
মাকে মনে পড়ে
আহসান মালেক
জষ্ঠি মাসে একটি ছেলে
আমের শাখায় শাখায়,
পাকা আমের গন্ধ শুঁকে
স্বপ্ন চোখে মাখায়।
এমন সময় আকাশ ভেঙে
বৃষ্টি যখন ঝরে,
সেই ছেলেটার মায়ের কথা
অমনি মনে পড়ে।
সেই যে কবে মামণি তার
ফেলে তাকে একা,
কোথায় যেন হারিয়ে গেল
আর পেল না দেখা।
সাঁঝের বেলা দূর আকাশে
জ্বললে তারার বাতি,
উদাস চোখে খুঁজে ফিরে
মাকে আঁতিপাঁতি।
এমনি করে দিন কেটে যায়
এমনি করেই ক্ষণ,
মায়ের স্নেহের মায়া ডোরে
বাঁধা এ জীবন।
মা অমূল্য ধন
নীহার মোশারফ
কত স্বপ্ন, বাঁচার আশা
দেশের প্রতি ভালোবাসা
বাঁশের বাঁশি, পুবাল হাওয়া
ঝরনাধারা, পক্ষী নানান
তার ভেতরে মাকে খুঁজি-
স্বদেশ আমার, বসুন্ধরা
গভীর মায়ায় যত্নে গড়া
নিরবধি নদীর ঢেউয়ে
হাজার খুশির পিদিম নাচে
তার ভেতরে স্নেহের পুঁজি।
সকাল হলে মাকে বলি
সূর্যরাঙা মাঠে চলি
তুমি আমার কপালজুড়ে
যখন দিলে আলতো চুমু
দেখে বাবা দিল হেসে-
কীসের দুঃখ, ব্যথা শত
কষ্ট যত হলো গত
মুক্ত মনের ডানাগুলো
ঘুড়ির মতো উড়ে উড়ে
অনেক দূরে গেল ভেসে।
মা তো আমার মা’ই আছে
থাকে আমার কাছে কাছে
মাকে ছাড়া ভাল্লাগে না
খোলা আকাশ, পাহাড়, সাগর
হীরা, চুনি, পান্না, মণি-
মায়ের আদর শীতল শীতল
অমূল্য ধন সোনার খনি।
মা ও খোকা
আবেদীন জনী
মা বলে, এই দুষ্টু খোকা
তুই যে দেখি বড্ড বোকা!
খাস না আঙুর, আপেল কলা
তবুও কিছু যায় না বলা
বলতে গেলেই গাল বালিশ,
অফিস থেকে ফিরলে বাপে
করবি দুশো চার নালিশ।
দুধেভাতেও মন বসে না
মারব ক’টা চড় কষে না!
মায়ের মেজাজ ভীষণ চড়া-
খোকা বলে, মারো মারো
কভু তুমি মারতে পার?
মিছেমিছি মেজাজ দেখাও
মনটা তোমার মায়ায় ভরা।
খোকা আরও হাসে-
একটি বারও মেরেছ কি
গত বারো মাসে?
বকলে খোকা হাসতে থাকে
হাসির বানে ভাসতে থাকে
সেই হাসি তার ঠোঁটে ফোটে
ঠিক যেন টুসটুস,
মাকে বলে নানান ছলে
মুখ লুকিয়ে আঁচলতলে
দাও না লেমন চুস।
মায়ের চোখে আকাশ দেখি
রাফিয়া নাওয়ার
মা যে আমার এই দুনিয়ায়
জান্নাতেরই ঘ্রাণ
মা যে আমার নয়নমণি
মা যে আমার প্রাণ।
মা যে আমার বসুন্ধরা
যত্নে রাখে খুব
মা যে আমার আধার রাতে
জলন্ত এক ধূপ।
মা যে আমার আকাশ সমান
বিশাল যে তার হাত
ওই হাতখানা রাখলে মাথায়
যায় কেটে যায় রাত।
মা যে আমার অপেক্ষা খুব
ব্যাকুলতা যে কী!
মায়ের চোখের তারা দিয়ে
ওই আকাশটা দেখি।
আমার মা
সুশান্ত কুমার দে
আমার মা মহতী, লক্ষ্মী বলি তারে
তাঁর কীর্তি অভূতপূর্ব এই সংসারে,
মায়ের দু’চোখ যেন দুটো ধ্রুবতারা
ধ্রুবতারার আলোয় হই আত্মহারা।
মায়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সদা শিশুর প্রতি
কখনো সন্তানের হয় না যেন ক্ষতি,
পৃথিবীর সব সুখ মা’র আঁচল ভরি
সন্তানের সুখের তরে আমৃত্যু লড়ি।
সন্তানের অসুখে মায়ের মুখ ভারি
উপাসনালয়ে বসেই মানত তারি।
মায়ের সব সুখ সব অহংকারে
সন্তানের সুখে বিলিয়ে দেয় তারে।
মায়ের কাছ শিশু যেন সব সুখ
শিশুর হাসি মুখে কেটে যায় দুঃখ,
মায়ের মিষ্টি হাসি কি জাদুর পরশ
শিশুর ভালো-মন্দ মা রাখে খোঁজ?
মা কত কষ্ট করে গর্ভে সন্তান ধরে
নয় মাস দশ দিন জীবন যুদ্ধ লড়ে,
এমন মাকে দুঃখ দিয়ে চাই না সুখ
মাকে সবাই ভালোবাস, দিও না দুখ?
বড় হয়ে মাকে করিব না অবহেলা
মা ছাড়া পৃথিবীটাই দুঃখের ভেলা,
এমন মা যার ঘরে আছে একজন
সেই ঘরে দুঃখটা পালায় সারাক্ষণ
মায়ের খোকন
শাকিব হুসাইন
মায়ের খোকন
ব্যস্ত বেজায়
সারা দিনই কাজে...
কাজের শেষে
ক্লান্তি নিয়ে
ফেরে রাতের মাঝে।
মা-টা যে তার
অসুস্থ খুব
পড়ে থাকে ঘরে...
মায়ের খুশি
আনতে খোকন
এত্ত কিছু করে...
রাতটা হলে
খোকন ঘুমোয়
মায়ের গলা ধরে।
উদার আকাশ
উদার মুখে
মাকে বলে ডেকে—
এমন খোকন
ও মা তুমি
পেলে কোথায় থেকে?
আমার খোকন
আমার পেটের
সাতরাজ্যির ধন...
প্রতি ঘরে
জন্ম হউক
আমার খোকার মন।
মায়ের দোয়া
কবির কাঞ্চন
মায়ের দোয়া সবার আগে
পৌঁছে
বিপদআপদ এক নিমিষে
ঘোচে।
মাকে আমি ভালোবাসি
বেশি
তাই তো আমি মায়ের কাছে
ঘেঁষি।
সবচেয়ে দামি আমার মায়ের
হাসি
তাই তো আমি সেই হাসিতে
ফাঁসি।
মায়ের গায়ের গন্ধ সবার
সেরা
তাই তো আমার মায়ের কাছে
ফেরা।
মায়ের মতো নেই তো এমন
কেহ
শোধ হবে না কেটে দিলে
দেহ।
জাহ্নবী