
ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় খুলনা-রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা থেকে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রায় ১৩ ঘণ্টা দেরিতে শনিবার (১০ মে) দুপুর ১টার দিকে খুলনা স্টেশনে পৌঁছে। একই ট্রে নশনিবার (১০ মে) সকাল ৬টায় খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময়মতো ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছাতে না পারায় ঢাকাগামী যাত্রীদের টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়া হয়। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রেলস্টেশনে অপেক্ষা করে যাত্রীরা বিকল্প পথে ঢাকায় রওয়ানা দেন।
এ ছাড়া দুর্ঘটনার কারণে খুলনা-রাজবাড়ী-ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও নকশিকাঁথা ট্রেন দুটির সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় পৌঁছে। এটি খুলনা থেকে ছেড়ে আসার পর যাত্রী নিয়ে ভাঙ্গা জংশনে আটকা পড়ে। আর নকশিকাঁথা ট্রেনটি প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেরিতে রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।
এর আগে শুক্রবার (৯ মে) রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের অদূরে সিগন্যালের ভুল ও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ইঞ্জিন ও লাগেজ বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটির খুলনা পৌঁছানোর কথা ছিল।
খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার জাকির হোসেন জানান, ঢাকা থেকে খুলনাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেসটি ভাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে বের হওয়ার কিছুদূর পর ইঞ্জিনসহ একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ কারণে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ওই স্থানে গিয়ে আটকা পড়ে। পরে শনিবার সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটি উদ্ধারের পর চলাচল স্বাভাবিক হয়। জাহানাবাদ ট্রেনটি সময়মতো স্টেশনে পৌঁছাতে না পারায় শনিবার সকালে খুলনা স্টেশনে খুলনা-ঢাকা রুটের ট্রেন বাতিল করা হয়।
শনিবার (১০ মে) সকালে খুলনা রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে ছাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছেন। সবার চোখে-মুখে ক্লান্তি। নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভোর সাড়ে ৫টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। ৬টায় ট্রেন ছাড়ার কথা। কিন্তু সকাল ৯টায়ও ট্রেনের খবর নেই। স্টেশনের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা ভাঙ্গায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কথা জানান। কিন্তু কখন ওই ট্রেন খুলনায় আসবে কেউ জানাতে পারেনি। এভাবেই দুই-তিন ঘণ্টা চলে গেছে।
নগরীর নবীনগর এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, ট্রেন এত দেরি করবে জানলে আরও আগে বিকল্প পথে ঢাকায় রওয়ানা হতে পারতাম। এখন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পথে পথে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
খুলনা রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার দুলদুল হোসেন জানান, ভাঙ্গায় ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেউ কেউ সড়কপথে রাতেই খুলনা চলে আসেন। আবার রাতে সড়কপথে চলাচলে নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে অনেক যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের ভেতরে অপেক্ষা করেছেন। জাহানাবাদ ট্রেনটি খুলনায় আসার পর সেটির কারিগরি ত্রুটি মেরামত করা হবে। খুলনা থেকে দুটি রুটের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। তবে রবিবার সকাল থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে দাবি করছেন কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে খুলনা রেলস্টেশন থেকে জানা গেছে, খুলনা থেকে ঢাকা, রাজশাহী ও চিলাহাটি রুটে প্রতিদিন ৭টি আন্তনগর এবং খুলনা-বেনাপোল রুটে দুটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে প্রায় সব ট্রেনই দেরিতে খুলনা স্টেশনে পৌঁছাচ্ছে। রাতে যেসব ট্রেন খুলনায় আসছে সকালে সেগুলো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। অন্য ট্রেনগুলো ছাড়ছে দেরিতে।
তবে খুলনার স্টেশন মাস্টার জাকির হোসেন জানান, মাঝে মধ্যে সাময়িক বিপর্যয় ছাড়া সব ট্রেনই সময়মতো আসছে এবং যাচ্ছে। খুলনা-ঢাকা রুটে জাহানাবাদ ট্রেনটি দুর্ঘটনার কারণে খুলনা পৌঁছাতে ১৩ ঘণ্টা দেরি হলেও শিগগিরই এই রুটে চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসবে।