গ্রীষ্মের সূর্য
জিকরুল ইসলাম
সূর্য মামা গ্রীষ্মকালে
রাগে একটু বেশি
রেগে গিয়ে গরম ছড়ায়
অতিষ্ট দেশবাসী
দাদু ঢাকে টাক মাথাকে
মস্ত ছাতা দিয়ে
বাবা মায়ের ঝগড়া চলে
হাত পাখাটা নিয়ে
খোকন শোনা খেলতে গিয়ে
গায়ে ঝড়ায় ঘাম
সূর্য বলে, কে-রে বাবা
কী তোমার নাম?
আমি হলাম গাঁয়ের ছেলে
চলবে আমার কাজ
আমার কাছে হেরে গিয়েও
নেই কি তোমার লাজ।
খুকুর মামার বাড়ি
নকুল শর্ম্মা
মামার বাড়ি পদ্মপুকুর
সেই পুকুরে সকাল দুপুর
পদ্ম ফুলের মেলা,
খুকু দেখে প্রজাপতি
সঙ্গে নিয়ে খেলার সাথী
কাটায় সারাবেলা।
পুকুরপাড়ে গাছের সারি
পাকা খেজুর কাড়ি কাড়ি
ঝুলছে গাছে গাছে,
খুকু বেড়ায় আপনমনে
আম কাঁঠালের বনে বনে
খেলছে ঘূর্ণি নাচে।
বছর পরে মামার বাড়ি
চড়ে এলো রেলের গাড়ি
দূরের শহর ছেড়ে,
মাঠ পেরিয়ে সবুজ ঘাসে
শিশির জলে মুক্তা হাসে
মন নিয়ে যায় কেড়ে।
বোশেখ মাসে
নুশরাত রুমু
বোশেখ মাসে ঝড় এলো রে
পড়ছে কাঁচা আম
খোকা-খুকু আয় কুড়াতে
টুকরি হাতে নাম।
শনশনিয়ে বাঁশের পাতা
দুলছে ভীষণ জোরে
দড়াম করে বন্ধ কপাট
পাগলা হাওয়ার ঘোরে।
উড়ছে ধুলো খুব দাপটে
যাবে না চোখ খোলা
মাঠের ওপার ঘন আঁধার
করছে আত্মভোলা।
কালো মেঘে কড়াৎ সুরে
ফেলছে শোনো বাজ
গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিতে
চলে রুক্ষ সাজ।
গরমে নাকাল জীবন
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
লাগছে গরম খুব বেশি
খোকার মুখে নাই হাসি
হাঁটছে এ ঘর ও ঘর,
করছে কেবল উহ আহ
বাড়ছে শুধুই তাপ দাহ
আসতে পারে জ্বর।
ভীষণ তাপে ঘুম হারাম
দাদুর মনে নাই আরাম
এপাশ-ওপাশ করে,
যাদের ঘরে নাই এসি
কষ্ট তাদের খুব বেশি
ঘাম যে শুধুই ঝরে।
পুড়ছে শহর রাস্তা-ঘাট
রৌদ্রে খাঁখাঁ দূরের মাঠ
সূর্যের আগুন দৃষ্টি,
হে দয়াময় দাও তুমি
ঠান্ডা করো এই ভূমি
নামাও অঝোর বৃষ্টি।
জাদুর পাখি
সাঈদুর রহমান লিটন
মেলা থেকে কিনেছি এক লাল-খয়েরি পাখি
যত্ন করে পড়ার ঘরে আগলে আগলে রাখি।
মাঝে মাঝে গান গেয়ে যায় ভাটিয়ালি সুরে,
সেই পাখিটি ছেড়ে দিলে আমার পাশে ঘোরে।
বাড়ির পাশে আম বাগানে আম পাতার মাঝে
লুকিয়ে থাকে চুপটি করে আমের পাতার ভাঁজে।
খুঁজে তারে না পাই যদি ফিসফিসিয়ে ডাকে
হঠাৎ করে করে উড়ে যাবে পলক পড়ার ফাঁকে।
লম্বা লেজে গাজের ডালে হেলেদুলে হাঁটে
আমার হাতে বসে বসে যাবে খেলার মাঠে।
সবার সাথে ভাব জমিয়ে বুট ভাঁজা সে খাবে
সবার চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি চলে যাবে।
সন্ধ্যা হলে পড়ার ঘরে একটু একটু পড়ে
সেই পড়াটি জাদুর পাখি এই আমাকে ধরে।
যেই বা আমি পাখি পড়া আর পারি না পড়তে
মুচকি হাসি হেসে আমায় বলে কানটি ধরতে।
আমাদের ছোট গ্রাম
মো. দিদারুল ইসলাম
আমাদের ছোট গ্রাম ছিল সুখে ভরা,
পথ-ঘাটে ছায়া ছিল, ছিল নাকো খরা।
সবুজ গাছের সারি ছোট ঘরবাড়ি,
ঘাসে ঢাকা সরু পথে ছিল নাকো গাড়ি।
গাছে গাছে আম-জাম ছিল কত ফল,
মেহমান এলে ঘরে দিত মুড়ি জল।
ফসলের মাঠ ছিল সারা গাঁওজুড়ে,
দলবেঁধে পাখিসব নীড়ে যেত উড়ে।
গ্রামের পাশেই ছিল টলটলে নদী,
খোকা-খুকি ডুব দিত ফাঁক পেত যদি।
জেলেদের জালে ছিল মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে,
গুণ টানা নাও ছিল নদীর ঐ বাঁকে।
বরষার জল এলে মাটি পেত প্রাণ,
দখিনা পবনে ছিল ফসলের ঘ্রাণ।
আমাদের গ্রামে নেই অতীতের বায়ু,
দূষণের চাপে পড়ে কমে গেছে আয়ু।
লাগছে ভীষণ গরম
জোবায়ের রাজু
ভীষণ গরম পড়ছে এখন
শরীর ভিজে ঘামে,
তাই তো খোকা স্নান করিতে
জলের ঘাটে নামে।
পুকুরের জল নয়তো শীতল
গরম রবির তাপে,
পুকুরপাড়ে শালিক পাখি
কষ্ট পেয়ে কাঁপে।
দীর্ঘ সময় ধরে খোকা
সাঁতার কাটে খুব,
বারে বারে দিচ্ছে খোকা
মাঝ পুকুরে ডুব।
এমন গরম পড়ছে কেন
নড়ছে না তো পাতা,
রোদের তাপে খোকার দাদু
মাথায় দিলেন ছাতা।
জানালার সব কপাটগুলো
রাখা আছে খোলা,
একটুখানি বাতাস এসে
দেয় যদি দেয় দোলা।
এমন গরম ভাল্লাগে না
খারাপ খোকার মন,
ভাবছে খোকা শীতের বুড়ি
আসবে যে কখন!
গরমের ঘোরে
হাফিজুর রহমান
ডিম পাড়া মুরগিটা
গরমেতে হাঁসফাঁস,
তাপ মাখা বাতাসের
বৈশাখ এই মাস।
হাই তুলে হাঁপানোয়
উচ্চ ডানায়,
পুকুরের জলে হাসে
মাছের ছানায়।
সূর্য দোলায় জল
দোলে গাছ-পাতা,
এই দেখে মুরগিরও
ঘুরছে যে মাথা।
ঝড় চাই বৃষ্টি চাই
এম. আব্দুল হালীম বাচ্চু
বৈশাখী ঝড় চাই সাথে টানা বৃষ্টি
আকাশের দিকে আর দেব কত দৃষ্টি!
আয় মেঘ ছুটে আয় সারা দেশজুড়ে
পাই যেন শীতলতা পথঘাট ঘুরে।
মাঠঘাট ভিজে যাক উবে যাক তাপ
খাল বিলে ডেকে ডেকে ব্যাং দিক ঝাঁপ!
শিশুদের খেলাধুলা হোক অবারিত
কৃষকেরা কৃষিকাজে হোক পুলকিত।
আগুনের মতো এই বৈশাখ মাসে
পাখিদের নীড়ে যেন সুখ ফিরে আসে।
রাতে হোক দিনে হোক চাই ঝড় বৃষ্টি
ফিরে চাই আগেকার বৈশাখী কৃষ্টি।
জাহ্নবী