বেইলি রোডের কাবাবে নজর । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

বেইলি রোডের কাবাবে নজর

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
বেইলি রোডের কাবাবে নজর
অগ্নিকাণ্ডের পর বেইলি রোডের ইফতার আয়োজন এখনো জমে না উঠলেও প্রতিবছরের মতো এবারও কাবাবের প্রতি বেশি আকর্ষণ ক্রেতাদের।

রাজধানীর বেইলি রোডে এতিহ্যবাহী ইফতার বাজারের অভিজাত নানা পদের মুখরোচক খাবারের পসরা সাজিয়েছেন দোকানদাররা। কিন্তু সেই চিরচেনা রূপ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে একাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ। ইফতার বাজারে অনেকটাই ক্রেতাশূন্য। তার পরও প্রতিবছরের মতো এবারও বেইলি রোডে ‘কাবাব’-এর প্রতি বেশি আকর্ষণ ক্রেতাদের। এ ছাড়া আরও অর্ধশতাধিক বাহারি ও অভিজাত ইফতারের খাবার রয়েছে। 

‘বেইলি বারবি কিউ রেস্তোরা’য় ইফতার কিনতে এসেছেন বেইলি রোডের বাসিন্দা মিসেস দিলারা বেগম। তিনি একজন গৃহিণী, প্রতিবছরই এখান থেকে বাসার ইফতার কেনেন। দিলারা বেগম বলেন, বেইলি বোডের ‘কাবাবে’ বিশেষ স্বাদ রয়েছে। এ ছাড়া অভিজাত নানা পদের ইফতারের খাবারের জন্য সেরা। তিনি বলেন, এবার ইফতারের দাম অনেক বেশি। আগুন লাগার পর এই এলাকায় বাসিন্দা থেকে সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

বুধবার (১৩ মার্চ) বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেইলি রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্যবারের তুলনায় এবার ইফতারে রমরমা আয়োজন নেই। সড়কের দুই পাশে বসেনি কোনো ইফতারের দোকান। ফখরুদ্দীন বিরিয়ানি, সুলতান’স ডাইনিস, চিলক্স, বার্গার এক্সপ্রেস, ক্যাফে জেলাটেরিয়া, সেশিয়েট, নবাবি ভোজ, ভূতের আড্ডাসহ অধিকাংশ রেস্তোরাঁ এখনো বন্ধ রয়েছে। অন্য যারা রেস্তোরাঁ খুলেছেন তারাও ভয়ে ভয়ে চালাচ্ছেন। হাত গ্লোভসসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করছেন। তবে হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের নজর কাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। রেস্তোরাঁগুলোতে দেখা যায়নি ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। কমেছে ইফতার খাবারের নানা পদও। 

রমজানের দ্বিতীয় দিনে বেইলি রোডে ইফতারির বাজারে এসেছেন আরিফ হোসেন। তিনি মগবাজারের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত। খিলগাঁও এলাকার এ বাসিন্দা বলেন, রমজানে প্রতিবছরই বেইলি রোড থেকে ইফতার কেনা তাদের পরিবারের রীতি। বাড়ির মুরুব্বি থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চারা সবাই এখানকার ইফতারি পছন্দ করে। তবে গতবারের তুলনায় এবার লোকজন অনেক কম বলেও জানান।

ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত দুই-তিন বছরের তুলনায় এবারই ইফতার বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। ক্রেতা নেই বললেই চলে। মঙ্গলবার প্রথম রমজানেও একই অবস্থা ছিল। তাদের ভাষ্যমতে, সম্প্রতি বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর অনেকেই আতঙ্কে এদিকে আসছেন না। এর পর থেকেই বেইলি রোডের ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু রেস্তোরাঁও বন্ধ রয়েছে। ক্রেতাদের মধ্যেও আতঙ্ক কাটেনি। যার প্রভাব পড়েছে ইফতার বাজারে। তবে দ্রুত বেইলি রোডের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ার আশায় আছেন তারা।

বিগত বছরের মতো এবারও বেইলি রোডের ইফতার বাজার সেজেছে অভিজাত বাহারি ইফতারির সাজে। রেস্তোরাঁভেদে এসব ইফতারির খাবারের দামের পার্থক্য রয়েছে। চিকেন হাজারি ও হারিয়ানি ৩২০-৩৫০ টাকা, চিকেন আচারি ৩১০ টাকা, চিকেন টিকা ২৯০ টাকা, চিকেন কটি ২৯০ টাকা, চিকেন টেংরি ৯০ টাকা, চিকেন গুল কাবাব ৩৯০ টাকা, চিকেন কাটলেট ১২০ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ৫০০-৬০০ টাকা, খাসির লেগ পিসের রোস্ট ৬০০-৭০০ টাকা, বোম্বে জিলাপি ৪০০, রেশমি জিলাপি ৫০০-৬০০ টাকা, সুতিকাবাব ১ হাজার ৬০০ টাকা, বিফ মমো ৫০ টাকা, বিফ শর্মা ১৫০ টাকা, জালি কাবাব, চিকেন কাবাব, কাজলা ১০০ টাকা, ডাবের পুডিং ছোট ১০০ টাকা ও বড় ৩৫০ টাকা, গরুর চপ, কালা ভুনা, মোরগ পোলাও ২৮০ টাকা, তেহারি ২৯০ টাকা, ফালুদা, দইবড়া, হালিম, পনির সমুচা ৪০ টাকা, ফিশ ফিঙ্গার ৯০ টাকা, নার্গিস কাবাব ৪০ টাকা, চিকেন রোস্ট ৩০ টাকা, চিকেন কিমা পরোটা, চিকেন কোফতা, তুলাম্বা ৪০০ টাকা কেজি, ফিশ বল ৮০ টাকা, গাজর হালুয়া ৭০ টাকা, প্রোন ফ্রাই ৮০ টাকা, চিকেন ডামোস্টিক ৭০ টাকা, শরবতহ অর্ধশতাধিক পদের বাহারি ও অভিজাত খাবার।

বেইলি বারবি কিউ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার সুরঞ্জিত জয়দার বলেন, আগুন লাগার পর থেকেই অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ আছে। আগুন লাগা ও রেস্তোরাঁ বন্ধের প্রভাব পড়েছে ব্যবসার ওপর। ইফতার বেচাবিক্রি খুবই কম। ক্রেতারা যারা আসছেন তারাও দ্রুত খাবার নিয়ে চলে যান। তিনি বলেন, বেইলি রোডে কাবাব, বারবি কিউ ও জিলাপির চাহিদা বেশি।

১৯৮০ সাল থেকে বেইলি রোডে ইফতার বিক্রি করে আসছে ক্যাপিটাল ইফতার বাজার। এর স্বত্বাধিকারী মো. এহেসান উদ্দিন। 

তিনি বলেন, ‘এবার বিক্রি অনেক কম। সর্বশেষ কবে এমন দশা হয়েছে জানা নেই। লোকজন আতঙ্কে এদিকে আসছেন না। তবে প্রথম দুই দিন গেল, এখনো রমজানের অনেক সময় আছে। আশা করি লোকজন আসবেন। গতবারের মতো এবারও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছি।’

এখনো বেইলি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের সামনে থামছেন সাধারণ পথচারীরা। ভবনের নিচেও পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের অস্বস্তি এখনো কাটেনি। বিপাকে পড়েছেন বন্ধ থাকা রেস্তোরাঁর মালিকরা।

বেকারি দোকান হলেও প্রতিবছরের মতো এবারও বাহারি ইফতারের খাবারের পসরা সাজিয়েছে এ ওয়ান। দোকানের মালিক মো. পারভেজ বলেন, এই এলাকার বাসিন্দারাও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তার পরও প্রথম দিন ও আজ (বুধবার) মোটামুটি বিক্রি হয়েছে। খাবারের তালিকাও এবার ছোট করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে এবারই কম বিক্রি হয়েছে বলেও জানান। 

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের আগুনে পুড়ে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে রয়েছে।

আলোকচিত্র মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত দলিল

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
আলোকচিত্র মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত দলিল
ছবি: খবরের কাগজ

ছবি শুধু ছবি নয়, অনেক সময় কথা বলে, হয়ে ওঠে এক জীবন্ত ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় নানা ঘটনার প্রেক্ষাপটে ধারণ করা এমন ৫৩ মর্মস্পর্শী ছবিও যেন স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে জীবন্ত দলিল হিসেবে প্রতীয়মান। পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার পাশাপাশি উদ্বাস্তু এবং উদ্বাস্তু শিবিরের মানবিক গল্পগুলো এসব ছবিতে চিরন্তন ও প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে।

রবিবার (৫ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের জয়নুল আর্ট গ্যালারিতে ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাইয়ের তোলা মর্মস্পর্শী এমন ৫৩টি ছবি নিয়ে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাবি ও দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (ডিবিএফ) যৌথ ব্যবস্থাপনায় ‘রাইজ অব নেশন’ শীর্ষক ওই আলোচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ১৫ দিনের ওই প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন।

অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে এ দেশের মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি লোক মাতৃভূমি ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সে দেশের জনগণ যেভাবে তাদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই চিত্র যারা স্বচক্ষে দেখেননি তাদের বুঝানো খুব কঠিন। বরেণ্য চিত্রশিল্পী রঘু রাই সে সময় মানুষের নিদারুণ কষ্ট, জীবন বাঁচানোর যে আকুতি, সেটি ফুটিয়ে তুলেছেন।’

তিনি বলেন, “আমরা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করছি। আমার মনে হয় রঘু রাইয়ের অ্যালবাম ‘রাইজ অব এ নেশন’ এ ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাথা ইতিহাস নিয়ে নানা সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু এর বিপরীতে থাকা যুদ্ধাপরাধী আলবদর-আলশামসদের আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। যেকোনো জিনিস এক তরফা হলে স্থায়িত্ব থাকে না। আমি আহ্বান জানাব, একদিকে বীরত্বের কথা এবং অন্যদিকে এর বিপক্ষে থাকাদের নিয়ে আলোচনা রাখতে হবে। এতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপলব্ধি আসবে তারা কোন পক্ষে অবস্থান নেবে।”

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘আমরা সীমিত পরিসরে থেকে বিশ্বমানের ছবি উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছি। এই প্রদর্শনী চারুকলা অনুষদের ৭৬ বছরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

প্রদর্শনীর কিউরেটর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিহান করীম বলেন, ‘প্রখ্যাত ভারতীয় আলোকচিত্রশিল্পী রঘু রাই তার ক্যামেরায় অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি মর্মস্পর্শী করুণ কাব্যিক রূপ ধারণ করেছেন। ছবিতে হানাদারদের বর্বরতার পাশাপাশি সেখানে উদ্বাস্তু এবং উদ্বাস্তু শিবিরের গভীর মানবিক গল্পগুলো ধরা পড়েছে, চিরন্তন হয়ে উঠেছে ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো। সীমিত সংস্থান নিয়ে অস্থায়ী শিবিরে আটকে থাকা উদ্বাস্তুদের দুর্দশা রাইয়ের ছবিতে ভিন্ন ব্যঞ্জনা পেয়েছে, করুণ নির্মম একটি অন্ধকার অনুচ্ছেদের ওপর তিনি মানবিক আলো ফেলেছেন।’

নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবিরের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য ড. রুবানা হক, দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দুর্জয় রহমান, স্কয়ার গ্রুপের ডিরেক্টর অঞ্জন চৌধুরী প্রমুখ।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং ঘুরে দেখেন। প্রদর্শনীটি আগামী ১৯ মে পর্যন্ত বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জয়নুল গ্যলারিতে প্রদর্শিত হবে।

বলীখেলা ঘিরে জমে উঠেছে লালদিঘী পাড়ের বৈশাখী মেলা

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫২ এএম
বলীখেলা ঘিরে জমে উঠেছে লালদিঘী পাড়ের বৈশাখী মেলা

চট্টগ্রামের লালদিঘী পাড়ে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলাকে কেন্দ্র করে বসা বৈশাখী মেলা জমে ওঠেছে। ইতোমধ্যে নগরের আন্দরকিল্লা মোড় থেকে হাজারী গলি হয়ে টেরীবাজার, লালদিঘী পাড়, কে সি দে রোড, সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে অন্তত এক হাজার দোকান বসেছে। এসব দোকানে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ক্রেতারাও ভিড় করতে শুরু করেছেন জিনিসপত্র কিনতে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হবে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসর। তবে মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। 

ইতোমধ্যে বলীখেলাকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কমিটি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে এবারও দেড় শতাধিক বলী এই খেলায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। বলীখেলা উপলক্ষে নগরীর আন্দরকিল্লা, লালদিঘী, পুরাতন টেলিগ্রাফ রোড, নিউমার্কেট, জহুর মার্কেট, মহল মার্কেট মোড়সহ আশপাশের এলাকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে নগর পুলিশ। 

লাখো মানুষের সমাগম হবে এই বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায়, এমনটাই আশা করছেন আয়োজক কমিটি। 

সরেজমিন মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে মেলার স্থানে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় থেকে লালদিঘী পাড়, কে সি দে রোড, হাজারী গলির দুই মুখ, সিনেমা প্যালেস, মহল মার্কেট পর্যন্ত আশপাশের দুই কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে সারি সারি অসংখ্য দোকান বসেছে। কেউ বাঁশ-বেতের তৈরি কুলা, ঢালা, ঝুড়ি, মোড়া, মাছ ধরার চাঁইসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। আবার কেউ তালপাতার তৈরি হাতপাখা, কেউ মাটির তৈরি তৈজসপত্র (মাটির ব্যাংক, বাসন, জগ, থালা, ফুলদানি) বিক্রি করছেন। আবার কেউ শীতল পাটি ও বাঁশের বাঁশির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। আবার কেউ কেউ বড় বড় চটের বস্তায় রংবেরঙের আঙ্গুলি খাবার বিক্রি করছেন। 

আগামীকাল বলীখেলা হলেও এক দিন আগেই জমে উঠেছে বৈশাখী মেলা। মেলায় ঘুরে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে মাটির তৈরি জিনিসপত্র, শীতল পাটি, ফুলের ঝাড়ু, ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে দোকানে নারী ও পুরুষ ক্রেতাদের সমাগম সবচেয়ে বেশি। বেচাকেনাও চলছে হরদম। 

তীব্র রোদের খরতাপে মেলায় আগতদের কেউ ক্লান্ত হয়ে বেল, লেবুর শরবত পান করছেন, কেউবা খাচ্ছেন কুলফি, মালাই আইসক্রিম। 

সড়কের ধারে বসা এসব দোকানে কেউ যেন কোনো চাঁদা নিতে না পারে সেজন্য মেলার আয়োজক কমিটি বারবার মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন। আয়োজকদের নামে কেউ যদি চাঁদা দাবি করে তাহলে তাদের থানায় সোপর্দ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়। 

নরসিংদী জেলা থেকে বেতের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে এসেছেন খোকন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, আমি বাড়িতে তৈরি ঢালা, কুলা, পাখা, ঝাড়ুসহ হরেক রকম জিনিসপত্র এনেছি। আশা করি আশানুরূপ বিক্রি হবে। 

দিনাজপুর থেকে শিমুল তুলা বিক্রি করতে এসেছেন জামাল হোসেন ভুঁইয়া। তিনি বলেন, আমরা দিনাজপুরে নিজস্ব বাগানে তুলা চাষ করি। সেই তুলা তুলে নানা প্রক্রিয়ার পর মেলায় আনি। কেজি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি শিমুল তুলা। 

হরিপদ দাশ বলেন, তিনি গাজীপুর থেকে এসেছেন মাটি তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে। দেশের নানা স্থানে ঘুরে ঘুরে মেলা করায় তার পেশা। ৩০ বছর ধরে তিনি চট্টগ্রামের জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় দোকান করেন। 

জানা যায়, গতবার ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার ১১৪তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই আসরে চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার শাহজালাল বলি। আর রানার্সআপ হয়েছিলেন চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন। 

তার আগের আসরে জীবন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। আর শাহজালাল হয়েছিলেন রানার্সআপ। 

১১৪তম আসরে তারা দুজন সাত মিনিট ধরে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। বলীখেলায় চ্যাম্পিয়নকে দেওয়া হয় বিজয় ট্রফিসহ ৩০ হাজার টাকা প্রাইজমানি, দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থকে দেওয়া হয় যথাক্রমে ২০ হাজার, ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা আর ট্রফি।

মনির/অমিয়/

ডামুড্যায় ২০০ বছর পুরোনো মাছ ধরা উৎসব

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
ডামুড্যায় ২০০ বছর পুরোনো মাছ ধরা উৎসব
ডামুড্যায় ২০০ বছর পুরোনো মাছ ধরা উৎসব চলছে। ছবি: খবরের কাগজ

শরীয়তপুর ডামুড্যায় দক্ষিণ সূতলকাঠি এলাকায় হয়ে গেল দিনব্যাপী মাছ ধরা উৎসব। সকাল থেকে মাছ ধরা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন ১১০ জন জেলে। ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে ৩২টি পরিবার আয়োজন করে আসছে এ উৎসব। 

শনিবার (২০ এপ্রিল) এ উৎসব ঘিরে আনন্দ মেতে ওঠেন এলাকাবাসী। এ মাছ ধরা উৎসব দেখতে দূর-দূরান্ত ও আত্মীয়-স্বজনসহ হাজারো মানুষ ভিড় করেন পুকুরের চারপাশে।

প্রতি বছরের মতো এবারও মাছ ধরা উৎসব উপলক্ষে বসেছিল মেলা।

সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের সূতলকাঠির ফোরকার পার এলাকায় একটি পুকুরে সৌখিন শিকারিরা প্রতিটি জালের জন্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা টিকিট কেটে মাছ ধরছেন। শতাধিক শিকারি ওই পুকুরে নৌকা, কলাগাছের ভেলা দিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাছ ধরেন। এই মাছ ধরা উৎসব দেখতে বিভিন্ন গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ ভিড় করেন। 

উৎসবে শিকারিদের অনেকেই নানা প্রজাতির মাছ ধরেছেন। পানিতে জাল টেনে হইহুল্লোড় আর উল্লাসে মাছ ধরেন তারা। এই মাছ ধরা দেখতে অনেকের আত্মীয়-স্বজনরা এখানে বেড়াতে এসেছেন। 

মাছ ধরা উৎসবে আসা আল-আমিন নামে একজন বলেন, ‘প্রতি বছর এই আয়োজন করা হয়ে থাকে। আমরা এখানে আসি। মাছ ধরা দেখতে খুব ভালো লাগে। দেখে মনে হয় বাঙালির চিরচেনা সেই ঐতিহ্য ফিরে এসেছে।’

শিকারিদের অনেকেই রুই, কাতলা, চিতল, ফলি, তেলাপিয়া, বিভিন্ন ধরনের কার্প মাছসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির মাছ ধরেন। কেউ কেউ একাধিক ধরলেও কেউ ফিরেন সামান্য মাছ নিয়ে। যারা বড় মাছ শিকার করেছেন তাদের চোখে মুখে ছিল আনন্দের ছাপ।

তবে মাছ শিকারিরা বলেন, মাছ পাওয়া বড় বিষয় নয়; এখানে অংশ নিয়েছি এটাই আনন্দের।

সৌখিন মৎস্য শিকারি রুহুল আমিন বলেন, ‘মাছ ধরতে আমার ভালো লাগে। অনেক মাছ পেয়েছি। তাই খুশি একটু বেশিই।’

উৎসবের আয়োজক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘গ্রাম বাংলার মাছ ধরার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এ মৎস্য শিকার উৎসবের আয়োজন করা। এটা ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’

কনেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও এ মাছ ধরা উৎসবের আয়োজন করা। এ আয়োজন মাধ্যমে সৌখিন মাছ শিকারি ও এলাকাবাসীদের ভেতরে এক ধরনের আনন্দ বিরাজ করে। আমি আশা করব এই আয়োজন যেন অব্যহত থাকে।’

রাজিব হোসেন/অমিয়/

টিকে থাকার লড়াই

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২০ এএম
টিকে থাকার লড়াই
হাতপাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা। ছবি : খবরের কাগজ

কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত অঞ্চল নিকলি উপজেলার একটি গ্রামে চলছে হাতপাখা তৈরির ধুম। শত দুঃখ-কষ্টের মাঝেও এখানকার নারীরা সুনিপুণ কারুকাজে তৈরি করছেন তালপাতার হাতপাখা। গ্রীষ্মকালে নিকলি উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের টেকপাড়া ও বর্মণপাড়া গ্রামের বেশির ভাগ নারী তৈরি করেন তালপাতার হাতপাখা। যে কারণে গ্রামটিকে অনেকেই তালপাখার গ্রাম বলে ডাকেন। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই হাতপাখা তৈরি করে সংগ্রামী জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক নারী। এদের মধ্যে অনেকেই বিধবা ও পুত্রহীন। পাখা তৈরির কাজ করে যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে চলে তাদের সংসার। এই দুর্মূল্যের বাজারে তারা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই করে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকপাড়া ও বর্মণপাড়ার বেশির ভাগ পরিবারই ঋণগ্রস্ত। এই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার হাতপাখা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। চৈত্র মাস এলেই গ্রামের নারীরা হাতপাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। কারও ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করছে। কারও ছেলে নৌকা বানানোর কাজ করছে। কারও ছেলে সন্তান সেলুনে কাজ করছে। আবার অনেকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। সমাজসেবা থেকে স্বল্পসুদে ঋণ নিয়ে অনেক নারী এই হাতপাখা তৈরির কাজটি করেন। তবে বেশির ভাগ নারী কারিগর ঋণ পান না বলে খবরের কাগজকে জানিয়েছেন।

১৯৭১ সালের আগেই জায়ের (ভাসুরের স্ত্রী) কাছে ডালা, কুলা, উইন্না, ছাই, খাঁচাসহ বাঁশের বিভিন্ন ধরনের কাজ শেখেন শিরিশ সূত্রধরের স্ত্রী ভানুমতি সূত্রধর। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা তার স্বামীকে হত্যা করে। এ সময় এই গ্রামের প্রায় ৩৪ জনকে বেঁধে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। ছোট ছোট সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েন ভানুমতি। তিনি বলেন, সংসারের হাল ধরেছি বাঁশের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। ছেলেরা বড় হয়ে নৌকা তৈরির কাজ করত। একটা সময় হাতপাখার কাজ শুরু হয় এই গ্রামে। আমার কাছ থেকে ছেলের বউ, নাতি বউয়েরা কাজ শিখেছে। এখন তো চোখে তেমন দেখতে পাই না, তাই কাজও করি না। মাঝেমধ্যে বাঁশের চিকন বেত তৈরি করি।

টেকপাড়া গ্রামের বিমলা সূত্রধরের স্বামী দ্বিপাল সূত্রধরের ডান পা ভেঙেছিল ৮ বছর আগে। ফলে দ্বিপাল ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। আগে নৌকার কারিগর ছিলেন। দ্বিপাল-বিমলা দম্পতির তিন ছেলে সন্তান বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছে। পড়াশোনার খরচ, সংসারের চালানো ও অন্যান্য ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। এ জন্য বিমলা হাতপাখা তৈরির কাজ শেখেন শাশুড়ির কাছ থেকে।

টেকপাড়া গ্রামের ফুল কুমার সূত্রধরের স্ত্রী শুভারাণী সূত্রধর। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে জীবন দিতে হয়েছে ফুল কুমারকে। সেই একাত্তরের পর থেকেই জীবনসংগ্রামে একা পথ চলেছেন শুভা। এখন তিনি ৮৫ বছরের বৃদ্ধা। হাতপাখা বানানোর কাজ করে সংসারের হাল ধরেছিলেন তিনিও।

একই গ্রামের গোপাল সূত্রধরের স্ত্রী রুনা সূত্রধর খবরের কাগজকে বলেন, ‘একটি হাতপাখা কয়েকজনের পরিশ্রমে তৈরি হয়। পাখা তৈরি করতে তালপাতা, বাঁশ, প্লাস্টিকের বেত, রং ও সুতার প্রয়োজন হয়। প্রথমে তালপাতা পানিতে ভিজিয়ে তিন-চার ঘণ্টা রোদে শুকিয়ে নরম করতে হয়। এরপর পাখার মাপমতো কাটা হয় পাতাগুলো। সব উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় তালপাতার হাতপাখা। একেকটি হাতপাখা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। সবকিছুর মতো হাতপাখা তৈরির উপকরণের দামও বেড়েছে। ফলে পাখা তৈরিতে আগের তুলনায় খরচ বেড়ে গেছে। আগে একটি তালপাতা কিনতে ১০ টাকা লাগত। এখন খরচ হয় ৫০ টাকা। একটা বাঁশের দাম ছিল ১০০ টাকা। সেই বাঁশ কিনতে হয় ২৫০ টাকা দিয়ে। খরচ পুষিয়ে পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না। তবুও এই কাজটা করতে করতে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই না করলেও ভালো লাগে না।’

নিকলি উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘তালপাতার হাতপাখা এই গ্রামের প্রতিটি ঘরেই তৈরি হয়। আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করব।’

এ বিষয়ে নিকলি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া আক্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘তালপাতার পাখা তৈরির কাজটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। হাওরের প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের এই হাতপাখা তৈরির কাজটি টিকিয়ে রাখতে তাদের সরকারি সহায়তা করা হবে। তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’

বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস আজ ইউনেসকো স্বীকৃত ৩ ঐতিহ্য

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
ইউনেসকো স্বীকৃত ৩ ঐতিহ্য
নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। ছবি : সংগৃহীত

আজ বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস। একটি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধারণ করে চলে। এসব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও এর তাৎপর্য তুলে ধরতে প্রতিবছর ১৮ এপ্রিল পালন করা হয় বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস। ১৯৮২ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস’ তিউনিশিয়ায় একটি আলোচনা সভায় ১৮ এপ্রিলকে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালে দিনটি ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস’ হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পায়। এই দিনটি পালন করার উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্থান সংরক্ষণ ও সুরক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। 

প্রতিবছর এই দিনটি পালন করার জন্য নির্দিষ্ট একটি থিম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।  এ বছর বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসের থিমটি হলো ‘ডিসকভার অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স ডাইভারসিটি’। প্রতিবছর এই থিম নির্ধারণ করে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন খবরের কাগজকে বলেন, ইউনেসকো এ পর্যন্ত ১৬৭টি দেশে মোট ১১৫৫টি স্মৃতিস্তম্ভকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে মনোনীত করেছে। এর মধ্যে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩টি স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্যস্থল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, বাগেরহাটের মসজিদ শহর এবং সুন্দরবন। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও বাগেরহাট মসজিদ শহর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যভুক্ত প্রত্নস্থল। অপরদিকে সুন্দরবন বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যভুক্ত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।

এ ছাড়া বিশ্বের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জায়গা পেয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং শীতলপাটি, ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকেও ইউনেসকো আওতাভুক্ত করেছে ২০১৭ সালে ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে।

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি বিশ্বের দেশগুলোকে পাঁচটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করেছে। এগুলো হলো- ১. আফ্রিকা ও আরব অঞ্চল (মধ্যপ্রাচ্যসহ) ২. এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (অস্ট্রেলিয়া ও ওশেনিয়া এ অঞ্চলভুক্ত) ৩. ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা ৪. ল্যাটিন আমেরিকা ও ৫. ক্যারিবীয় অঞ্চল। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির অনুমোদনক্রমে প্রতিবছরই নতুন নতুন ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত হয়। আবার যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হলে ঘোষিত ঐতিহ্যস্থল তালিকা থেকে বাদ হয়ে যেতে পারে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি বিশ্বের ২১টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত। কমিটি চার বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। এ কমিটি পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যস্থলগুলোর ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারক করে। ঘোষিত ঐতিহ্যগুলোকে ব্যবস্থাপনার জন্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ফান্ড থেকে অর্থায়ন করা হয়। অর্থায়নের এই সিদ্ধান্ত ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর ইউনেসকোর বিশেষ সভায় গৃহীত হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ ১৮৬টি দেশ ‘কনসার্নিং দ্য প্রোটেকশন অব ওয়ার্ল্ড কালচারাল অ্যান্ড নেচারাল হেরিটেজ কনভেনশনে’ স্বাক্ষর করেছে।

এসব ঐতিহ্যকে জানার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর অনেক পর্যটক বাংলাদেশে আসছে। যা একটি দেশের পরিচিতি এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।