
ভাবুন তো, একটি ক্লাসরুম কিন্তু সেখানে কেউ গম্ভীর মুখে বইয়ে ডুবে নেই, নেই একঘেয়ে পুরোনো ধরনের লেকচার। বরং চারদিকে প্রাণখোলা হাসি, কেউ খেলায় মেতে আছে, কেউ গল্প বলছে, কেউ আবার বন্ধুদের নানা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে। মজার বিষয় হলো, তারা বুঝতেই পারছেন না যে মজার ছলে তারা ইংরেজি শিখে ফেলছেন! এটাই হেডম্যান একাডেমির বিশেষ শিক্ষাদান পদ্ধতি। এখানে শেখা মানে আনন্দ। অথচ আমাদের দেশে এখনো বহু শিক্ষার্থী ইংরেজির নাম শুনলেই ভয় পান বা বিষয় হিসেবে ইংরেজি নিতে দ্বিধাবোধ করেন। ইমাম হোসেন ঠিক করেছিলেন, এই ভয় কাটাতেই হবে। তাই ২০১৮ সালে তিনি গড়ে তোলেন হেডম্যান একাডেমি। যেখানে শেখার মানেই হবে মজা।
আমরা ছোটবেলা থেকে ইংরেজিকে ভয় পাই। কারণ আমাদের শেখানো হয় কঠিন সব গ্রামার রুলস। মনে করিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষা এবং ভুল করলেই শাস্তি! কিন্তু হেডম্যান একাডেমিতে শেখানোর ধরনটা পুরোই উল্টো। এখানে কেউ রুলস মুখস্থ না করেই ইংরেজি শিখে ফেলে। কোনো শিক্ষার্থী যখন টেন্স (Tense) শেখে, তখন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে না রেখে সে হয়তো কোনো গেম খেলছে, কোনো মজার গল্প বলছে বা কোনো চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যেই সে শিখে যাচ্ছে টেন্স, গ্রামার, ভোকাবুলারি- সবকিছু।
দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে শুধু শিক্ষা প্রদানেই সীমাবদ্ধ, হেডম্যান একাডেমি সেখানে নিয়ে এসেছে এক ভিন্ন ধারণা- এডুকেশন (Education) আর এন্টারটেইনমেইন্ট (Entertainment)-এর মিশেলে এডুটেইনমেইন্ট (Edutainment)। ভাবুন তো, আপনি একটি ভিডিও দেখছেন, শিক্ষক পাঠদান করছেন, আর পুরো ক্লাসে হাসির রোল! আর এভাবেই আনন্দের সঙ্গে এখানকার শিক্ষার্থীরা শিখে নিচ্ছেন নতুন শব্দ, বাক্য গঠন আর সঠিক উচ্চারণ।
এই অভিনব পদ্ধতির কারণেই হেডম্যান একাডেমির ভিডিওগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে এতটা জনপ্রিয়। এখানে পড়াশোনা আর কোনো ভয়ের বিষয় নয়, বরং এক দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
ইমাম হোসেন বিশ্বাস করেন, ইংরেজি শেখার ভয় কোনো এলাকায়ই থাকা উচিত নয়। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এখনো ইংরেজির নাম শুনলে মানুষের ভয় হয়, যেন ‘ইংরেজি’ মানেই বিশাল কোনো দানব! তিনি মজার ছলে বলেন, ‘ইংরেজির নাম শুনলেই কারও কারও গায়ে জ্বর চলে আসে।’
এ কারণেই তার লক্ষ্য, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর- সব জায়গায় ইংরেজি শেখানোর এই মজার পদ্ধতি পৌঁছে দেওয়া। ইতোমধ্যে তিনি মালয়েশিয়া, চীন ভ্রমণ করেছেন; যেখানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও ইংরেজি শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
তার পরবর্তী পরিকল্পনা হলো- প্রথমে বিভাগীয় শহরগুলোতে হেডম্যান একাডেমির শাখা খোলা, তার পর ৬৪ জেলা আর যদি মানুষ পছন্দ করে, তবে উপজেলাতেও তিনি পৌঁছাতে চান।
হেডম্যান একাডেমি আজ শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি বিপ্লব। ইংরেজির প্রতি ভয় দূর করে, শিক্ষাকে আনন্দময় করে, শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতেই হেডম্যান একাডেমির প্রতিটি পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে ইমাম হোসেন শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই পদ্ধতিকে ছড়িয়ে দিতে চান। তার ইচ্ছা, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের ইংরেজি দক্ষতা অর্জন করুক, যেন তারা অনায়াসে যেকোনো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন।
/রিয়াজ