ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

মা দিবসের ছড়া

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:৪৬ পিএম
মা দিবসের ছড়া

মাকে মনে পড়ে
আহসান মালেক

জষ্ঠি মাসে একটি ছেলে
আমের শাখায় শাখায়,
পাকা আমের গন্ধ শুঁকে
স্বপ্ন চোখে মাখায়।

এমন সময় আকাশ ভেঙে
বৃষ্টি যখন ঝরে,
সেই ছেলেটার মায়ের কথা
অমনি মনে পড়ে।

সেই যে কবে মামণি তার
ফেলে তাকে একা,
কোথায় যেন হারিয়ে গেল
আর পেল না দেখা।

সাঁঝের বেলা দূর আকাশে
জ্বললে তারার বাতি,
উদাস চোখে খুঁজে ফিরে
মাকে আঁতিপাঁতি।

এমনি করে দিন কেটে যায়
এমনি করেই ক্ষণ,
মায়ের স্নেহের মায়া ডোরে
বাঁধা এ জীবন।

 

মা অমূল্য ধন
নীহার মোশারফ

কত স্বপ্ন, বাঁচার আশা
দেশের প্রতি ভালোবাসা
বাঁশের বাঁশি, পুবাল হাওয়া
ঝরনাধারা, পক্ষী নানান
তার ভেতরে মাকে খুঁজি-
স্বদেশ আমার, বসুন্ধরা
গভীর মায়ায় যত্নে গড়া
নিরবধি নদীর ঢেউয়ে
হাজার খুশির পিদিম নাচে
তার ভেতরে স্নেহের পুঁজি।
সকাল হলে মাকে বলি
সূর্যরাঙা মাঠে চলি
তুমি আমার কপালজুড়ে
যখন দিলে আলতো চুমু
দেখে বাবা দিল হেসে-
কীসের দুঃখ, ব্যথা শত
কষ্ট যত হলো গত
মুক্ত মনের ডানাগুলো
ঘুড়ির মতো উড়ে উড়ে
অনেক দূরে গেল ভেসে।
মা তো আমার মা’ই আছে
থাকে আমার কাছে কাছে
মাকে ছাড়া ভাল্লাগে না
খোলা আকাশ, পাহাড়, সাগর
হীরা, চুনি, পান্না, মণি-
মায়ের আদর শীতল শীতল
অমূল্য ধন সোনার খনি।

মা ও খোকা
আবেদীন জনী

মা বলে, এই দুষ্টু খোকা
তুই যে দেখি বড্ড বোকা!
খাস না আঙুর, আপেল কলা
তবুও কিছু যায় না বলা
বলতে গেলেই গাল বালিশ,
অফিস থেকে ফিরলে বাপে
করবি দুশো চার নালিশ।

দুধেভাতেও মন বসে না
মারব ক’টা চড় কষে না!
মায়ের মেজাজ ভীষণ চড়া-
খোকা বলে, মারো মারো
কভু তুমি মারতে পার?
মিছেমিছি মেজাজ দেখাও
মনটা তোমার মায়ায় ভরা।

খোকা আরও হাসে-
একটি বারও মেরেছ কি
গত বারো মাসে?

বকলে খোকা হাসতে থাকে
হাসির বানে ভাসতে থাকে
সেই হাসি তার ঠোঁটে ফোটে
ঠিক যেন টুসটুস,
মাকে বলে নানান ছলে
মুখ লুকিয়ে আঁচলতলে
দাও না লেমন চুস।


মায়ের চোখে আকাশ দেখি
রাফিয়া নাওয়ার


মা যে আমার এই দুনিয়ায়
জান্নাতেরই ঘ্রাণ
মা যে আমার নয়নমণি
মা যে আমার প্রাণ।

মা যে আমার বসুন্ধরা
যত্নে রাখে খুব
মা যে আমার আধার রাতে
জলন্ত এক ধূপ।

মা যে আমার আকাশ সমান
বিশাল যে তার হাত
ওই হাতখানা রাখলে মাথায়
যায় কেটে যায় রাত।

মা যে আমার অপেক্ষা খুব
ব্যাকুলতা যে কী!
মায়ের চোখের তারা দিয়ে
ওই আকাশটা দেখি।


আমার মা
সুশান্ত কুমার দে

আমার মা মহতী, লক্ষ্মী বলি তারে
তাঁর কীর্তি অভূতপূর্ব এই সংসারে,
মায়ের দু’চোখ যেন দুটো ধ্রুবতারা
ধ্রুবতারার আলোয় হই আত্মহারা।
মায়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সদা শিশুর প্রতি
কখনো সন্তানের হয় না যেন ক্ষতি,
পৃথিবীর সব সুখ মা’র আঁচল ভরি
সন্তানের সুখের তরে আমৃত্যু লড়ি।

সন্তানের অসুখে মায়ের মুখ ভারি
উপাসনালয়ে বসেই মানত তারি।
মায়ের সব সুখ সব অহংকারে
সন্তানের সুখে বিলিয়ে দেয় তারে।
মায়ের কাছ শিশু যেন সব সুখ
শিশুর হাসি মুখে কেটে যায় দুঃখ,
মায়ের মিষ্টি হাসি কি জাদুর পরশ
শিশুর ভালো-মন্দ মা রাখে খোঁজ?

মা কত কষ্ট করে গর্ভে সন্তান ধরে
নয় মাস দশ দিন জীবন যুদ্ধ লড়ে,
এমন মাকে দুঃখ দিয়ে চাই না সুখ
মাকে সবাই ভালোবাস, দিও না দুখ?
বড় হয়ে মাকে করিব না অবহেলা
মা ছাড়া পৃথিবীটাই দুঃখের ভেলা,
এমন মা যার ঘরে আছে একজন
সেই ঘরে দুঃখটা পালায় সারাক্ষণ


মায়ের খোকন
শাকিব হুসাইন

মায়ের খোকন
ব্যস্ত বেজায়
সারা দিনই কাজে...
কাজের শেষে
ক্লান্তি নিয়ে
ফেরে রাতের মাঝে।

মা-টা যে তার
অসুস্থ খুব
পড়ে থাকে ঘরে...
মায়ের খুশি
আনতে খোকন
এত্ত কিছু করে...
রাতটা হলে
খোকন ঘুমোয়
মায়ের গলা ধরে।

উদার আকাশ
উদার মুখে
মাকে বলে ডেকে—
এমন খোকন
ও মা তুমি
পেলে কোথায় থেকে?

আমার খোকন
আমার পেটের
সাতরাজ্যির ধন...
প্রতি ঘরে
জন্ম হউক
আমার খোকার মন।


মায়ের দোয়া
কবির কাঞ্চন
মায়ের দোয়া সবার আগে
পৌঁছে
বিপদআপদ এক নিমিষে
ঘোচে।

মাকে আমি ভালোবাসি
বেশি
তাই তো আমি মায়ের কাছে
ঘেঁষি।

সবচেয়ে দামি আমার মায়ের
হাসি
তাই তো আমি সেই হাসিতে
ফাঁসি।

মায়ের গায়ের গন্ধ সবার
সেরা
তাই তো আমার মায়ের কাছে
ফেরা।

মায়ের মতো নেই তো এমন
কেহ
শোধ হবে না কেটে দিলে
দেহ।

 

জাহ্নবী

মরুভূমির বিচিত্র গাছ বাওবাব

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
মরুভূমির বিচিত্র গাছ বাওবাব
ছবি সংগৃহীত

ঘটনাটি ঘটেছিল স্বর্গে। চমৎকার সুন্দর একটি গাছ ছিল সেখানে। কিন্তু সুন্দর জিনিসের ভাগ্য বরাবর খারাপ হয়; সবার কুদৃষ্টি পড়ে তার ওপরে। আর শয়তানের মাথায় তো মন্দবুদ্ধি গিজগিজ করছে। সে তখন স্বর্গেই থাকত। শয়তান যখন অত সুন্দর গাছটিকে দেখল, তার গা জ্বলে উঠল। গাছটির পেছনে না লাগলে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না সে। তাই তক্কে তক্কে রইল। একদিন সুযোগ বুঝে গিয়ে গাছটিকে উপড়ে ফেলল সে। তারপর সেটাকে পৃথিবীতে এনে ডালপালা শুদ্ধ মাটির গভীরে উল্টো করে পুঁতে ফেলল। আর শিকড়গুলো রয়ে গেল মাটির ওপরে। বেচারা গাছ! তার তো আর হাত-পা নেই যে চাইলেই সোজা হয়ে যাবে। উল্টো হয়েই রইল অমন। 
গল্পটি সত্য কী মিথ্যা তা কে জানে। তবে গাছটি কিন্তু সত্যি। বিশ্বাস না হলে যেতে হবে আফ্রিকার মরুভূমির বুকে। সেখানেই আছে এই বাওবাব গাছ!

নিবাস
গাছটির আদি নিবাস আফ্রিকা, আরব এবং অস্ট্রেলিয়াতে। তবে পাওয়া যায় মাদাগাস্কার এবং ভারতের কয়েকটি অঞ্চলেও। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় মেসিনা নামক অঞ্চলে। তাই মেসিনাকে বলা হয় দ্য বাওবাব টাউন। মাদাগাস্কারে বাওবাব গাছকে ‘টি পট ট্রি’ বলে, কারণ কাণ্ডের সঙ্গে চায়ের কাপের অদ্ভুত মিল। অস্ট্রেলিয়ায় একে বলে দ্য প্রিজন ট্রি, মানে জেলখানা গাছ! 

গাছের কথা
বাওবাব গাছ Adansonia গণের উদ্ভিদ, জন্মে মরুভূমিতে। একহারা গড়নের গাছের কাণ্ডটি মাটি থেকে সোজা ঊর্ধ্বমুখী। ডালপালার বালাই নেই বললেই চলে। মাথায় ঝোপের মতো কয়েকটি ডাল ছাতার মতো সাজানো। দূর থেকে দেখলে কারও মনে হবে একটি গাছকে বুঝি কেউ উঠিয়ে শিকড় উপুড় করে পুঁতে দিয়েছে! সবচেয়ে বড় গাছটি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার লিনপোপো প্রদেশের একটি খামারে। সেটার উচ্চতা ৪৭ মিটার আর বেড় ২২ মিটার। এর নাম সানল্যান্ড বিগ বাওবাব। কার্বন ডেটিং করে এই গাছটির বয়স নির্ধারিত হয়েছে ৬ হাজার বছর। অর্থাৎ গাছটির যখন জন্ম, সম্রাট অ্যালেক্সান্ডার তখনো পৃথিবীতে আসতে সাড়ে ৩ হাজার বছর দেরি। সক্রেটিসের খোঁজ নেই। পিরামিড তখনো ভবিষ্যতের গর্ভে।
শিমুল গোত্রীয় গাছটি পত্রমোচী ঘরানার। বছরের অধিকাংশ সময়ে কোনো পাতা থাকে না। তখন মৃত গাছ বলে ভ্রম হয়। গ্রীষ্ম শেষে নতুন পাতা গজায় বাওবাব গাছে। পাতা না থাকলেও এরা কাণ্ডের ভেতরে খাদ্য এবং পানি সঞ্চয় করে রাখে। খাদ্য-পানি সঞ্চিত হতে হতে কাণ্ডটি ব্যারেলের মতো মোটা হয়ে যায়। কোনো কোনো গাছ তার কাণ্ডে ১ লাখ ২০ হাজার লিটার পানি ধরে রাখতে পারে। এত পানি নিজের শরীরে ধরে রাখলেও জলাবদ্ধ জায়গায় এরা বাঁচতে পারে না। প্রাণিকুলের হাত থেকে যথেষ্ট সুরক্ষিত এরা, একমাত্র হাতিই পারে এর ক্ষতি করতে। আরেক জাতের ছত্রাক এদের জন্য প্রাণঘাতী। সব গাছের আকার এক রকম হয় না। এদের আকার নির্ভর করে এলাকা ও প্রজাতির ওপর।

