রহস্যময় অভিযান । খবরের কাগজ
ঢাকা ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

রহস্যময় অভিযান

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১১:২০ এএম
রহস্যময় অভিযান

হাই! আমার নাম এশা। আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মজার একটি ঘটনা বলব। যা এক বছর আগে আমার সঙ্গে ঘটেছিল। আমরা সবাই মানে (আমি, মিতু, আয়শা, লাবিবা, সারা) বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের দিন পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ মঞ্জু মামা আমাদের দিকে এসে বলল, ‘শোনো তোমরা! আমার যে বাসটা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। সেটা বিক্রি করতে পারছি না। কারণ নষ্ট বলে কেউ নিতে চায় না। তাই বলতে এসেছি তোমরা কি নিতে চাও?

মিতু: এই ভাঙা বাস দিয়ে আমরা কী করব?
আমি: না, না, আমি চাই বাসটা। 
মঞ্জু মামা: ঠিক আছে। ভাঙা বাসটি আমার বাসার পাশে বড় মাঠটিতে আছে। 
আয়শা: এই বাস দিয়ে কী করবি? 
আমি: এটা হবে আমাদের আস্তানা। 
মিতু: আস্তানা!
আমি: হ্যাঁ, আমরা বাসের ভিতরটা সাজাব। 
লাবিবা: সাজাব?
আয়শা: আমি বুঝতে পেরেছি। এটা আমরা সাজিয়ে এটার ভিতরে আড্ডা দেব। 
আমি: হ্যাঁ।
তারপর আমরা সবাই মিলে সেটা সাজাই। এর পর থেকে আমরা সেখানেই আড্ডা দেই। হঠাৎ একদিন আমাদের এলাকার একটি জাদুঘর থেকে ৭০০ কোটি টাকার একটি হিরা চুরি হয়ে যায়। জাদুঘরে হইচই শুরু হয়। মানুষ জাদুঘরের গেটের সামনে ভিড় করে। আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরাও জাদুঘরের ভিতরে গিয়ে দেখব। কোথায় ছিল হিরাটা?
অনেক ধাক্কাধাক্কি করে ভিতরে ঢুকলাম। দূর থেকে দেখলাম খুবই অবাক কাণ্ড, যে গ্লাসের বাক্সে হিরাটি ছিল সে বাক্সে বিন্দুমাত্র দাগ ছিল না। সব কিছু যেভাবে ছিল সেভাবেই আছে। শুধু হিরাটা গায়েব। সবাই অবাক হলো। 
আমি: এটা কীভাবে সম্ভব! কোনো দাগই নেই। 
আয়শা: মনে হয় চোর বক্সটি কেটে হিরা নিয়ে বক্সটি আবার জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে। 
লাবিবা: হতে পারে। 
সারা: না, হতে পারে না। কারণ, বাক্সটা ধরলেই সিকিউরিটি অ্যালার্ম বাজবে। 
মিতু: হ্যাঁ, ঠিক তো।
আমি: তাহলে কীভাবে নিল?
সারা: জানি না। কিন্তু বাড়ি ফিরতে হবে এবার, সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে। 
আমরা সবাই মেইন গেটের দিকে গেলাম। কিন্তু অনেক মানুষের ভিড় ছিল। তাই আমরা ভাবলাম ডান পাশের দরজাটা দিয়ে যাওয়া যাক। ডান পাশের দরজাটা দিয়ে কেউ যায় না। কারণ, দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে এবং গলিটা খুব চিপা। একটি রিকশা যাওয়ার জায়গা হবে কি না সন্দেহ। যাই হোক, আমরা দরজাটা খুলে যখন বের হলাম। তখন দেখলাম, নিচে কালো কালো জুতার পায়ের ছাপ। সেই পায়ের ছাপগুলো একটি ভাঙাচোরা সেল্ফের দিকে গিয়ে শেষ হয়েছে। যা পাশের বিল্ডিংয়ের দেয়ালের সঙ্গে লাগানো। সেই সেল্ফে একটি বাদামি রঙের জুতা। সারা জুতাগুলো ধরতে গেল কিন্তু...
আমি: ধরিস না। 
সারা: কেন?
আমি: ধরলে তোর হাতের ছাপ পড়বে। 
সারা: পড়লে কী হয়েছে?
আমি: ধরার দরকার নেই। কারণ এর মাধ্যমে যদি আমরা চোরকে ধরতে পারি?
লাবিবা: তোর তা-ই মনে হয়?
আয়শা: তুই আসলেই একটা পাগল। 
মিতু: হ্যাঁ।
আমি: না না, যদি পারি তাহলে একটা অ্যাডভেঞ্চার হবে। 
সারা: যাই হোক। চল বাসায় যাই, না হলে মা বকা দেবে।     
আমরা বাড়ি গেলাম। এরপর দিন আমি হ্যান্ডগ্লাভস নিয়ে একই জায়গায় সবাইকে নিয়ে এলাম। হ্যান্ড গ্লাভস পরে বাদামি জুতাগুলো নিলাম। হঠাৎ করে সেল্ফটা নড়ে উঠে বাম দিকে সরে গেল এবং দেখা গেল যার ভেতর সিঁড়ি ছিল, যা নিচে যায়। আমরা সবাই অবাক হই। 
আমি: এটা কী?
সারা: কে জানে। 
আমি: চল এটার ভিতর যাই। 
সবাই: না
আমি: কেন। 
মিতু: এখানে চোর থাকতে পারে। আমাদের ধরে ফেলবে। 
বারবার বলার পর সবাই রাজি হলো। আমরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম। নেমে দেখি একটি ছোট রুম এবং সামনের একটি দেয়ালে পুরো জাদুঘরে মানচিত্র ছিল আর যেখানে হিরা ছিল, সেই জায়গা লাল কালি দিয়ে দাগানো আর একটি টেবিলে একটি চিঠি পড়ে ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘আজকে আমরা হিরা চুরি করব। সেটা তাড়াতাড়ি করতে হবে। তুই গার্ড-এর দিকে নজর রাখবি কিন্তু ঠিক আছে?’ শিহাব। 
আমি: তাহলে এখানে একজন থাকে যাকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। 
আয়শা: হ্যাঁ। 
সারা: কিন্তু এই শিহাব কে?
মিতু: আমি জানি?
লাবিবা: কে?
মিতু: এশাদের বাসায় থাকে।
আমি: আরে মদন, সেই শিহাবের বয়স দশ বছর। 
মিতু: ও। 
সারা: দেখ দেখ। 
আমি: কী?
সারা: চিঠির নিচে একটি অন্য ভাষায় কী জানি লেখা আছে। 
আমরা সবাই লেখাটা দেখলাম। 
আমি: এটা তো চাইনিজ মনে হচ্ছে। 
সারা: হ্যাঁ। 
লাবিবা: আমরা সবাই লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখি এটার মানে কী?
মিতু: লাইব্রেরিতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। কারণ মঞ্জু মামা চাইনিজ ভাষা জানে। 
আয়শা: যাকে তাকে দেখানো যাবে না। 
আমি: হ্যাঁ। 
তারপর সবাই মিলে লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা বই নিলাম যেখানে চাইনিজ শব্দের বাংলা অর্থ আছে। 
চাইনিজ বাক্যটি বাংলায় করে দেখলাম যে, সেখানে একটি এলাকার নাম দেওয়া আছে এবং কত নম্বর রোড তাও দেওয়া আছে। 
আয়শা: জায়গাটা আমি চিনি। 
মিতু: কোথায়?
আয়শা: আমার সঙ্গে চল। 
আমরা সবাই আয়শার সঙ্গে গেলাম। আমরা ঠিক সেই ঠিকানায় আসি এবং দেখি চিঠিতে দেওয়া ৩০ নম্বর বাসা, একটি টিনশেড একতালা বিল্ডিং, দরজাটা খোলা ছিল। তাই ঢুকে পড়ি। ঢুকে দেখি পুরো জাদুঘরের মানচিত্র ও যারা এই মিশনে কাজ করেছে তাদের নাম সেখানে লেখা। এর মধ্যে একটা নাম চোখে পড়ে। 
আমি: মঞ্জু মামা!!
সারা: কীভাবে?
আয়শা: মঞ্জু মামা খুব ভালো মানুষ। সে করতেই পারে না।
আমরা এই খবর পুলিশকে জানিয়ে দেই। পুলিশ পরে সবাইকে ধরে ফেলে এবং আমাদের ধন্যবাদ জানায়। জাদুঘর আমাদের নানা উপহার দিল এবং খবরের কাগজে আমাদের নাম ছাপা হলো। পরে জানতে পারলাম, কেন তারা হিরা চুরি করে। তারা বিভিন্ন এলাকার মানুষ যাদের বয়স ২০-২৮ বছর। তারা চেয়েছিল এই হিরা বিক্রি করে বিদেশ যেতে। তাই তারা সেই একতালা বিল্ডিংয়ে জড়ো হয়ে প্ল্যান করে। এখন আমাদের একটু খারাপ লাগল। কারণ, তারা অনেক কষ্ট করে বিদেশ যেতে চেয়েছিল। তাও চুরি করা ঠিক নয়। 
কী বলো বন্ধুরা?

 ষষ্ঠ শ্রেণি
ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বনশ্রী শাখা, ঢাকা

জাহ্নবী

গল্পজাদুকর উপেন্দ্রকিশোর

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
গল্পজাদুকর উপেন্দ্রকিশোর
বেহালা বাজাতে খুব ভালোবাসতেন উপন্দ্রেকিশোর

এ কেমন আজব ছেলেরে বাবা! ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের সব শিক্ষক ভীষণ অবাক। ছেলেটিকে সবাই খুব পছন্দ করেন। ছেলেটা প্রতিদিন ক্লাসে পড়া পারে। পরীক্ষায় কখনো সেকেন্ড হয় না। সবসময় প্রথম। দুরন্ত মেধা আর বিপুল প্রতিভা। কিন্তু এ কেমন আজব ছেলে! স্কুলের পাঠ্যবিষয়ে তার একেবারেই আগ্রহ নেই। পড়াশোনাও করে না ঠিকমতো। রাতে তো এক অক্ষরও পড়ে না। তবু প্রথম হয়। কেমন করে?

শিক্ষকরা ধরে বসলেন ছেলেটিকে। ‘ঘটনা কী উপেন্দ্র? রাতে একটুও পড়াশোনা কর না। তবু প্রথম হও কী করে? ক্লাসে পড়াই বা দাও কেমন করে?’
ছেলেটি জবাব দিল, ‘শরৎকাকা আমার পাশের ঘরেই থাকে। রোজ সন্ধ্যায় সে চিৎকার করে করে পড়া মুখস্ত করে। ওতেই আমার পড়া হয়ে যায় যে!’
নাহ। এরপর কি আর কিছু বলা যায়?
এভাবেই চলতে থাকল বছরের পর বছর। চলতে চলতে একসময় চলে এল সেই কঠিন সময়। প্রবেশিকা পরীক্ষা।
নাকের ডগায় পরীক্ষা। ক্লাসের সবাই পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত। দম ফেলবারও ফুরসৎ নেই কারও। পড়তে পড়তে সবাই যেখানে হাঁপিয়ে যাচ্ছে, সেখানে উপেন্দ্র কি না বেহালা আর রংতুলি নিয়ে মজে আছে! স্কুলের প্রধান শিক্ষক রতনমণি গুপ্ত ডেকে পাঠালেন ছেলেটিকে। বললেন, ‘তোমার ওপর আমাদের অনেক আশা। তুমি আমাদের হতাশ কোরো না।’
ভীষণ অনুতপ্ত হলেন উপেন্দ্র। বাড়ি ফিরে সাধের বেহালাটি ভেঙে ফেললেন নিজে।
কেবল বাজনাই নয়, ভালো ছবিও আঁকতে পারতেন উপেন্দ্রকিশোর।
একবার ময়মনসিংহ জেলা স্কুল পরিদর্শনের জন্য এলেন স্যার অ্যাশলি ইডেন। এই অ্যাশলি ইডেন ছিলেন তৎকালীন ভারতের গভর্নর। তার নামেই ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ। যাই হোক, ছাত্ররা ক্লাসে মন দিয়ে ইডেন সাহেবের কথা শুনছে, নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে। হঠাৎ ইডেন দেখলেন পেছনের বেঞ্চিতে বসা একটি ছেলে তার কোনো কথাই শুনছে না। মাথা নিচু করে কিছু একটা করছে। ক্লাসে উপস্থিত শিক্ষকদেরও নজরে পড়েছে এটা। শঙ্কিত হয়ে উঠলেন শিক্ষকরা। না জানি সাহেব কী মনে করেন।
ওদিকে চুপি চুপি ছেলেটির কাছে এলেন ইডেন। এসে দেখলেন ছেলেটি একমনে খুব মনোযোগ দিয়ে একটা প্রতিকৃতি আঁকছে। আর সেটা স্বয়ং অ্যাশলি ইডেনের প্রতিকৃতি।
নিজের প্রতিকৃতি দেখে ভীষণ খুশি হলেন ইডেন সাহেব। জানতে চাইলেন, ‘কী নাম তোমার?’
চমকে উঠে জবাব দিল ছেলেটি, ‘উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী’।
এবার উপেন্দ্রর পিঠ চাপড়ে দিয়ে অ্যাশলি বললেন, ‘কখনো আঁকা ছেড়ো না। এটাই চালিয়ে যেও।’ এমনই ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। কে এই উপেন্দ্রকিশোর?
তিনি সুকুমার রায়ের বাবা। এবং সত্যজিৎ রায়ের দাদা। আর?
অনেক বছর আগের কথা।
বিহার থেকে এক কায়স্থ পরিবার এল নদীয়ার চাকদহ গ্রামে। কয়েক পুরুষ বাদে ওই পরিবার পাকাপাকিভাবে চলে এল ব্রহ্মপুত্রের ধারে ‘খুকুরপাড়া।’ পরে গ্রামের নাম বদলে হয় ‘মসুয়া’। ততদিনে মুঘল রাজসরকারে কাজ করার সুবাদে পাওয়া ‘রায়’ উপাধিকেই পদবি করে নিয়েছেন তারা। গড়ে তুলেছেন জমিদারি। মসুয়ার সেই অভিজাত পরিবারের মানুষদের অনেক গুণ। বহুভাষাবিদ হিসেবে তাদের বেশ সুনাম। তেমনি এক বহুভাষাবিদ পণ্ডিত কালীনাথ রায়। কালীনাথের পাঁচ ছেলে। সারদারঞ্জন, কামদারঞ্জন, মুক্তিদারঞ্জন, কুলদারঞ্জন, প্রমদারঞ্জন।
পাঁচ বছর বয়সে পণ্ডিত কালীনাথের দ্বিতীয় পুত্র কামদারঞ্জনকে ১৮৬৮ সালে দত্তক নেন নামি উকিল ও জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী। যাগযজ্ঞ করে কামদারঞ্জনের নাম বদলে নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন নাম রাখেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। নিজের সন্তান না থাকায় জ্ঞাতী ভাই কালীনাথের মেজো ছেলেকে দত্তক হিসেবে নেন হরিকিশোর। যদিও এর কয়েক বছর পরে হরিকিশোরের নিজের একটি ছেলে হয়। তার নাম নরেন্দ্রকিশোর।
১৮৭৯ সালে বৃত্তিসহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন উপেন্দ্রকিশোর। প্রবেশিকা পাসের পর তাকে আর পায় কে! ময়মনসিংহ থেকে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করলেন। এরপর ১৮৮৪ সালে স্নাতক হলেন মেট্রোপলিটন কলেজ (বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ) থেকে।
হরিকিশোর কখনো উপেন্দ্রকিশোরের ওপর প্রচলিত রীতিনীতি চাপিয়ে দিতেন না। ফলে উপেন্দ্রকিশোর বেড়ে উঠেছিলেন তার খেয়ালি স্বভাব নিয়ে। যদিও উপেন্দ্রকিশোর চলাফেরা করতেন রাজা রামমোহন রায়ের ভক্ত-অনুসারীদের সঙ্গে। এরা সবাই ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের মানুষ। ওদিকে এমন খবর জেনে হরিকিশোর বেশ শঙ্কিত ছিলেন, তার ছেলেটা না আবার ব্রাহ্ম হয়ে যায়। বিচলিত পিতা চরমপত্র দিলেন পুত্রকে- ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করলে উপেন্দ্রকিশোর তার সম্পত্তির কানাকড়িও পাবেন না।
ব্রাহ্মধর্মের প্রতি উপেন্দ্রকিশোরের আগ্রহ আরও বাড়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সান্নিধ্যে এসে। তার চেয়ে দুই বছরের বড় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে উপেন্দ্রকিশোরের। ব্রাহ্মরা মূর্তিপূজায় বিশ্বাস করতেন না, বর্ণপ্রথা মানতেন না। তাদের বাড়ির মেয়েদের স্কুলে যাওয়ায় বাধা ছিল না। পর্দাপ্রথারও ধার ধারতেন না।
পিতার সম্পত্তির থোড়াই কেয়ার করেন খামখেয়ালি উপেন্দ্রকিশোর। ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করলেন। খবর শুনে ভীষণ রেগে গেলেন হরিকিশোর। তার সম্পত্তির মাত্র এক-চতুর্থাংশ দিলেন দত্তকপুত্রকে। ফলে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন উপেন্দ্রকিশোর।
তবে হরিকিশোরের মৃত্যুর পর এ উইল ছিঁড়ে ফেলেন হরিকিশোরের স্ত্রী ও নরেন্দ্রকিশোরের মা রাজলক্ষ্মী দেবী। পুত্রদের মধ্যে সম্পত্তি সমান ভাগ করে দেন তিনি।
১৮৮৩ সালে শিক্ষক প্রমদাচরণ সেনের ‘সখা’ পত্রিকায় ‘মাছি’

ছোটদের প্রিয় সন্দেশের কয়েকটি প্রচ্ছদ

নামে একটা লেখা লিখলেন উপেন্দ্রকিশোর। ছোটদের সাহিত্যে প্রথম চলিত ভাষায় লিখলেন অনুবাদ প্রবন্ধ ‘নিয়ম ও অনিয়ম’। উপেন্দ্রকিশোরের চিন্তাভাবনা সবই ছিল শিশু-কিশোরদের নিয়ে। ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত হলো তার প্রথম বই, ‘শিক্ষক ব্যাতিরেকে হারমোনিয়াম শিক্ষা।’ সংগীতবিষয়ে তার দ্বিতীয় বইটি ওই একই জায়গা থেকে প্রকাশিত হয় ১৯০৪ সালে। এটি ছিল বেহালা শিক্ষার বই।
১৮৯৭ সালে সিটি বুক সোসাইটি থেকে ‘ছেলেদের রামায়ণ’ নামে উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ও অলংকরণ করা সচিত্র বই প্রকাশিত হলো। কিন্তু ছাপার মানে সন্তুষ্ট ছিলেন না লেখক। পৈতৃক জমি অনেকখানি বেচে দিয়ে সেই টাকায় বিলেতের পেনরোজ কোম্পানি থেকে বইপত্র, রাসায়নিক, ক্যামেরা, যন্ত্রপাতি আনিয়ে নিয়ে শুরু করলেন ছাপার উন্নতিসাধনের চেষ্টা। যাত্রা শুরু করল মুদ্রণসংস্থা ইউ রে আর্টিস্ট।


১৯০৩ সালে প্রাচীন পৃথিবী ও প্রাগৈতিহাসিক জীবজন্তুদের নিয়ে ছোটদের জন্য ‘সেকালের কথা’ প্রকাশিত হলো। ‘ছেলেদের রামায়ণ’ নতুন করে প্রকাশিত হলো ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে বের হলো ‘ছেলেদের মহাভারত’। ১৯০৯ সালে ‘মহাভারতের গল্প’। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় গ্রামবাংলার মা ঠাকুমাদের মুখে মুখে প্রচলিত বেশ কিছু গল্প একত্রে সংগ্রহ করে লেখা হলো ‘টুনটুনির বই।’ ১৯১০ সালে ছেলে সুকুমারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রাখলেন ইউ রায় অ্যান্ড সন্স। ১৯১১ সালে এই ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে বের হলো কবিতা আকারে ‘ছোট্ট রামায়ণ’।
১৯১৩ সালের গ্রীষ্মকালে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে প্রকাশিত হলো ছোটদের জন্য ঝকঝকে পত্রিকা ‘সন্দেশ।’ যা নিজস্ব মহিমায় আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে বাংলা শিশু সাহিত্যের আসরে। ১৯১৫ সালে গিরিডিতে ডায়াবেটিস রোগভোগে ওপারে পাড়ি জমানোর আগ পর্যন্ত সন্দেশের বত্রিশটা সংখ্যা সম্পাদনা করতে পেরেছিলেন। এই সন্দেশেই ১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয় উপেন্দ্রকিশোরের শেষ উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম ‘গুপিগাইন বাঘা বাইন’।
১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৭ বৈশাখ বা ১৮৬৩ সালের ১২ মে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া গ্রামে তার জন্ম। সে হিসেবে জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশি। আর মৃত্যুবরণ করেন ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মাত্র ৫২ বছর বয়সে।
ছোটদের কথা ভেবেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী লিখেছেন। তার লেখার বিষয় নির্বাচন, রচনারীতি, পরিবেশনা, ভাষার ব্যবহার- এসব লক্ষ্য করলেই সহজেই সেটা বোঝা যায়। যদিও তার বেশির ভাগ লেখাই মৌলিক হিসেবে বলা যায় না, তবু তার পরিবেশনার মৌলিকত্ব তাকে দিয়েছে অমরত্ব। আর এই অমরত্বের কারণেই ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাংলার শিশুদের কাছেই শুধু নয়, বাঙালির কাছে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি অতি পরিচিত।

 

মা দিবসের ছড়া

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:৪৬ পিএম
মা দিবসের ছড়া

মাকে মনে পড়ে
আহসান মালেক

জষ্ঠি মাসে একটি ছেলে
আমের শাখায় শাখায়,
পাকা আমের গন্ধ শুঁকে
স্বপ্ন চোখে মাখায়।

এমন সময় আকাশ ভেঙে
বৃষ্টি যখন ঝরে,
সেই ছেলেটার মায়ের কথা
অমনি মনে পড়ে।

সেই যে কবে মামণি তার
ফেলে তাকে একা,
কোথায় যেন হারিয়ে গেল
আর পেল না দেখা।

সাঁঝের বেলা দূর আকাশে
জ্বললে তারার বাতি,
উদাস চোখে খুঁজে ফিরে
মাকে আঁতিপাঁতি।

এমনি করে দিন কেটে যায়
এমনি করেই ক্ষণ,
মায়ের স্নেহের মায়া ডোরে
বাঁধা এ জীবন।

 

মা অমূল্য ধন
নীহার মোশারফ

কত স্বপ্ন, বাঁচার আশা
দেশের প্রতি ভালোবাসা
বাঁশের বাঁশি, পুবাল হাওয়া
ঝরনাধারা, পক্ষী নানান
তার ভেতরে মাকে খুঁজি-
স্বদেশ আমার, বসুন্ধরা
গভীর মায়ায় যত্নে গড়া
নিরবধি নদীর ঢেউয়ে
হাজার খুশির পিদিম নাচে
তার ভেতরে স্নেহের পুঁজি।
সকাল হলে মাকে বলি
সূর্যরাঙা মাঠে চলি
তুমি আমার কপালজুড়ে
যখন দিলে আলতো চুমু
দেখে বাবা দিল হেসে-
কীসের দুঃখ, ব্যথা শত
কষ্ট যত হলো গত
মুক্ত মনের ডানাগুলো
ঘুড়ির মতো উড়ে উড়ে
অনেক দূরে গেল ভেসে।
মা তো আমার মা’ই আছে
থাকে আমার কাছে কাছে
মাকে ছাড়া ভাল্লাগে না
খোলা আকাশ, পাহাড়, সাগর
হীরা, চুনি, পান্না, মণি-
মায়ের আদর শীতল শীতল
অমূল্য ধন সোনার খনি।

মা ও খোকা
আবেদীন জনী

মা বলে, এই দুষ্টু খোকা
তুই যে দেখি বড্ড বোকা!
খাস না আঙুর, আপেল কলা
তবুও কিছু যায় না বলা
বলতে গেলেই গাল বালিশ,
অফিস থেকে ফিরলে বাপে
করবি দুশো চার নালিশ।

দুধেভাতেও মন বসে না
মারব ক’টা চড় কষে না!
মায়ের মেজাজ ভীষণ চড়া-
খোকা বলে, মারো মারো
কভু তুমি মারতে পার?
মিছেমিছি মেজাজ দেখাও
মনটা তোমার মায়ায় ভরা।

খোকা আরও হাসে-
একটি বারও মেরেছ কি
গত বারো মাসে?

বকলে খোকা হাসতে থাকে
হাসির বানে ভাসতে থাকে
সেই হাসি তার ঠোঁটে ফোটে
ঠিক যেন টুসটুস,
মাকে বলে নানান ছলে
মুখ লুকিয়ে আঁচলতলে
দাও না লেমন চুস।


মায়ের চোখে আকাশ দেখি
রাফিয়া নাওয়ার


মা যে আমার এই দুনিয়ায়
জান্নাতেরই ঘ্রাণ
মা যে আমার নয়নমণি
মা যে আমার প্রাণ।

মা যে আমার বসুন্ধরা
যত্নে রাখে খুব
মা যে আমার আধার রাতে
জলন্ত এক ধূপ।

মা যে আমার আকাশ সমান
বিশাল যে তার হাত
ওই হাতখানা রাখলে মাথায়
যায় কেটে যায় রাত।

মা যে আমার অপেক্ষা খুব
ব্যাকুলতা যে কী!
মায়ের চোখের তারা দিয়ে
ওই আকাশটা দেখি।


আমার মা
সুশান্ত কুমার দে

আমার মা মহতী, লক্ষ্মী বলি তারে
তাঁর কীর্তি অভূতপূর্ব এই সংসারে,
মায়ের দু’চোখ যেন দুটো ধ্রুবতারা
ধ্রুবতারার আলোয় হই আত্মহারা।
মায়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সদা শিশুর প্রতি
কখনো সন্তানের হয় না যেন ক্ষতি,
পৃথিবীর সব সুখ মা’র আঁচল ভরি
সন্তানের সুখের তরে আমৃত্যু লড়ি।

সন্তানের অসুখে মায়ের মুখ ভারি
উপাসনালয়ে বসেই মানত তারি।
মায়ের সব সুখ সব অহংকারে
সন্তানের সুখে বিলিয়ে দেয় তারে।
মায়ের কাছ শিশু যেন সব সুখ
শিশুর হাসি মুখে কেটে যায় দুঃখ,
মায়ের মিষ্টি হাসি কি জাদুর পরশ
শিশুর ভালো-মন্দ মা রাখে খোঁজ?

মা কত কষ্ট করে গর্ভে সন্তান ধরে
নয় মাস দশ দিন জীবন যুদ্ধ লড়ে,
এমন মাকে দুঃখ দিয়ে চাই না সুখ
মাকে সবাই ভালোবাস, দিও না দুখ?
বড় হয়ে মাকে করিব না অবহেলা
মা ছাড়া পৃথিবীটাই দুঃখের ভেলা,
এমন মা যার ঘরে আছে একজন
সেই ঘরে দুঃখটা পালায় সারাক্ষণ


মায়ের খোকন
শাকিব হুসাইন

মায়ের খোকন
ব্যস্ত বেজায়
সারা দিনই কাজে...
কাজের শেষে
ক্লান্তি নিয়ে
ফেরে রাতের মাঝে।

মা-টা যে তার
অসুস্থ খুব
পড়ে থাকে ঘরে...
মায়ের খুশি
আনতে খোকন
এত্ত কিছু করে...
রাতটা হলে
খোকন ঘুমোয়
মায়ের গলা ধরে।

উদার আকাশ
উদার মুখে
মাকে বলে ডেকে—
এমন খোকন
ও মা তুমি
পেলে কোথায় থেকে?

আমার খোকন
আমার পেটের
সাতরাজ্যির ধন...
প্রতি ঘরে
জন্ম হউক
আমার খোকার মন।


মায়ের দোয়া
কবির কাঞ্চন
মায়ের দোয়া সবার আগে
পৌঁছে
বিপদআপদ এক নিমিষে
ঘোচে।

মাকে আমি ভালোবাসি
বেশি
তাই তো আমি মায়ের কাছে
ঘেঁষি।

সবচেয়ে দামি আমার মায়ের
হাসি
তাই তো আমি সেই হাসিতে
ফাঁসি।

মায়ের গায়ের গন্ধ সবার
সেরা
তাই তো আমার মায়ের কাছে
ফেরা।

মায়ের মতো নেই তো এমন
কেহ
শোধ হবে না কেটে দিলে
দেহ।

 

জাহ্নবী

মে দিবস: আফিয়া জাহিন

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম
মে দিবস: আফিয়া জাহিন

শ্রমিক-মালিক ভাই-ভাই
সবাই দেশের উন্নয়ন চাই,
শ্রমিক বাঁচলে বাঁচবে দেশ
হবে সোনার বাংলাদেশ।

মে দিবসের অঙ্গীকার
সব ভেদাভেদ ভুলে,
সবাই কাঁধে কাঁধ মিলে
হয়ে যাই মোরা নিরহংকার।


আফিয়া জাহিন
ষষ্ঠ শ্রেণি
সরকারি পাতারহাট মুসলিম মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল

জাহ্নবী

আমরা আঁকি

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
আমরা আঁকি

ফাইজা রহমান রুমাইসা
দ্বিতীয় শ্রেণি
বনশ্রী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল
ঢাকা

জাহ্নবী

আমরা আঁকি

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ০১:১০ পিএম
আমরা আঁকি

অনূঢ়া বড়াল

বয়স: ৭ বছর

ঢাকা

 

জাহ্নবী