![‘ইনশাআল্লাহ’ না বলে সুলাইমান (আ.) যে ভুল করেছিলেন](uploads/2023/11/30/1701318690.37-ok.jpg)
সুলাইমান (আ.) একবার বললেন, আমি আজ রাতে ১০০ স্ত্রীর সঙ্গে রাত্রি যাপন করব। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, আমি আজ রাতে নব্বই জন স্ত্রীর সঙ্গে রাত্রি যাপন করব, অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই স্ত্রীসুলভ আচরণ করব। এবং প্রত্যেক স্ত্রীকে একজন করে তেজোদীপ্ত সন্তান দান করব এবং তারা প্রত্যেকে বড় হয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে।
সব কথাই বললেন; কিন্তু সুলাইমান (আ.) এসব সংকল্প ব্যক্ত করার পর ইনশাআল্লাহ বলতে ভুলে গেলেন বা তিনি এসব কথা বলার পর ভুলে ইনশাআল্লাহ বলেননি।
এরপর তিনি তার প্রতিজ্ঞামতো সে রাতে ১০০ জন মতান্তরে ৯০ জন স্ত্রীর সঙ্গে রাত্রি যাপন করলেন। কিন্তু শুধু একজন স্ত্রী ছাড়া আর কোনো স্ত্রী গর্ভধারণে সক্ষম হলো না। যে স্ত্রী গর্ভধারণ করেছিলেন তিনিও কাঠবাঁকা সন্তান প্রসব করলেন।
মুহাদ্দিসরা কাঠবাঁকা বা অর্ধাঙ্গ সন্তানের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সুলাইমান (আ.) যেমন সন্তান আশা করেছিলেন, তেমন সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হননি তার সেই স্ত্রী।
এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আমি সুলাইমানকে পরীক্ষা করেছি। তার সিংহাসনের ওপর একটি দেহ বসিয়ে দিয়েছি।’ (সুরা সাদ, আয়াত : ৩৪)
এরপর সুলাইমান (আ.) তার ভুল বুঝতে পারলেন এবং আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হলেন যে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন ঠিকই, কিন্তু আল্লাহতায়ালার নির্দেশ মেনে ইনশাআল্লাহ বলেননি। কারণ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কোনো বিষয়ে এভাবে বলো না যে, আমি আগামীকাল ওটা করব; বরং ইনশাআল্লাহ যুক্ত করে বলো।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত : ২৩-২৪)
পবিত্র কোরআনের আয়াতে সুলাইমান (আ.)-এর এ ঘটনার ইঙ্গিত রয়েছে। সুলাইমান (আ.) তার নিজের ভুল বুঝতে পারলেন এবং উপলব্ধি করলেন, যদি তিনি সেদিন এ প্রতিজ্ঞা করার পর ইনশাআল্লাহ বলতেন, তা হলে তার প্রত্যেক স্ত্রীর ঘরেই এমন পুত্রসন্তান দান করতেন আল্লাহতায়ালা—যারা প্রত্যেকেই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে সক্ষম হতো।
হাদিসের এ ঘটনাটি বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ৬২৬৩, ৬৩৪১, ৬৬৩৯, ৬৭২০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৫৪)
সুলাইমান (আ.)-এর বিবির সংখ্যার ব্যাপারে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে তার ৭০ জন স্ত্রী ছিল। কোনো বর্ণনায় এসেছে, ৯০ জন এবং কোনো বর্ণনায় এসেছে ৯৯ বা ১০০ জন। ইসলাম আগমনপূর্ব দুনিয়ায় প্রায় সব ধর্মে একজন পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রী রাখার বিষয়টি বৈধ ছিল। (কাসাসুল হাদিস, ড. মোস্তফা মুরাদ আজহারি, মাকতাবাতুশ সুন্না, পৃষ্ঠা: ১৩২)
কোনো কোনো মুহাদ্দিস এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) সুলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীর সংখ্যা আধিক্য বোঝানোর জন্য বলেছেন।
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক