ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
English

অবারিত সুযোগ অনাবিল সম্ভাবনা

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ০১:০০ পিএম
আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ০১:০২ পিএম
অবারিত সুযোগ অনাবিল সম্ভাবনা
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআর) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী

মোহাম্মদ জয়নুল বারী বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআর) চেয়ারম্যান। সাবেক এই সচিব ২০২২ সালের ১৬ জুন আইডিআরে যোগদান করেন। দেশে বিমাশিল্পের গুরুত্ব কতটুকু, অর্থনীতিতে কি ভূমিকা পালন করছে, বাংলাদেশে বিমাশিল্পের বিদ্যমান পরিস্থিতি, সম্ভাবনা ও সংকটসমূহ কি- এসব বিষয় নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এম মনিরুল আলম

খবরের কাগজ: আমাদের দেশে বিমা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের ধারণা কি বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: এক কথায় বলতে গেলে বিমা হলো এক ধরনের প্রটেকশন বা আর্থিক সুরক্ষা। সাধারণত, জীবন ও জীবিকার সব প্রক্রিয়ায় বিমার গুরুত্ব রয়েছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা, সড়কে পরিবহন দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি, সন্তানের শিক্ষা, বাড়িঘর বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি- এসব কিছুতেই আর্থিক সুরক্ষা সেবা দিয়ে থাকে বিমা কোম্পানি। আমাদের দেশে বিমা কোম্পানিগুলো নিজেদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও অর্থ লোপাটের কারণে সময়মতো গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে না পারায় বিমা সম্পর্কে জনগণের মাঝে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তারপরও অনেকগুলো বিমা কোম্পানি ভালো করছে।

খবরের কাগজ: বিমাশিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: আমাদের বিমাশিল্প খারাপ নেই। প্রতিবছর ৯-১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। পলিসির বিপরীতে প্রিমিয়াম আয় হয়। আর্থিক মূল্যে এর পরিমাণ বছরে ১৪-১৫ হাজার কোটি টাকা। তবে জিডিপি অনুপাতে এ হার খুবই কম। গতবছর ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের মতো। শতাংশের হিসেবে এ বছর এটি আরও কমে আসতে পারে। কারণ হলো: আমাদের জিডিপি বড় হচ্ছে। জিডিপির আকার অনুযায়ী বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয় সামান্য। তার মানে হলো: আমাদের এই শিল্প ব্যাপক বিকাশের সুযোগ রয়েছে। তবে প্রিমিয়াম আয় কমছে না। আমি যতটুকু জেনেছি শুধু করোনা সংক্রমণের বছর ছাড়া অন্য সব বছরে বিমা খাতে প্রিমিয়াম আয় ভালো হয়েছে। আমাদের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এটি অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। 

খবরের কাগজ: বিমা খাত কি সঠিকভাবে মনিটর করতে পারছে সরকার? 
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: ২০১০ সালে আইডিআরএ গঠনের মাধ্যমে বিমাশিল্প নতুন যাত্রা শুরু করেছে। আগে তো একেবারেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছিল। এখন অনেকটা গুছিয়ে আনা হয়েছে। রেগুলেটর বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ২০১১ সালের পর এই খাতে একটু একটু করে শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।

খবরের কাগজ: প্রিমিয়াম নেওয়ার পর গ্রাহককে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষায় বিমা কোম্পানি ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কি ভূমিকা হওয়া উচিত।
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: অবশ্যই এটি দায়। প্রিমিয়াম নিলেন মানে আপনি দায় নিলেন। এ দায় হলো সময়মতো বিমা কোম্পানি গ্রাহকের টাকা বা প্রাপ্য মুনাফাসহ প্রশ্নাতীতভাবে ফেরত দিবে।

নেতিবাচক দিকটা হলো, অনেক গ্রাহক সময়মতো বিমা দাবি ফেরত পাচ্ছে না। এ কারণে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আস্থা ও বিশ্বাস হারাচ্ছে। যে একবার বিমা করে তার প্রাপ্য টাকা ফেরত পায়নি, সে তো আর বিমার সেবা নিবে না। এ খাতে আর ফিরবে না। বরং অন্যদের তার বঞ্চনার কথা বলবে। এতে সম্ভাবনাময় গ্রাহকরা উৎসাহ হারাবে। এটিই হচ্ছে আমাদের এখনকার বিমাশিল্পের বাস্তবতা। এর কারণ হলো কতিপয় বিমা কোম্পানি নিজেরা প্রিমিয়াম আয়ের অর্থ সরিয়েছে বা মন্দ বিনিয়োগ করেছে। আবার কোনো কোম্পানি অধিক মুনাফার আশায় শেয়ারবাজার বা নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। দুর্ভাগ্যবশত শেয়ারের দরপতন হয়েছে বা ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠান মন্দ গ্রাহকের কাছে বিনিয়োগ করেছে। এতে করে বিমা কোম্পানি টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রাহককে টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। এমন অভিযোগও আমরা পেয়েছি যে, বিমা কোম্পানির মালিকরা ব্যক্তিগত জমি কিনেছে, গাড়ি, বাড়ি কিনেছে প্রিমিয়াম আয় দিয়ে। তারা তো বিনিয়োগ করেনি।

হাজারো অভিযোগ আমাদের কাছে আসে, বিমা দাবির টাকা ফেরত পাচ্ছে না গ্রাহক। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমরা নিয়মনীতির মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওয়ান টু ওয়ান আলোচনার উদ্যোগ নিয়েও সমাধান পেতে গ্রাহককে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। 

খবরের কাগজ: সাধারণ বীমার সেবা নিয়ে কিছু বলুন। কোম্পানিগুলো বাকিতে প্রিমিয়াম ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো ঠিকঠাক চলছে। বাকি ব্যবসাও এক ধরনের ব্যবসা। এটা গ্রাহক ও সেবাদাতার মধ্যে বোঝাপড়ায় হয়ে থাকে। এ খাতে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। যত অভিযোগ, ক্ষোভ সব জীবন বিমায়।

খবরের কাগজ: স্বাস্থ্য বিমা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: জীবন বিমা কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্য বিমায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাতে পারেনি। এর কারণ হলো নীতিমালার অভাব। এত দিন একটি সার্কুলার দিয়ে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে শুধু স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিমা করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। আমি আসার পর সেটা প্রত্যাহার করেছি। বর্তমানে এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিমা পলিসি বিক্রিতে কোনো বাঁধা নেই। তবে এ বিমা পলিসিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটা ভূমিকা রাখার প্রয়োজন আছে। এবার আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। কারণ একজন গ্রাহক কোন রোগের চিকিৎসায় কতটুকু আর্থিক সহায়তা পাবে, তার মেয়াদ কত দিন হবে, সেসব বিষয়ে নীতিমালা দরকার আছে।

খবরের কাগজ: এ দেশে ব্যাংকান্স্যুরেন্স একটি নতুন বিষয়। এটি বিমা ব্যবসায় কি প্রভাব ফেলবে?
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: ব্যাংকান্স্যুরেন্স একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমি মনে করি এটি বিমাশিল্পে বৈপ্লবিক না হলেও বিশাল পরিবর্তন আনবে। কারণ বিমা কোম্পানির ওপর আস্থার সংকট থাকলেও ব্যাংকের ক্ষেত্রে সেটা নেই। ব্যাংক গ্রাহকদের একটি বড় অংশ বিমার বাইরে রয়েছে। এদের কাছে বিমা এজেন্টরা পৌঁছাতে পারে না। সুতরাং প্রতিটি ব্যাংক কর্মকর্তা তার গ্রাহককে বিমা পলিসি গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করতে পারবে। আর এখানে প্রিমিয়াম আয় বকেয়া পড়ার সম্ভাবনা নেই। 

একটি কথা না বললেই নয় যে, ব্যাংক হলো বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে বিমা এজেন্টরা অনিয়মিত। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রয় করা পলিসি নিয়ে গ্রাহক আগের মতো শঙ্কায় থাকার বিষয়টা দূর হয়ে যাবে। পলিসির মেয়াদ শেষে দাবিকৃত টাকাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে। এটিই বড় পরিবর্তন আনবে বিমাশিল্পে।

খবরের কাগজ: এবার জাতীয় বিমা দিবস উদযাপন সম্পর্কে কিছু বলুন।
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবসে রাষ্ট্রপতি থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী এ দিবসে উপস্থিত থাকবেন। তিনি এ দিন ব্যাংকান্স্যুরেন্স উদ্বোধন করবেন। সারা দেশে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েও এ দিন নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ জয়নুল বারী: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকারে কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান ব্যবসা করি দেশ ও মানুষের জন্য

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ১২:০৮ পিএম
ব্যবসা করি দেশ ও মানুষের জন্য
কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান

কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, সততা, কথা দিয়ে কথা রাখার অসাধারণ গুণাবলি রয়েছে কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমানের। হাঁটিহাঁটি পা পা করে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কৃষি খাতের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। সমাজসেবী হিসেবেও পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বামা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ব্যবসা করেন দেশের জন্য, মানুষের জন্য। গড়ে তুলেছেন ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার গ্রুপ লিমিটেড ওয়ান ফার্মা লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠান। তিনি মনে করেন, ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা, সমৃদ্ধি ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান তার এগিয়ে চলার গল্প। জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কী পরিকল্পনা নিয়েছেন। 

খবরের কাগজ: নিজের ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি দেশের মানুষের জন্য, বেসরকারি খাতের জন্য এরই মধ্যে অনেক কিছু করেছেন। ভবিষ্যতের জন্য আরও অনেক কিছু করতে চান। এ বিষয়ে কিছু বলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান: পড়ালেখা শেষ না করতেই জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যবসা শুরু করেছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। অনেক বাধা এসেছে, হার মানিনি। নতুন উদ্যমে বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে চলেছি। ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। বেসরকারি খাতের বিকাশে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের মুখপাত্র হয়ে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। আমি মনে করি, এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের জন্য, বেসরকারি খাতের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী যোগ্য নেতৃত্ব। এফবিসিসিআইকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারলে দেশের সামগ্রীক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমি বেসরকারি খাতের বিকাশে ভূমিকা রাখতে চাই। এ জন্য এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী।  

খবরের কাগজ: এফবিসিসিআইকে আপনি কেমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান? 
মোস্তাফিজুর রহমান: দেশের অর্থনীতির বিকাশে এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকা বাড়াতে হবে। এফবিসিসিআইকে গতিশীল করা সম্ভব হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। বেসরকারি খাত গতিশীল হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। সরকারের অর্থসংকট কমবে। দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গতিশীল হবে। আমি এফবিসিআইয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। 

খবরের কাগজ: আপনি একই সঙ্গে ওষুধ শিল্প ও কৃষি খাতের ব্যবসায়ে জড়িত। এই খাতের উন্নয়নের কীভাবে ভূমিকা রাখতে চান? 
মোস্তাফিজুর রহমান: ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ ও অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের উন্নয়নে নীতি সহায়তা দরকার। এলডিসি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল ও অ্যাগ্রো ক্যামিক্যাল কৃষি রসায়ন শিল্প (কীটনাশক)- দুই খাতেরই গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এলডিসি সুবিধা প্রত্যাহার হলে এ দুই খাত কী ধরনের সমস্যা পড়বে, তা চিহ্নিত করে এর সমাধান করতে হবে। এলডিসি সুবিধা না থাকলে কোনো কোম্পানি যেন দুই খাতে পেটেন্ট সুবিধার অপব্যবহার করে একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারে, তার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। বেসরকারি খাতকেও সহযোগিতা করতে হবে। এখন দেশের ওষুধ খাতের ব্যবসা প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার। ১৬০টির মতো দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমেরিকা, জাপান, জার্মানির মতো উন্নত দেশও আছে এ তালিকায়। এখনই ওষুধ ও কৃষি খাতের উন্নয়নে নজর দিলে অনেক ধরনের প্রতিকূলতা এড়ানো সম্ভব হবে। 

খবরের কাগজ: কৃষি রসায়ন শিল্পের অন্যতম সমস্যা কী?
মোস্তাফিজুর রহমান: কৃষি রসায়ন শিল্পের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো বালাইনাশকশিল্প। দেশীয় বালাইনাশকশিল্প বিকাশে বিদ্যমান বিভিন্ন বাধা যেমন- সোর্স উন্মুক্তকরণ, কাঁচামালের আমদানি ও নিবন্ধন নবায়ন, সালফার আমদানি, এলসি খোলা, কাঁচামাল উৎপাদন, পেটেন্ট স্বত্ব নিবন্ধনের সরকারি ফি কমানো ও নবায়নের সময় বৃদ্ধি। এসব সমস্যা দূর করতে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। 

খবরের কাগজ: এসব ব্যবসা এগিয়ে নিতে আপনার আরও কী পরামর্শ আছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: এনবিআরের রেকর্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে গত বছর প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন কীটনাশক আমদানি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফিনিশড না হয়ে শুধু এ খাতের কাঁচামাল আমদানি করত, তাহলে ১ লাখ টনের পরিবর্তে ১৫ থেকে ২০ টন আমদানি করলেই হতো। এ হিসাব আমলে এনে সরকারকে কাঁচামাল আমদানিতে আরও সুবিধা দিতে হবে। 

খবরের কাগজ: দেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের ভূমিকা কেমন? এ ভূমিকা বাড়াতে আপনার পরামর্শ কী?
মোস্তাফিজুর রহমান: কৃষি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি প্রদানের উপকরণ। দেশের অর্থনীতি বহুলাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের শ্রমশক্তি গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ শতাংশের বেশি। কৃষির উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। কৃষি আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তাই সরকারকে বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।

খবরের কাগজ: অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে আপনি আরও কী বলবেন? 
মোস্তাফিজুর রহমান: বর্তমানে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সরকারকে কৃষির উন্নয়নে জরুরিভাবে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষির উন্নয়নে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার, গুণগত মানসম্পন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন, সারের মূল্য হ্রাস, সুষম সার প্রয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বেসরকারি কোম্পানিদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বেসরকারি খাতে দেশে মানসম্পন্ন সবজি বীজ উৎপাদন করে বীজের যোগান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। 

খবরের কাগজ: কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বাড়াতে আপনি কী পরামর্শ দেবেন? 
মোস্তাফিজুর রহমান: কৃষি যান্ত্রিকীকরণ আরও গতিশীল করা দরকার। এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এলাকা উপযোগী ফসলের জাত উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, সেচ অবকাঠামো নির্মাণের দ্বারা সেচের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি মৎস্য গবেষণার মাধ্যমে দেশে মাছের নতুন জাত উদ্ভাবন, এসব জাতের পোনা ব্যবহার করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে। এসব ক্ষেত্র গতিশীল করতেও সরকারকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। 

খবরের কাগজ: গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি পালনও কৃষির অংশ। এ সব ব্যবসা সম্প্রসারণে কী করতে হবে? 
মোস্তাফিজুর রহমান: গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি পালনের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে এ বিষয়ে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎপাদিত কৃষি উন্নয়নের নতুন নতুন পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন করা সম্ভব। পতিত জমি কাজে লাগানো, এক জমিতে বছরে চার ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে পারলে কৃষিবিপ্লব হবে। কৃষির উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তন, খরা, বন্যা, লবণাক্ততা, পোকামাকড়, পশু ও ফসলের রোগ নিরাময়ে গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

খবরের কাগজ: কৃষি খাতের উন্নয়ন হলে কী প্রভাব পড়বে?
মোস্তাফিজুর রহমান: আশা করি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ ও উন্নত হবে বাংলাদেশ।

খবরের কাগজ: কৃষি খাতে শ্রমিক সংকট বাড়ছে। এ সংকট দূর করতে আপনার পরামর্শ কী?
মোস্তাফিজুর রহমান: শ্রমিক সংকটসহ কৃষি কাজের সার্বিক উন্নয়নে যান্ত্রিকীকরণ ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। আমাদের কৃষিতে যে কয়টি বড় সমস্যা আছে তার মধ্যে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়া একটি বড় সমস্যা যার ফলে কৃষকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফসল সংগ্রহে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে শ্রমিকের খরচ বাঁচবে, অন্যদিকে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে শস্য ঘরে তোলা যাবে, কাজটা সুক্ষ্মভাবে হওয়ায় ফসল অপচয় কম হবে এবং দ্রুত মাঠ খালি হয়ে যাওয়ায় আরেকটি ফসলের জন্য মাঠকে তৈরি করা যাবে। এসব বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে এখন ফসল কাটার মৌসুমে অনেক সময় শ্রমিক সংকট দেখা যায়। এতে অনেক সময় কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হয়। ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে শুধু ধান উৎপাদন সহজ হয় তা নয়, একই সঙ্গে এসব যন্ত্র ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে একটি উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি হবে। এতে দেশে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ বাড়বে। 

খবরের কাগজ: কৃষিপণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্যকরণের গুরুত্ব কেমন? 
মোস্তাফিজুর রহমান: সরকারকে কৃষিপণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্যকরণে এবং সংরক্ষণে সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। কৃষির ওপর এদেশের অর্থনীতির নির্ভরতা অনেক বেশি। কৃষি অর্থনীতির আওতা বাড়াতে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বাজার সম্প্রসারণে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এতে কৃষিপণ্য দীর্ঘ সময়ে সংরক্ষণ করা সম্ভব। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য রপ্তানিতে আশা দেখাচ্ছে। ২০২০-১১ অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি ছিল ৩৩ কোটি ডলার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে ১১৬ কোটি ডলারে উঠেছে। বাংলাদেশের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিশ্চিতকরণ, স্বল্প খরচে উন্নত ও গুণগত মানের পণ্য ভোক্তাদের কাছে সরবরাহে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। 

খবরের কাগজ: আপনার ছোটবেলা, শিক্ষাজীবন নিয়ে কিছু বলুন। 
মোস্তাফিজুর রহমান: আমার দেশের বাড়ি বগুড়া জেলায়। আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছে গ্রাম এবং শহরে দুই জায়গাতেই। সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া থেকে। আমি এইচ এস সি পাস করার পর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বিসিএজি তে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফলতার সঙ্গে পড়ালেখা শেষ করেছি। এরপর একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার সুযোগ হয়েছিল।

খবরের কাগজ: কর্মজীবন শুরু করেন কবে?
মোস্তাফিজুর রহমান: স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই আমি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ নামক একটি উন্নয়ন গবেষণা সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমার কর্মজীবন শুরু করি।

খবরের কাগজ: কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ে কীভাবে এলেন? কেন কৃষি সম্পর্কিত ব্যবসায় জড়িত হলেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের আর্থনীতি এগিয়ে নিতে হলে কৃষি খাতের উন্নয়ন করতে হবে। কৃষক এ দেশের প্রাণ। কৃষক ভালো থাকলে, কৃষি ভালো থাকলে তবেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। এসব ভাবনা থেকে কৃষি উপকরণের ব্যবসায়ে যোগ দিই। এ ছাড়া বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ব্যবসা প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক শিক্ষালব্ধ জ্ঞানও আমাকে এই ব্যবসায়ে সফলতা পেতে সহায়তা করে।

খবরের কাগজ: কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ে সফলতা পেতে আপনি কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: সব ভাবনা-চিন্তা শেষে ২০০০ সালের দিকে আমি অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণ ব্যবসা করতে মনস্থির করি। ব্যবসা শুরু করার আগেই এ সংক্রান্ত জরিপ কাজ সম্পূর্ণ করেছিলাম। যেখানে এই উপকরণগুলোর মোট চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে পার্থক্য কি? প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো কীভাবে কাজ করছে? এ খাতের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় হচ্ছে? প্রতিযোগী কোম্পানির সার্ভিস এবং পণ্যের মধ্যে গ্যাপ কী রয়ে গেছে? এদের কোনো ক্রেতা সন্তুষ্টির দুর্বল জায়গা আছে কি না? এই বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করেছি। এই ব্যবসায় যে সম্ভাবনা আছে তা কাজে লাগাতে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করেছি। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি একটি ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কাজ শুরু করি।

