তুর্কি সমাজে টিনএজার ছেলেমেয়েরা নিজের পরিবারের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থাকে। তাদের জীবনও পরিবারকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। বাবা-মাতো বটেই দাদা-দাদি বা নানা-নানিরাও নাতি-নাতনিদের খোঁজখবর রাখেন। দাদা-দাদিরা নিজেদের আচার ঐতিহ্যের গল্প শোনান। অনেক ক্ষেত্রে টিনএজারদের কে কোথায় যায়, কে কে তার বন্ধু, কার সঙ্গে যাচ্ছে সব খবর ঘণ্টাওয়ারি মাকে জানাতে হয়! তুর্কি পরিবারগুলো সাধারণত রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে রাতে খেতে বসে। এ সময় পরিবারের সবাই গল্পগুজব করতে করতে খাবার খায় ও টিনএজাররা সারা দিনের ঘটনা বলতে থাকে। পরামর্শের প্রয়োজন হলে বাবা-মা বা দাদা-দাদি দিয়ে থাকেন। বয়োজ্যেষ্ঠরা তাদের আবেগঘটিত ব্যাপারে মানসিক সমর্থন দিয়ে থাকেন। দাদা-দাদিরা অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করেন।
তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথমত পড়তে হয় প্রাইমারিতে। তারপর সেকেন্ডারি পেরিয়ে হাইস্কুল। হাইস্কুল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি শুরু হয়। সাধারণত সমালোচনা করে এমন মানুষের সাথে টিনএজাররা তর্ক করে না। প্রতিদিন দ্রুত গোসলের চাইতে টিনএজাররা সাধারণত সপ্তাহে দুই দিন কি তিন দিন লম্বা সময় নিয়ে গোসল করে।
ওদের হাত খরচের জোগান বাবা-মা-ই দিয়ে থাকেন। স্কুলে পড়া মেয়েরা ঘরের কাজে কিছু সহযোগিতা করলেও ছেলেরা করেই না। মায়েরাই ছেলেমেয়েদের সবকিছু দেখভাল করেন। এজন্য মায়ের কাছে সবাইকে কৈফিয়ত দিতে হয় সব কিছুর জন্য। বাবার কাজ হচ্ছে শুধু সন্তানদের পড়ালেখার খরচ যোগানো।
তুরস্কের রয়েছে বর্ণময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ইতিহাস। তারা এসব ঐতিহ্যময় উৎসবে মেতে ওঠে। তারা ভালোবাসে গান শুনতে, খেলাধুলা, ট্র্যাকিং করতে, বন্ধুদের সঙ্গে কফিশপে যেতে। ছুটির দিনে একে অপরের বাসায় দল বেঁধে বেড়াতে যায়। স্কুলের বন্ধুদের চাইতে পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বটা গাঢ় হয় বেশি। যদিও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব থাকে দুই একজনের সঙ্গে, যাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস করা যায়। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করাটা একটি সাধারণ বিষয়।
শহুরে টিনএজাররা খাবার ও পোশাকে পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রভাবিত। বিত্তশালীদের জীবনযাত্রা, চলাফেরা, বিলাস, পোশাক, খাবার পুরোটাই পশ্চিমা দেশের মতো। এরা দামি প্রাইভেট স্কুলে পড়ে। এসব প্রাচুর্যপূর্ণ পরিবারের টিনএজারদের নিজের আছে বিশ্বখ্যাত ল্যাম্বরগিনি, রোলস রয়েস, বিএমডব্লিই, মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের গাড়ি, বিভিন্ন কোম্পানির স্পোর্টস কার, সুপার কার, নিজস্ব ইয়ট, এমনকি প্রাইভেট জেট। এরা গুচ্চি বা হারবার্ট স্পেনসারের মতো নামী কোম্পানির ডিজাইনারদের ডিজাইন করা পোশাক ব্যবহার করে। তারা দামি শ্যাম্পপেইন পান করে।
সাধারণত তুরস্কে বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় পোশাকই টিনএজাররা পরে থাকে। তবে বড় শহরগুলোতে টিনএজাররা ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে ইউরোপিয়ান স্টাইলের জামাকাপড় পরে। ছেলেরা জিন্স এবং মেয়েরা স্কার্ট ও জিন্সের সঙ্গে টপস, টিশার্ট, জ্যাকেট এবং নানাবিধ নকশার ফ্রক পরিধান করে। মেয়েরা সাধারণত মাথায় চুল ঢাকা দেওয়ার জন্য স্কার্ফ ব্যবহার করে। সেটা বাধ্যতামূলক নয়। তবে মসজিদ চত্বরে ঢুকলে মাথার চুল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। আইনের কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও টিনএজারদের মধ্যে বেশি মাত্রায় এলকোহলের প্রতি আসক্তি বর্তমানে তুরস্কের একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই তুর্কি সরকার ২০১১ সালে ২৪ বছর বয়সের নিচে কারও কাছে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। পুলিশ নিয়মিতভাবে বার, নাইটক্লাব বা যেখানে মদ বিক্রি হয় সেখানে তল্লাশি করে থাকে।
এ ছাড়া মদ পানের খারাপ দিকটা তরুণ-তরুণীদের বোঝানোর জন্য সরকার ওয়েবসাইট খুলেছে। সেমিনারের আয়োজন করে নিয়মিত। তুরস্কে ড্রাগ বেচাকেনা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া শহরের চাইতে গ্রামের দিকের মেয়ে টিনএজারদের মধ্যে অসতর্ক গর্ভ ধারণের হার অনেক বেশি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে তুরস্কে মেয়ে টিনএজারদের মধ্যে প্রায় ২% টিনএজার প্রথম সন্তান গ্রহণের অভিজ্ঞতা লাভ করে ১৫-১৯ বছর বয়সে! ১৮ বছরের নিচে হলে পিতামাতার অনুমতি নিয়ে তবে গর্ভপাত করাতে পারে। এটা যাতে না হয় তার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।
জাহ্নবী