ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

নজর কাড়ছেন তরুণ লেখকরা

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
নজর কাড়ছেন তরুণ লেখকরা

গল্প-সাহিত্য-প্রবন্ধসহ বাংলা সাহিত্যের সৃজনশীল নানা শাখায় দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততার পরে তরুণরা নতুন কথাশৈলীতে নতুন বইয়ে নজর কাড়ছেন বইমেলার পাঠকদের। স্বীয় রচনাশৈলীতে নিজস্ব ভাবনা বা দর্শনে সমাজ বাস্তবতা, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট কিংবা প্রকৃতির সঙ্গে বিজ্ঞানের সাযুজ্য খুঁজে চলেছেন তারা। গল্প-কবিতা-উপন্যাসের বাইরে এসে মননশীল রচনাতেও বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে ঠাঁই করে নিতে মুখিয়ে আছেন এই তরুণরা।

এবার অমর একুশে বইমেলায় ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কর্মকার অনুপ কুমারের গল্পগ্রন্থ ‘আশ্বিনের বৈঠক’। গল্পগ্রন্থে লেখকের নতুন দশটি গল্প সংকলিত হয়েছে। ভিন্ন ধাঁচের স্বতন্ত্র ও মৌলিক দশ রকমের দশটি ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে লেখক তার গল্পগুলো সৃষ্টি করেছেন। কর্মকার অনুপ বলেন, ‘মানুষের জীবনের সব ঘটনাই মূলত একজন লেখকের কলমের মাধ্যমে গল্প হয়ে ওঠে। সে গল্প হতে পারে লেখকের স্বচক্ষে দেখা কোনো ঘটনা নিয়ে বা কারও মুখে শোনা কোনো জীবন-আখ্যান নিয়ে। আশ্বিনের বৈঠক-বইয়ের গল্পে পাঠক যেমন রহস্য ও রোমাঞ্চ খুঁজে পাবেন তেমনি প্রতিটা গল্পেই পাঠক মানবিকতা বোধের একটা স্পর্শ খুঁজে পাবেন।’ 

বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মনীষা চিন্ময়ের ছোটগল্পের সংকলন ‘শৃঙ্খলের কূটসুখ’। বইটি নিয়ে মনীষা চিন্ময় বলেন, ‘সমাজে যেমন রয়েছে শ্রেণিবৈষম্য তেমনি রয়েছে শ্রেণি-সংঘাত; রয়েছে অবদমনের সংস্কৃতির মতো মানসিক বৈকল্য। এই সমাজ কখনো সমাজবদ্ধ মানবের জন্য খুলে দেয় নতুন দ্বার। আবার কখনো তাকে জটিল করে তোলে পক্ষপাতের শিকলে। এই আবর্তেই হতাশা আর না পারার আড়ালে মানুষ খোঁজে বেঁচে থাকার সান্ত্বনা। এমনি ভিন্নতায় চরিত্রায়ণ করা হয়েছে ‘শৃঙ্খলের কূটসুখ’ বইয়ের দশটি গল্প; যেখানে কোথাও কোনো চরিত্র জাদুবাস্তবতা বা পরাবাস্তবতার ছায়ায় বলে ফেলে অবচেতনের অতলে হারানো কথাগুলো।’

আজব প্রকাশ থেকে এসেছে তরুণ লেখক হক ফারুকের কবিতার বই ‘সবুজ সন্ন্যাস কাল’। কবিতার পঙ্‌ক্তিতে এই বইয়ে উঠে এসেছে এক আংশিক জীবন ভ্রমণ; যেখানে আছে দ্রোহ, প্রেম, প্রকৃতি, পরিবর্তনের বয়ান। তিনি বলেন, ‘আমি একাধারে সংগীত এবং কবিতা অন্তঃপ্রাণ মানুষ। চার বছর পর নতুন কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে। বইতে এই শহরে বেড়ে ওঠা একজন মানুষের আংশিক জীবন তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে প্রেম, দ্রোহ, প্রকৃতি, পরিবর্তন, ধ্যান, বোহেমিয়ানসহ আরও অনেক বিষয়ের সন্নিবেশ ঘটেছে।’

তরুণ লেখক সুশীল মালাকার যুক্ত রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে। প্রভাতফেরি নামে একটি সাহিত্য সংগঠনের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেও তিনি নিয়মিত লিখছেন প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে। এবার প্রসিদ্ধ পাবলিশার্স থেকে এসেছে তরুণ লেখক সুশীল মালাকারের গল্পগ্রন্থ ‘হারানো শহর’। ইতালির দক্ষিণ-পশ্চিমে উপকূলীয় শহর পম্পেই অগ্ন্যুৎপাতে কীভাবে হারিয়ে গিয়েছিল গল্পচ্ছলে সে মর্মন্তুদ কাহিনি তুলে ধরেছেন তিনি। এ ছাড়াও এ প্রকাশনী থেকে এসেছে তার আরেকটি ছোটগল্পের বই ‘চেকপোস্ট’। নাগরিক জীবনের নিঃসঙ্গতা, বিষাদময় জীবনের নানা আখ্যান রচিত হয়েছে এই বইটিতে। 

২০০৬ সাল থেকে সাহিত্যে নিয়মিত হওয়া রুমানা বৈশাখী ভালোবাসেন সম্পর্কের গল্প বলতে। এবার ‘যে মেয়েটি ভাত বেশি খেতো’ শিরোনামের একটি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। গ্রামীণ পটভূমিতে নারী জীবনের আখ্যান রচিত হয়েছে এই বইটিতে। এ বইটি বইমেলায় এনেছে দিব্যপ্রকাশ। এ ছাড়াও এই প্রকাশনী থেকে এসেছে মাহবুব সিদ্দিকীর গবেষণাগ্রন্থ ‘সুন্দরবন ও গাঙ্গেয় বদ্বীপের মোহনা’ও প্রকাশ করেছে দিব্যপ্রকাশ। অন্বেষা প্রকাশনী থেকে এসেছে ইসমত আরা প্রিয়ার ‘আমার শুধু মানুষ হারায়’, রুশদী শামসের ‘অদ্ভুত যন্ত্রেরা সব’। বিশ্বসাহিত্য ভবন এনেছে অলীন বাসারের ‘বল্টুদের দেয়াল ঘড়ি’। সময় প্রকাশন এনেছে অধরা জাহানের উপন্যাস ‘মুহূর্তরা জানে’। অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে এসেছে ইকবাল খন্দকারের সাইকো থ্রিলার ‘ঘাতকের নিশানা’, খান মুহাম্মদ রুমেলের গল্পগ্রন্থ ‘আমাদের চোখে মাকড়সা জাল বোনে। 

সামাজিক প্রেক্ষাপটকে উপজীব্য করে তরুণ লেখক আলম সিদ্দিকী লিখেছেন থ্রিলারধর্মী উপন্যাস ‘স্বীকারোক্তি’। তার এ বইটি প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। এ ছাড়া তরুণ লেখক আসিফ মেহদীর কিশোর উপন্যাস ‘অদ্রির অভিযান’ও প্রকাশ করেছে এই প্রকাশনী। তরুণ লেখক মাহাথির মাহমুদ অন্তিকের থ্রিলারধর্মী বই ‘নোমান’ তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাকে ঘিরে তাম্রলিপির স্টলে দেখা গেল বেশ উন্মাদনা। তাম্রলিপি প্রকাশক এ কে তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে অন্তিকের লেখা তরুণরা গ্রোগ্রাসে পড়ছেন। লেখক হিসেবে অন্তিকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’

বইমেলার তরুণ লেখকদের নিয়ে অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, ‘বইমেলায় অনেক তরুণ বই লিখছেন সাহিত্যের নানা শাখায়। কেউ গল্প, কবিতা কেউবা আবার নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লিখছেন। এখন তাদের বইয়ের মান বিচারের প্রশ্ন উঠছে। আমরা যারা প্রকাশক তাদের আসলে আর্থিক সক্ষমতা নেই যে একটি সম্পাদনা পরিষদ গঠন করব, যেখানে আমরা নতুন বইগুলো সুসম্পাদিত করে বইমেলায় আনব।’ 

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির উপদেষ্টা ওসমান গণি তরুণ লেখকদের বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রকাশনীগুলো ফি বছর তরুণদের অনেক বই প্রকাশ করছে। কিন্তু সব বই কি ভালো মানের? আমরা নিজেরা এমন কিছু বই প্রকাশ করছি, যা আমাদের প্রকাশ করার কথা না। কিন্তু অনেক কিছুর পরে আমরা সেসব বই প্রকাশ করতে বাধ্য হই। তবে কিছু তরুণ আছেন যারা সমসাময়িক সাহিত্যকে ধারণ করতে পেরেছেন। তাদের বইগুলো আরও যত্ন নিয়ে প্রকাশ করা গেলে তারা সাহিত্যাঙ্গনে নতুন ধারা রচনা করবেন।’

মেলার নানা আয়োজন 

গতকাল বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: হেনা দাস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঝর্না রহমান এবং ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীন আখতার।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘হেনা দাস আজন্ম এক প্রতিবাদী সত্তা। নির্লোভ শুভ্রতার প্রদীপ হয়েই তিনি আলো ছড়িয়েছেন এবং সব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে মানুষের জন্য পথ উন্মোচন করেছেন। দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং শোষণমুক্তির লক্ষ্যে একজন সার্বক্ষণিক কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। এ জন্য ঔপনিবেশিক শাসন, শ্রেণি ও লিঙ্গ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।’ 

গতকাল ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী, কবি ফারহানা রহমান, গবেষক মিলটন কুমার দেব এবং কথাসাহিত্যিক ইকবাল খন্দকার। 

আজও বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন হরিশংকর জলদাস এবং ফারজানা সিদ্দিকা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। 
 
নতুন বই 

গতকাল বইমেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই জমা পড়েছে ১১৫টি। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হালিমা খাতুনের আত্মজীবনী ‘মেঘের ওপারে আকাশ’ (বাংলা একাডেমি), শ্রীশচন্দ্র দাসের প্রবন্ধ ‘সাহিত্য সন্দর্শন’ (ভাষাপ্রকাশ); বিপাশা চক্রবর্তীর প্রবন্ধ ‘নক্ষত্রবিথী’ (অনন্যা); দীপু মাহমুদের উপন্যাস ‘সুনসান সুন্দরবন’ (পাঞ্জেরী)।

ভাঙল প্রাণের মেলা, ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৬ এএম
আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৬ এএম
ভাঙল প্রাণের মেলা, ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি

একুশে বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি হয়েছে। গত বছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি টাকা। মেলার শেষ দিনে প্রকাশিত হয়েছে নতুন ১৪৯টি বই। এবার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৫১। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৩০। গতকাল  শনিবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাহেদ মন্তাজ।

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ আর রহস্য-রোমাঞ্চ; কথাসাহিত্যের নানা শাখার কবি-গল্পকার-কথাসাহিত্যিকদের নানা বইয়ের সম্ভার নিয়ে মাসজুড়ে বাঙালি পাঠকের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল অমর একুশে বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কবি-সাহিত্যিক, লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ভাব বিনিময়, মিথস্ক্রিয়ায় এই বইমেলা হয়ে উঠেছিল বাঙালির প্রাণের মেলা। 

গতকাল ৩১ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনে তেমন ভিড় না থাকলেও বইপ্রেমী পাঠকের হাতে ছিল বই। শেষ দিনে তারা প্রিয় বইটি কিনে নিয়েছেন। সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তে জমে ওঠে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের প্রাণময় আড্ডা।

রীতি অনুযায়ী গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। প্রকাশকদের অনুরোধে মেলার সময় দুই দিন বাড়িয়ে দেয় সরকার। এরই মধ্যে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোকাস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ। সেই শোকের আবহ ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণেও। বিষণ্নতার শোকার্ত পরিবেশ থাকায় মিইয়ে পড়ে শেষ দিনের মেলা।

সমাপনী আয়োজনে বইমেলা স্থানান্তরের ইস্যু 
বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এই বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানেই রাখার ব্যবস্থা করব।’ অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে।  অভিভাবকদের বলব, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের হাতে অন্তত একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন।’ সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ বলেন, ‘বইমেলার স্থায়ী কাঠামোর নির্মাণের জন্য চেষ্টা চলছে। কোনো একটি স্থায়ী জায়গায় বইমেলা করার কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন।’

কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও এমন একটি বইমেলা খুঁজে পাবেন না। এ বইমেলা আমাদের আবেগের মেলা, জাতিসত্তার মেলা। এই বইমেলা জাতি হয়ে ওঠার বইমেলা, আমাদের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার বইমেলা।’

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারের নাম আগেই ঘোষণা করেছিল বাংলা একাডেমি। গতকাল বইমেলার মূল মঞ্চে এই পুরস্কারগুলো তুলে দেওয়া হয়। 

২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ পেয়েছে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। 

২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিকসংখ্যক শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি পেয়েছে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার।
এ বছর অমর একুশে বইমেলা নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেঙ্গল বুকস (এক ইউনিট); নিমফিয়া পাবলিকেশন (দুই-চার); অন্যপ্রকাশ পায় কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। 

কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ০৭:২১ পিএম
আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ০৭:২১ পিএম
কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
ছবি : খবরের কাগজ

কাজ করেই নিজেকে প্রমাণ করতে চান নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। এ জন্য সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা চাইলেন তিনি৷ 

শনিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন৷ 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণ করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন৷ 

পরে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি আমি বইমেলার উদ্বোধনী আয়োজনে এসেছিলাম৷ জীবনে চিন্তাও করিনি আমি বইমেলার সমাপনী আয়োজনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে হাজির হবো৷
 
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিশ্রুতি করতে চাই না৷ আমি কোনো প্রমিজে বিশ্বাস করি না৷ আমি কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই৷ প্রতিশ্রুতি তো ভঙ্গ হয়ে যায়৷ আমরা সবাই মিলে যদি একটি টিমওয়ার্ক করতে পারি, তাহলে কাজটি ভালো হবে৷’

বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে৷ এই বইমেলা প্রস্থানের বিষয়ে কথা উঠেছে৷ কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানে রাখার চেষ্টা করা হবে৷’

অভিভাবকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে৷ অভিভাবকদের উদ্দেশে বলব, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের হাতে অন্তত একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন৷ 

জয়ন্ত সাহা/অমিয়/

পর্দা নামল চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
পর্দা নামল চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার
ছবি: খবরের কাগজ

দীর্ঘ বাইশ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় চলা অমর একুশে বইমেলার। 

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিরীষতলায় আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সমাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রাণের বইমেলার জন্য আরও এক বছরের অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হলো। 

তবে শেষ দিনের মতো আগামীকাল শনিবারও বইমেলা চলবে। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত শুক্রবারের সমাপনী অনুষ্ঠান লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।  

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন দেশ গড়ার ইচ্ছা বাঙালির মনে জন্ম নিয়েছিল। অনেক দেশে গিয়েছি। কোনো দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড কেবল বিদেশি কোনো ভাষায় লিখতে দেখিনি। আমরা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তবে ভাষাপ্রেমের চেতনা যেন আমাদের অনেকের মাঝে কমে গেছে। আমি কিছুটা হতাশাবোধ করতাম। তবে এবার বইমেলায় তরুণদের যে সাড়া দেখেছি তাতে আমি আশাবাদী। তরুণরা জাগলে বাংলা ভাষা বাঁচবে, বাঙালি বাঁচবে। বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে বাঙালি জাতি। আসুন আমরা বাঙালি হই।’ 

এ সময় আগামী বছর আন্তর্জাতিক মানের চট্টগ্রাম বইমেলা আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মেয়র।

মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয়

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:১১ এএম
আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ০২:২১ পিএম
মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয়
শুভাশিস সিনহা

এবারের বইমেলায় মাছরাঙা প্রকাশনী থেকে এসেছে আমার দীর্ঘ কবিতার বই ‘কাহার বাতাস আসি লাগে।’ দীর্ঘ কবিতার বিষয়ে আমি বলব, আমাদের দেশে কবিতার ধারণা এসেছে অনেক পরে। পাঁচালি, গীতি, রামায়ণ, মহাভারত বা বিষাদসিন্ধু-যা কিছু ছিল আমাদের দেশে, তার সবই ছিল দীর্ঘকাব্য বা মহাকাব্য। কবিতায় সাধারণত ছোট আকারে আমরা নিজের মনের ভাব ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করি। তবে দীর্ঘ কবিতার মধ্যে একটা ভ্রমণ থাকে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ভাবনার ডালপালা বিস্তৃত করেন কবি। কোনো গল্পের মধ্য দিয়ে আমরা যেভাবে এগোই, কবিতায় তো আমেজ বা ব্যঞ্জনা সেভাবে থাকে না। সেখানে দীর্ঘ কবিতায় পাঠককে অনেক সময় ধরে রেখে নিজের কথা বলার চেষ্টা করেছি।

‘কাহার বাতাস আসি লাগে’ বইটির নামকরণে ‘কাহার’ শব্দটি সাধু ভাষা। চলতি ভাষার অনেক কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ সাধু শব্দ প্রয়োগ করেছেন। আর ‘বাতাস’ শব্দটির যোজনা হলো, এটি করে কবিতায় একটি আমেজ তৈরির চেষ্টা করেছি। অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, এটি প্রেমের কবিতা কি না। আমি বলছি, এটি প্রেমের কবিতা নয়। 

‘কাহার বাতাস আসি লাগে’-দীর্ঘ কবিতা আমাদের যাপিত জীবনের গল্প বলে। আমাদের মন এমন এক পরিবর্তন চায়, যাতে আমরা নিজেদের চাওয়া-পাওয়াগুলো সময়ের সঙ্গে মেলাতে পারি। সব মানুষের ভেতরে একটা অবরুদ্ধ সময় কাটে। ওই জড় সময়ে আমরা আশা করি কোনো একটা বাতাস আসবে। স্যামুয়েল বেকেটের ‘ওয়েটিং ফর গডো’তে আমরা দেখি, একটা গডো আসবে। এখানে আমি সেই আবহ নিয়ে এসেছি। এখানে আমি আলোড়িত হয়েছি, শিহরিত হয়েছি নতুন ভাবনায়। অনুরণিত হয়েছি ওই বাতাসের আকাঙ্ক্ষায়।

আমি মণিপুরি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করি। মণিপুরি সাহিত্যের চর্চার বিষয়ে বলব, তা খুব বেশি বেগবান হয়নি। ওখানে কৃতবিদ্য শিল্পকলার ব্যাপারটি যেমন শক্তিশালী, তেমনিভাবে কিন্তু লিখিত সাহিত্যের চর্চা বেশ দুর্বল। তারপরও আমরা বেশ কজন চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, মণিপুরি ভাষায় কবিতা ও গল্প অপ্রতুল। উপন্যাসও সেভাবে নেই। মণিপুরি ভাষায় আমার ৯টি বই আছে। আমার ইচ্ছা আছে, আমি মণিপুরিদের নিয়ে একটি বৃহৎ উপন্যাস লিখব। বাংলা ভাষায় লেখা হলেও আমার উপন্যাসের চরিত্র, গল্প সব কিছুর পটভূমি হবে মণিপুরি সমাজ ব্যবস্থা।

কবি, নাট্যকার

অনুলিখন: জয়ন্ত সাহা

শোকের আবহ, ভাঙছে মিলনমেলা

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:০৬ এএম
আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:০৬ এএম
শোকের আবহ, ভাঙছে মিলনমেলা

