইলি রোডে ইফতারির বাজারে এসেছেন আরিফ হোসেন। তিনি মগবাজারের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত। খিলগাঁও এলাকার এ বাসিন্দা বলেন, রমজানে প্রতিবছরই বেইলি রোড থেকে ইফতার কেনা তাদের পরিবারের রীতি। বাড়ির মুরুব্বি থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চারা সবাই এখানকার ইফতারি পছন্দ করে। তবে গতবারের তুলনায় এবার লোকজন অনেক কম বলেও জানান।

ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত দুই-তিন বছরের তুলনায় এবারই ইফতার বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। ক্রেতা নেই বললেই চলে। মঙ্গলবার প্রথম রমজানেও একই অবস্থা ছিল। তাদের ভাষ্যমতে, সম্প্রতি বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর অনেকেই আতঙ্কে এদিকে আসছেন না। এর পর থেকেই বেইলি রোডের ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু রেস্তোরাঁও বন্ধ রয়েছে। ক্রেতাদের মধ্যেও আতঙ্ক কাটেনি। যার প্রভাব পড়েছে ইফতার বাজারে। তবে দ্রুত বেইলি রোডের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ার আশায় আছেন তারা।

বিগত বছরের মতো এবারও বেইলি রোডের ইফতার বাজার সেজেছে অভিজাত বাহারি ইফতারির সাজে। রেস্তোরাঁভেদে এসব ইফতারির খাবারের দামের পার্থক্য রয়েছে। চিকেন হাজারি ও হারিয়ানি ৩২০-৩৫০ টাকা, চিকেন আচারি ৩১০ টাকা, চিকেন টিকা ২৯০ টাকা, চিকেন কটি ২৯০ টাকা, চিকেন টেংরি ৯০ টাকা, চিকেন গুল কাবাব ৩৯০ টাকা, চিকেন কাটলেট ১২০ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ৫০০-৬০০ টাকা, খাসির লেগ পিসের রোস্ট ৬০০-৭০০ টাকা, বোম্বে জিলাপি ৪০০, রেশমি জিলাপি ৫০০-৬০০ টাকা, সুতিকাবাব ১ হাজার ৬০০ টাকা, বিফ মমো ৫০ টাকা, বিফ শর্মা ১৫০ টাকা, জালি কাবাব, চিকেন কাবাব, কাজলা ১০০ টাকা, ডাবের পুডিং ছোট ১০০ টাকা ও বড় ৩৫০ টাকা, গরুর চপ, কালা ভুনা, মোরগ পোলাও ২৮০ টাকা, তেহারি ২৯০ টাকা, ফালুদা, দইবড়া, হালিম, পনির সমুচা ৪০ টাকা, ফিশ ফিঙ্গার ৯০ টাকা, নার্গিস কাবাব ৪০ টাকা, চিকেন রোস্ট ৩০ টাকা, চিকেন কিমা পরোটা, চিকেন কোফতা, তুলাম্বা ৪০০ টাকা কেজি, ফিশ বল ৮০ টাকা, গাজর হালুয়া ৭০ টাকা, প্রোন ফ্রাই ৮০ টাকা, চিকেন ডামোস্টিক ৭০ টাকা, শরবতহ অর্ধশতাধিক পদের বাহারি ও অভিজাত খাবার।

বেইলি বারবি কিউ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার সুরঞ্জিত জয়দার বলেন, আগুন লাগার পর থেকেই অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ আছে। আগুন লাগা ও রেস্তোরাঁ বন্ধের প্রভাব পড়েছে ব্যবসার ওপর। ইফতার বেচাবিক্রি খুবই কম। ক্রেতারা যারা আসছেন তারাও দ্রুত খাবার নিয়ে চলে যান। তিনি বলেন, বেইলি রোডে কাবাব, বারবি কিউ ও জিলাপির চাহিদা বেশি।

১৯৮০ সাল থেকে বেইলি রোডে ইফতার বিক্রি করে আসছে ক্যাপিটাল ইফতার বাজার। এর স্বত্বাধিকারী মো. এহেসান উদ্দিন। 

তিনি বলেন, ‘এবার বিক্রি অনেক কম। সর্বশেষ কবে এমন দশা হয়েছে জানা নেই। লোকজন আতঙ্কে এদিকে আসছেন না। তবে প্রথম দুই দিন গেল, এখনো রমজানের অনেক সময় আছে। আশা করি লোকজন আসবেন। গতবারের মতো এবারও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছি।’

এখনো বেইলি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের সামনে থামছেন সাধারণ পথচারীরা। ভবনের নিচেও পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের অস্বস্তি এখনো কাটেনি। বিপাকে পড়েছেন বন্ধ থাকা রেস্তোরাঁর মালিকরা।

বেকারি দোকান হলেও প্রতিবছরের মতো এবারও বাহারি ইফতারের খাবারের পসরা সাজিয়েছে এ ওয়ান। দোকানের মালিক মো. পারভেজ বলেন, এই এলাকার বাসিন্দারাও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তার পরও প্রথম দিন ও আজ (বুধবার) মোটামুটি বিক্রি হয়েছে। খাবারের তালিকাও এবার ছোট করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে এবারই কম বিক্রি হয়েছে বলেও জানান। 

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের আগুনে পুড়ে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে রয়েছে।

রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থীদের অজানা এক জাদুঘর

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১১:১০ এএম
রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থীদের অজানা এক জাদুঘর
রাজশাহী কলেজে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ব্রিটিশ আমলের এক জাদুঘর। খবরের কাগজ

ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ। দীর্ঘ ইতিহাস আর সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের বাহক এই প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল একটি নিজস্ব জাদুঘর, যা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে তালাবদ্ধ অবস্থায়। অযত্ন, অবহেলা ও অবমূল্যায়নের নিদর্শন হয়ে, গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য এই সংগ্রহশালাটি হারিয়ে যাচ্ছে ধুলো ও মাকড়সার জালে।

এক কক্ষবিশিষ্ট এই জাদুঘরের কথা কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরই অজানা। সাংবাদিকদের একাধিকবার আবেদন ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর এক দুপুরে খোলা হয় এই রহস্যময় কক্ষটি। ধারণা করা হয়, সাংবাদিকদের ঢোকার আগে হঠাৎ করেই কিছুটা পরিষ্কার করা হয়েছে ঘরটি। তবে অযত্নের ছাপ মোছা যায়নি।

সরেজমিনে কক্ষে ঢুকতেই চোখে পড়ে নামফলক ও সালহীন ধুলোমাখা কিছু ছবি। কোনোমতে ফাইলে গুঁজে রাখা পুরোনো নথিপত্র। আর বইগুলো আছে ছড়ানো-ছিটানো। কাঠের পুরোনো আলমারি, ব্রিটিশ আমলের টেবিল ফ্যান, ধুলোমলিন মাইক্রোস্কোপ, প্রাচীন ঘড়ি, আয়না, রেডিও, ঝাড়বাতি এমনকি একটি প্রিন্টিং মেশিন, সবকিছু যেন অবহেলিত, অনাকাঙ্ক্ষিত।

জাদুঘরে থাকা উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ৮টি ঘড়ি, ৩টি রেডিও ও আয়না, ২টি পুরস্কার মেডেল, ৩৪টি কাঠের ওপর ছাপা ঐতিহ্যের ছবি, ২টি মাইক্রোস্কোপ ও ৬টি বিজ্ঞানযন্ত্র, প্রাচীন বই, শিক্ষকদের নামের ফলক ও একটি প্রিন্টিং অলমেট।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব মূল্যবান ঐতিহাসিক সম্পদ সংরক্ষণের নেই কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা। কলেজের লাইব্রেরিয়ান পর্যন্ত জানেন না জাদুঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নেই সচেতনতা।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া ফেরদৌস বিস্ময়ভরে প্রশ্ন করেন, ‘রাজশাহী কলেজে কি জাদুঘর আছে?’ তার মতোই অনেক শিক্ষার্থী এই ঐতিহাসিক স্থাপনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। আরেক শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানার আগ্রহ থাকলেও তা জানার সুযোগ আমাদের হয়নি।’ শিক্ষকরাও জানান, শ্রেণিকক্ষে ইতিহাসচর্চা তেমন হয় না, যদিও লাইব্রেরিতে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক বইপত্র।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, জাদুঘরটিকে আধুনিকভাবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক। কারণ ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গৌরবময় অতীতের সাক্ষী হয়ে আছে আজও।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী বায়জিদ সরকার বলেন, ‘জাদুঘরটি দ্রুত সংস্কার করে আমাদের জন্য খুলে দেওয়া হোক। নাহলে এসব নিদর্শনের বিলুপ্তি আমাদের সাংস্কৃতিক দেউলিয়ার প্রমাণ হয়ে থাকবে।’

জাদুঘর দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ থাকা প্রসঙ্গে কলেজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংস্কৃতিকর্মী অলিউর রহমান বাবু। তিনি বলেন, ‘এই জাদুঘর কলেজের ঐতিহ্য। অথচ প্রশাসন এটিকে অবমূল্যায়ন করে তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. যুহুর আলি বলেন, ‘জাদুঘর উন্নয়নের বিষয়ে এখনো কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। তবে সচেতন মহল ও সরকারের সহযোগিতা পেলে উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।’

শতবর্ষী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এমন জীবন্ত নিদর্শন বছরের পর বছর তালাবদ্ধ ও অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকা শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং এটি প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক চেতনার চরম সংকটের প্রতিচ্ছবি বলে মনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

চলনবিল জাদুঘর কালের গর্ভে বিলীনের শঙ্কা

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
চলনবিল জাদুঘর কালের গর্ভে বিলীনের শঙ্কা
চলনবিল জাদুঘরে সম্প্রতি প্রবেশের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে বিভিন্ন নিদর্শন দেখান সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আবু বকর সিদ্দিক। ছবি: খবরের কাগজ

নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর এলাকায় অবস্থিত চলনবিল জাদুঘর একসময় ছিল এ অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণের প্রাণকেন্দ্র। দেশের সর্ববৃহৎ বিলের নামানুসারে এই জাদুঘরটি ১৯৭৮ সালে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চলনবিলের কিংবদন্তি শিক্ষক আবদুল হামিদ। তবে অব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও সরকারি অনীহার কারণে জেলার একমাত্র এই জাদুঘরটি এখন ধ্বংসের মুখে। জাদুঘরটিতে রক্ষিত দুর্লভ প্রাচীন নিদর্শনগুলোর অনেক কিছুই আর নেই। নিদর্শন না থাকায় লোকসমাগমও নেই আগের মতো। মুঘল আমলের কিছু পুরোনো নিদর্শন নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরটি । অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এমন অবহেলা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

এদিকে এই জাদুঘরের দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য থাকা একমাত্র ব্যক্তি আবু বকর সিদ্দিকও দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে চাকরি স্থায়ী করতে না পেরে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে কর্মরত এই ব্যক্তি অল্প কিছু বেতনে পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বয়সে ততটা প্রবীণ না হলেও তার চোখেমুখে কষ্টের স্পষ্ট ছাপ। তাকে ও জাদুঘরটিকে দেখলেই মনে হয় তারা অযত্ন আর অবহেলায় ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলনবিলের কোল ঘেঁষে খুবজীপুর গ্রামে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটি। এটি ১৯৮৯ সালের ২ জুলাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আসে। চলনবিল জাদুঘর নামে এই সংগ্রহশালাটি শুরুতে দ্বিতল ভবনে যাত্রা শুরু করে। পরে দোতলার কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় বর্তমানে নিচতলার মাত্র দুটি কক্ষেই সীমাবদ্ধ জাদুঘরটি। ওই কক্ষগুলোতেই রাখা হয়েছে উপমহাদেশের প্রাচীন ও দুর্লভ কিছু নিদর্শন। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় নিরাপত্তার অভাবে ও সংস্কার-সংরক্ষণের নামে মূল্যবান অনেক জিনিস নিয়ে যাওয়া হয়েছে বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘরে। পরে সেগুলো আর ফিরে আসেনি। চলনবিল জাদুঘরের স্যাঁতসেঁতে কক্ষগুলোতে রক্ষিত বাকি মূল্যবান দুর্লভ প্রত্নসম্পদগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে কালের সাক্ষী বহন করেই কোনো রকমে টিকে রয়েছে জাদুঘরটি। যেন দেখার কেউই নেই। তাই এতে নেই আগের মতো পর্যটকদের পদচারণ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে খুবজীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ কমপ্লেক্স নামে একটি ফটক। ভেতরে বিশাল খেলার মাঠ। মাঠের চারদিকে বড় বড় বেশ কিছু ভবন। এর মধ্যে খুবজীপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও খুবজীপুর নজরুল প্রগতি সংঘের মাঝে এক কোণে ছোট্ট একটি সাইবোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চলনবিল জাদুঘর। আধুনিক ভবনগুলোর মাঝে জাদুঘরটিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেউ যদি পেয়েও যান প্রথম দেখায় মনে হবে এটা কোনো পরিত্যক্ত ভবন। সাদামাটা একতলা সেই ঘরের প্রথম কক্ষে ঢুকেই চোখে পড়ে চলনবিলের বিভিন্ন পুকুর খননে পাওয়া ৩০০ বছরের পুরোনো মনসামঙ্গল ঘট। প্রায় প্রতিটি ঘটের গায়েই সাপের প্রতিকৃতির মতো নকশা। রয়েছে শিলপাটা, ধাতব তৈজসপত্র ও কড়ি। দেয়ালে সাঁটানো উটের চামড়ার ওপর ১৪০০ শতকের ইসলামি জলসার বর্ণনা। আলমারিগুলো সাজানো বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক ঝিনুক, ১৯৭২ সালে হাতে লেখা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান এবং মিসরের পিরামিড পাথর। ওই কক্ষের তাকে থরে থরে রাখা সত্যপীরের পাঁচালিসহ গাছের বাকলে লেখা সংস্কৃত পুঁথি। পাশেই রয়েছে বাদশাহ আলমগীর ও সম্রাট নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের নিজ হাতে লেখা দুটি কোরআন শরিফ, তুলট কাগজে হাতে লেখা ৩০০-৪০০ বছরের পুরোনো ৮টি সম্পূর্ণ ও ৭টি আংশিক কোরআন শরিফ, ১৫টি হাদিস শরিফ ও মহারানি ভবানীর নিজ হাতে লেখা দলিলসহ ২৫৭টি ধর্মগ্রন্থ। এসবই বন্দি করে রাখা হয়েছে কাচের আলমারিতে। এ ছাড়া রয়েছে ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর হাতে লেখা ব্যক্তিগত ডায়েরিও আছে।

আরেকটি কক্ষে রাখা মানুষের প্রাচীন খুলি, শত বছরের পুরোনো ইটের ওপর মাটির তৈরি তামবুড়া ফল এবং চলনবিলে প্রাচীনকালে ডাকাতদের ব্যবহৃত তলোয়ার এবং ছুরি। এ ছাড়া চার মাথা ও তিন মাথাওয়ালা বাঁশ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। 

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, জাদুঘরের মূল ভবনটি এখন অরক্ষিত। জানালা-দরজা দুর্বল হয়ে ভেঙে যাচ্ছে, ছাদে ধরেছে ফাটল। এতে পানি চুইয়ে পড়ে দেয়ালগুলোতে শ্যাওলা জমেছে। এ ছাড়া সংগ্রহশালাটির দুটি কক্ষই স্যাঁতসেঁতে। ফলে অধিকাংশ মূল্যবান দুর্লভ প্রত্নসম্পদগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে, বাকিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। শুধু তাই নয়, নাজুক এই জাদুঘরে নিজস্ব কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই, নেই ফ্যানের কোনো ব্যবস্থাও। আবার নেই কোনো টয়লেটও। ফলে নেই আগের মতো পর্যটকদের পদচারণ। এতে ইতিহাসের গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে চলনবিল জাদুঘর। 

জাদুঘরটির কর্মচারী আবু বকর সিদ্দিক জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ও সংস্কার-সংরক্ষণের নামে জাদুঘরে রক্ষিত লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কৃষ্ণ মূর্তিসহ বেশ কিছু মূল্যবান নিদর্শন ঢাকা ও বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘরে নেওয়া হয়। যেগুলো আর ফিরে আসেনি। আবার জাদুঘরটিরও কোনো সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হচ্ছে। তিনটি কক্ষবিশিষ্ট দোতলা অনেক আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন একতলা নিয়ে টিকে থাকা ভবনটির ছাদের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। জানালার গ্রিলগুলো মরিচা পড়ে দুর্বল হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। এতে মহামূল্যবান দুর্লভ প্রত্নসম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

জাদুঘরটির মতো নিজেও কষ্টের মধ্যে আছেন জানিয়ে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘২০০১ সালে জাদুঘরটির দেখভালের জন্য দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পাই। দীর্ঘ ২৪ বছরেও চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’ 

খুবজীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘খুবজীপুর একটি অজপাড়াগাঁ হলেও এখানকার অনেক আলোকিত মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্রে আলো ছড়াচ্ছেন। তেমনি একজন ব্যক্তি মরহুম কিংবদন্তি শিক্ষক আবদুল হামিদ নিজ উদ্যোগে চলনবিল জাদুঘরটি করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নানা অজুহাতে জাদুঘরটি অন্যত্র স্থানান্তরের চেষ্টা করছে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবির মুখে তা এখনো সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাদের অসহযোগিতার কারণে দিন দিন ঐতিহ্য হারিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই জাদুঘরটি। তবে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি, জাদুঘরটি যেন কোনোভাবেই কালের গর্ভে বিলীন না হয়। বরং এটা যেন আরও বিকশিত হয়। সে ক্ষেত্রে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’ 

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ‘গুরুদাসপুর তথা নাটোর জেলার ঐতিহ্যবাহী সংগ্রহশালা চলনবিল জাদুঘর। বর্তমান এই জাদুঘরটি অনেক সংকটে রয়েছে বলে জেনেছি। আমাদের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সরেজমিনে পরিদর্শন করে এটি সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’ 

লালমাইয়ে মিলেছে প্রাচীন স্থাপনা

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫, ১০:২৩ এএম
লালমাইয়ে মিলেছে প্রাচীন স্থাপনা
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান দল মাটি খুঁড়ে পুরাকীর্তির সন্ধান করছে। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ধর্মপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী শালবন বিহারের পর কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে প্রাচীন স্থাপনার খোঁজ মিলতে শুরু করেছে। জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি জায়গার মাটি খননের সময় এই পুরাকীর্তির সন্ধান মেলে। পরে লালমাই পাহাড়ের দক্ষিণাংশে ‘বালাগাজীর মুড়া’ হিসেবে পরিচিত স্থানটিতে পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। খননের পর সেখান থেকে প্রাচীন স্থাপনা ও প্রত্নবস্তু বেরিয়ে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১০ থেকে ১২ একর এলাকাজুড়ে খনন করা গেলে শালবন বিহার, আনন্দ বিহার কিংবা রূপবান মুড়ার মতো আরও একটি নিদর্শন উন্মোচিত হতে পারে। এমনকি ব্যতিক্রমী কোনো নিদর্শন পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। 

ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান ও খননকার্য পরিচালনার সদস্য শাহীন আলম বলেন, ‘পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বড় বড় ইট দিয়ে তৈরি প্রায় ছয় ফুট চওড়া প্রাচীন একটি দেয়ালের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে, যা হয়তো কোনো স্থাপনার কর্নার। খননকালে মৃৎপাত্রের ভগ্ন টুকরোবিশিষ্ট তিন-চার ফুট পুরু একাধিক মাটির স্তর সরানোর পরে সন্ধান মেলে প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্যবাহী দেয়ালের এ ধ্বংসাবশেষ।’
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান দল প্রাথমিকভাবে মনে করছে, বালাগাজীর মুড়া নামে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে উন্মোচিত প্রাচীন স্থাপনার এই ধ্বংসাবশেষটি লালমাই, ময়নামতিতে আবিষ্কৃত হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, ভোজ বিহার, ইটাখোলা ও রূপবান মুড়ার প্রাচীন মন্দির ও বিহারের ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক হতে পারে।

দলের অন্যতম সদস্য শাহীন আলম বলেন, ‘বালাগাজীর মুড়ায় মাত্রই তো খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রকৃত সময় সম্পূর্ণ খনন ও গবেষণা কাজ সম্পন্ন করার পর জানা যাবে। বালাগাজীর মুড়া স্থানীয়দের কাছে চারা বাড়ি নামে সুপরিচিত। মূলত এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির ওপরিভাগে প্রচুর চারা অর্থাৎ মৃৎপাত্রের ভগ্ন টুকরো থাকায় স্থানীয়ভাবে এ নামকরণ হয়।’ 

বালাগাজী মুড়ায় খনন-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাস্টোডিয়ানের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রায় ৮০ বছর আগে বালাগাজীর মুড়াকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৪৫ সালের শিমলা গেজেটে প্রকাশ করা হয়। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে এ বছর বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।’

খনন ও অনুসন্ধান কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফিল্ড অফিসার) আবু সাইদ ইনাম তানভীর বলেন, ‘এপ্রিল মাসের প্রথম দিক থেকে বালাগাজীর মুড়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করা হয়েছে, যা আগামী জুন মাস পর্যন্ত চলবে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের (এপ্রিল) প্রথম সপ্তাহে ধর্মপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন বসতভিটা নির্মাণের জন্য তার মালিকানাধীন জায়গার মাটি খনন শুরু করেন। এ সময় সেখানে লাল ইটের প্রাচীন স্থাপনাটি দেখতে পেয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়কে জানানো হয়। খবর পেয়ে তাদের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং খনন ও অনুসন্ধান শুরু করে। গতকাল সোমবার সকালেও সেখানে খনন কাজ চলমান থাকতে দেখা গেছে।

জমির মালিক জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাটি সমান করার সময় শ্রমিকদের কোদালের কোপে শক্ত ইটের গাঁথুনির বিষয়টি টের পাওয়া যায়। পরে একটু খুঁড়ে দেখা গেছে, প্রাচীন আমলের ইটের স্থাপনা। এমন ইট কুমিল্লা কোটবাড়ির শালবন বিহারে দেখা যায়। এরপর বিষয়টি জানতে পেয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের লোকজন খননের সিদ্ধান্ত নেয়। যদি নতুন কোনো প্রত্নস্থাপনা পাওয়া যায়, তাহলে এটি হবে আনন্দের সংবাদ।’

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক

উপমহাদেশের প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ শেরেবাংলা আবুল কাশেম (এ কে) ফজলুল হকের ৬৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৭ এপ্রিল। ১৯৬২ সালের এই দিন ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তিনি ‘হক সাহেব’ নামেও পরিচিত। শিক্ষানুরাগী ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের মিঞা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। 

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা সিটি করপোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আইনসভার সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

এ কে ফজলুল হক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ১৯৪০ সালে তিনি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি ২১ দফা দাবিরও প্রণেতা ছিলেন।

হবিগঞ্জে দুই শতাব্দীর বৈশাখী মেলা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
হবিগঞ্জে দুই শতাব্দীর বৈশাখী মেলা
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলা নববর্ষ মানেই উৎসব, আর উৎসব মানেই মানুষে মানুষে মিলন। তবে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে নববর্ষ উদযাপনের রীতিতে আছে ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত মঙ্গলবার বাংলা বছরের দ্বিতীয় দিন হলেও, পঞ্জিকা অনুসারে এখানেই উদযাপন হয় নববর্ষের মূল আয়োজন। এ উপলক্ষে বসে এক দিনের বৈশাখী মেলা, যা টিকে আছে টানা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে। কথিত আছে, এই মেলার শুরু ব্রিটিশ আমল থেকেই।

চুনারুঘাট উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ঘিরেই বসে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা। গ্রামীণ বাংলার নানা উপকরণ, কৃষিপণ্য ও দেশীয় খাবারের পসরা নিয়ে হাজির হন দোকানিরা। মেলার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে থাকে বাংলার মাটি ও মানুষের গন্ধ।

মেলায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও উপকরণের ভিড়। লাঙল, জোয়াল, মই, ঘাইল-ছিয়া, মাছ ধরার ঝাঁকি জাল, ভাঁড়, কলসি ইত্যাদি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ মেলাই তাদের জন্য বছরের সবচেয়ে বড় কৃষিপণ্য কেনাকাটার সুযোগ।

এই মেলায় আসেন অনেক প্রবীণ মানুষ, যারা ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে প্রথম এসেছিলেন। এখন একাই আসেন। কিন্তু চোখে-মুখে সেই পুরোনো দিনের ঝলক। স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এই মেলাটি ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ছোটবেলা বাবা-দাদার সঙ্গে মেলা ঘুরতে আসতাম। এখন নিজের নাতি-নাতনিদের নিয়ে আসি।’

মমরাজ মিয়া বলেন, ‘বছরে কৃষিকাজে যত সরঞ্জাম দরকার, সবগুলো এই এক দিনেই এখান থেকে কেনা হয়। এমন কোনো কৃষিপণ্য নেই, যা এখানে পাওয়া যায় না। এমনকি কোনো কোনো জিনিস এখন বিলুপ্ত, বাজারে পাওয়া যায় না, কিন্তু এখানে ঠিকই পাওয়া যায়।’ 

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে ছবিটা। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ায় আগের মতো কৃষি উপকরণের চাহিদা কমেছে। 

অনেক বিক্রেতা জানান, তারা এবার আগের তুলনায় কম পণ্য এনেছেন। বিক্রেতা ছাবু মিয়া বলেন, ‘আগের মেলা আর এখনের মেলার মধ্যে রাত-দিন তফাত। আগে মই, লাঙল বিক্রি করে দম ফেলতে পারতাম না। এখন বিক্রি কমে গেছে। মানুষ আধুনিক যন্ত্রে চাষ করে। এসব কিনে কী করবে? তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরা এসেছি। কম-বেশি বিক্রি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ধান চাষে না লাগলেও, নানা সবজি চাষের জন্য লাঙল লাগে। এ কারণে কম-বেশি বেচা-বিক্রি হয়।’

এদিকে মেলায় বসেছে মুখরোচক খাবারের পসরা। খৈ, মুড়ি, বাতাসা, জিলাপি, নাড়ু, মোয়া, সন্দেশসহ নানা ঘরোয়া মিষ্টান্ন। অনেকেই এই খাবার কেনেন দূর-দূরান্ত থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনের জন্য। 

নার্গিস বেগম প্রতিবছর ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য খেলনা কিনেছি, আর বাড়ির সবার জন্য দেশি মিষ্টি। নববর্ষের আনন্দ এখানেই খুঁজে পাই।’ অন্যদিকে শিশুদের জন্য থাকে নাগরদোলা, বেলুন, বাঁশির দোকান- সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত পরিবেশ।’

চুনারুঘাটের এই মেলার কোনো লিখিত ইতিহাস নেই, নেই সরকারি তত্ত্বাবধানও। তবুও মানুষের মুখে মুখে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেঁচে আছে এ মেলা। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনন্দ যেমন আছে, তেমনি আছে এক গভীর শিকড়ের সন্ধান।