![রমজান ও রোজা নিয়ে প্রচলিত ভুল](uploads/2024/04/01/1711964035.22.jpg)
রমজান মাসে আমল-ইবাদতের প্রতি মুমিন-মুসলমানদের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি থাকে। তদুপরি সাধারণ সময়ের মতো পবিত্র এ মাসেও নানাবিধ ভুলত্রুটি হয়ে যায়। রমজান ও রোজা নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুলের কথা ও সঠিক সমাধান তুলে ধরা হলো—
১. অনেকেই মনে করেন, রোজার নিয়ত মুখে আরবিতে উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক। আরবিতে প্রচলিত নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করলে রোজা সহিহ হবে না—এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। রোজার জন্য মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়; বরং অন্তরে রোজার সংকল্প করাই যথেষ্ট। (আলবাহরুর রায়েক, ২/২৫৯)
২. কোনো কোনো মানুষকে বলতে শোনা যায়, রোজাদারের খাবারের কোনো হিসাব হবে না। এটি একটি ভুল কথা। খাবারের হিসাব বলতে সাধারণত খাবারের অপচয় বোঝায়। আর কোরআন-হাদিসে এমন কোনো কথা নেই—রোজাদার যদি খাবারের অপচয় করে তাহলে তার কোনো হিসাব হবে না। যে ব্যক্তিই খাবার বা যেকোনো বস্তুই অপচয় করুক আল্লাহর দরবারে তাকে এর হিসাব দিতে হবে।
৩. অনেকে মনে করেন, জাকাত শুধু রমজান মাসে আদায়যোগ্য আমল। এ ধারণা ঠিক নয়। নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক চান্দ্রবৎসর অতিবাহিত হলেই তখন সেই সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ।
৪. সাহরি ত্বরান্বিত করা এবং ইফতার বিলম্বিত করা অথবা সাহরি না করা অথবা মধ্যরাতে তা খাওয়ার মাধ্যমেই যথেষ্ট মনে করা—এসব কাজ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনির্দেশনা ও সুন্নাহ পরিপন্থি।
৫. রোগীর কষ্ট বা ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও রোজা রাখাকে জরুরি ভাবা—এটা ভুল। আল্লাহতায়ালা অসুস্থের জন্য রোজা ভাঙা ও পরবর্তীতে তা কাজা করার অনুমতি দিয়েছেন। (সুরা বাকারা, ১৮৫)
৬. সেহরি অর্থ হলো জাদু বা ম্যাজিক, আর সাহরি হলো রোজা রাখার জন্য সুবহে সাদিকের আগে কিছু খাওয়া বা পান করা। সুতরাং সাহরিকে সেহরি বলা ভুল। সেহরি বলা যাবে না, বলতে বা লিখতে হবে সাহরি।
৭. ইফতার বিলম্ব করে আজানের জবাব দিতে হবে—এটাকে আবশ্যকীয় মনে করা ভুল। ইফতার তাড়াতাড়ি করতে হবে। (বুখারি, ১৯৫৭)
৮. পানীয় দ্বারা ইফতারি শুরু করাকে জরুরি মনে করা ভুল। ইফতারিতে সুন্নত নিয়ম হলো খেজুর দিয়ে শুরু করা; কারণ তা বরকতময় আর খেজুর যদি না থাকে, তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করা যাবে। (তিরমিজি, ৬৯৫)
৯. রমজানে চোখে সুরমা বা ড্রপ দিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়—এরূপ ধারণা করা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ সুরমা ড্রপ ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। (রদ্দুল মুহতার, ৭/৩৭৯৫)
১০. রমজানের ২৭তম রাতকে নির্দিষ্টভাবে শবে কদর ভাবা ভুল। রমজানের শেষে দশ রাতের বিজোড় রাতে কদর তালাশ করতে হবে।
১১. রোজাবস্থায় ইনজেকশন, ইনসুলিন বা টিকা গ্রহণ করে রোজা ভেঙে গেছে ধারণা করা—এটি একটি ভুল ধারণা। (ফতোয়ায়ে উসমানি, ২/১৮৬)
১২. অনিচ্ছায় বমি হয়েছে বিধায় রোজা ভঙ্গ হয়েছে- এরূপ মনে করে রোজা ভেঙে ফেলাটাও রোজা-বিষয়ক প্রচলিত ভুল। (তিরমিজি, ১/১৫৩)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক