ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ওই শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর হিজরত নিয়ে মানহানিকর এবং ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের নিয়ে উপহাসের অভিযোগে ঢাবির আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য এবং গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার সহযোগিতা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়াসহ সব ফ্যাসিবাদীর দোসর শিক্ষকের বিচারের দাবি তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি জানান তারা।
এতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবি জোবায়ের বলেন, ‘কোনো শিক্ষক যখন ধর্ম অবমাননা করে, তখন তাকে আমরা শিক্ষক না বলে কুলাঙ্গার বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। শিশির ভট্টাচার্য্য এমনটি করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। আমরা তার পদত্যাগ এবং বিচার দাবি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে নীল দলের শিক্ষকরা নিজামুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা এখনো ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন এবং ক্লাসেও অংশ নিচ্ছেন। যেখানে আমরা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি, সেখানে এই দালাল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা এই শিক্ষকদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের একপর্যায়ে উপস্থিত হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি বা ধর্মীয় বিষয়ে কথা বলার আগে সবাইকে অবশ্যই আরও সচেতন হতে হবে। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়, যা নিয়ে আমাদের কোনো বিরূপ মন্তব্য করা উচিত নয়। তাকে চাকরিচ্যুত বা শাস্তির আওতায় আনতে হলে সেটা আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে যেতে হবে। তা ছাড়া, অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে।’
এদিকে তিন দফা দাবি উত্থাপন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘শিগগিরই তিন দফা দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী দুই দিন এই দাবির পক্ষে গণসংযোগ চালিয়ে জনমত গঠন করা হবে।’
তিন দফা দাবিগুলো হলো- বিশ্বনবীকে অপমান ও ’২৪-এর শহিদদের অবমাননার জন্য শিশির ভট্টাচার্য্যকে চাকরিচ্যুত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা; যেসব শিক্ষক গণহত্যায় মদদ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বডিকে দ্রুত ভেঙে দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিন্ডিকেট গঠন; অতিদ্রুত ডাকসুর রূপরেখা প্রণয়ন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশ থেকে শিশির ভট্টাচার্যে্যর শিক্ষক পদ বাতিল ও তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি তুলে মানববন্ধন কর্মসূচি করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
আরিফ জাওয়াদ/জোবাইদা/