রংপুরে পান চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে। পান চাষে খরচ কম ও আয় বেশি হওয়ায় অনেকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন পান বরজের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৮ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩৬ হেক্টর ও উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ টন। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ১০ দশমিক ৫ টন। রংপুরের উপজেলাগুলোর মধ্যে তারাগঞ্জ, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ থেকে জানা গেছে, পান চাষের জন্য উঁচু, বন্যামুক্ত দো-আঁশ এটেল জমি ও ছায়াযুক্ত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া উপযুক্ত। রংপুরের তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জের পাঁচগাছি ইউনিয়ন বর্তমানে পানের জন্য সুপরিচিত। ইউনিয়নজুড়ে একসময় ধানখেত ছিল, এখন ওই ইউনিয়নজুড়ে যতদূর চোখ যায়, পানের বরজ আর বরজ। যারা একসময় অন্যের জমিতে কাজ করতেন, তারা এখন নিজেদের বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতে পানের চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন করছেন। এসব এলাকার অনেক কৃষক পান চাষ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।
সরেজমিনে তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় ফসলের মাঠজুড়ে পানের বরজ রয়েছে, নারী-পুরুষ সমান তালে পান ছিঁড়ছেন এবং পরিচর্যা করছেন। তারাগঞ্জের কুশা ইউনিয়নের পানচাষি কমল কুমার দাস বলেন, ‘পান চাষ করে আমাদের কষ্ট দূর হয়ে গেছে।’ পীরগঞ্জ উপজেলার রাইপুর ইউনিয়নের পানচাষি চঞ্চল কুমার জানান, পানগাছ পরিচর্যা করতে বাড়ির সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, ‘পান বারোমাসি ফসল। একবার চাষ করলে এক যুগ টানা পানপাতা বিক্রি করা যায়। খালি পরিচর্যা আর বরজ মেরামত করলেই হয়। পান চাষ লাভজনক, খরচ খুব কম।’ মিঠাপুকুর উপজেলার ১০ নম্বর বালুয়া মাসুমপুর ইউনিয়নের জয়নাল বলেন, ‘৪৫ শতক জমিতে বছরে দুবার ধান চাষ করে খরচ বাদে ১৫-১৭ হাজার টাকা আয় করা যায়। কিন্তু ৪৫ শতক জমিতে পান চাষ করতে খরচ হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। প্রতি ৩ মাস পরপর পান তোলা হয়। পান তোলার পর সেচ, সার ও বরজ মেরামত বাবদ ২৮-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ৪৫ শতক জমির পান বিক্রি করে খরচ বাদে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বছরে আয় হয়।’
চাষি উত্তম কুমার বলেন, ‘বাবা কষ্ট করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন পান চাষ করে আমার আর অভাব নেই।’ তারাগঞ্জের কুশা ইউনিয়নের গোপাল চন্দ্র বলেন, ‘অভাবের সংসারে পড়াশোনা হয়নি। আমি অন্যের জমিতে কামলা দিতাম। এতে কোনমতে সংসার চলত। এখন পান চাষ করি, সংসারের অভাব ঘুচেছে।’
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, ‘পান চাষ লাভজনক ফসল। কৃষকরা এখন বুঝতে পেরেছেন। তাই আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পান চাষে। কৃষকরা একর জমিতে পান চাষ করে খরচ বাদে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘অর্থকরী ফসল পান। দেশে পানের চাহিদা ও বাজার দুটোই ভালো। অন্য ফসলের তুলনায় পান চাষ লাভজনক একটি ফসল।’