একজন সাইকোলজিস্ট বা মনোবিজ্ঞানী মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছা ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তা ছাড়া বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি। সাইকোলজিস্ট বা মনোবিদ পেশাটি বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের সমাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করে সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। চাকরির দুর্দান্ত সুযোগও রয়েছে এতে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সৈয়দ শিশির
সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান
সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান হলো মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা। এটি বিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক বা ফলিত শাখা। মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে যে বিজ্ঞান, তাকে মনোবিজ্ঞান বা সাইকোলজি বলে। একজন সাইকোলজিস্ট (মনোবিজ্ঞানী) ব্যক্তিগত বা সামাজিক আচরণের ক্ষেত্রে মানসিক কর্মপ্রক্রিয়ার ভূমিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বর্তমানে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যার ফলে এর চিকিৎসাক্ষেত্রও বাড়ছে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
সাইকোলজিস্ট হতে হলে আপনাকে মনোবিজ্ঞানের ওপর ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি এবং এরপর মনোবিজ্ঞানের বিশেষায়িত কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে হবে। যেমন- ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হতে হলে সাইকোলজিতে ৪ বছরের বিএসসি ডিগ্রির পর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমএসসি ও এমফিল ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। অবশ্য কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের বেলায় ডিগ্রি বাধ্যতামূলক নয়। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কোর্স করে দক্ষ হলে যে কেউ এ পেশায় আসতে পারেন। একজন সাইকোলজিস্টের অবশ্যই কিছু দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়। যেমন- ধৈর্য; পরিশ্রম করার মানসিকতা; ক্লায়েন্টের চিন্তা ও আচরণ পর্যবেক্ষণের সময় ব্যক্তিগত অনুভূতি সরিয়ে রেখে যৌক্তিকভাবে তার মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন করা; ক্লায়েন্টের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখার দক্ষতা; ক্লায়েন্টের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে পরামর্শ দিতে পারা; যোগাযোগের দক্ষতা এবং সমাজ সম্পর্কে পরিষ্কার ও বাস্তবিক ধারণা রাখা।
পড়াশোনা
বাংলাদেশের অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজি বিষয়টি পড়ানো হয়। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মনোবিজ্ঞানে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্কুল সাইকোলজি আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল-অরগানাইজেশনাল সাইকোলজি বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি রয়েছে এখানে। পাশাপাশি দুই বছর মেয়াদি এমফিল ও ৩ বছর মেয়াদি ডিফিল ডিগ্রি নিতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ থেকে এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিতে পৃথকভাবে এমএসসি ও এমফিল ডিগ্রি নেওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ থেকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর সাড়ে তিন বছরের সমন্বিত এমএসসি ও এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (মনোবিজ্ঞান বিভাগ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (মনোবিজ্ঞান বিভাগ), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (মনোবিজ্ঞান বিভাগ), রাজশাহী কলেজ (মনোবিজ্ঞান বিভাগ), ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ)। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সাইকোলজি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন প্রোগ্রাম অফার করা হয়। কেউ চাইলে বিদেশে গিয়ে এ বিষয়ের ওপর গবেষণা করতে পারেন। আমেরিকা, ইউকে, কানাডা, জার্মানি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে থাকে।
ক্যারিয়ার
আমাদের দেশে বর্তমানে প্রতি ১০ জনে ১ জন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। যার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের সেবা প্রদানের জন্য সেই পরিমাণে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা সাইকোলজিস্ট নেই। কর্মক্ষেত্রে এখনো প্রচুর পরিমাণে সাইকোলজিস্টের প্রয়োজন রয়েছে। ভালো ও অভিজ্ঞ একজন সাইকোলজিস্ট হতে পারলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও কাজ বা চাকরি পাওয়া সম্ভব। তা ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিভাগে শিক্ষকতার পেশায়ও জড়িত হওয়া যেতে পারে। বর্তমানে এটি একটি সফল পেশা। একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, এনজিও, বেসরকারি ক্লিনিক বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে থাকেন। তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অরগানাইজেশনাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কোনো সংস্থায় কর্মী নির্বাচন এবং নিয়োগের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে থাকেন। ফরেনসিক সাইকোলজির ক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগ, অপরাধ শাখা, প্রতিরক্ষা বা সেনা, আইনি সংস্থা, ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের মতো জায়গায় পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আবাসিক ক্লিনিক এবং হাসপাতাল, কিশোর-কিশোরীদের বিচার-আদালতে, বেসরকারি ক্লিনিকে এডুকেশন সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন। কেউ স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া দল, পেশাদার ক্রীড়া দল, ক্রীড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং ক্রীড়া গবেষণা কেন্দ্রে ক্রীড়া মনোবিজ্ঞান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। অনেকে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা, উপদেষ্টা এবং গবেষকদের জন্য একজন পেশাদার টেস্ট ডেভেলপার এবং সাইকোমেট্রিশিয়ান হিসেবেও কাজ করেন।
মাসিক আয়
একজন সাইকোলজিস্টকে সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয়। বেসরকারি নামি-দামি হাসপাতাল ও এনজিওগুলোতে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতন কয়েক লাখ টাকাও হতে পারে।এ ছাড়া এ কাজে সুনাম অর্জন করতে পারলে কাউন্সেলিং করে মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
কলি