মানুষের আবাস
মাদাগাস্কারের প্রকাণ্ড সব বাওবাব গাছের কোটরে একসময় সেখানকার আদিবাসীরা বসবাস করত। আর অস্ট্রেলিয়ার বাওবাবগুলো ব্যবহার হতো আরও বৈচিত্র্যময় কাজে। সেখানকার অধিবাসীরা কারাগার হিসেবে ব্যবহার করত বাওবাবের প্রকাণ্ড খোঁড়ল। কোনো কোনো কোটরে নাকি ২০-২৫ জন বন্দিও ধরে যেত! ভাবুন তাহলে কত বড় হয় বাওবাব গাছ। এজন্য এদের নাম বাওবাব প্রিজন ট্রি! অস্ট্রেলিয়ার উইন্ডহ্যাম অঞ্চলে দেখা মেলে এই বাওবাব প্রিজন ট্রির। এখন অবশ্য বন্দি রাখার বন্দোবস্ত নেই। বরং পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় এক জায়গা এটি! রীতিমতো সারা বিশ্ব থেকে মানুষ আসে এই গাছগুলো দেখতে। 

রূপকথার গল্প যে কারণে টিয়ার ঠোঁট লাল

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
যে কারণে টিয়ার ঠোঁট লাল
এঁকেছেন মাসুম

টিনা এখন গল্প লিখতে পারে। এই তো গতকালই লিখেছে এক মজার গল্প। রূপকথার গল্প। গল্পটি টিয়া পাখিদের নিয়ে। টিয়া পাখির ঠোঁট কেন লাল হলো! শুনতে চাও? বলছি তাহলে।
সুন্দরপুর রাজ্যের রাজবাড়িটাও সুন্দর। রাজবাড়ির ভেতরের দিকটায় ছিল বিশাল এক তালগাছ। তালগাছের ছোট্ট গর্তে বাস করত এক টিয়া জুটি। ওই টিয়াপাখির ডানার পালক সবুজ। গায়ের পশম সবুজ। ঠোঁট সবুজ। দুটো পা তাও সবুজ। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের ডিম ফুটে বের হলো ফুটফুটে চারটি ছানা। তুলতুলে- নাদুসনুদুস।
তিন বছরের বাণিজ্য শেষ করে ঘরে ফিরেছেন সুন্দরপুরের রাজা। একদিন হঠাৎ তিনি তালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে আদেশ দিলেন, তালগাছটি কাটতে হবে। রাজা তো জানেন না, তালগাছের গর্তে মাংসের দলার মতো এখনো দুটো ছানা আছে। ও হ্যাঁ, চারটি ছানার দুটি তখন উড়তে শিখেছে। সামান্য উড়তে পারে, এ ডাল থেকে ও ডালে।
পরের দিন তালগাছ কাটা শুরু হলো। একটু পরেই ধপাস করে পড়ল ফাঁকা দিকটায়। মা-বাবা আর উড়তে পারা ছানা দুটি গিয়ে বসল পাশের সুপারি গাছের মাথায়। ভাগ্যিস গর্তে থাকা ছানাদের কিছুই হলো না। চিউচিউ করে ডেকে উঠল ওরা, চিউচিউ চিউচিউ...
রাজার ছিল ছোট্ট এক মেয়ে। ওর নাম কমলা। কমলার কিন্তু চোখ এড়ায়নি কিছুই। টিয়া ছানাদের প্রতি খুব মায়া হলো তার, খু-উ-ব মায়া। ছানা দুটোকে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকল সে। খাবার তুলে দিল মুখে, থাকতে দিল নরম তুলার ওপর।
কয়েক দিনের যত্নে ওদের শরীরে বেশ পশম গজিয়ে উঠল। ঠোঁট আর পায়ের নখ শক্ত হলো। কমলার সঙ্গে পাখি দুটির হয়ে উঠল দারুণ বন্ধুত্ব। খাঁচার দরজা সব সময়ই খোলা থাকে। টিয়া দুটি খুব সকালে উড়ে যায় দূরের বনে। পাকা ফলমূল খায়। সূর্যমুখীর পাকা বীজ খায়। খেতের লাল টুকটুকে পাকা মরিচ খায়। আবার ফিরে আসে ঘরে। কমলার হাতের ওপর বসে। কাঁধের ওপর বসে। মাথার ওপর বসে। রাজকন্যার নাম ধরে ডাকে। বলে, কমলা উঠো উঠো উঠো, পড়ো পড়ো পড়ো...ভোর হয়েছে। আরও অনেক কথা।
দেখতে দেখতে কমলাও বড় হয়ে উঠল। ভালো দিনক্ষণ দেখে গোলাপগড় রাজ্যের রাজপুত্রের সঙ্গে ঠিক হলো বিয়ে। রাজবাড়িতে খুশির হাওয়া বইতে লাগল। সবার মুখে মুখে একটাই কথা, রাজকন্যার বিয়ে, রাজকন্যার বিয়ে। এই তো আগামী শুক্রবার।
গায়ে হলুদের দিনে রাজকন্যার মতো দাসী-পড়শি সবাই খুব সেজেছে। এক একটা পরী যেন সবাই। টিয়া পাখিকে হাতের ওপর তুলে খুব আদর করল রাজকন্যা কমলা। হঠাৎ কী ভেবে কমলার চোখ ছল ছল করে উঠল। রাজকন্যা বলল, ভালো করে শোন পাখিরা, কাল থেকে তোমরা মুক্ত হাওয়ায় উড়বে। বনে ফিরে যাবে দুজন। বনে বাসা বাঁধবে। চলো দুজনকে একটু সাজিয়ে দিই। 
রাজকন্যা এগিয়ে গেল ঘরের কোণে রাখা আলতার বিশাল ভাঁড়ের দিকে। সবুজ টিয়ার ঠোঁট আর পায়ে মাখিয়ে দিল খানিক আলতা। সবুজ ঠোঁট হয়ে উঠল টুকটুকে লাল।
রাজকন্যার বিয়ের পর লাল ঠোঁট নিয়ে বনে ফিরে এল টিয়াপাখি। বনের অন্য সব টিয়া তো অবাক! অমন সুন্দর ঠোঁট! তাদেরও চাই অমন একটা লাল টুকটুকে ঠোঁট। কী আর করা, লাল ঠোঁটের টিয়া বলেই দিল সেই আলতা ভাঁড়ের ঠিকানা। একে একে রাজবাড়িতে ছুটে এল সব টিয়া। নিজেরা ঠোঁট লাল করে অন্যদের জন্যও নিয়ে গেল কিছু আলতা। আর সেই থেকে সবুজ টিয়ার ঠোঁট হলো অমন লাল। তেমনি লাল হলো পায়ের কিছুটা অংশ।

যে কারণে একেক দেশে একেক সময় চাঁদ দেখা যায়

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
যে কারণে একেক দেশে একেক সময় চাঁদ দেখা যায়
সংগৃহীত

চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ হলেও বিশ্বের সব দেশের অধিবাসীরা একই সময়ে চাঁদ দেখতে পায় না। কোনো দেশে আগে, আবার কোনো দেশে পরে দেখা যায়।
জ্যোতির্বিদদের মতে, চাঁদ আগে পশ্চিমের দেশগুলোতে দেখা যায়, এরপর পূর্বের দেশগুলোতে। ফলে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল যেসব অনুষ্ঠান বা উৎসব যেমন রোজা, ঈদ ইত্যাদি কোথাও আগে, আবার কোথাও পরে শুরু হয়। যেমন চলতি বছর সৌদি আরব ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়। পরদিন ১ মার্চ থেকে শুরু হয় রোজা।
অন্যদিকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরান, ওমান, জর্ডান, লিবিয়া ও মরক্কোসহ বেশ কয়েকটি দেশের আকাশে ১ মার্চ রমজানের চাঁদ দেখা যায়। এসব দেশে রোজা শুরু হয় ২ মার্চ। অর্থাৎ সৌদি আরবে আগে চাঁদ দেখা যায়। আর ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে পরে। কারণ সৌদি আরবের অবস্থান পশ্চিমে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অবস্থান পূর্বে।
এই হেরফেরের কারণ কী? জ্যোতির্বিদরা বলছেন, দূরত্বের কারণে সব দেশ থেকে একই সময়ে চাঁদ দেখা যায় না। তাদের মতে, যত পশ্চিমে যাওয়া যাবে, তত তাড়াতাড়ি চাঁদ দেখা যাবে। আর যত পূর্ব দিকে যাওয়া যাবে, তত দেরিতে চাঁদ দেখা যাবে। এই কারণে নতুন চাঁদ উঠলেও পশ্চিম দিকে হওয়ায় সৌদি আরবে বাংলাদেশের আগে চাঁদ দেখা যাবে।
জ্যোতির্বিদরা আরও বলছেন, পৃথিবীর আকার গোল। সে কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদ দেখা যাবে দূরত্বের অনুপাতে। চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবীর নিরক্ষ রেখার সঙ্গে সোয়া ৫ ডিগ্রিতে হেলানো থাকে। ফলে একই সময়ে পৃথিবীর কোথাও একই সময়ে চাঁদ দেখা যায় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন গাণিতিক গণনার মাধ্যমে বের করে ফেলা যায় কোথায়, কখন কোন অক্ষাংশে চাঁদ যাবে বা অবস্থান করবে। চাঁদ কখনো স্থির হয়ে থাকে না। ফলে এটা সহজেই বোঝা যায়, চাঁদের অবস্থান কোথায়। ফলে রোজা রাখা বা ঈদের ক্ষেত্রে ইসলামি মতে, চাঁদ দেখতে হবে। চাঁদ একেক দেশ বা এলাকায় একেক সময়ে দেখার কারণে রোজা, ঈদসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে হয়ে থাকে।

ঈদ

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০২:০০ পিএম
ঈদ
এঁকেছেন মাসুম

মা-বাবার সঙ্গে ঈদের শপিং করতে গেল তনয়। রংবেরঙের জিনিসপাতি দেখে আনন্দে আটখানা সে। এদিকে তাকিয়ে থাকে। ওদিকে তাকিয়ে থাকে। কখনো বা নাচতে থাকে। সবকিছুই যেন পছন্দ হয়েছে ওর। 
বাবা বললেন, তুমি কী কী কিনতে চাও?
তনয় বলল, সবকিছু কিনতে চাই। 
বাবা বললেন, সব তো কেনা যাবে না সোনা বাবা।
তনয় বলল, সব কেনা যাবে না কেন?
বাবা বললেন, সব দিয়ে আমরা কী করব? আমাদের যেটা যেটা দরকার, সেটা সেটা কিনতে হবে।
না বাবা, আমি সব কিনব, সব।
মা একটু রাগ মেশানো গলায় বললেন, তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছ তনয়।
তনয় মানুষদের দেখিয়ে অভিযোগ করে বলল, দেখো মা, দেখো, কত মানুষে কত কথা বলছে। তাদের মা-বাবা তো রাগ করছে না।
তনয়ের কথা শুনে মা-বাবা দুজনেই হাসলেন। তারপর তনয়কে নিয়ে জুতার দোকানে গেলেন। তনয়ের জন্য কেনা হলো লাল টুকটুকে একজোড়া জুতা। হাঁটলেই লালবাতি জ্বলে। বাঁশি বাজে প্যা পো পো। এমন জুতা পেয়ে ওর নাচানাচি আরও বেড়ে গেল। 
তারপর কিনে দেওয়া হলো রঙিন পায়জামা-পাঞ্জাবি। টুপি। খুশবু। রঙিন কাচের রোদচশমা। ঘড়ি। কিনে দেওয়া হলো ঝুনঝুনি। আরও অনেক কিছু। মা-বাবাও কিনলেন জামাকাপড়। দরকারি জিনিসপাতি। 
সব শেষে মা বললেন, তোমার আরও কিছু লাগবে তনয়?
তনয় বলল, একটা জিনিস লাগবে মা। আমাকে একটা ঈদ কিনে দাও। খুব সুন্দর একটা ঈদ চাই।
মায়ের তো মাথায় হাত। বাবাও অবাক। এ কী বলছে ছেলেটা! 
মা বললেন, ঈদ কেনা যায় না বাবা। ঈদ এমনিতেই আসবে। মাত্র তিনটা দিন বাকি।
আমাকে ঈদ কিনে দিতেই হবে। ঈদ না নিয়ে আমি বাড়ি যাব না। বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল তনয়।
বাবা বললেন, সামনের বছর তোমাকে ইশকুলে ভর্তি করে দেব। তুমি অনেক বড় হয়েছ। এমন কথা বললে তুমি ইশকুলে পড়তে যাবে কেমন করে? শোনো বাবা, তোমার মায়ের কথাই ঠিক। ঈদ কেনার জিনিস নয়। ঈদ হচ্ছে খুশির দিন। এমনিতেই আসে। আকাশে কাস্তে বাঁকা রুপার চাঁদের হাসি দেখে খুশিতে হাসতে হাসতে ঈদ আসে। আর মাত্র তিন দিন পরেই আসবে রঙিন ঈদ। খুশির ঈদ।
বাবার কথায় শান্ত হলো তনয়। 
ঘটনা একটা ঘটল ঈদের দিন ভোরবেলা। তনয়কে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘুম থেকে উঠেই হাওয়া।
এ-ঘর, ও-ঘর, এমনকি উঠানের এপাশে ওপাশে কোথাও নেই। মা তনয়কে গোসল করিয়ে নতুন জামাকাপড় পরিয়ে দেবে। বাবার সঙ্গে তনয় যাবে ঈদগাহে। কিন্তু তনয় নেই। কোথায় যাবে এই ছোট্ট খোকা? মা কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে লাগলেন, কই গেলি তনয়? আমার সোনা বাবা, কই গেলি তুই?
বাবা ভেজা চোখে খুঁজতে বেরোলেন তনয়কে। তনয়দের বাড়ি থেকে বড় রাস্তার দিকে একটা পথ চলে গেছে। বাবা সেই পথ দিয়ে দৌড়ে যেতে লাগলেন। কিছুদূর গিয়েই হঠাৎ থেমে গেলেন। দেখলেন, পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে তনয়। জিজ্ঞেস করলেন, এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছ কেন তুমি?
তনয় বলল, তোমরা না বলেছ, আজ ঈদ আসবে। তাই তো এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এই পথ দিয়ে নানা-নানু আসে। মামা আসে। ঈদও এখান দিয়েই আসবে। ঈদ এলে তাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাব। ঈদ আসছে না কেন বাবা? 
তনয়ের কথা শুনে বাবা একেবারে হাসতে হাসতে কুটিকুটি। বললেন, বাড়ি চলো তনয়। আমাদের ঈদ এসে গেছে। বাড়ি গিয়ে গোসল করব। তারপর ফিরনি-পায়েস খাব। তারপর নতুন জামা-জুতা পরে ঈদগাহে যাব। নামাজ পড়ব। সেখানে রঙিন রঙিন জামাকাপড় পরে আরও কত মানুষ আসবে!
ঈদ এসেছে! ঈদ এসেছে! এই কথা বলতে বলতে, নাচতে নাচতে বাবার সঙ্গে বাড়ির দিকে ছুটল তনয়।

প্যাঙ্গোলিন: আঁশওয়ালা লাজুক প্রাণী

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
প্যাঙ্গোলিন: আঁশওয়ালা লাজুক প্রাণী
প্যাঙ্গোলিন

আচ্ছা তোমরা কি কাঠবিড়ালী চিনো? যারা গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়ায়। তবে আজকে তোমাদের কাঠবিড়ালী সম্পর্কে বলব না। আজ জানাব ‘প্যাঙ্গোলিন’ বা বনরুই নামের এক সুন্দর প্রাণী সম্পর্কে। 
এই প্রাণী কাঠবিড়ালীর মতো গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। এদের শরীরের জন্যই এরা বেশি জনপ্রিয়। কেননা প্যাঙ্গোলিনের শরীরে মাছের আঁশের মতো বড় বড় আঁশ দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। শত্রু কিংবা বিপদের ঘ্রাণ ফেলেই এরা শরীর গুটিয়ে ফেলে। শক্ত বলের মতো কুঁকড়ে যায়। চলো প্যাঙ্গোলিনের শারীরিক গঠন সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানা যাক।
প্যাঙ্গোলিন স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের চারটি পা, একটি লেজ আছে। পায়ে আছে পাঁচটি করে আঙুল। এদের মাথা সরু ও ছোট। প্যাঙ্গোলিনের কোনো দাঁত নেই। তবে তাদের আঠাল জিভ আছে, যা দিয়ে তারা খাবার ধরে খেতে পারে। 
কিছু কিছু প্যাঙ্গোলিনের ইয়া বড় জিভ থাকে। এটা দিয়ে তারা শিকার করতে পারে। তা ছাড়া তারা শিকার করতে নখও ব্যবহার করে। এদের প্রধান খাদ্য পিঁপড়া, উইপোকা ইত্যাদি। প্যাঙ্গোলিন জনপ্রিয় তার শরীরের আঁশের কারণে। এদের শরীরের আঁশগুলো অনেকটা রুই মাছের মতো সাজানো থাকে। তাই একে বনরুইও বলা হয়। এই আঁশগুলো অনেকটা আমাদের নখের মতো। কারণ এই আঁশগুলো কেরাটিন নামক এক ধরনের পদার্থ দিয়ে তৈরি। কেরাটিন দিয়ে মানুষের নখ এবং চুলও তৈরি। এরা বিপদের আঁচ পেলেই বলের মতো করে শরীর গুটিয়ে ফেলে। তাদের এই অবস্থাকে মালয় ভাষায় বলা হয় ‘পেঙ্গুলিন’। সেখান থেকে তাদের নাম ইংরেজিতে হয়েছে প্যাঙ্গোলিন।
প্যাঙ্গোলিন দেখলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এরা শান্ত মেজাজের এবং খুব লাজুক স্বভাবের হয়ে থাকে। মানুষকে আক্রমণ করে না। মানুষ দেখলে এরা লুকিয়ে যায়।
প্যাঙ্গোলিন খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারে এবং গাছে চড়তে পারে। এরা মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বাস করে। এদের কোনো কোনো প্রজাতি গাছে বসবাস করে। শিকারি থেকে বাঁচতে গাছের ফাঁপা অংশে ঘুমায়। এরা বেশির ভাগই দিনে ঘুমায়, রাতে জেগে থাকে। অর্থাৎ এরা নিশাচর প্রাণী।
প্যাঙ্গোলিন এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। পৃথিবীতে সাত প্রজাতির বনরুই রয়েছে, এদের মধ্যে এশিয়ায় আছে চার প্রজাতির বনরুই বা প্যাঙ্গোলিন। আবার তিন প্রজাতির প্যাঙ্গোলিন বাংলাদেশে দেখা যায়। দুঃখের বিষয় হলো, এই ছোট্ট সুন্দর প্রাণীটি বিলুপ্তির পথে। মানে পৃথিবী থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তারা। শিকারিরা অবৈধভাবে তাদের পাচার করার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কেউ কেউ প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণে ব্যবস্থাও নিচ্ছে।