![যে কারণে খুশির সময় তাকবির বলতে হয়](uploads/2024/04/24/1713933661.takbir.jpg)
প্রত্যেক নবি-রাসুল মানুষকে একাত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহর দাসত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন, তারা সফল হয়েছেন। যাদের কাছে এখনো ‘আল্লাহু আকবারের’ ধ্বনি বড়, তারা সফল হবে। এই ‘আল্লাহু আকবার’ ইসলামের মূল স্লোগান। আনন্দ ও খুশির মুহূর্তে ‘আল্লাহু আকবার’ পড়া ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ। মনে হতো, যে আল্লাহ তাকে খুশি করলেন, সেই আল্লাহর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব তিনি বর্ণনা করছেন। কারণ নিজের গুণাগুণ বর্ণনা করতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান।’ (সুরা নাজম, আয়াত: ৪৩)
খুশি ও আনন্দের সময় তাকবির উচ্চারণের কথা অনেক হাদিসে এসেছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাদের কারও কারও অন্তরে এ ধরনের সন্দেহ সৃষ্টি হয়, যা বর্ণনা করার চেয়ে বোধ হয় জ্বলে-পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া উত্তম। তখন তিনি বলেন, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘আল্লাহু আকবার’। সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি শয়তানের ধোঁকাকে সন্দেহে পরিণত করেছেন।’’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫১১২)
ওই ব্যক্তির কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) যারপরনাই খুশি হন। আল্লাহতায়ালা শয়তানের এ ধোঁকা ও কুমন্ত্রণাকে শুধু অন্তর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রেখেছেন, বাস্তবে প্রতিফলিত করেননি। এই ভেবে আনন্দের আতিশয্যে তিনবার তাকবিরধ্বনি উচ্চারণ করেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। আনন্দের উপলক্ষ এলে সাহাবিগণও তাকবির দিতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহতায়ালা (হাশরের দিন) ডাকবেন, ‘হে আদম। তা শুনে আদম (আ.) জবাব দেবেন, ‘আমি হাজির, আমি সৌভাগ্যবান। এবং সকল কল্যাণ আপনার হাতেই।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘জাহান্নামি দলকে বের করে দাও।’ আদম (আ.) বলবেন, ‘জাহান্নামি দল কারা?’ আল্লাহ বলবেন, ‘প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন।’ এ সময় (প্রচণ্ড ভয়ে) ছোটরা বুড়ো হয়ে যাবে। প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে। মানুষকে মনে হবে মাতালসদৃশ, কিন্তু তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বরং আল্লাহর শাস্তি কঠিন। সাহাবিরা বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, (প্রতি হাজারে একজন) আমাদের মধ্যে সেই একজন কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা তোমাদের মধ্য থেকে একজন আর ইয়াজুজ-মাজুজদের দিয়ে হাজার পূর্ণ হবে।’ এরপর তিনি বললেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, আমি আশা করি, তোমরা (আমার উম্মত) সমস্ত জান্নাতবাসীর এক-চতুর্থাংশ হবে।’ আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা এ সুসংবাদ শুনে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উঠলাম।’ এরপর তিনি আবার বললেন, ‘আমি আশা করি, তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর এক-তৃতীয়াংশ হবে।’ আমরা পুনরায় ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উঠলাম। তিনি আবার বললেন, ‘আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর অর্ধেক হবে।’ এ কথা শুনে আমরা আবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির দিলাম। তিনি বললেন, ‘সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কালো পশম অথবা কালো ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি সাদা পশম যেমন দেখা যায়, কেয়ামতের দিন তোমাদেরও (অন্যান্য জাতির তুলনায়) তেমন দেখাবে।” (বুখারি, হাদিস: ৩১৭০)
তেমনই কোনো এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন, এমন একটি গুজব ছড়ানোর পর উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) রাসুল (সা.)- এর কাছে এসে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। রাসুল (সা.) তাদের তালাক দেননি শুনে তিনিও তাকবির বলে ওঠেন। উমর (রা.) বলেন, ‘এরপর আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে না বসেই জিজ্ঞাসা করি, আপনি কি আপনার স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন? তিনি বললেন, ‘না।’ তা শুনে আমি বললাম, ‘আল্লাহু আকবার।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৯)
মুমিনের উচিত, কোনো কারণে জীবনে খুশি এলে তাকবির বলা। তাকবির বলা মুমিনের গুণ। এই তাকবির বলা মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। সওয়াব হবে। আবু জর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ‘আল্লাহু আকবার’ সদকাস্বরূপ।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০০৬)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক