![শয়তানের বিরুদ্ধে মুমিনের প্রথম বিজয় ফজরের নামাজ](uploads/2024/03/01/1709261346.fazar.jpg)
ফজর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রথম জয়লাভ করে মুমিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গিঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গিঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর জিকির করে, তা হলে একটি গিঁট খুলে যায়। তার পর যদি অজু করে, তবে তার আর একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তা হলে সমস্ত গিঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। অন্যথায় সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।” (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)
ফজর নামাজের জন্য জেগে ওঠা অনেকের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে এ কষ্ট মুনাফিকদের জন্য। দুর্বল ঈমানের মানুষও শয়তানের কাছে নত হয়ে অলসতা করে ঘুম থেকে উঠতে চায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর এবং ইশার নামাজের চেয়ে কষ্টকর আর কিছু নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৪৪) আল্লাহর খাঁটি ও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী বান্দারা আল্লাহর আদেশ পালনে সর্বদা তৎপর থাকে, তা যত কষ্টই হোক না আর যেমন পরিস্থিতিই হোক না কেন। শায়খ বদর বিন নাদের আল মিশারি বলেন, ‘আপনি যদি ফজরের নামাজের জন্য ঘুম থেকে জাগতে না পারেন, তা হলে নিজের জীবনের দিকে তাকান এবং জলদি সংশোধন করুন। কেননা আল্লাহতায়ালা ফজর নামাজের জন্য শুধু তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকেই জাগ্রত করান। ঠিক এজন্যই মুনাফিকদের জন্য ফজরের সালাত এত কঠিন।’ মুমিন জীবনের জন্য ফজর নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যদি ফজর এবং ইশার নামাজের গুরুত্ব বুঝতে পারত, তা হলে তারা হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও উভয় নামাজে উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৫৭) আফসোস, মানুষ শারীরিক সামর্থ্য ও ফজরের ফজিলত জানার পরও আলস্যে গা ভাসিয়ে দেয়। শয়তানের কাছে নতিস্বীকার করে। আল্লাহ ফজরের নামাজকে এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন যে, তিনি ‘ফজর’ নামেই পবিত্র কোরআনে পূর্ণাঙ্গ একটা সুরা নাজিল করেছেন এবং এর নেয়ামত তুলে ধরেছেন। আল্লাহ সেখানে শপথ করে বলেন, ‘শপথ সুবহে সাদিকের!’ (সুরা ফজর, আয়াত: ১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার ব্যাপারে তোমাদের কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২১৮৪) প্রতিটি মুসলমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন থাকে জান্নাতে যাওয়ার। ফজর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবু জুহাইর উমারা ইবনে রুয়াইবা (রা.) বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (ফজর ও আসরের ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।” (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৪) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মর্যাদাবান বারাকাতপূর্ণ রব দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তারপর তিনি হাত বাড়িয়ে দেন এবং বলেন, কে আছে যে এমন সত্তাকে ঋণ দেবে, যিনি ফকির নন; না অত্যাচারী। সকাল পর্যন্ত এ কথা বলতে থাকেন।” (বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)
লেখক : শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়