![এলো খুশির ঈদ](uploads/2024/04/08/1712567541.alo-eid.jpg)
সারা মাস রোজা রাখার পর মুমিন বান্দার জীবনে পুরস্কার হিসেবে আসে ঈদের দিন। ঈদ আরবি শব্দ, যার অর্থ ফিরে আসা। হাদিসে আছে, “রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় গেলেন, তখন মদিনাবাসীরা দুটি দিবসে আনন্দ করত। খেলাধুলা করত। নবিজি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুটি দিনের কোনো তাৎপর্য আছে?’ তারা বলল, ‘আমরা জাহেলি যুগে এ দুটি দিনে খেলা করতাম।’ নবিজি (সা.) তখন বললেন, ‘আল্লাহ এ দুদিনের পরিবর্তে এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটি দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।” (আবু দাউদ, ১১৩৪)
শুধু খেলাধুলা ও আমোদ-ফুর্তির যে দুটি দিবস ছিল, তা আল্লাহ নেয়ামতের মাধ্যমে পরিবর্তন করেছেন। নেয়ামত হলো—আল্লাহর কাছ থেকে কিছু অর্জন করা। তার নেয়ামত ও দানে সিক্ত হওয়া। তাই এ দিবসটিতে বান্দা তার স্রষ্টার শুকরিয়া, তাঁর জিকির, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে শালীন আমোদ-ফুর্তি, সাজসজ্জা, খাওয়া-দাওয়া করবে। তবেই আল্লাহর দেওয়া ঈদ সার্থক হবে।
ঈদকে কেউ নেয়ামত হিসেবে নিয়েছেন। কেউবা নিছক আমোদ-ফুর্তি হিসেবে নিয়েছেন। যারা তাকে নেয়ামত হিসেবে নিয়েছেন, তারা কত ভাগ্যবান। হাদিসে এসেছে, ‘এ ঈদের রাতে কেউ যদি জাগ্রত থাকে অর্থাৎ রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করে, ওই দিন তার অন্তর জীবিত থাকবে, যেদিন সব অন্তর মারা যাবে।’ (ইবনে মাজাহ, ১৭৮২)
ঈদের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ মানুষ এ রাতে নানা পাপাচারে লিপ্ত হয়। কেউ যদি রাত জেগে না থাকতে পারে, তাহলে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করলেই সারা রাত জেগে থেকে ইবাদত করার সওয়াব পাবে। ফজরের নামাজ পড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ঈদের নামাজের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ দিনের সুন্নতগুলো আদায় করা উচিত। এর মধ্যে মিসওয়াক ও গোসল অন্যতম। আলি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। নতুন জামা বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা পরতেন। সুগন্ধি লাগাতেন। মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতেন।’ (তিরমিজি, ৫৪৩)
ঈদুল ফিতরে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। বুরাইদা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহারের দিনে ঈদের নামাজের আগে খেতেন না।’ (তিরমিজি, ৫৪২)
তাকবির বলে ঈদগাহের দিকে যাত্রা করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন।’ (মুসতাদরাক, ১১০৬)
হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক পথ দিয়ে গিয়ে অন্য পথ ধরে আসা ভালো। হাদিসে আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন।’ (বুখারি, ৯৮৬) রাসুলুল্লাহ (সা.) হেঁটে ঈদগাহে যেতেন।
ঈদের নামাজের আগে কোনো নফল নামাজ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে বের হয়ে দুই রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এর আগে ও পরে অন্য কোনো নামাজ আদায় করেননি। (বুখারি, ৯৮৯)। তবে নামাজের আগে ফিতরা দিতে হবে। অভাবীদের খোঁজখবর নিতে হবে। তাদের খাবার খাওয়াতে হবে। সম্ভব হলে তাদের নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটাই হলো ঈদের আনন্দ। ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। খুতবা শোনা ওয়াজিব। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিনে সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন, ‘আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আপনাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুন।’ নামাজ শেষে দোয়া ও ইস্তেগফার পড়া ভালো।
ঈদের দিনে বর্জনীয় কিছু কাজ রয়েছে। যথা—ঈদের দিনে রোজা রাখা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, ১৯৯০)
ঈদের দিনে শালীন পোশাক পরিধান করতে হবে। অপসংস্কৃতি বহন করে এমন পোশাক পরা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সঙ্গে সাদৃশ্যতা রাখবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ, ৪০৩১)
ঈদ একটি ইবাদত। আনন্দ ও ফুর্তির মাঝেই এ ইবাদত করা যায়। এ ব্যাপারে কোরআনে এসেছে, ‘বলো, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত। সুতরাং এ নিয়ে যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৮)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক