কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমগ্র শরীর ধীরে ধীরে বিকল হতে শুরু করে। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ দেখা দিলে শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। একবার কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে শরীরে হার্টজনিত রোগও দেখা দেয়। পাশাপাশি কিডনি বিকল হলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে চাইলে কিডনিকে সুস্থ রাখা জরুরি। চলুন জেনে নিই কোন ধরনের খাবার খেলে কিডনি সুস্থ থাকবে।
আপেল: আপেলে পলিফিনল নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এই উপাদানটি কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। যাদের কিডনিতে পাথরজনিত সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত আপেল খেলে সেই পাথর নরম হবে। শুধু তাই নয়, এটা ছোট হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে।
স্ট্রবেরি: স্ট্রবেরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, খনিজ লবণ ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই এনজাইম কিডনির পরিশোধন কাজে সহায়তা করে।
আনারস: আনারসের জলীয় উপাদান রক্ত পরিশোধন করে দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে কিডনিকে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ব্রোমেলাইন নামের এনজাইম, যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে। ক্রনিক কিডনি রোগীদের জন্য আনারস খুবই উপকারী একটি ফল। কারণ এতে পটাসিয়াম রয়েছে স্বল্প মাত্রায়।
শাকসবজি: লাউ, ঝিঙা, পটোল, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, অঙ্কুরিত মুগডাল, ক্যাপসিকাম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ জলীয় উপাদান রয়েছে, যা রক্ত পরিশোধন করে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে কিডনিকে সাহায্য করে।
মাছ: মাছে রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা ৩-৬, যা কিডনি, যকৃৎ ও হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড মানসিক চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কিডনির প্রদাহ ও সংক্রমণ রোধে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে ফ্রি র্যাডিক্যাল ও খারাপ ব্যাকটেরিয়া বের করে দিতে সহায়তা করে।
রসুন: এতে রয়েছে এলিসিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মানবদেহের প্রদাহ দূর করে। জারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবদেহে অতিমাত্রায় বর্জ্য পদার্থ তৈরিতে বাধাদান করে কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজ: পেঁয়াজে কোরসিটিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোকে বাধা দান করে, কিডনি পরিশোধনে সহায়তা করে এবং মূত্রনালির সংক্রমণ রোধ করে।
আদা: কিডনি ভালো রাখতে আদার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আদা রক্ত চলাচল বাড়িয়ে কিডনি সচল রাখতে সাহায্য করে। ফলে কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়। নিয়মিত আদা চা পান করলে বা কাঁচা আদা খেলে কিডনি সুস্থ থাকে।
অপরাজিতা ফুলের চা: এই ফুলে তিন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। মূত্রনালির সংক্রমণ রোধে এবং কিডনির পাথর তৈরিতে বাধা দান করে।
চালতা: এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ রয়েছে, যা কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে শরীর থেকে দূষিত বর্জ্য বের করে কিডনি পরিষ্কার করে। একে প্রাকৃতিক ক্লিনজার বলা হয়ে থাকে।
কুমড়ার বীজ: ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অন্যতম উৎস হলো কুমড়ার বীজ। কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা কিডনি সুস্থ রাখার জন্য দারুণ উপকারী।
লাল আঙ্গুর: লাল আঙ্গুরে আছে এমন এসিড যা কিডনির এবং পেশাবের নালির জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুদের মেরে ফেলে। এ ছাড়া মাংসপেশি শিথিল করা এবং রক্তের প্রবাহ উন্নত করতেও বেশ কার্যকর লাল আঙ্গুর।
লেবুর রস: লেবুতে যে এসিড উপাদান আছে তা কিডনিতে জমা হওয়া পাথর ভাঙতে বেশ কার্যকর। লেবুতে যে সাইট্রাস উপাদান আছে তা কিডনিতে থাকা ক্রিস্টালদের পরস্পরের জোড়া লাগতে বাধা দেয়।
বেরি: বেরিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, খাদ্য আঁশ এবং ফোলেট। স্ট্রবেরি, ক্র্যানবের্য র্যাস্পবেরি এবং ব্লুবেরি কিডনির জন্য বেশ উপকারী বলে বিবেচিত হয়। বেরিতে আছে প্রদাহরোধী এবং পচনরোধী উপাদান এবং মূত্রাশয়ের কার্যক্রমেরও উন্নতি ঘটায়।
অলিভ অয়েল: সবাই জানেন অলিভ অয়েল হার্টের জন্য ভালো। কিন্তু সেটি যে কিডনির জন্যও উপকারী তা জানেন কি? এতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রদাহরোধী এসিড যা জারণ কমিয়ে কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। সালাদে বা রান্নায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
কিডনি কমিউনিটি কিচেন অবলম্বনে হাবিব
মোহনা