সন্তানের বয়স যখন টিনের ঘরে অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৭ বছর, তখন তাদের নিয়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা অভিভাবকদের। এরা না শিশু না বড়। জীবনের উচ্ছলতা আর চঞ্চলতায় মুখরিত সময়।
নানা রকম গ্যাজেট আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের জীবনজুড়ে আধুনিকতা আর নতুনত্ব। ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান উদযাপনেও তারা এনেছে নতুন ট্রেন্ড।
শবনম মুশতারী ফিওনা, জুনাইনা আফসিন, বুশরা তানজিন, রেবতী রোকসানা, তাসফিন আরোহী ঢাকার নামকরা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড নাইনের শিক্ষার্থী। রোজা রেখে বাবা-মায়ের কাছে আবদার রেস্তোরাঁয় ইফতার করার। কী আর করা, এই কিশোরী দলের সঙ্গী হন মা আর ছোট ভাইবোনেরা।
খবরের কাগজের সরেজমিনে দেখা গেল, ইফতারের সময় ধানমন্ডির শেফস টেবিলের অধিকাংশ টেবিল দখল করেছে কিশোর-কিশোরীরা। পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, রুহ আফজা শরবত নয়, এই বয়সীদের পাতে ঠাঁই নিয়েছে বিদেশি ফলের ফরমোসা স্মুদি, চকলেট পাই। কেউবা অর্ডার করেছে ইতালিয়ান লাসনিয়াথ আবার কারও পাতে আফগানি কাবাব। কেউ আবার অর্ডার দিয়েছে চাইনিজ ফুড। গরম গরম জিলাপির জায়গায় স্থান নিয়েছে ওয়াফেল আপ ও ব্রাউনির মতো খাবার।
শবনমের মা গৃহবধূ দিলশাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেখেন জীবন কত দ্রুত বদলে গেছে, এই কয়েক বছর আগেও আমরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও ঘরে তৈরি নানা পদের ইফতার খেয়েছি। বাবা-মা যা আয়োজন করতেন, তা-ই খেতাম। এখন এমন সময় এসেছে, বাচ্চাদের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে হয়। যুগ পাল্টেছে, বাচ্চাদের অভিমান বেড়েছে। আবদার রাখতে হয়। একদম খারাপও লাগে না। করুক না আনন্দ। ধর্ম পালনও হচ্ছে, আবার আনন্দ করছে।’
জুনাইনার মা মেয়েকে নিয়ে মিরপুর-২ থেকে ধানমন্ডি এসেছেন । তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাচ্চারা এখন হরেক রকম আবদার করে। গ্যাজেটের যুগ, ইন্টারনেটে কী কী দেখে আর আবদার করে। এখন কোনো দিন বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার আবার কোনো দিন সাহরি। বাচ্চাদের উপলক্ষে আমাদেরও নতুন সার্কেল হচ্ছে, সামাজিক সম্পর্ক বাড়ছে।’
হাতে আইসক্রিম ও জুসের গ্লাস নিয়ে কিশোরী দলের দাবি, বেশি করে লিখে দিন, বাসা থেকে যেন প্রতিদিন অনুমতি দেয়।
শেফস টেবিলের কর্মীরা জানান, ধানমন্ডির এসব এলাকায় বেশির ভাগই স্টুডেন্ট। আর তাদের পছন্দ অনুযায়ী বেশির ভাগ খাবার তৈরি করা হয়। তাদের দাবি, প্রতিদিন প্রায় ২০০-৩০০ জন আসেন এখানে ইফতার করতে।