হাই! আমার নাম এশা। আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মজার একটি ঘটনা বলব। যা এক বছর আগে আমার সঙ্গে ঘটেছিল। আমরা সবাই মানে (আমি, মিতু, আয়শা, লাবিবা, সারা) বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের দিন পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ মঞ্জু মামা আমাদের দিকে এসে বলল, ‘শোনো তোমরা! আমার যে বাসটা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। সেটা বিক্রি করতে পারছি না। কারণ নষ্ট বলে কেউ নিতে চায় না। তাই বলতে এসেছি তোমরা কি নিতে চাও?
মিতু: এই ভাঙা বাস দিয়ে আমরা কী করব?
আমি: না, না, আমি চাই বাসটা।
মঞ্জু মামা: ঠিক আছে। ভাঙা বাসটি আমার বাসার পাশে বড় মাঠটিতে আছে।
আয়শা: এই বাস দিয়ে কী করবি?
আমি: এটা হবে আমাদের আস্তানা।
মিতু: আস্তানা!
আমি: হ্যাঁ, আমরা বাসের ভিতরটা সাজাব।
লাবিবা: সাজাব?
আয়শা: আমি বুঝতে পেরেছি। এটা আমরা সাজিয়ে এটার ভিতরে আড্ডা দেব।
আমি: হ্যাঁ।
তারপর আমরা সবাই মিলে সেটা সাজাই। এর পর থেকে আমরা সেখানেই আড্ডা দেই। হঠাৎ একদিন আমাদের এলাকার একটি জাদুঘর থেকে ৭০০ কোটি টাকার একটি হিরা চুরি হয়ে যায়। জাদুঘরে হইচই শুরু হয়। মানুষ জাদুঘরের গেটের সামনে ভিড় করে। আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরাও জাদুঘরের ভিতরে গিয়ে দেখব। কোথায় ছিল হিরাটা?
অনেক ধাক্কাধাক্কি করে ভিতরে ঢুকলাম। দূর থেকে দেখলাম খুবই অবাক কাণ্ড, যে গ্লাসের বাক্সে হিরাটি ছিল সে বাক্সে বিন্দুমাত্র দাগ ছিল না। সব কিছু যেভাবে ছিল সেভাবেই আছে। শুধু হিরাটা গায়েব। সবাই অবাক হলো।
আমি: এটা কীভাবে সম্ভব! কোনো দাগই নেই।
আয়শা: মনে হয় চোর বক্সটি কেটে হিরা নিয়ে বক্সটি আবার জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে।
লাবিবা: হতে পারে।
সারা: না, হতে পারে না। কারণ, বাক্সটা ধরলেই সিকিউরিটি অ্যালার্ম বাজবে।
মিতু: হ্যাঁ, ঠিক তো।
আমি: তাহলে কীভাবে নিল?
সারা: জানি না। কিন্তু বাড়ি ফিরতে হবে এবার, সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে।
আমরা সবাই মেইন গেটের দিকে গেলাম। কিন্তু অনেক মানুষের ভিড় ছিল। তাই আমরা ভাবলাম ডান পাশের দরজাটা দিয়ে যাওয়া যাক। ডান পাশের দরজাটা দিয়ে কেউ যায় না। কারণ, দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে এবং গলিটা খুব চিপা। একটি রিকশা যাওয়ার জায়গা হবে কি না সন্দেহ। যাই হোক, আমরা দরজাটা খুলে যখন বের হলাম। তখন দেখলাম, নিচে কালো কালো জুতার পায়ের ছাপ। সেই পায়ের ছাপগুলো একটি ভাঙাচোরা সেল্ফের দিকে গিয়ে শেষ হয়েছে। যা পাশের বিল্ডিংয়ের দেয়ালের সঙ্গে লাগানো। সেই সেল্ফে একটি বাদামি রঙের জুতা। সারা জুতাগুলো ধরতে গেল কিন্তু...
আমি: ধরিস না।
সারা: কেন?
আমি: ধরলে তোর হাতের ছাপ পড়বে।
সারা: পড়লে কী হয়েছে?
আমি: ধরার দরকার নেই। কারণ এর মাধ্যমে যদি আমরা চোরকে ধরতে পারি?
লাবিবা: তোর তা-ই মনে হয়?
আয়শা: তুই আসলেই একটা পাগল।
মিতু: হ্যাঁ।
আমি: না না, যদি পারি তাহলে একটা অ্যাডভেঞ্চার হবে।
সারা: যাই হোক। চল বাসায় যাই, না হলে মা বকা দেবে।
আমরা বাড়ি গেলাম। এরপর দিন আমি হ্যান্ডগ্লাভস নিয়ে একই জায়গায় সবাইকে নিয়ে এলাম। হ্যান্ড গ্লাভস পরে বাদামি জুতাগুলো নিলাম। হঠাৎ করে সেল্ফটা নড়ে উঠে বাম দিকে সরে গেল এবং দেখা গেল যার ভেতর সিঁড়ি ছিল, যা নিচে যায়। আমরা সবাই অবাক হই।
আমি: এটা কী?
সারা: কে জানে।
আমি: চল এটার ভিতর যাই।
সবাই: না
আমি: কেন।
মিতু: এখানে চোর থাকতে পারে। আমাদের ধরে ফেলবে।
বারবার বলার পর সবাই রাজি হলো। আমরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম। নেমে দেখি একটি ছোট রুম এবং সামনের একটি দেয়ালে পুরো জাদুঘরে মানচিত্র ছিল আর যেখানে হিরা ছিল, সেই জায়গা লাল কালি দিয়ে দাগানো আর একটি টেবিলে একটি চিঠি পড়ে ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘আজকে আমরা হিরা চুরি করব। সেটা তাড়াতাড়ি করতে হবে। তুই গার্ড-এর দিকে নজর রাখবি কিন্তু ঠিক আছে?’ শিহাব।
আমি: তাহলে এখানে একজন থাকে যাকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আয়শা: হ্যাঁ।
সারা: কিন্তু এই শিহাব কে?
মিতু: আমি জানি?
লাবিবা: কে?
মিতু: এশাদের বাসায় থাকে।
আমি: আরে মদন, সেই শিহাবের বয়স দশ বছর।
মিতু: ও।
সারা: দেখ দেখ।
আমি: কী?
সারা: চিঠির নিচে একটি অন্য ভাষায় কী জানি লেখা আছে।
আমরা সবাই লেখাটা দেখলাম।
আমি: এটা তো চাইনিজ মনে হচ্ছে।
সারা: হ্যাঁ।
লাবিবা: আমরা সবাই লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখি এটার মানে কী?
মিতু: লাইব্রেরিতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। কারণ মঞ্জু মামা চাইনিজ ভাষা জানে।
আয়শা: যাকে তাকে দেখানো যাবে না।
আমি: হ্যাঁ।
তারপর সবাই মিলে লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা বই নিলাম যেখানে চাইনিজ শব্দের বাংলা অর্থ আছে।
চাইনিজ বাক্যটি বাংলায় করে দেখলাম যে, সেখানে একটি এলাকার নাম দেওয়া আছে এবং কত নম্বর রোড তাও দেওয়া আছে।
আয়শা: জায়গাটা আমি চিনি।
মিতু: কোথায়?
আয়শা: আমার সঙ্গে চল।
আমরা সবাই আয়শার সঙ্গে গেলাম। আমরা ঠিক সেই ঠিকানায় আসি এবং দেখি চিঠিতে দেওয়া ৩০ নম্বর বাসা, একটি টিনশেড একতালা বিল্ডিং, দরজাটা খোলা ছিল। তাই ঢুকে পড়ি। ঢুকে দেখি পুরো জাদুঘরের মানচিত্র ও যারা এই মিশনে কাজ করেছে তাদের নাম সেখানে লেখা। এর মধ্যে একটা নাম চোখে পড়ে।
আমি: মঞ্জু মামা!!
সারা: কীভাবে?
আয়শা: মঞ্জু মামা খুব ভালো মানুষ। সে করতেই পারে না।
আমরা এই খবর পুলিশকে জানিয়ে দেই। পুলিশ পরে সবাইকে ধরে ফেলে এবং আমাদের ধন্যবাদ জানায়। জাদুঘর আমাদের নানা উপহার দিল এবং খবরের কাগজে আমাদের নাম ছাপা হলো। পরে জানতে পারলাম, কেন তারা হিরা চুরি করে। তারা বিভিন্ন এলাকার মানুষ যাদের বয়স ২০-২৮ বছর। তারা চেয়েছিল এই হিরা বিক্রি করে বিদেশ যেতে। তাই তারা সেই একতালা বিল্ডিংয়ে জড়ো হয়ে প্ল্যান করে। এখন আমাদের একটু খারাপ লাগল। কারণ, তারা অনেক কষ্ট করে বিদেশ যেতে চেয়েছিল। তাও চুরি করা ঠিক নয়।
কী বলো বন্ধুরা?
ষষ্ঠ শ্রেণি
ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বনশ্রী শাখা, ঢাকা
জাহ্নবী