ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

খুলনায় ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়, ভোগান্তি

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ০৯:০২ এএম
খুলনায় ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়, ভোগান্তি
খুলনা রেলস্টেশনে কিছু যাত্রীকে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় ।খবরের কাগজ

ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় খুলনা-রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা থেকে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রায় ১৩ ঘণ্টা দেরিতে শনিবার (১০ মে) দুপুর ১টার দিকে খুলনা স্টেশনে পৌঁছে। একই ট্রে নশনিবার (১০ মে) সকাল ৬টায় খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময়মতো ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছাতে না পারায় ঢাকাগামী যাত্রীদের টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়া হয়। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রেলস্টেশনে অপেক্ষা করে যাত্রীরা বিকল্প পথে ঢাকায় রওয়ানা দেন।

এ ছাড়া দুর্ঘটনার কারণে খুলনা-রাজবাড়ী-ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও নকশিকাঁথা ট্রেন দুটির সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় পৌঁছে। এটি খুলনা থেকে ছেড়ে আসার পর যাত্রী নিয়ে ভাঙ্গা জংশনে আটকা পড়ে। আর নকশিকাঁথা ট্রেনটি প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেরিতে রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।
 
এর আগে শুক্রবার (৯ মে) রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের অদূরে সিগন্যালের ভুল ও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ইঞ্জিন ও লাগেজ বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটির খুলনা পৌঁছানোর কথা ছিল।

খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার জাকির হোসেন জানান, ঢাকা থেকে খুলনাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেসটি ভাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে বের হওয়ার কিছুদূর পর ইঞ্জিনসহ একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ কারণে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ওই স্থানে গিয়ে আটকা পড়ে। পরে শনিবার সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটি উদ্ধারের পর চলাচল স্বাভাবিক হয়। জাহানাবাদ ট্রেনটি সময়মতো স্টেশনে পৌঁছাতে না পারায় শনিবার সকালে খুলনা স্টেশনে খুলনা-ঢাকা রুটের ট্রেন বাতিল করা হয়। 

শনিবার (১০ মে) সকালে খুলনা রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে ছাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছেন। সবার চোখে-মুখে ক্লান্তি। নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভোর সাড়ে ৫টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। ৬টায় ট্রেন ছাড়ার কথা। কিন্তু সকাল ৯টায়ও ট্রেনের খবর নেই। স্টেশনের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা ভাঙ্গায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কথা জানান। কিন্তু কখন ওই ট্রেন খুলনায় আসবে কেউ জানাতে পারেনি। এভাবেই দুই-তিন ঘণ্টা চলে গেছে।

নগরীর নবীনগর এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, ট্রেন এত দেরি করবে জানলে আরও আগে বিকল্প পথে ঢাকায় রওয়ানা হতে পারতাম। এখন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পথে পথে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

খুলনা রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার দুলদুল হোসেন জানান, ভাঙ্গায় ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেউ কেউ সড়কপথে রাতেই খুলনা চলে আসেন। আবার রাতে সড়কপথে চলাচলে নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে অনেক যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের ভেতরে অপেক্ষা করেছেন। জাহানাবাদ ট্রেনটি খুলনায় আসার পর সেটির কারিগরি ত্রুটি মেরামত করা হবে। খুলনা থেকে দুটি রুটের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। তবে রবিবার সকাল থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে দাবি করছেন কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে খুলনা রেলস্টেশন থেকে জানা গেছে, খুলনা থেকে ঢাকা, রাজশাহী ও চিলাহাটি রুটে প্রতিদিন ৭টি আন্তনগর এবং খুলনা-বেনাপোল রুটে দুটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে প্রায় সব ট্রেনই দেরিতে খুলনা স্টেশনে পৌঁছাচ্ছে। রাতে যেসব ট্রেন খুলনায় আসছে সকালে সেগুলো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। অন্য ট্রেনগুলো ছাড়ছে দেরিতে।

তবে খুলনার স্টেশন মাস্টার জাকির হোসেন জানান, মাঝে মধ্যে সাময়িক বিপর্যয় ছাড়া সব ট্রেনই সময়মতো আসছে এবং যাচ্ছে। খুলনা-ঢাকা রুটে জাহানাবাদ ট্রেনটি দুর্ঘটনার কারণে খুলনা পৌঁছাতে ১৩ ঘণ্টা দেরি হলেও শিগগিরই এই রুটে চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

বাসাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও ২ ছেলে নিহত

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:০২ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:১২ এএম
বাসাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও ২ ছেলে নিহত
ছবি: খবরের কাগজ

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার করাতিপাড়ায় ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা সম্পর্কে বাবা-ছেলে। এতে আহত হয়েছেন আরও তিনজন।

মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ৯টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের করাতিপাড়া বাইপাস এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা হলেন, শেরপুর সদর উপজেলার আমজাদ হোসেন ও তার দুই ছেলে আতুল ও অতুল।

বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন দুর্ঘটনার বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন।

ওসি বলেন, ঢাকা থেকে ঈদ উপলক্ষে তারা শেরপুরে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে করটিয়া এলাকায় তারা নাস্তা করতে বিরতি দেন। এ সময় পেছন থেকে একটি ট্রাক মাক্রোবাসে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে আমজাদ হোসেন ও তার দুই ছেলে অতুল ও আতুল মারা যান।

মরদেহ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

জুয়েল রানা/অমিয়/

বায়েজিদ লিংক রোড়ের একপাশ বন্ধ পাঁচ দিন ধরে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:২৫ এএম
বায়েজিদ লিংক রোড়ের একপাশ বন্ধ পাঁচ দিন ধরে
বায়েজিদ লিংক রোড়। খবরের কাগজ

পাহাড়ধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড় পাঁচ দিন ধরে একপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়কে থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। উল্টো পথে গাড়ি চলায় দেখা দিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। তবে তেমন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

সোমবার (২ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বায়েজিদ লিংক রোড়ে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির সামনে ফৌজদারহাটমুখী লেনে কয়েকটি সিমেন্টের বার দেওয়া হয়েছে। সেখান অংশ থেকে স্পেক্টা কনস্ট্রাকশনের একটি রিসোর্ট সংলগ্ন ইউটার্ন পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে উভয় পাশের সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাসসহ সব ধরনের যানবাহন একই লেন অর্থাৎ বায়েজিদমুখী লেন দিয়ে চলাচল করছে। ফলে রাতের বেলায় এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা সেখানে পার্শ্ববর্তী ছিন্নমূল এলাকার শত শত সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টো পথে চলাচল করে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘আমাদের অটোরিকশাগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিন্নমূলে চলাচল করে। আমরা এক নম্বর এলাকা দিয়ে ছিন্নমূলের ভেতরের সড়কে চলে যাই। একপাশ দিয়ে উভয় লেনের গাড়ি চলাচল করায় আমাদের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় রাতের বেলায় বড় গাড়ি বিকল হয়ে থাকে সড়কের ওপর। আবার অনেক বাইকার দ্রুতগতিতে গাড়ি চালান এই রোডে। কিছু দিন পরপর এখানে দুর্ঘটনা ঘটে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম বলেন, ‘ছিন্নমূলের সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো উল্টো পথে আসে। তারা যে সড়ক দিয়ে প্রবেশ করে, সেখানে কোনো ইউটার্ন রাখা হয়নি। এ জন্য তারা দূরের ইউটার্ন দিয়ে না এসে উল্টো পথে গাড়ি চালায়। যাত্রীরা বললেও শুনে না।’ এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চালকরা কথা বলতে রাজি হননি।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি এড়াতে সড়কটির একপাশ পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে খুলে দেওয়া হবে।’

ঈদের দিন বিকেলের মধ্যেই বর্জ্য পরিষ্কার হবে,চসিক মেয়র

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:১৯ এএম
ঈদের দিন বিকেলের মধ্যেই বর্জ্য পরিষ্কার হবে,চসিক মেয়র
ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহার দিন নগরীতে তৈরি হওয়া বর্জ্য ঈদের দিন বিকেল ৫টার মধ্যেই পরিষ্কার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। 

সোমবার (২ জুন) দুপুরে চসিক কার্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সঙ্গে প্রস্তুতি সভায় মেয়র শাহাদাত হোসেন এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। 

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের টার্গেট, ঈদের দিন ৫টার মধ্যে পুরো নগরী পরিষ্কার করে একটি পরিচ্ছন্ন শহরে রূপান্তর করা। আমরা ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ বিকেল ৫টার মধ্যে নগরী থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করব। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রায় ৪ হাজার ২০০ কর্মী কাজ করবেন। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৩৬৯টি গাড়ি বর্জ্য অপসারণে কাজ করবে। বর্জ্য অপসারণের জন্য ডাম্প ট্রাক, কম্পেক্টর, পে-লোডার কাজ করবে। রক্ত পরিষ্কার করার জন্য পানির ভাউজার থাকবে। কোনো কর্মী অসুস্থ হলে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘কোরবানির চামড়া নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। নগরীর বাইরের চামড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নগরীতে ঢুকতে পারবে না।’ নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘পশু জবাইয়ের আগে পানি পান করানো, জবাইয়ের জায়গায় পরিষ্কার রাখা এবং রক্ত-পানি ড্রেনে পড়ে না যায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

এ ছাড়া নগর ভবনের দামপাড়ায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) খোলা থাকবে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হবে। দুটি হটলাইন নম্বর ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ অভিযোগ বা পরামর্শ জানাতে পারবেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা প্রমুখ।

প্লাস্টিক দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:০৬ এএম
প্লাস্টিক দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে
খবরের কাগজ

প্লাস্টিক মানুষের জন্য দৈত্য-দানব হয়ে ফিরে আসছে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার ( ২ জুন) ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। 

‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই উদ্ভাবন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শিরোনামে সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে প্লাস্টিক মানবজীবনকে গ্রাস করে ফেলছে। মরণব্যাধি ক্যানসারসহ জটিল সব রোগ নিয়ে ধরা দেবে আমাদেরই ছুড়ে ফেলা প্লাস্টিক। তাই ছোট থেকে বড় সবাইকে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে। বিশেষ করে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। আমরা এগুলো বর্জন করতে না পারলে সামনে অনিশ্চিত, অনিরাপদ এক ভবিষ্যৎ উঁকি দিচ্ছে।’ 

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) নুরুল্লাহ নূরী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন।

মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা জীবন

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা জীবন
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়ায় ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। খবরের কাগজ

একসময় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়া ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রসন্নপুর পালপাড়া ছিল মৃৎশিল্পের জীবন্ত নিদর্শন। ঘরের কোণে কোণে মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল, প্রদীপ, খেলনা, সবখানেই ছিল মাটির ছোঁয়া। আজ সেই শিল্পের আলো নিভু নিভু প্রায়। কিন্তু হার মানেননি কিছু সংগ্রামী শিল্পী। এখনো এই প্রাচীন ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিজমেহার গ্রামের মনি রানী পাল (৪৬) প্রায় তিন দশক ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পের এই প্রাচীন পেশা। একই গ্রামের সুভাষ পাল (৬৬) ও কুমেশ্বর পাল (৬৮) অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন। তারা শুধু কাজই করছেন না, এককভাবে বহন করছেন একটি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার।

একই পাড়ার আরও ২০টি পরিবার, যাদের মধ্যে আছেন দুলাল পাল, নেপালী রানী পাল, মঞ্জু রানী পাল ও শেফালী পাল। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্যবাহী পেশা। অথচ একসময় এই পাড়ার প্রায় ৩০০টি পরিবার মাটিরসামগ্রী তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল।

মৃৎশিল্পী সুভাষ পাল বলেন, ‘জন্ম থেকেই যেন মাটির গন্ধ লেগে আছে শরীরে। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে থেকে কাজ শিখেছি, কাঁধে করে মাটির হাঁড়ি-বাটি নিয়ে বিক্রি করেছি ধান, চাল বা টাকার বিনিময়ে।’ তিনি জানান, বাঁশঝাড় থেকে সংগ্রহ করা হতো কাঁচামাল। কখনো হেঁটে, কখনো ভ্যানে করে ঘুরে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। পরে রহিমানগর ও ঠাকুরবাজারে দোকান দেন। কিন্তু এখন আর মৃৎপণ্য তৈরি না করে কুমিল্লার বিজয়পুর ও হাজীগঞ্জ বাজার থেকে মাল এনে বিক্রি করছেন তিনি। তার একমাত্র ছেলে সঞ্জয় পাল থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

আরেক মৃৎশিল্পী কুমেশ্বর পাল বলেন, ‘বরিশাল থেকে সামগ্রী এনে হাটে বিক্রি করি। হাটের দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হলেও, অন্য দিনগুলোতে দুই-চার শ টাকাও রোজগার হয় না।’

এদিকে মনি রানী পাল এখনো নিজের হাতে মাটির সামগ্রী বানান, আগুনে পোড়ান, বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। কিন্তু এঁটেল মাটির অভাব ও কাঁচামালের দাম বাড়ায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। অর্থাভাবে বাজারের চাহিদা পূরণ করাও কঠিন হয়েছে পড়েছে।

পালপাড়ার উচ্চশিক্ষিত যুবক গণেশ পাল বলেন, ‘একসময় ৩০০ পরিবারের মধ্যে ১৫/২০টি পরিবার এখনো মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে। তবে সব কিছু বাড়ায় তারা চাপে পড়েছেন। নতুন প্রজন্ম এ পেশার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।’

শাহরাস্তি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঐতিহ্য বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বাজারজাতকরণসহ নানা উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘আজ মানুষ প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিলের দিকে ঝুঁকছে। ফলে এই শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। একে টিকিয়ে রাখতে হলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

বিশেষজ্ঞদের অভিমত ও জিজ্ঞাসা, এই শিল্প শুধু মাটি নয়, এই শিল্পে গাঁথা আছে বাংলার আত্মা, ইতিহাস, সংস্কৃতি। যত দিন এই পরিবারগুলো টিকে থাকবে, ততদিন শাহরাস্তির মাটিতে মৃৎশিল্পের আলো জ্বলবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই আলো জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব কি কেবল ওদেরই?