ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

পাখি আমাদের সম্পদ গাঙচষা পাখির মুখে লাঙলের ফলা

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:২৮ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৬ এএম
গাঙচষা পাখির মুখে লাঙলের ফলা
গাঙচষা পাখি এখন মহাবিপন্ন।  ছবিঃ লেখক

শীতকালে এ দেশের উপকূলে আসে গাঙচষা পাখি। ঘোলা পানির ওপর দিয়ে ঝাঁক বেঁধে ওরা ওড়ে। এ পাখির চঞ্চু যেন লম্বা লাল লাঙলের ফলা। চঞ্চুর নিচের পাটি পানিতে চুবিয়ে হা করে ওরা উড়ে চলে। ধাবমান লাল চঞ্চু দেখে বাটামাছ পানি ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেই খপ করে ধরে গাঙচষা পাখি।   

মাছ ধরার জন্য এ এক আজব পদ্ধতি। পানির ওপর দিকে সাঁতার দিয়েই সারাটা জীবন কাটে অনেক মাছের। বল্লমের মতো চঞ্চুর ঘায়ে এদের ছানাপোনা শিকার করেই বেঁচে আছে বক আর মাছরাঙা। গাঙচিলও ওই সব মাছ পানি থেকে তুলে খায়। গাঙচষাদের কিন্তু পছন্দ নয় শিকারের এই সহজ কায়দাগুলো।

গাঙচষা পাখি মাছ ধরতে চায় বাতাস থেকে। লাল চঞ্চু পানিতে দিয়ে সে মাছকে ভয় দেখায়। ভীত মাছ লাফ দিয়ে শূন্যে উঠলেই তা শিকার করে। কোটি বছর আগে উদ্ভব হয়েছে মাছ শিকারের ব্যতিক্রমী এই পদ্ধতি। কিন্তু গাঙচষা ছাড়া আর কোনো পাখি আজও রপ্ত করতে পারেনি শিকারের এ কৌশলটি।   

পৃথিবীতে মাত্র তিন প্রজাতির গাঙচষা আছে। বাংলাদেশে যে প্রজাতিটি আছে, আমরা তার নাম দিয়েছি ‘দেশি-গাঙচষা’। বাকি দুই প্রজাতির বাস দুটি ভিন্ন মহাদেশে। আমেরিকার বাসিন্দা ‘কালা-গাঙচষা’ দেখার ভাগ্য হয়েছিল ফ্লোরিডা সৈকতে গিয়ে। আর ‘আফ্রিকা-গাঙচষা’ দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম উগান্ডায়।
       
বাংলাদেশে প্রতি বছরই দেখতে পাই দেশি-গাঙচষা। এর ইংরেজি নাম ‘ইন্ডিয়ান স্কিমার’। ভারতবর্ষের বাইরে খুব কমই দেখা মেলে এ পাখির। এককালে মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড হয়ে ভিয়েতনাম পর্যন্ত এ পাখির বিস্তৃত বসবাস ছিল। এই শতাব্দীতে এসে ভারতবর্ষ ছাড়া আর কোথাও নেই পাখিটি।   

একমাত্র বাসস্থান এই ভারতবর্ষেও এখন দেশি-গাঙচষার দেখা পাওয়া কঠিন। পাখিটি এখন ‘বিপন্ন’ এবং এর সংখ্যা কমেই চলেছে। বাংলাদেশে এখনো নিঝুম দ্বীপের পাশে শীতকালে আমরা শতাধিক পাখির ঝাঁক দেখতে পাই। গত শীতে ভোলার পশ্চিমে ট্যাগরার চরে আমরা একটিমাত্র গাঙচষার দেখা পেয়েছিলাম।  

মাছ শিকারের ব্যতিক্রমী এ পদ্ধতিই সম্ভবত গাঙচষার টিকে থাকার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানিতে যখন অনেক মাছ লাফালাফি করত, তখন বাতাস থেকেও মাছ ধরা কঠিন ছিল না। কিন্তু সেই দিন আর নেই। এখন মাছের চরম আকাল। পানিতেই মাছ নেই, তো বাতাসে আসবে কোথা থেকে!    
   
বক ও মাছরাঙার তো তবু বিকল্প আহার্য কিছু আছে। মাছ না পেলে ওরা কাঁকড়া, কেঁচো, কিংবা ঝিঁঝি শিকার করে। শিকারের ব্যতিক্রমী পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কোটি বছরের বিবর্তনে গাঙচষা চঞ্চুর যে আকৃতি, তা দিয়ে বিকল্প কিছু করা যায় না। গাঙচষাকে বাঁচতে হলে পানিতে ভাসমান মাছই চাই। 

ডোবা-নালায় নেমে গামছা দিয়ে রঙিন মাছ ধরার চাঞ্চল্যে ভরপুর শৈশবের দিনগুলোর কথা আমার মনে আছে। সে কালে গাঙচষার জন্যও নিশ্চয়ই মাছ ধরাটা অতটাই সহজ ছিল। জলাশয়ে আজ সেই মাছ আর নেই। তবে আমরা মাছের অভাবে মরে যাইনি, মাছ চাষ করে আমাদের অভাব পূরণ করেছি।

পাখির জীবনে চাষবাসের তো সুযোগ নেই। নদীতে মাছের স্বল্পতার সঙ্গে সঙ্গে অনন্য এই গাঙচষার সংখ্যাও তাই কমতে শুরু করেছে। আমরা সেটা জানতেও পারিনি। সম্প্রতি আমরা শুরু করেছি এসব তথ্য সংগ্রহের কাজ। জানা গেছে, সারা ভারতবর্ষে গত ১০ বছরে এ পাখির সংখ্যা কমে গেছে এক-পঞ্চমাংশ। 

আহার্যের সংকট ছাড়াও দেশি-গাঙচষার জীবনে আরও একটি বড় সমস্যা আছে। তা হলো প্রজননের স্থানের অভাব। নদীতীরে বালুচরে এরা দল বেঁধে বাসা করে। তিন মাস ধরে ডিমে তা দেওয়া আর ছানা পালার মতো নিরাপদ বালুচর এখন আর বাংলাদেশের কোথাও নেই। চম্বল নদী ছাড়া ভারতেও বেশি নেই।

বাংলাদেশে আমরা হয়তো বেশি দিন আর দেশি-গাঙচষা দেখতে পাব না। ‘বিপন্ন’ থেকে পাখিটি একসময় ‘মহাবিপন্ন’ হিসেবে আখ্যায়িত হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনন্য এই পাখির নামটি শুধু জানতে পারবে, আমরা যেমন জানি ‘ডোডো’ পাখির নাম।

জাতিংগা: পাখিদের রহস্যময় আত্মহননের উপত্যকা

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম
আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৬ পিএম
জাতিংগা: পাখিদের রহস্যময় আত্মহননের উপত্যকা
প্রতীকী ছবি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম রাজ্যের ডিমা হাসাও জেলার পাহাড়ঘেরা এক ছোট্ট গ্রাম জাতিংগা। নামটি সাধারণ হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক ভয়াবহ, রহস্যে মোড়া ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের উপাদানে পূর্ণ ঘটনা। যা বহু বছর ধরে বিশ্বের নজর কেড়েছে।

এখানে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আকাশ থেকে হঠাৎ করে শত শত পাখি নেমে আসে, ঝাঁকে ঝাঁকে নিচে পড়ে যায়, মরে যায় কিংবা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে থাকে। 

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, এই পাখিদের রহস্যময় দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো- এ ঘটনা শুধু জাতিংগা গ্রামের মাত্র ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই ঘটে। এমনকি এই এলাকা পেরোলেই পাখিগুলোর ওপর এই 'আত্মঘাতী প্রভাব' আর কাজ করে না।

এই ঘটনায় প্রধানত যে সব পাখিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের মধ্যে রয়েছে- টাইগার বিটার্ন, ব্লু ব্রেস্টেড কিংফিশার, ইন্ডিয়ান পিট্টা, ব্ল্যাক ড্রংগো ইত্যাদি। পাখিগুলোর বেশিরভাগই পরিযায়ী এবং এদের অনেকেই বিলুপ্তপ্রায়।

প্রথমদিকে স্থানীয় মানুষজন এই ঘটনাকে ভৌতিক বা অতিপ্রাকৃত বলে মনে করত। তারা বিশ্বাস করত, জাতিংগা অভিশপ্ত, আর এই পাখিগুলো যেন অপদেবতা দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে আত্মহত্যা করছে। অনেক সময় পাখিগুলোকে ডাইনির চিহ্ন হিসেবে ধরে নিয়ে পিটিয়ে মারা হত।

তবে কালের পরিবর্তনে, আজকের বিজ্ঞান এই রহস্যের যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতিংগার ভৌগোলিক অবস্থান, হঠাৎ বৃষ্টির পর ঘন কুয়াশা, এবং গ্রামের আলো- এই তিনটি উপাদান একত্রে পাখিদের দিশেহারা করে তোলে। সন্ধ্যায় কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে আলো দেখা মাত্র পাখিরা বিভ্রান্ত হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে। আলো তাদের চোখে আকর্ষণ সৃষ্টি করে এবং তারা অবচেতনে আলোকে অনুসরণ করতে থাকে, যা শেষমেশ তাদের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো- এই আলো যদি নিভিয়ে দেওয়া হয়, তবে এই 'আত্মহত্যা' বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এটি প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃতপক্ষে এটি আত্মহত্যা নয়, বরং একটি বিভ্রান্তিকর পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, সব তথ্য ও যুক্তি থাকার পরও কেন এই নির্দিষ্ট এলাকা আর এই নির্দিষ্ট সময়েই এমন ঘটনা ঘটে? কেন অন্যান্য পাহাড়ি অঞ্চলে এমনটা হয় না? উত্তর এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে বিজ্ঞানের অনুসন্ধান এখনও চলমান।

বর্তমানে আসাম সরকারের উদ্যোগে এ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচার চালানো হচ্ছে। পাখি সংরক্ষণ কর্মী ও পরিবেশবিদরা স্থানীয়দের বোঝাচ্ছেন, এটি কোনো অলৌকিক ঘটনা নয় বরং একটি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা। ফলে এখন পাখি নিধনের ঘটনা অনেকাংশে কমেছে।

বর্তমানে জাতিংগা একটি বৈজ্ঞানিক ও পর্যটন আকর্ষণের স্থান। প্রতিবছর হাজারো পাখিপ্রেমী, বিজ্ঞানী ও পর্যটক এখানে ভিড় করেন এই রহস্যময় দৃশ্যের সাক্ষী হতে। এই আগ্রহ যেমন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে, তেমনি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাও জোরদার হচ্ছে।

এই রহস্যময়তা জাতিংগাকে ঘিরে রেখেছে এক অদ্ভুত মোহে। যেখানে প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে খেলে চলেছে।

মেহেদী/

অপূর্ব উদয়ী ধলা চোখ

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫১ এএম
আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫১ এএম
অপূর্ব উদয়ী ধলা চোখ
এক জোড়া উদয়ী ধলা চোখ। পিরোজপুর থেকে তোলা। ছবি: লেখক

গ্রামের মেঘশিরীষগাছে নতুন পাতা এসেছে। নতুন পাতা দিয়ে আচ্ছাদিত একটি মগডালে বাসা বানিয়েছে এক জোড়া খুদে ধলা চোখ পাখি। পাখি দুটি মেঘশিরীষগাছ এবং আশপাশের আম, কদম, মান্দার গাছেই ঘুরে বেড়ায়। চারপাশের পরিবেশ থেকে মাকড়সার জাল, শুকনো আঁশ, শেওলা, লাইকেন সংগ্রহ করে বাসাটি বানিয়েছে। কিছুদিন পরে বাটির মতো বাসাটির পুরোটাই গাছের পাতায় ঢেকে গেছে। ধলা চোখ গাছের দ্বিধাবিভক্ত মগডালের প্রান্তে পাতাঢাকা স্থানে বাসা বানায়। 

তাদের গায়ের পালকের রং জলপাই হলুদ। চোখের চারদিকে সাদা পালকের বলয়। গ্রামবাংলায় তাই এ পাখির অপর নাম শ্বেতাক্ষী। কোথাও আবার ধলা চোখ। তবে এ পাখির পোশাকি নাম উদয়ী ধলা চোখ। অপূর্ব সুন্দর এ পাখি দেশের শুধু গভীর পাহাড়ি বনে নয়, আমাদের গ্রামবাংলার বসতবাড়ির বাগানেও দেখা যায়। অনেক গভীর বনের পাখি দেশের সব জেলায় দেখা যায় না। তবে উদয়ী ধলা চোখ পাখিদের দেখা যায়। ঢাকা শহরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও দেখেছি তাদের। রাঙামাটির কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, সুন্দরবন এবং বান্দরবানের সাঙ্গু অভয়ারণ্যেও তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে।

ছোট এই পাখি গাছের শাখায় শাখায় ধীরগতিতে বিচরণ করে। ছোট ছোট দূরত্বে লাফিয়ে ও উড়ে বেড়ায়। উড়ে উড়ে পোকা ধরে খায়। নতুন কিংবা পুরোনো পাতার নিচে এরা পোকা খোঁজে। এরা বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ছোট থেকে মাঝারি দলে থাকে। একটি দলে ৩০ থেকে ৫০টি পাখি থাকতে পারে। আমি অবশ্য কখনোই দশের বেশি দেখিনি। প্রজনন ঋতু কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে আলাদা হয়ে যায়। জোড়া বেঁধে বাসা বানিয়ে দুই থেকে চারটি ফিকে নীল রঙের ডিম পাড়ে। উভয় পাখি মিলে ডিমে তা দেয় এবং ছানাদের যত্ন নেয়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকা, মাকড়সা, শুঁয়াপোকা, রসালো ফল, ফুলের কুঁড়ি এবং মধু। এরা দলে চলার সময় কিংবা খাবার খোঁজার সময় ক্ষীণ স্বরে কিচমিচ করে ডাকে। কখনো ডাকার সুর বিরহের- প্রি-উ, প্রি-উ। 

এ পাখির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৯ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ হলদে-সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে, গলা ও বুকের ওপরের পালক উজ্জ্বল হলুদ। চোখের বলয় সাদা। পেট সাদাটে ধূসর। তবে কিছু উপ-প্রজাতিতে হলুদ বর্ণের হতে পারে। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।

ধলা চোখ প্রধানত বৃক্ষবাসী পাখি। পাতায় জমে থাকা শিশিরে এ পাখি স্নান করে। ১৮২৪ সালে ডাচ প্রাণিবিজ্ঞানী কোয়েনরাড জ্যাকব টেমিঙ্ক বাংলায় সংগৃহীত একটি নমুনা থেকে এ পাখির প্রথম বর্ণনা দিয়েছিলেন। উদয়ী ধলা চোখ বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। দেশের সব বিভাগের বনে এবং গ্রামে দেখা যায়। শহরে এ পাখির উপস্থিতি কম। বিশ্বে এর প্রায় ১১টি উপ-প্রজাতি আছে। বাংলাদেশ বাদে এ পাখিদের ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, চীন, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, লাওস এবং কম্বোডিয়াতে পাওয়া যায়। 

সৌরভ মাহমুদ
প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ও পরিবেশবিদ, জার্মান এরোস্পেস সেন্টার 
[email protected]

কলকে ফুল যেন স্বর্ণের দুল

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫০ এএম
কলকে ফুল যেন স্বর্ণের দুল
চৈত্র দিনে ফোটা কলকে ফুল। ছবি: লেখক

চৈত্র মাসের ভর দুপুর বেলা। যশোরের অভয়নগর উপজেলার বুনোরামনগর গ্রামের পথে হাঁটছি। পথের পাশে একটা বাড়ির সীমানায় অনেক বড় একটা কলকে ফুলের গাছ চোখে পড়ল। মাথাটা ঘন পাতায় ঠাসা। চিকন চিকন পাতার সেই ঠাস বুনটের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে অসংখ্য সোনা-হলুদ রঙের ফুল। পাতার ভেতর খেলা করছে মাথার ওপরে থাকা সূর্যের রোদ আর পাতার ছায়ারা। এর মধ্যে ফুলগুলোকে দেখাচ্ছে ঠিক সোনার ঘণ্টার মতো। বাতাসে দুলছে আর সেসব ফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ছে। এরকম কয়েকটা গাছ যদি কোনো বাগানে থাকে, কল্পনা করি সে বাগানের দৃশ্যটা না জানি কত চমৎকার হতে পারে। এই কল্পচিত্রের আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের কয়েকটা পঙ্‌ক্তি: ‘দুলে আলোছায়া বন-দুকুল/ ওড়ে প্রজাপতি কল্কা ফুল/ কর্ণে অতসী স্বর্ণ-দুল্/ আলোক-লতার সাতনরি \’

কলকে ফুলের রং উজ্জ্বল হলুদ। অতসী ফুল ও আলোকলতার রঙও হলুদ। অতসী বনফুল হলেও কেউ কেউ এখন তাকে বাগানে লাগাচ্ছেন ফুলের গাছ হিসেবে। আলোকলতা নামটা অনেকের কাছে পরিচিত না। কিন্তু পরাশ্রয়ী স্বর্ণলতাকে আমরা সবাই চিনি। আলোকলতাই স্বর্ণলতা। বসন্তের রঙও হলুদ। এ জন্য হলুদ রঙকে অনেকেই বলেন বাসন্তী রঙ। ভেবে পাই না, কবি কাজী নজরুল ইসলাম  বসন্তের কল্পচিত্রে এসব হলুদ রঙকে কী করে মাত্র কয়েকটা পঙ্‌ক্তিতে চমৎকার করে এঁকে ফেললেন! 

কবিতার এই কল্কা ফুলই যে আমাদের কলকে ফুল তা আর বুঝতে বাকি রইল না। কলকে ফুলের গড়নটা হুক্কা খাওয়ার কল্কের মতো, তাই এর এমন বাংলা নাম। অন্য নাম হলদে করবী, হলুদ করবী, কানাই। চাকমারা এ ফুলকে বলেন গোই ফুল। চাকমাদের প্রায় সব গ্রামেই এ ফুলের গাছ আছে। এমনকি কিছু রাখাইন, খুমি, খাসিয়া ও ত্রিপুরার বাড়িতেও এ ফুলের গাছ দেখেছি। কল্কে ফুলের ইংরেজি নাম Yellwo oleander, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Thevetia pervuiana ও গোত্র অ্যাপোসাইনেসি। কলকে ফুল করবীর সহোদরা। হলুদ রঙের ফুল বলে একে হলদে করবী বলে। পঞ্চদশ শতকে রচিত রাজনিঘুণ্টিতে অবশ্য শ্বেত-রক্ত-পীত-কৃষ্ণ, এই চার রকমের করবী আছে বলে উল্লেখ রয়েছে। আমাদের দেশে হলদে করবী ছাড়াও আছে শ্বেত করবী ও রক্ত করবী। কিন্তু কালো বা কৃষ্ণ করবীর দেখা এখনো পাইনি। 

কলকে ফুলগাছ বহুবর্ষজীবী চিরসবুজ গুল্ম-প্রকৃতির ঝাড়সৃষ্টিকারী গাছ। একবার যেখানে এ গাছ জন্মে সেখানে সে গাছের বীজ থেকে আরও অনেক গাছের জন্ম হয়। গাছের ডাল ও পাতা ভাঙলে সাদা দুধের মতো আঠালো কষ ঝরে। উইলো পাতার মতো সরু পাতা, চকচকে সবুজ। ফুল কল্কের মতো আকৃতির, পাপড়ি পাঁচটি পাকানো। পাপড়ির রঙ সাধারণত হলুদ। তবে সাদা ও গোলাপি রঙের ফুলও আছে। বসন্তের শেষ বা গ্রীষ্মের প্রথম থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়, কখনো কখনো ফুল থেকে সুগন্ধ বের হয়। ছোটবেলায় ফুল ছিঁড়ে গোড়ার নলাকার অংশ চুষে অনেকবার মধু খেয়েছি। তখন জানতামই না যে এ গাছ করবীর মতোই বিষাক্ত। বিশেষ করে অতীতে গ্রামে কেউ কেউ এর ফল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করত। এ গাছ শুধু মানুষ না, গবাদিপশুর জন্যও বিষাক্ত। 

ডালের আগায় কয়েকটা ফুল ফোটে। ফল বড় গুটির মতো, সবুজ, ভেতরে শক্ত বীজ থাকে। বীজের মধ্যে শাঁস থাকে। শুকনো ফলের ভেতরে ঝাঁকালে সে বীজ বাদামের মতো বাজে। এ জন্য এ গাছের আর একটি ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে লাকি নাট ট্রি। লাকি কেন এর নাট বা ফল বুঝলাম না। কেননা, এর ফলের সর্বাংশ বিষাক্ত। তবে ফুলের কদর আছে শিশুদের কাছে মধু খাওয়ার জন্য ও বাগানিদের কাছে বাগান করার জন্য, ঔষধি গুণের জন্য ফুল সমাদৃত কবিরাজদের কাছে। কেননা, কলকে ফুলে হৃৎপিণ্ডের বলকারক একধরনের পদার্থ রয়েছে। অল্প মাত্রায় ব্যবহার করলে হৃৎপিণ্ডের শক্তি বাড়ে। কিন্তু বেশিমাত্রায় তা ঘাতক হিসেবে কাজ করে। ফুল দ্বারা তৈরি করা তেল মেখে চুলকানি সারানো যায়। এ ছাড়া ফুল শিবপূজায় লাগে। এ জন্য চট্টগ্রামে এ ফুলকে বলে সন্ন্যাসী ফুল।

কলকে ফুলের গাছ আমাদের দেশি গাছ না। এটি এসেছে সুদূর মেক্সিকো ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে। ধারণা করা হয়, বিদেশি এই গাছ চৌদ্দ শতকে এ উপমহাদেশে এসেছে। কিন্তু গাছটা আমাদের দেশে এমনভাবে মানিয়ে গেছে যে, ওকে আর এখন বিদেশি গাছ বলে মনে হয় না। ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টের প্রবেশদ্বারে একটা বিরাট ঝোপ আছে কলকে ফুলের, আছে রমনা উদ্যানেও। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ও গ্রামে এ গাছ বেশ দেখা যায়।

৯৯৯ এ ফোনকলে ৩ কাঠবিড়ালি শাবক উদ্ধার

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম
৯৯৯ এ ফোনকলে ৩ কাঠবিড়ালি শাবক উদ্ধার
কাঠবিড়ালির শাবক। ছবি: খবরের কাগজ

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোনকল পেয়ে সিলেটের মোগলাবাজার থানার শ্রীরামপুর থেকে কাঠবিড়ালির তিনটি শাবক উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) শাবক তিনটি উদ্ধার করা হয়।

শ্রীরামপুর থেকে একজন কলার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান, সেখানে তিনটি বন্যপ্রাণীর শাবক পাওয়া গেছে। শাবক তিনটি কীসের তা তিনি নিশ্চিত নন। শাবকগুলো দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা না নিলে চুরি হতে পারে অথবা বখাটেরা ঢিল ছুঁড়ে ক্ষতি করতে পারে। 

এ সময় শাবকগুলো দ্রুত উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন তিনি। 

ফোন কলটি রিসিভ করেছিলেন ৯৯৯ কলটেকার কনস্টেবল প্লাবন দেব। তিনি মোগলাবাজার থানা পুলিশকে শাবকগুলো দ্রুত উদ্ধারের জন্য জানান। একইসঙ্গে সিলেট বনবিভাগকেও জানান। 

পরে কলার ও উদ্ধার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন ৯৯৯ ডিসপাচার এসআই বিএম আমানত। 

৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে, মোগলাবাজার থানার একটি দল শাবক তিনটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং পরে সিলেট বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে।

রেঞ্জ কর্মকর্তা শাবক তিনটি কাঠবিড়ালির বলে নিশ্চিত করেন। তবে স্থানীয়ভাবে প্রাণীগুলোকে কেউ কেউ কাঠশিয়ালও বলে থাকেন ।

আলমগীর/পপি/

৪ দিন সব বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম
৪ দিন সব বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশের সব বিভাগে আগামী রবিবার পর্যন্ত কম-বেশি বৃষ্টি ঝরতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

বুধবার (১৬ এপ্রিল) আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামী শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পরদিন শনিবার সকাল ৯টা থেকে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রবিবার ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়; রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।