![অতি দুঃখে কাটে যাদের জীবন](uploads/2024/05/10/a3-1715332050.jpg)
সোমালীয় বাবা-মায়েরা সাধারণত কর্তৃত্বপরায়ণ। ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে বাবা-মা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই ছেলেমেয়েদের মানতে হয়। বাবা-মায়েরা খুব বেশি সুরক্ষা তাদের সন্তানদের দিতে পারেন না। সোমালীয় টিনএজাররা অনেকেই নিদারুণ অবস্থার মুখে পড়ে। একদিকে আছে আর্থিক অস্বচ্ছলতার জাঁতাপীড়ন, এর ওপর আছে তাদের বলপূর্বক সৈন্যবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া। আছে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া। যৌন হয়রানি এবং অপহরণের মতো ভীতিজনক অবস্থায় পতিত হওয়া। সোমালীয় টিনএজারদের জীবন মোটেও সুখের নয়।
মেয়েদের অতি অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু কোথাও এটা উল্লেখ করে দেওয়া হয়নি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বয়স কত? এজন্য ১৮ বছর হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। ১৫ বছরে পৌঁছানোর আগেই শতকরা ১৫ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এবং শতকরা ৩৬ ভাগের বিয়ে হয় তাদের আঠারো বছরের আগে। তবে ভালোর মধ্যে সোমালীয় সমাজব্যবস্থা একেবারে পরিবারকেন্দ্রিক। সন্তানরা বিয়ে হওয়া পর্যন্ত তাদের বাবা-মায়ের কাছেই থাকে। এ ছাড়া পরিবারের কোনো সদস্য যখন বিয়ে করে বা অসুস্থ হয় তখন পরিবারের সব সদস্য যার যা শক্তি সামর্থ্য আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যাতে পরিবারের সদস্যটি মনে করে, সে একলা নয়। তার স্বজনরা আছে। মেয়েদের অধিকারের দিক দিয়ে সর্বনিম্নর দিক থেকে চতুর্থ। লিঙ্গসমতার বালাই নেই সোমালিয়ায়। মেয়েরা সমাজে নানাবিধ বৈষম্যের শিকার। ১৫ বছরের মধ্যেই ৯৮ শতাংশ সোমালীয় মেয়েদের খতনা করানো হয়। শিক্ষার ক্ষেত্রেও মেয়েরা চরম বৈষম্যের মধ্যে আছে। মাত্র ২৫ শতাংশ ভাগ মেয়ে তাদের সঠিক বয়সে প্রাইমারি স্কুলে যায়। বাকি ৬৫ শতাংশ ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েরা হয় কোনোদিন স্কুলেই যায়নি বা প্রাথমিক শিক্ষাটা পেয়েছে মাত্র। দেশটির ৪২ শতাংশ মানুষের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হলেই তাদের স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়। প্রথমত, প্রথম চার দিন কখনো-বা সাত দিনও মেয়েদের স্কুলে যেতে দেওয়া হয় না। আর মায়েরা মনে করতে থাকে মেয়ের এখন আর স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন সে আর বালিকা নয়, সে এখন মহিলা। তাকে এখন বাড়িতে থেকে বাসার কাজে সাহায্য করা উচিত আর স্বামী খোঁজা উচিত! তার আর এখন শুধু শুধু স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে সময় নষ্ট করার কোনো দরকার নেই! আর পড়েই লাভ কী? সে কোনো চাকরি করলে স্বামীর বাড়ির লোকজন সেটার উপকারভোগী হবে, তাই বাপের বাড়ির লোকজন তাকে পড়িয়ে লাভ কী? মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে এরকমটাই মনে করে সোমালীয় পরিবারগুলো। তাই যত তাড়াতাড়ি মেয়েদের বিদেয় করা যায় ততই পয়সা বাঁচল। বিশাল এক জনগোষ্ঠী যা হতে পারত দেশের সম্পদ, তারা কিন্তু অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়েই থেকে যাচ্ছে। ইদানীং ইউনিসেফের প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে পরিবারগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ধর্মীয় নেতাদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আরেকটি সমস্যা ইন্টারনেটের ব্যবহার নিয়ে। টিনএজারদের মধ্যে মোবাইলে সময় ব্যয় করার হার অত্যধিক। প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতজনেরই মোবাইল ফোন আছে। এবং আফ্রিকার মধ্যে সোমালিয়ায় সবচেয়ে সস্তায় ইন্টারনেট পাওয়া যায়। এর মধ্যে মেয়েদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার বিপদ বেশি। যেসব মেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে পর্নোগ্রাফির প্রতি টিনএজারদের মধ্যে আকর্ষণ বেড়েছে। ফলে অব লাইনে বা সাধারণভাবে আশঙ্কাজনকভাবে মেয়েদের প্রতি সহিংসতা বেড়ে গেছে। তবে অনলাইন অপরাধকে সোমালিয়ায় তেমন গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয় না। ফলে এসব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা যায় না। তাই প্রতিনিয়ত অল্পবয়সী মেয়েরা সাইবার অপরাধের শিকার হয়।
সোমালিয়ায় শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় অক্টোবর থেকে, শেষ হয় জুনে। প্রাইমারি স্কুল সময়বৃত্ত চলে ছয় বছর। এরপর নিম্ন মাধ্যমিক দুই বছর। এর পর উচ্চমাধ্যমিক ছয় বছর। দক্ষিণ এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সরকারি শিক্ষা বলতে কিছু নেই। সবই বেসরকারি। সেখানে বেতন খুবই বেশি। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আর যারা শরণার্থী বা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী তারা বইপত্র কিনতে অক্ষম। তাদের জাতিসংঘের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য। কমবেশি ৩০ লাখ ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় না। যারা যায় তারাও স্কুল শিক্ষার তেমন উপকার পায় না। নেই বইপত্র, নেই প্রয়োজন মতো টয়লেট, না আছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক।
অপর্যাপ্ত চাকরি, তার ওপর পর্যাপ্ত শিক্ষার ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা চাকরিও পায় না। দেশের মধ্যে আছে নানান গোষ্ঠীর ঝগড়া-বিবাদ। ফলে সহজ পথ হিসেবে এসব টিনএজার সশস্ত্র দলগুলোতে ভিড়ে যায়। তারা অপরাধীগোষ্ঠীতে ঢুকে নানা প্রকার অপরাধ করতে শুরু করে। অনেক সময় স্থানীয় শাসকরাও নিজেদের স্বার্থে এসব বিপথগামী বালক টিনএজারদের ব্যবহার করে। তারা কখনো কখনো জলদস্যুতাকেও তাদের জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করে!
জাহ্নবী