সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলেছে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে সরকার নিজের আর্থিক দায় জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। একইসঙ্গে সিপিডির পক্ষ থেকে চার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, এগুলো যথাযথ পরিপালন করলে ২০২৯ সাল থেকে বিদ্যুতে আর কোনো ভর্তূকির প্রয়োজন হবে না।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বিদ্যুতের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধি: ভর্তূকি সমন্বয়ে উত্তম বিকল্প আছে কি?’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে বাসাবাড়িতে গড়ে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ বাড়তি বিল দিতে হবে। এতে ভোক্তার উপর চাপ বাড়বে। প্রতি মাসে গ্রাহকের গড় বিল ১ হাজার ২০০ টাকা হলে বাড়তি বিল পরিশোধ করতে হবে ১০৬ টাকা থেকে ১১৮ টাকা পর্যন্ত।
গবেষণায় বলা হয়, মাসিক বিদ্যুৎ বিলে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়তি দিতে হচ্ছে এসএমইতে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, শিল্পে ১০ শতাংশ এবং সেচের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার কারণে এমনটা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের পরামর্শে ধারাবাহিক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় আগামী ৫ বছরে গড়ে বার্ষিক ১২ শতাংশ পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে দায় সৃষ্টি হবে। গ্যাস ও কয়লা থেকে এলএনজি বিদ্যুতে যাওয়াই সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির কারণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিপিডির প্রস্তাবে আইএমএফের অর্ধেক অর্থাৎ ৬ দশমিক ৮ শতাংশ দাম বাড়িয়েই ভর্তুকি সমন্বয় করে ২০২৯ সাল নাগাদ জিরো ভর্তুকিতে যাওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, ২০২৮ সালের শেষে বিদ্যুৎ থেকে সরকারের মুনাফা হবে ৩১ দশমিক শূন্য ৮ কোটি টাকা।
সিপিডির প্রস্তাবনা অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের উপর এ দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪০ শতাংশে উন্নীত করা, ‘নো ইলেকট্রিসিটি: নো পে’ (বিদ্যুত না থাকলে বিল নয়) পদ্ধতি প্রবর্তন করা, বিদ্যুৎ ক্রয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ দরপত্র পদ্ধতির সুচনা করা এবং জরুরি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন বাতিল করা।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করায় সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারকে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের দিকে এগুতে হবে। এজন্য একটি পথ-নকশা দরকার। সরকার যদি সিপিডি প্রস্তাবিত চার পদক্ষেপ নেয় তাহলে বিদ্যুৎ খাতে ২০২৯ সাল থেকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না।
তিনি আরও বলেন, সরকার পরিত্যক্ত বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে।
অমিয়/