লোকসভা ভোটে কাশ্মীরের থেকেও বেশি সেনা বাংলায় । খবরের কাগজ
ঢাকা ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

লোকসভা ভোটে কাশ্মীরের থেকেও বেশি সেনা বাংলায়

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১৪ এএম
লোকসভা ভোটে কাশ্মীরের থেকেও বেশি সেনা বাংলায়
দীপঙ্কর দাশগুপ্ত
লোকসভায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য নজিরবিহীন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে শুধু বাংলার জন্য। দিল্লির নির্বাচন কমিশনের তালিকা অনুযায়ী, গোটা দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে বাংলার জন্যই। এমনকি, জম্মু-কাশ্মীরের থেকেও অনেক বেশি বাহিনী পাঠানো হচ্ছে বাংলায়।
 
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে চিঠি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে পাঠানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরের থেকেও এ রাজ্যে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীরে ৬৪৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বাংলায় মোতায়েন করা হচ্ছে ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
 
৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার পাশাপাশি আরও অতিরিক্ত ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী বিভিন্ন স্ট্রংরুমে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা থাকবে।
 
অর্থাৎ মোট ৯৪২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হবে বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের জন্য। প্রশাসনিক কর্তাদের অনুমান, এ রাজ্যে কয়েক দফায় লোকসভা নির্বাচন হবে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ৭৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনে নজিরবিহীন এই বাহিনী মোতায়েনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক চর্চাও শুরু হয়েছে।
 
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে, সেখানে বলা হয়েছে- দেশজুড়ে ৩৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে লোকসভা নির্বাচনকে নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য। সেই ৩৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই থাকছে ৯২০ কোম্পানি; যা প্রায় এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি।
 
চিঠিতে বলা হয়েছে, ছত্তীশগড়ের জন্য ৩৬০ কোম্পানি, উত্তরপ্রদেশে ২৫২ কোম্পানি, মণিপুরে ২০০ কোম্পানি, ঝাড়খণ্ডে ২৫০ কোম্পানি, অন্ধ্রপ্রদেশে ২৫০ কোম্পানি এবং পঞ্জাবের জন্য ২৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। ২০১৯-এর তুলনায় বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ রাজ্যে ভোটের দফাও বাড়বে কি না, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের পক্ষ থেকে বাহিনী মোতায়েন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। একাংশের মতে, সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে যে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ উঠেছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়ে থাকতে পারে কমিশন।
 
বাংলায় প্রমীলাবাহিনী গঠনে জোর মাওবাদীদের
 
সদ্য গ্রেফতার হওয়া মাওবাদী নেতা কিশোরদা ওরফে সব্যসাচী গোস্বামীর মূল লক্ষ্য ছিল নতুন মাওবাদী স্কোয়াড তৈরি করা। আর এই নতুন মাওবাদী স্কোয়াডে শামিল করানোর চেষ্টা পশ্চিমবঙ্গের একাধিক তরুণীকে। তরুণীদের কেন বেশি করে মাওবাদীদের নতুন স্কোয়াডে শামিল করানো হচ্ছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে ধৃত মাওবাদী নেতার কাছ থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের এক গোয়েন্দার দাবি, জেরায় ধৃত মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামী তদন্তকারীদের জানান, এর গোটা পরিকল্পনাটি ছিল মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্বের।
 
বাঁকুড়া, পুরুলিয়াসহ জঙ্গলমহলের একাধিক জায়গায় বাস মাওবাদীদের। মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজন ওইসব এলাকায় দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে এসেছেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামীকে লাগাতার জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই এলাকায় মহিলাদের ওপর কঠোর নিপীড়ন-অত্যাচার চলত এবং তাদের একাধিক কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত করে রাখা হতো। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ওই এলাকায় নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করে ধীরে ধীরে মহিলাদের স্লিপারসেলে পরিণত করার চেষ্টা করে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতৃত্ব।
 
তবে আচমকাই কেন মাওবাদীদের দলে নারীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে? জানা গেছে, এই মহিলারা মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়াসহ জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় মাওবাদীদের স্লিপারসেল হিসেবে কাজ করবে। জেরায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে যে, এখনো পর্যন্ত মোট ৩১ জন তরুণীকে বিভিন্ন জায়গা থেকে রিক্রুট করা হয়েছে। তবে এই  ৩১ জন মহিলা কারা, তা এখনো স্পষ্ট জানা যায়নি।
 
কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের এসটিএফের গোয়েন্দাদের দাবি, মূলত জঙ্গলমহলের এবং প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের রিক্রুট করার নেপথ্যে তাদের মূল ক্রাইটেরিয়া হলো সামান্য শিক্ষিত ছাত্রী হতে হবে। মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্ব এই পরিকল্পনাতেই এগিয়েছিল যে, বছরখানেক ওই এলাকাতেই স্লিপারসেল হিসেবে কাজ করার পর যখন তারা হাত পাকিয়ে নেবেন, তখন তারা সরাসরি মাওবাদী সেলের হয়ে কাজ করতে সক্ষম হবেন।
 
ইতোমধ্যেই কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের তরফ থেকে বিহার এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাংলায় আত্মগোপন করে থাকা মাওবাদী শীর্ষ নেতার সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার জন্যই যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজ্য পুলিশের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিককেও এ বিষয়ে সজাগ করা হয়েছে।
 
সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড এবং বাংলার সীমানা থেকে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা মাওবাদী নেতা কিশোরদা ওরফে সব্যসাচী গোস্বামীকে গ্রেফতার করে। তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা আদালতে আবেদন জানান যে, এই মাওবাদী নেতাকে তারা নিজেদের হেফাজতে নিতে চান। আদালত সেই আর্জি মানলে সব্যসাচীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
 
দক্ষিণ চব্বিশপরগনা নরেন্দ্রপুর এলাকা থেকে মাওবাদী সন্দেহে অপর এক যুবককে গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয় কলকাতা পুলিশ। পাশাপাশি দক্ষিণ  চব্বিশপরগনার মুইপিট এলাকায় মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামীর গোপন ডেরায় তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে উদ্ধার হয় একটি কারবাইন এবং কয়েক রাউন্ড গুলিসহ একটি মাওবাদী পুস্তক ও কয়েকটি মোবাইল ফোনের সিম কার্ড।
 
লেখক : কলকাতা প্রতিনিধি, খবরের কাগজ

মোদির হিন্দুত্ববাদের অস্ত্র এবং দুশ্চিন্তার ভাঁজ

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
মোদির হিন্দুত্ববাদের অস্ত্র এবং দুশ্চিন্তার ভাঁজ
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

তৃতীয় দফার নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও সরকারপক্ষ, অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি এবং আরএসএস নিশ্চিত হতে পারছে না, তারা ৪০০ আসন পাবে কি না। নির্বাচন শুরুর অনেক আগে থেকেই প্রচারে নেমেছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ এবং আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত।

তাদের কোনো বক্তৃতায় উন্নয়ন, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা নেই। শুধু গান্ধী পরিবারকে কুৎসিত ভাষায় গালাগালি রয়েছে। যেসব শব্দ তারা ব্যবহার করছেন টিভির পর্দায় সরাসরি দেখালেও ছাপার অক্ষরে তা লেখা যায় না।

সাত দফার মধ্যে তিন দফা ভোট গ্রহণ হয়ে গেলেও মোদি এখনো ৪০০ আসন পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত নন। গোড়া থেকেই ৪০০ আসন পেয়ে সংবিধান সংশোধনের যে ডাক তিনি দিয়েছেন, তা কতটা কার্যকর হবে, নিজেও জানেন না।

সংবিধান সংশোধন করে সংখ্যালঘু মুসলিমদের গো-মাংস ভক্ষণ বন্ধ করতে চাইছে মোদি সরকার। তৃতীয় দফার নির্বাচনের পর মোদি এখন উন্নয়ন-সংক্রান্ত সব কথাবার্তা বাদ দিয়ে গান্ধী পরিবার এবং সংখ্যালঘু দমন নিয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কিন্তু মোদি সে অভিযোগের এখনো কোনো জবাব দেননি।

বিজেপি-আরএসএসের কটূক্তির জবাব দিয়েছেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য, তথা ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রিয়াঙ্কা মোদিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গান্ধী পরিবার শহিদ পরিবার। শহিদ পরিবারকে অপমান করা ভারতবর্ষের মানুষ মেনে নেবে না। তিনি বলেন, আমার ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে বিজেপি আরএসএসের কোনো ক্ষোভ, দুঃখ কিছুই নেই। আর ৯১ সালে নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে দক্ষিণ ভারতে তিরুঅনন্তপুরমে মানববোমার হানায় আমার বাবার দেহটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই দৃশ্য দেখেও আরএসএস উল্লসিত হয়েছিল। কেন হয়েছিল তা জানি না। তবে এই আরএসএসেরই অপর এক ব্যক্তি মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল। এসব ঐতিহাসিক ঘটনা মোদিজির মনে পড়ে না। আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, এ ধরনের প্রচার আপনি বন্ধ করুন। আমার দাদা রাহুল গান্ধী দুই বছর ধরে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরেছেন। দেখেছেন মানুষের দুর্দশা, হতাশা। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় আনার জন্যই কংগ্রেসের নির্বাচনি ইশতেহারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় করার কথা ঘোষণা করেছেন।

শুধু কংগ্রেস নয়, গত তিন-চার দিন ধরে INDIA জোটের সব শরিকই পৃথকভাবে বিবৃতি দিয়ে রাহুলের দাবি সমর্থন করেছেন। প্রিয়াঙ্কার বক্তব্যের পরও বিজেপি-আরএসএস মুখে কুলুপ এঁটে আছে। বুধবারও বিভিন্ন জনসভায় মোদির বক্তব্য- সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না। বিজেপি দেবে না।

ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অব মুসলিম লিগ প্রধান আসাফউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, আমি কংগ্রেসবিরোধী। কিন্তু রাহুলের সংখ্যালঘু সংরক্ষণের প্রস্তাব পূর্ণ সমর্থন করি। চিরদিনের কংগ্রেসবিরোধী আসামের রাজনীতিবিদ বদরুদ্দিন বুধবার একাধিক জনসভায় বলেছেন, মুসলিমদের সংরক্ষণ নিয়ে রাহুলের চিন্তার সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একমত।

শুধু রাজনৈতিক নেতারা নন, দিল্লির একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি চ্যানেল এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। সেই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ মানুষই রাহুলের এই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন।

INDIA জোটের সংসদীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান, তথা সাবেক কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশে নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক ফায়দার জন্যই ঘৃণাভাষণ দিয়ে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি আরও বলেন, হঠাৎই উন্নয়নের প্রচার বাদ দিয়ে সুস্পষ্ট মেরূকরণের পথে হাঁটছেন মোদি। ‍তৃতীয় দফার ভোটপর্বে মোদি অস্ত্র করেছেন ‘ভোট জিহাদ’কে। তীব্র ঘৃণাভাষণ ছড়িয়ে মোদিকে এ কথাও বলতে শোনা গেছে যে, বিজেপিকে ৪০০ আসন পাইয়ে দিতেই হবে। তা না হলে রামমন্দিরে তালা দিয়ে দিতে পারে কংগ্রেস।

এ প্রসঙ্গে মোদি সরাসরি কংগ্রেসকেই দায়ী করছেন। অর্থাৎ মোদির অভিযোগ ভোট জিহাদের নামে একটা নির্দিষ্ট ধর্মের লোকদের একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে বলছেন রাহুল গান্ধী। এদিকে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা বলছে, প্রচারে আসলে মোদির হাতে কোনো ইতিবাচক অস্ত্র নেই। তাই ফের কড়ামাত্রার হিন্দুত্বের দিকেই ঝোঁক মোদি এবং অমিত শাহর। আর মোদির এই অস্ত্রকে ভোঁতা করতে কংগ্রেস মূলত তাদের আর্থসামাজিক প্রচারকেই তুলে ধরছে। সোনিয়া গান্ধীও এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, দেশের যুব সম্প্রদায় চরম বেকারত্বের সম্মুখীন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও একই কথা বলছেন- এবার ভারতের নির্বাচনে ‘রাম’ আর মানুষ খাচ্ছে না।

লেখক: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ কী দেখাল?

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১০:৫২ এএম
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ কী দেখাল?
রাজেকুজ্জামান রতন

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ফলাফল পাওয়া গেছে। ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন সরকারের পরিকল্পনা এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হলেও কিছু নতুন সিদ্ধান্ত, নির্দেশনা আর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের নানা দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে এই নির্বাচনে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত যেমন আওয়ামী লীগ সরকারের, তেমনি এবারে প্রতীকবিহীন নির্বাচনের সিদ্ধান্তও আওয়ামী লীগের। এই সিদ্ধান্তকে নির্বাচনের গুণগত মান বৃদ্ধির চাইতেও নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করে নিয়ে আসা এবং ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির কৌশল বলেই মনে করা হয়েছে। এত কৌশলের পরও নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম কেন, বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার। দেখা যাচ্ছে, এযাবৎকালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি হয়েছে এই নির্বাচনে।
 
দেশে ষষ্ঠবার এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এ নিয়ে চতুর্থবার উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যার প্রথম ধাপে নির্বাচন হলো ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ২৩ মে, তৃতীয় ধাপ ২৯ মে এবং চতুর্থ ও শেষ ধাপের নির্বাচন হবে ৫ জুন। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের জন্য গত ২১ মার্চ তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে মামলাসহ অন্যান্য কারণে আটটি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত হয়। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান- এই তিনটি পদের সব প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ উপজেলায়। ফলে ৮ মে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে গড়ে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ৯ মে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান। নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বুধবারের (৮ মে) প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে ইভিএমে প্রদত্ত ভোটের হার ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ, ব্যালটে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ।

গত ৮ মে ভোট শেষ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন ভবনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, অনেক ভোটার ধান কাটায় ব্যস্ত থাকায় ভোটকেন্দ্রে আসেননি। ভোটার বেশি এলে নির্বাচন আরও ভালো হতো। নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হতে পারে জানিয়ে সিইসি বলেছিলেন, সকালে বৃষ্টি হয়। আবার ধান কাটার মৌসুম বিধায় ভোট পড়ার হার কম হতে পারে। ভোটাররা ধান কাটতে থাকায় ভোটকেন্দ্রে আসেননি, এটা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া কিছু কিছু জায়গায় ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। ভোটার বেশি এলে আরও বেশি ভালো হতো। 

এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। ওই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। আর ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছিল। এর আগে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় উপজেলা নির্বাচন এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা নির্বাচনে কত ভোট পড়েছিল সে বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ফলে যতটুকু ধারণা করা যায় তাতে উপজেলা নির্বাচনগুলোর মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি ঘটেছে। 

অথচ প্রার্থী বাড়ানোর মাধ্যমে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নির্বাচন যাতে নিজ দলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন না হয় বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যাপক প্রার্থী নির্বাচিত না হয়, সে কারণে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে কেউই ওই নির্দেশনা কানে তোলেননি। পরবর্তী সময়ে অবশ্য বলা হয়, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের বাইরে বাকিরা নির্বাচন করতে পারবেন। ২০১৯ সালের উপজেলা ভোটে চেয়ারম্যান পদে ১১৫ জন বিনা ভোটে জয়ী হলেও এবার প্রথম ধাপে মাত্র পাঁচটি উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন। ফলে সেই বিবেচনায়ও ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। নির্বাচন কমিশন ভোটার উপস্থিতি নিয়ে তথ্য দিলেও সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, দিনভর কেন্দ্রগুলো প্রায় ভোটারশূন্য ছিল। অবশ্য নির্বাচনের দিন ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানিয়েছিলেন, প্রথম চার ঘণ্টায় ভোটার উপস্থিতির হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।

স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন হবে কিন্তু ভোটার উপস্থিতি থাকবে না বা কম হবে, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু ভোটারদের আগ্রহ কমতে শুরু হয়েছিল প্রধানত পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের সময় থেকে। সেবারই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়েছিল উপজেলা নির্বাচন। ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বর্জন করায় তখন ভোটের হারে ধস নামে। ফলে ধান কাটা, বৃষ্টি, গরম এসবের কিছু প্রভাব থাকলেও মূলত বিরোধী দলের অনুপস্থিতি বা ভোট বর্জন এবারের নিম্নহারের ভোটের প্রধান কারণ। মূল কারণ দূর না করলে অজুহাত যতই দেওয়া হোক না কেন, ভোটাররা নির্বাচনে আগ্রহী হবে না, এই সত্য মেনে নেওয়ার সময় এসেছে। 

পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার ও অনিয়মের ঘটনায় এক-চতুর্থাংশ উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল, তা নিয়ে সরকারি দলের শরিক দলের নেতারা জাতীয় সংসদে সোচ্চার হয়েছিলেন। সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা এই প্রতিবাদ, অভিযোগ বা অনুযোগ যে কানেই তোলেননি, সেটা পরবর্তী সময়ে তাদের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। সংবিধানের কথা মেনে চলবেন বলে যে অঙ্গীকার প্রতিনিয়ত ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে করা হয় সেই সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান’ করার নির্দেশনা আছে। কিন্তু ভোটারদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় শাসনের ভার যাদের ওপর প্রদান করা হয়, তাতে সংবিধানের মর্যাদা এবং নির্বাচনের সংস্কৃতি কোনোটাই তো রক্ষা হয় না। 

নির্বাচনকে ভোটারবিহীন করে আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব বিষয়ে পরিণত করার ফল কি ভালো হবে? স্থানীয় শাসন থেকে জাতীয় সংসদ সর্বত্র কি মানুষ একই চিত্র দেখবে? ভোটাররা যদি ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, ঘোষিত জনপ্রতিনিধিরা জবাবদিহিহীন হয়ে পড়ে আর প্রশাসন দায়হীন আচরণ করতে থাকে, তাহলে গণতন্ত্র একটি চর্চাহীন শব্দগুচ্ছে পরিণত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। এটা শুধু গণতন্ত্রহীন পরিবেশ তৈরি করে তাই নয়, ওপর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম দেয়। ক্ষমতাসীনদের দাপট সমাজে গণতন্ত্রহীন পরিবেশ তৈরি করে। পাশাপাশি জন্ম দেয় প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতার। যার বিষময় ফল ভোগ করতে হয় পরবর্তী প্রজন্মকে। উপজেলা শুধু দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্তর নয়, গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম জায়গা। সেই নির্বাচনে যদি গণতন্ত্র ও জবাবদিহির চর্চা না হয়, তাহলে দেশের জনগণের আস্থা অর্জিত হবে কীভাবে? উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ সেই প্রশ্ন ও আশঙ্কা আবার তুলে ধরল। 

লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
[email protected]

ভারতে ভোটের হার কম, আতঙ্ক মোদি শিবিরে

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১০:৫১ এএম
ভারতে ভোটের হার কম, আতঙ্ক মোদি শিবিরে
দীপঙ্কর দাশগুপ্ত

লোকসভা নির্বাচনের প্রথম তিন দফাতেই ভোটের হার কম থাকায় ‘অশনিসংকেত’ দেখছে বিজেপি। বিজেপি শিবিরের আশঙ্কার কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে একমাত্র ১৯৯৯ সালের নির্বাচন ছাড়া যতবারই কম ভোট পড়েছে, প্রতিবার সরকার বদল হয়েছে। এবার যে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মতো ‘মোদি হাওয়া’ নেই, তা বিজেপি নেতৃত্ব আগেই টের পেয়েছিল। তার ওপরে প্রথম তিন দফায় মোট ২৮৩টি লোকসভা কেন্দ্রেই ভোটের কম হার বিজেপি শিবিরের চিন্তা বাড়িয়েছে। বিজেপি সূত্র বলছে, লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়ে গেছে। এই ২৮৩টি আসনের মধ্যে এনডিএ খুব বেশি হলে শ দেড়েক আসনে জিততে পারে। ফলে ‘৪০০ পারের’ সম্ভাবনা এখনো দূর অস্ত। উল্টো দিকে কংগ্রেস দাবি করেছে, প্রথম দুই দফার ভোটের মতো তৃতীয় দফায় ভোট হওয়া ৯৩টি আসনের সিংহভাগ আসন ইন্ডিয়া জোটই পেতে চলেছে। তেলেঙ্গানায় নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছেন, তিন দফায় ভোটের পরে ইন্ডিয়া জোটের ‘ফিউজ উড়ে গেছে’। বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জয়ের দিকে এগোচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু বিজেপি সূত্র বলছে, তৃতীয় দফায় যে ৯৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে, তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে ভোটের হার কিছুটা বাড়লেও বিহারে ভোটের হার কমেছে। 

কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেছেন, তৃতীয় দফায় ভোট গ্রহণের পর সব আসন থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তাতে স্পষ্ট, বিজেপি ঐতিহাসিক হারের মুখে পড়তে চলেছে। প্রথম দুই দফায় ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ভুয়া জিনিসপত্র নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। হিন্দুত্বের ধুয়া তোলা থেকে কংগ্রেস মঙ্গলসূত্র, মোষ ছিনিয়ে নেবে বলে আতঙ্ক তৈরি করছিলেন। বেণুগোপাল বলেন, “এসব মোদির মরিয়াভাবের প্রমাণ। উনি দেখতে পাচ্ছেন, পায়ের তলা থেকে জমি সরে যাচ্ছে। এর পরে উনি আরও মিথ্যে বলবেন। বিদ্বেষ ছড়াবেন। ‘ইন্ডিয়া’র তরফে ঢেউ উঠেছে।” বিজেপি অবশ্য আশা করছে, এখনো চার দফার ভোট বাকি। মোদির পক্ষে হাওয়া ওঠার সময় এখনো রয়েছে।

ভারতের ভোট নিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ রাশিয়ার 
ভারতে লোকসভা ভোট চলছে। সেই সময়ে অভিযোগের আঙুল তুলল রাশিয়া। তাও আবার খোদ আমেরিকার দিকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের লোকসভা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘ভারসাম্যহীন’ করার চেষ্টা করছে।

ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে। জাখারোভা বলেন, ভারতের জাতীয় মানসিকতা, ইতিহাস সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বোঝার অভাব রয়েছে। আমেরিকা ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ করে চলেছে। এটি ভারতের কাছে অসম্মানজনক, এই কথাও বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর মার্কিন কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের লঙ্ঘনের অভিযোগে ভারতের সমালোচনা করেছে। এটি ‘ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকারের, বিশেষ করে গুরুতর লঙ্ঘনে জড়িত।’ এ জন্য ভারত এবং অন্যান্য ১৬টি দেশকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মহাসংকটে এয়ার ইন্ডিয়া 
টাটা গোষ্ঠীর বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস পড়েছে মহাসংকটে। গণছুটিতে চলে গেছেন কেবিন ক্রুরা। যার জেরে বুধবার একাধিক ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস। এবার এই ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের থেকে রিপোর্ট চাইল ভারত সরকার। অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অধিকারসংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে শ্রমিক কমিশন।

গত মঙ্গলবার রাত থেকেই কর্মীসংকটে ভুগছে এয়ার ইন্ডিয়া। বাতিল হচ্ছে একের পর এক এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্রায় ৩০০ জন কেবিন ক্রু আচমকাই ছুটি নিয়েছেন। এমনকি তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। কোনোভাবেই কেবিন ক্রুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই অগত্যা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বাতিল করতে বাধ্য হয় এয়ার ইন্ডিয়া। একের পর এক বিমান বাতিল হতে শুরু করে। কাল থেকে আজ অবধি ৮০-এর বেশি বিমান বাতিল হয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়াকে টাটা অধিগ্রহণ করার পর থেকেই নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে বলে দাবি তুলেছিলেন কর্মীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, ইন্টারভিউতে যে পোস্টের কথা বলা হচ্ছে, আদৌ সেই পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। অনেক কর্মীকেই নিচু পদে নিয়োগ করছে সংস্থা। তা ছাড়া কোম্পানির অন্দরে তলে তলে কর্মী ছাঁটাইও চলছিল। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা অসন্তোষ দেখাচ্ছেন। গণছুটিতে যাওয়া প্রতিবাদের অংশ বলেও মনে করছেন অনেকে।

এই পরিস্থিতিতে এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন, এভাবে এতজন কর্মী অনুপস্থিত হয়ে পড়ায় আর পরিস্থিতি সামলানো যায়নি। শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়াকে। 

লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, খবরের কাগজ

মোবাইলে আসক্তি, যত্নশীল না হওয়ায় পিছিয়ে ছাত্ররা

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
মোবাইলে আসক্তি, যত্নশীল না হওয়ায় পিছিয়ে ছাত্ররা
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

মেয়েরা বাড়িতে যখন থাকে তখন মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখাটা করে। মেয়েরা একটু মন দিয়ে পড়ে এই কারণে বাবা-মা তাদের একটু বেশি ভালোবাসে। যে বিনিয়োগটা তাদের ওপর করা হয়েছে সেটার রিটার্ন দিতে হবে। এই পরিপক্বতা তাদের মধ্যে আগে আসে। তাদের মতো এই দায়িত্বজ্ঞান আমি ছেলেদের মধ্যে দেখতে পাই না।

ছেলেদের মোবাইলে আসক্তিটা বেশি। মেয়েরা যেহেতু বাড়িতে থাকে তারা সেই সময়টুকু পায় না বা বাবা-মাকে ফাঁকি দিয়ে এই কাজটাও করতে চায় না। দায়িত্বশীল ইন্টারনেট ব্যবহারটা মেয়েরা বেশি করে। এটা আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও দেখেছি। কোভিডের সময় দেখেছি তাদের ডাটা খরচ হয়নি। আর ছেলেদের বন্ধুসংঘ থাকে, বিকেলে ঘোরাঘুরি। তাদের সঙ্গে যারা ঘুরে তাদের মধ্যেও এই প্রবণতা আছে। অনেকে ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ে। 

মেয়েরা যত্ন নিয়ে পড়ালেখা করে। আমি এখানে লিঙ্গ বৈষম্য মনে করব না। যত্ন নিয়ে যদি ছেলেরা পড়াশোনা করত, তাহলে তারা খারাপ করত না। ঝরে পড়ার হার মেয়েদের মাঝখানে বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন মেয়েরাই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করছে। মেয়েরা আন্তরিকতা দিয়ে পড়াশোনাটা করতে চাচ্ছে। আবার ছেলেদের অভিভাবকরা কাজে লাগিয়ে দেয়। এটাও একটা বড় কারণ। কোভিডে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। তখন দেখা যাচ্ছে, এই ছেলেরা পরিবারের জন্য আয় করছে। কোনো না কোনোভাবে তারা টাকা উপার্জন করছে। আবার গ্রামে কৃষিকাজে ছেলেদের মা-বাবাকে সাহায্য করতে হয়। আগে পরিবারে সাত-আটজন সন্তান ছিল। এখন তিন চার জনের বেশি দেখা যায় না। এই কারণে বাবাদেরকে ছেলেদের সাহায্য করতেই হয়। এ জন্য মাঠেও কাজ করতে হয়। গ্রামে অবস্থাটা ভিন্ন। 

ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জেন্ডার অসমতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, প্রতিকার দরকার

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১০:২৯ এএম
জেন্ডার অসমতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, প্রতিকার দরকার
রাশেদা কে চৌধূরী

ছাত্রদের পিছিয়ে পড়ার কারণ এখনই সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীও কারণ খোঁজার কথা বলেছেন। এটার একটা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দরকার, একটা গবেষণা দরকার। অনুমান নির্ভর যেটা বলতে পারি, এটার মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা আছে। হঠাৎ করে হয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে হয়ে আসছে।

আমরা দেখলাম এবার তো পূর্ণ সিলেবাসে, পূর্ণ মানে, পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হলো। সেখানেও একই ধরনের ধারাবাহিকতাটা দেখতে পেলাম। এই জায়গা থেকে মনে হয়, কারণ অবশ্যই আছে। একটা কারণ হলো ধারাবাহিকভাবে মেয়েদের শিক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বেড়েছে। সেটার একটা ইতিবাচক ফলাফল আমরা পাচ্ছি।

 দ্বিতীয় যেটা মেয়েরা অনেক বেশি সিরিয়াসলি পড়ছে। আমরা তো দেখেছি ছেলেরা যখন বাইরে রংবাজি করে, গ্যাংবাজি করে আর ঘুরে বেড়ায় তখন মেয়েরা সিরিয়াসলি পড়ালেখা করে। তৃতীয়ত, মেয়েরা এই পর্যায়ে আসার পেছনে অনেক ঝুঁকি অতিক্রম করে। একটা ঝুঁকি হলো বাল্যবিবাহ, দ্বিতীয় ঝুঁকি নিরাপত্তা এবং আরেকটা ঝুঁকি দারিদ্র্যের। সেটাও তারা অতিক্রম করে আসছে। এই জায়গায় এসে তারা সিরিয়াসলি পড়ালেখা করে। এর মধ্যে দিয়ে যেটা হচ্ছে এক ধরনের রিভার্স ডিসক্রিমিনেশন হয়ে যাচ্ছে। মানে অন্য ধরনের জেন্ডার অসমতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সেটার কারণটা আমাদের দেখা প্রয়োজন এবং কারণ অনুযায়ী প্রতিকারটা করাটাও প্রয়োজন।

শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা