![শীতের ফুল কুচাই](uploads/2023/12/22/1703222149.Kuchui.jpg)
পাথারিয়া পাহাড়ের কথা শুনেছি অনেক আগেই। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা তার শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন এই পাহাড়ে ঘুরেফিরে। তার বিভিন্ন লেখায় সেই প্রসঙ্গ এসেছে অসংখ্যবার। সম্প্রতি জেনেছি, আমাদের একমাত্র বুনো ম্যাগনোলিয়া ‘দুলিচাঁপা’ পাথারিয়া পাহাড়েরই বাসিন্দা। এই সংবাদটি আমাদের চমৎকৃত করে।
মৌলভীবাজার জেলায় একাধিকবার গেলেও আগে কখনো পাথারিয়া পাহাড়ে যাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এবার অনেকটা পরিকল্পনা করেই এসেছি। আস্তানা গেড়েছি পাহাড়ের দোরগোড়ায় বড়লেখা উপজেলা সদরে। এত কাছে এসে পাথারিয়া না দেখে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। অতি প্রত্যুষেই আমরা ডিমাই বাজার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছালাম। তারপর হারিয়ে গেলাম পাহাড়ের নির্জনতায়। একটি পাহাড়িছড়া পার হতে গিয়েই চোখ আটকে গেল পাহাড়ের ঢালুতে।
হলুদ রঙের কার্পেটে মোড়ানো বিশাল পুষ্পস্তবক। ঝোপ-জঙ্গল পেরিয়ে অনেক কষ্টে পৌঁছলাম সেখানে। ভারি সুন্দর ফুল। শুঁকে দেখি, দারুণ সুগন্ধি। একেবারেই অচেনা ফুল। আগে কখনো দেখিনি। মন ভরে ছবি তুললাম। নমুনাও সংগ্রহ করলাম। কিছুদিন পর বড়লেখা উপজেলার সমনবাগ চা বাগান এলাকার প্রাকৃতিক টিলা, বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা এবং খাগড়াছড়ির পাহাড়েও এ ফুল দেখেছি। আমাদের অজান্তে বন পাহাড়ে প্রকৃতি কতভাবেই না নিজের সাজসজ্জা করে নিচ্ছে!
ঢাকায় ফিরে এসে ফুলটির নামঠিকুজি উদ্ধারে তৎপর হলাম। বইপুস্তক ঘেঁটে পরিচয় পাওয়া গেল। স্থানীয় নাম কুচাই। বৈজ্ঞানিক নাম Caesalpinia enneaphyllum. স্থানীয় বাসিন্দারা গাছটির আরেকটি প্রচলিত নাম কনকলতাও বলেছেন। বলধা গার্ডেনে অবশ্য কনকসুধা নামে একটি লতানো ফুল আছে। সিসালপিনিয়া-গণে আমাদের দেশে ঘনিষ্ঠ প্রজাতি রাধাচূড়া এবং কনকচূড়া। কোনো কোনোটি এসেছে দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চল থেকে। পাতার গড়ন প্রায় একই রকম হলেও গাছ একেবারেই আলাদা।
কুচাই কাষ্ঠল লতানো গাছ। যৌগপত্র ২-পক্ষল, ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা, প্রতিটি পক্ষে ৮ থেকে ১২ জোড়া আয়তাকার পত্রিকা, দেড় থেকে দুই সেন্টিমিটার লম্বা, ঘনবদ্ধ ও বিপ্রতীপভাবে বিন্যস্ত। ফুল হলুদ-সোনালি রঙের, ছোট টিউবের মতো। নিচের দিকে ঘণ্টার মতো ঝুলে থাকে। মোড়ানো পাপড়ির একটি অংশ ওপরের দিকে উল্টানো, মাঝখানে পুংকেশরের আগা কিছুটা কালচে রঙের। মঞ্জরিদণ্ড শাখাবহুল। ফুল নিচ থেকে ওপরের দিকে পর্যায়ক্রমে ফোটে। প্রধান প্রস্ফুটন মৌসুম কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস। সিসালপিনিয়া মূলত উষ্ণ ও উপ-উষ্ণ অঞ্চলের গুল্ম কিংবা বৃক্ষ। বৃক্ষ, গুল্ম এবং লতাসহ সারা বিশ্বে এদের দুই সহস্রাধিক রকমফের দেখা পাওয়া যায়।