বসন্তবিকেলে সব উচ্ছ্বাস থেমে গেছে, প্রাঙ্গণজুড়ে সব মুখ বিবর্ণ-পাণ্ডুর। বাঙালি পাঠকের বৃহৎ মিলনোৎসব অমর একুশে বইমেলার শেষ বেলায় গতকাল শুক্রবার বইপ্রেমীদের চোখে-মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। গতকাল বেলা ১১টায় দুয়ার খোলে অমর একুশে বইমেলার। ছুটির দিনে দুপুর গড়াতেই বইমেলা লোকারণ্য হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ অনেকটাই ফাঁকা।

প্রকাশকরা জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দেশজুড়ে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তার ছাপ পড়েছিল অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণেও। অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীবাসী থমকে গেছেন। তারা শোকে স্তব্ধ। যারা বই কিনতে এসেছিলেন, তাদের সবার মুখে কেমন বিষাদ, কেমন এক আতঙ্ক দেখেছি। বইমেলার শেষভাগে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখার প্রত্যাশা করেছিলাম, তা নেই। অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘শনিবার বইমেলা শেষ হয়ে যাবে। আজ যে উচ্ছলতা প্রত্যাশা করেছিলাম তরুণ পাঠকদের, তা নেই। অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে বইমেলায়।’ অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা তার মোবাইলে ধারণ করা এক ভিডিও দেখিয়ে বলেন, ‘শুক্রবার (গতকাল) বেলা ৩টা পর্যন্ত মেলায় তেমন কোনো দর্শক-পাঠক ছিলেন না। হাতে গোনা যারা এসেছেন, তারা অবশ্য কিছু বই কিনেছেন।’

অমর একুশে বইমেলা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে প্রকাশকদের অনুরোধে বইমেলার সময় আরও দুই দিন বাড়িয়ে দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বইমেলার শেষ দিন আজ শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, শেষ হবে রাত ৯টায়। 

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে এ বছরের বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০০টির বেশি। প্রকাশকরা জানান, নতুন বইয়ের সংখ্যা আদতে আরও বেশি। নতুন-পুরোনো বইয়ের বিকিকিনির পাশাপাশি বইমেলায় পাঠক তার পছন্দের মানসম্মত বইটি খুঁজে পেলেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তর জানতে খবরের কাগজের প্রতিবেদক কথা বলেন বেশ কজন পাঠকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে অভিনেত্রী জ্যোতি সিনহা বলেন, ‘মেলায় গুটিকয়েক প্রকাশনী মানসম্মত বই প্রকাশ করে। তাদের বুকলিস্ট দেখে বই কিনেছি বেশ কিছু। কিছু প্রকাশনীতে আমার প্রিয় লেখকদের বই রয়েছে। সেসব বই খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয়েছে।’ একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক লতিফুল হক বলেন, ‘ছোট প্রকাশক হিসেবে যাদের অনেকে অবজ্ঞা করেন, সেসব প্রকাশনীতেও কিন্তু তরুণ লেখকদের ভালো মানের বই থাকে। তাদের বইয়ের প্রচার হয়তো একটু কম। তবে একটু খোঁজ করলে সেখানে বইগুলো পাওয়া যায়।’ 

বই বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

বইমেলার বাণিজ্যিক দিক নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রকাশকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নালন্দার প্রকাশক রেদওয়ান রহমান জুয়েল বলেন, ‘গতবারের মেলার চেয়ে এবার বই বিক্রি ২০ শতাংশ কমে গেছে। শুক্রবার বই বিক্রির পরিমাণ একটু বেশি হওয়ার আশা করলেও তা হয়নি। পাঠক বইমেলা থেকে না, অনলাইন বুকশপে বই কিনতে এখন বেশি আগ্রহী।’ অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক বলেন, ‘শুরুর দিকে বইমেলায় বিক্রির পরিমাণ বেশ ভালো থাকলেও শেষ দিকে এসে তা হঠাৎ কমে গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারির পর আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, বই বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। তবে ব্যাপার হলো মানুষ তার আর্থিক সংকট সামলে যে বই কিনতে আলাদা অর্থ ব্যয় করবে, সেদিন নেই।’ অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন, ‘অনুপমের মিলন নাথ, আকাশের আলমগীর শিকদার লোটন, কাকলীর এ কে নাছির আহমেদ সেলিম জানান, তাদের প্যাভিলিয়নে বই বিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। নাছির আহমেদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনীতে বই বিক্রির পরিমাণ ভালো হওয়ার কারণ হলো হুমায়ূন আহমেদ। তার রচনাবলির বিশাল সম্ভার রয়েছে আমাদের। এ ছাড়া আনিসুল হক, সুমন্ত আসলামের আলাদা পাঠক রয়েছে। তাদের বইয়ের চাহিদাও তুমুল ছিল।’ 

জার্নিম্যান বুকসের স্বত্বাধিকারী কবি তারিক সুজাত বলেন, বইমেলায় আগত দর্শক-পাঠক সংখ্যা কত, তা জানতে বাংলা একাডেমি একটি ডেটাবেজ করতে পারে। সেখানে আগতরা নাম নিবন্ধন করে আসবেন। নিবন্ধিতদের কাছে বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের তথ্যগুলো জানিয়ে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠানো যেতে পারে। মেলাকে গতানুগতিক ধারার বাইরে নিয়ে আসতে হবে। বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বইমেলায় বিশ্বের নানা দেশ থেকে লেখক-প্রকাশক ও অনুবাদকদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। বাংলা ভাষার বইগুলো কীভাবে তারা অনুবাদ করবেন, সেই প্রক্রিয়া নিয়ে এখানে আলোচনা হতে পারে, কপিরাইট ইস্যু নিয়েও কথা হতে পারে।’ অনুপমের স্বত্বাধিকারী মিলন নাথ বলেন, ‘বইমেলার কাঠামোগত পরিবর্তন করা দরকার। আয়োজক হলো বাংলা একাডেমি, প্রকাশকরা হলেন অংশগ্রহণকারী। বইয়ের মান, সাহিত্যের বাজার এসব নিয়ে যদি কাজ করতেই হয়, তবে বাংলা একাডেমিকে একটি আলাদা বিভাগ খুলতে হবে। তারা শুধু বইমেলাকেন্দ্রিক কাজগুলো করবে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস না, বইমেলা নিয়ে বছরজুড়েই কাজ করতে পারেন তারা।’

বিশ্বসাহিত্য ভবনের প্রকাশক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, এবার ভালো বইয়ের পাঠকের সংখ্যা অনেক। মেলায় সিরিয়াস পাঠক বাড়ছে। তারা গল্প, কবিতা ছেড়ে সমকালীন সাহিত্য, সমালোচনা বা ইতিহাসের বইয়ের যে চাহিদার কথা আমাদের জানিয়ে গেলেন, সন্তানদের হাতে যেসব বই তুলে দিলেন, তাতে আমরা জানলাম যে সামনে আমাদের কী ধরনের বই প্রকাশ করতে হবে।’

মেলার নতুন বই 

গতকাল বইমেলার নতুন বইয়ের স্টলে জমা পড়েছে ২১৯টি বই। কথাপ্রকাশ এনেছে আফসান চৌধুরীর ‘দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ’, অন্যপ্রকাশ এনেছে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর ‘উনিশ শ একাত্তর’; অবসর এনেছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল, হাসান হাফিজ, আলী রীয়াজ ও অন্যান্যর ‘স্কুলদিনের বই পড়া’; গণপ্রকাশ এনেছে পাভেল রহমানের ‘সেইসব দিনগুলি’; গ্রন্থিক এনেছে তোফায়েল আহমেদের ‘সংস্কার সংলাপ: সূচনা সূত্র’; সৌম্য প্রকাশনী এনেছে মেসবাহ কামালের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা’; নান্দিক এনেছে হায়াৎ মামুদের ‘সে এক ঘটনা বটে’ ও পবিত্র সরকারের ‘খেয়ালিমেরিক’।

আজ শনিবার বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্যসচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।