খবরের কাগজ: এদেশে এত হিসাব কষে বেশির ভাগ মানুষ ব্যবসা শুরু করেন না। আশপাশের মানুষদের দেখে বা পরিস্থিতি দেখে ব্যবসা করেন। অনেকে পারিবারিকভাবেও ব্যবসা করেন। হয়তো বাবার ব্যবসা ছেলে দায়িত্ব নেন। কিন্তু আপনি তো অন্যভাবে ব্যবসা শুরু করলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান: প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে গবেষণা জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমি ২০০২ সালে পণ্য নির্বাচন করে ব্যবসা শুরু করি। যে সব পণ্য কৃষকের কাছে চাহিদা আছে অথচ বাজারে নেই, সেসব পণ্য দিয়েই আমি ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার নামে একটি কোম্পানি করি। আমার প্রতিষ্ঠানের স্লোগান ঠিক করি ‘বাংলার কৃষকের কোম্পানি’। এই স্লোগান ছিল আমার ব্যবসার শক্তি। স্লোগানটি অনেকে পছন্দ করেন। ব্যবসায় শুরু করার আগেই কতগুলো বিষয় সত্য ধরে একটি ফিলোসফিক্যাল স্ট্যান্ডিং ঠিক করা হয়েছিল যেমন আমরা বিশ্বাস করতাম “Business Is All About People, Business Is Build Up On Trust & Truth Is Always Beautiful” and “Customer Is The King” এই সব তত্ত্ব জ্ঞানকে উপজীব্য করে এবং গ্যাপ মার্কেটকে টার্গেট করে আমরা নির্দিষ্ট কিছু পণ্য নির্বাচন করেছিলাম। এসবের আলোকে আমরা একটা চমৎকার কর্মী বাহিনী গড়ে তুলি। আমার প্রতিষ্ঠানের পণ্য অল্প দিনে জনপ্রিয় হয়। ক্রেতা আগ্রহ নিয়ে কৃষি উপকরণ কিনে থাকে। অনেক ভেবেচিন্তে ব্যবসা শুরু করি বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।

খবরের কাগজ: ব্যবসার স্বীকৃতি পেয়েছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে সিআইপি পদক পেয়েছিলাম এবং ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি শিল্প উন্নয়ন পদক পেয়েছি।

খবরের কাগজ: ওষুধ ব্যবসায়ে কবে আসেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: দেশি বিদেশি স্বীকৃতির পর আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। আমাদের এই সফলতা এবং আত্মবিশ্বাস আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়। ২০১৫ সালে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে নতুন ডাইভারসেফিকিশনে ‘ওয়ান ফার্মা লিমিটেড’ এর যাত্রা আমরা শুরু করি। ওষুধ ব্যবসায় আমাদের আসার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই ব্যবসার সম্ভাবনা আছে তা কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।

খবরের কাগজ: বাংলাদেশে ওষুধ ব্যবসায় সম্ভাবনা কেমন?
মোস্তাফিজুর রহমান: সম্ভাবনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও বিস্তৃত করা সম্ভব। বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। তবে সমস্যাও আছে।

খবরের কাগজ: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওষুধ ব্যবসা কেমন চলছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। ওষুধ খাতের উদ্যোক্তাদের নীতি আদর্শ, যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। তাই আমরা ওষুধ উৎপাদনকারী ও দেশ-বিদেশে বাজারজাতকরণের লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ করে চলছি।

খবরের কাগজ: আপনার এই যে সফলতার পেছনে কার কার অবদান আছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমার জীবনে সফলতার পেছনে আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে সবচেয়ে বেশি মনে করি। এরপর আমার পরিবার। পরিবারের মধ্যে আমার স্ত্রী, আমার বড় ভাইয়ের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। বন্ধুবান্ধব এবং আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আমার বড় ভাই ও ছোট ভাইর সহযোগিতা আমি মনে রেখেছি।

খবরের কাগজ: এদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম সমস্যা কী বলে মনে করেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: ব্যবসা বাণিজ্যের মূল সমস্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো দক্ষ ও বিশ্বাসী জনবলের অভাব। ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি হিসেবেও আমাকে একই ধরনের সমস্যা প্রতিনিয়ত পড়তে হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। সময়ের মধ্য দিয়ে সঠিক পরিকল্পনা, কর্মী ও দল গঠনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা করতে হয়েছে।

খবরের কাগজ: ব্যবসায় সফলতা পেতে হলে আরও কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: উন্নত আদর্শ ও মূল্যবোধ সমস্যার সমাধানের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আমাদের ক্ষেত্রেও সফলতার জন্য কোম্পানির নীতি, আদর্শ, নৈতিকতা, উন্নত মূল্যবোধ আমাদের সহযোগিতা করেছে। কোম্পানির প্রধান ব্যাক্তির নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধের প্রতিফলন কোম্পানিতে সবসময় পরে। তাই আপনি যা আপনার কোম্পানির পণ্যও তাই এবং আপনি যা আপনার কোম্পানিও তাই। মানুষ উন্নত প্রানি। তাই পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সকল বিষয় বোঝার মতো ক্ষমতা যোগ্যতা দিয়েই সকল মানুষ।

খবরের কাগজ: ওষুধ শিল্প এগিয়ে নিতে আপনার আর কী কী পরামর্শ রয়েছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: ওষুধ শিল্পকে এগিয়ে নিতে ভালো সিভিল প্রশাসন দরকার যারা দেশের চাহিদা ও দেশের প্রয়োজনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প কলকারখানার পরিচালনার নীতিমালা বিধিমালা প্রণয়নে সহায়তা করতে পারে। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর পরিদপ্তরের কর্মকর্তা ব্যক্তিকেও ওষুধ উৎপাদনের অতীত ইতিহাস, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশের সক্ষমতা এবং করণীয় নিয়ে বিস্তর জ্ঞান আহরণ করতে হবে। তারপর দেশে উৎপাদিত ওষুধকে বিশ্বদরবারে কীভাবে এই শিল্পকে বিকশিত করবে সে বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের একটি কমপ্রিহেন্সিভ ৫ বছরের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধের মূল্য বেশি প্রায়ই পত্র পত্রিকা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ধরণের অভিযোগ শোনা যায় কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা সম্পূর্ণ উল্টো। পৃথিবীর যে কোনো দেশের উৎপাদিত ওষুধ এর চেয়ে বাংলাদেশে ওষুধের মূল্য কম। এর প্রধান কারণ হলো আমাদের দেশের  সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবল আছে। তবে তাদের বেতন অনেক দেশের তুলনায় কম।

খবরের কাগজ: এ খাতের উন্নয়নে আর কী করা প্রয়োজন?
মোস্তাফিজুর রহমান: উন্নত দেশ এবং মধ্যম আয়ের দেশের চেয়ে আমাদের লেবার মার্কেট প্রাইস অনেক কম। এই সুবিধা নিয়েই আমরা ওষুধের মূল্য কম করতে পেরেছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, চীন- এই দেশগুলোর চেয়েও আমাদের দেশের উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে লেবার সুবিধার জন্য। আমরা ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারি। এ ওষুধই আমেরিকার বাজারে দাম হলো পাঁচ গুণ বেশি। আমেরিকা থেকে যদি এটা আমাদের দেশে আমদানি করা লাগত, তবে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। উৎপাদন না করে বা যেকোনো দেশ থেকে আমদানি করতে হলে আমাদের কয়েক লাখ কোটি টাকার ওষুধ আমদানি করতে হতো। সে বিবেচনায় আমাদের দেশে ওষুধের মূল্য অনেক কম। ওষুধ সাধারণ কমোডেটি প্রোডাক্ট না, এটাতো উৎপাদনের প্রতিটি স্তর আপনার WHO-এর যে বিধিমালা, নীতিমালা এবং আমাদের দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সরকারের যে নীতিমালা, বিধিমালা এবং আইনের আলোকে এর যে গাইডলাইন করা হয়েছে, তার আলোকে ওষুধ উৎপাদন করতে হয়। এই গুণগত মানের যে পণ্য আপনার ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রস প্রোডাকশন করে, তার যে খরচ, সেটা কিন্তু আমাদের অনেক কম মূল্য দিতে হচ্ছে। এটার মূল্য যে অনেক বেশি, এটা সঠিক নয়। 

খবরের কাগজ: আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমার সহকর্মীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আছে। তাদের নিজের পরিবারের সদস্য মনে করি। মনে করি, আপনার বার্জার পেইন্টস আমার আরেকটা পরিবার।

খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
মোস্তাফিজুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকারে আবুল হোসেন পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:০৭ এএম
পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি
বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হোসেন

দেশের পাট খাতকে ঘিরে নানা সম্ভাবনা থাকলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং এক শ্রেণির ষড়যন্ত্রকারীর কারণে এই খাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। পাট শুধু অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তা নয়। কৃষক-শ্রমিকসহ সারা দেশের পাঁচ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। পাটশিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হোসেনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন

খবরের কাগজ: বিজেএমএর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলুন?

আবুল হোসেন: বিজেএমএ বা বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন হচ্ছে বাংলাদেশের বেসরকারি পাটকলগুলো নিয়ে গঠিত একটি অ্যাসোসিয়েশন। এটি বেসরকারি পাটকল মালিকদের মাদার অর্গানাইজেশন। পাকিস্তান আমলে এর নাম ছিল পিজেএমএ। স্বাধীনতার পর এটি বিজেএমএ নামকরণ করা হয়েছে। পাটকলগুলোর আরও একটি প্রতিষ্ঠান আছে সেটি হচ্ছে বিজেএমসি। সরকারি সবকটি পাটকল নিয়ে গঠিত এই সংগঠনটি। এটিকে বলা হয় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। আমাদের এখানে কোনো সরকারি মিল নেই। যারা আমাদের সঙ্গে আছে তারা সবাই বেসরকারি খাতের পাট ব্যবসায়ী। আমাদের এখানে চার ধরনের মিল আছে। গ্রেড ওয়ান, গ্রেড টু, থ্রি, ফোর। এ ছাড়া বড়, ছোট ও মাঝারি এভাবেও আমরা আমাদের মিলগুলোকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি। এগুলো সমন্বয় করেই আমরা বিজেএমএ পরিচালনা করছি। পাট চাষি থেকে শুরু করে পাটকল মালিকা-শ্রমিকসহ প্রায় ৫ কোটি মানুষ এই সমিতিরি সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- এদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করা। যেমন পাটকলের কি সমস্যা, শ্রমিকের কি সমস্যা, এ বিষয়গুলো দেখভাল করা, সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ পাঠানো। ইতোমধ্যে আমাদের কাজের কর্মপরিধি বৃদ্ধি করেছি। আমাদের কর্মপরিকল্পনাও বৃদ্ধি করেছি।

খবরের কাগজ: পাটপণ্যের বাজার সহজীকরণে কি ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বিজেএমএ?

আবুল হোসেন: পাটকলগুলো যেসব পণ্য উৎপাদন করে সেগুলো ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। পূর্বে আমাদের এখানে যেসব উদ্যোক্তা আসত তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কারখানায় প্রেরণ করতাম। বিজেএমএ অফিসের প্রবেশ মুখেই একটি ডিসপ্লে সেন্টার রয়েছে। সেখানে আমাদের বেসরকারি পাটকলগুলো যেসব পণ্য উৎপাদন করছে, বা তাদের কার কাছে কি ধরনের পণ্য আছে সেগুলো এই ডিসপ্লে সেন্টারে প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের এখানে যখনই কোনো বিদেশি ডেলিগেট, বা কোনো ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা আসে তখন তাদের আমরা সেখানে নিয়ে যাই। এর ফলে তাদের পছন্দের পণ্যটি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া সম্ভব হয়। প্রতিটি পণ্যের গায়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ও পণ্যের দাম উল্লেখ করা আছে। ফলে আগত অতিথিরা সরাসরি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আমরা এভাবেই আমাদের মিলগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি ওয়ান স্টপ ডিসপ্লে সেন্টারের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

খবরের কাগজ: ডিসপ্লে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? 

আবুল হোসেন: ডিসপ্লে সেন্টার স্থাপনের পর এটি ব্যাপক আকারে সম্প্রসারণ করছি। বিজেএমএ ভবনের নিচে একটি স্টোর গোডাউন করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষিত করার জন্য এই ভবনের ওপরে ৫ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করছি। এটি বাস্তবায়নে অর্থায়নের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) মাধ্যমে আমরা একটি ফান্ডের ব্যবস্থা করতে পারব। নতুন উদ্যোক্তা এবং পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। 

খবরের কাগজ: পাটশিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কি কি? 

আবুল হোসেন: বিগত সরকারের আমলে এক সময়ের প্রধান অর্থকরি ফসল পাটকে এগিয়ে নেওয়ার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রতিবছর ৬ মার্চকে পাট দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। অর্থকরি ফসল হিসাবে অনাদর, অযত্ন, কিছুটা ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রও বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের পাটশিল্পকে কীভাবে ধ্বংস করা যেতে পারে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু দেশের ভেতরে নয়, দেশের বাইরেও আমাদের দেশের পাটকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। পাশাপাশি সে সময়ে আমাদের দেশের যারা বড় পাট ব্যবসায়ী ছিলেন তারাও চেষ্টা করেছেন, অন্যদের ব্যবসার ক্ষতি করে নিজেরা কীভাবে লাভবান হবে। নিজেদের কবজায় রেখে দেশের পাট খাতকে জিম্মি করার। সেখান থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে নানাভাবে চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। আপনি জেনে থাকবেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি করে আসছি। স্বাধীনতা পরবর্তীতে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যদিও বিগত সরকার ২০১০ সালে পাটকে কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। আমাদের পক্ষ থেকে এই ঘোষণাটিকে কার্যকর করার জন্য আমরা হাইকোর্টে রিটও করেছিলাম। কিন্তু তারপরও যেকোনো কারণেই হোক এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দেশের ভেতরে হোক বা দেশের বাইরে- বাধাগুলো উত্তরণ সম্ভব হয়নি। ফলে এই সেক্টর যতটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ততটা এগিয়ে যেতে পারেনি। 

খবরের কাগজ: বর্তমান সরকারের সময় পাটশিল্পকে এগিয়ে নিতে কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

আবুল হোসেন: পাট নিয়ে আমরা আরও বেশি এগিয়ে যেতে পারতাম। নানামুখী প্রতিবন্ধকতা এ সেক্টরকে পিছিয়ে দিয়েছে। বর্তমান সরকার আসার পর আমরা আশাবাদী পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। আশা করছি জুন মাসের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়া যাবে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছে বিষয়টি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠিয়েছেন। 

খবরের কাগজ: পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বাধা কোথায়? 

আবুল হোসেন: এ বিষয়ে যে আইন রয়েছে, সেটি বাস্তবায়নে প্রধান বাধা প্লাস্টিক। মানুষ এখানে সুলভ মূল্যে প্লাস্টিক পাচ্ছে। প্লাস্টিক পাটের পণ্যগুলো এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না। পাট উপদেষ্টা আবার বাণিজ্যেরও উপদেষ্টা। আমরা তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। পাশাপাশি আমরা পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গেও দেখা করেছি। পরিবেশ উপদেস্টা পাট নিয়ে আমাদের যতটু সমর্থন করেছেন পাট উপদেষ্টা ততটা আগ্রহ দেখাননি। আমরা বলেছিলাম, আমাদের ১৯টি পণ্যে বাধ্যতামূলক পাটের ব্যাগ ব্যবহারে নির্দেশনা আছে। এর মধ্যে আমাদের অন্তত ৫ থেকে ৬টা পণ্যে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে নিশ্চয়তা দেন। কিন্তু পাট উপদেষ্টা আমাদের জানালেন, চালের বস্তায় পাটের ব্যাগের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে গেলে চালের দাম বেড়ে যাবে। সে জন্য তিনি উৎসাহ দেখাননি। 

খবরের কাগজ: পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের কী ধরনের ঝুঁকি রয়েছে ? 

আবুল হোসেন: পলিথিন সস্তায় পাওয়া যায়। কিন্তু পলিথিন ব্যাগে চাল রাখলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকে সেটি কেউ বলে না। বরং পাটের বস্তায় চাল প্যাকিং করে গুদামজাত করলে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা সম্ভব। তা ছাড়া চালের যেসব গুণগত মান থাকা উচিত তা কেবল পাটের বস্তাতে সংরক্ষণ করলেই সম্ভব। পাটের বস্তা সহজে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে এটি পরিবেশবান্ধব। কিন্তু পলিথিন পরিবেশের ক্ষতি করে। তারপরও আমাদেরকে পাটের বস্তায় প্যাকেজিং করতে দেওয়া হচ্ছে না। পাটের বস্তা ব্যবহার করলে চালের দাম বেড়ে যাবে- এই অজুহাতের কারণে এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। 

খবরের কাগজ: পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার সম্পর্কে আপনার মতামত কি? 

আবুল হোসেন: বিগত তিন থেকে চার বছরে পাটের রপ্তানি বাজার কেন ধ্বংস হলো? কেন পাটের মন সাত থেকে ৮ হাজার টাকা হলো। এখানে একটি শ্রেণি ষড়যন্ত্রমূলক পাটের বাজার ধ্বংস করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। পাট চাষিরা পাট বিক্রি করে পায় আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। আর ফড়িয়াদের পকেটে যায় ৮ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় পাট মজুত করে তারা বাড়তি টাকা নিচ্ছে। যারা বড় বড় পাটকলের মালিক তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাতারাতি পাটের দাম বাড়িয়ে দেয়। যত দাম বাড়বে, ততই আমাদের উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যায়। 
এখন সব কিছুই পরিবর্তনশীল। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন এক ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন সব কিছুই আধুনিক। ক্রেতারা এখন যে রকম ফিনিশিং প্রোডাক্ট চায় তাতে আধুনিক যন্ত্রাংশ বা প্রযুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। সুতা, বস্তা, রশির এখন চাহিদা নেই। এখন পাট পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। প্রায় এক হাজার রকমের পণ্য তৈরি হয় এই পাট থেকে। এ জন্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। আধুনিক মেশিন যুক্ত করতে হবে।

বন্ধ কারখানা চালুর দাবি আইয়ান জুট মিলস লি. এমডির

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৮:৪১ এএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
বন্ধ কারখানা চালুর দাবি আইয়ান জুট মিলস লি. এমডির
আইয়ান জুট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরউদ্দিন রাজিব

আইয়ান জুট মিলস লিমিটেড খুলনার ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরউদ্দিন রাজিব। জুট মিলটি শুধু অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে না, বরং ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন করছে উচ্চমানের জুট ইয়ার্ন, জুট ব্যাগ ও হস্তশিল্প জাত পণ্য। পাশাপাশি এই কারখানার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৪০টি দেশে। শুধু ব্যবসা নয় বরং সামাজিক কর্মকাণ্ডেও অবদান রেখে চলছে আইয়ান জুট মিলস। পাট খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরউদ্দিন রাজিবের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন

খবরের কাগজ: পাটশিল্পের বর্তমান অবস্থা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

জহিরউদ্দিন রাজিব: পাট বাংলাদেশের সোনালি আঁশ, এটা আগেও ছিল, এখনো আছে এবং আগামীতেও থাকবে। কারণ পাটই পৃথিবীর একমাত্র পণ্য যা পরিবেশবান্ধব এবং সারা বিশ্বের মোট চাহিদার ৮৭ ভাগই পূরণ করা হয় বাংলাদেশের উৎপাদিত পাট হতে। বাংলাদেশে বর্তমান পাটশিল্পের সার্বিক অবস্থা খারাপ নয়। তবে বিভিন্ন সময় সরকারি নানা ধরনের জটিলতা, অবহেলা ও বিদেশি নানা রকম ষড়যন্ত্রের শিকারের কারণে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে আছে পাটশিল্প। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাটই হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা ঘোরানোর অবলম্বন। আমাদের কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ভারত যদি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে তবে আমাদের পণ্য আমরা সরাসরি রপ্তানি করে অবশ্যই অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। তার জন্য বাস্তবমুখী নীতি ও দেশীয় কাঁচামাল ভিত্তিক রপ্তানি পণ্যে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

খবরের কাগজ: পাটকে সোনালি আঁশ বলা হলেও এ খাত কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি- এর প্রধান কারণ কী?

জহিরউদ্দিন রাজিব: পাট খাতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আশানুরূপ আলোর মুখ দেখতে পায়নি। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পাট খাতে সময়োপযোগী ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে দীর্ঘসূত্রিতা। এ ছাড়া পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা সত্ত্বেও কার্যকর না হওয়ায় এ খাত পিছিয়ে গেছে। এ খাতে নতুন বিনিয়োগ খুব কম এসেছে। যে কারখানাগুলো আছে সেগুলোর সিংহভাগই প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো। ফলে এখানে নতুন করে দক্ষ ব্যবস্থাপনা আসেনি। বরং দুর্নীতি ও প্রযুক্তির ঘাটতির কারণে বারবার পিছিয়ে পড়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। পলিথিন ও সিনথেটিক পণ্যের দাপটে পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। কিন্তু আমরা পাটের সোনালি অতীতকে ফিরিয়ে আনতে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি। পাটের মূল্য নির্ধারণ এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি না থাকায় একই পাটে কৃষক পান ৩ হাজার আর ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সেটিই বিক্রি করে ৮ হাজার টাকা। ফলে মিলগুলোকে বেশি দামে পাট কিনতে হয় আর উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়, যা বিশ্ববাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ের অভাব, এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের জন্য রপ্তানি নীতি শিথিলতার ঘাটতি তো আছেই। 

খবরের কাগজ: পাট খাতের উন্নয়নে সরকার কোন ধরনের নীতিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিচ্ছে? 

জহিরউদ্দিন রাজিব: পাট খাতের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু অন্য শিল্পের তুলনায় এ খাতের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ যথেষ্ট নয়। সরকার এই খাতে নগদ সহায়তার বিষয়টি চালু করেছে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে এখন হার কমানোর ফলে এতটাই তলানিতে পৌঁছেছে যে, এই টাকা পেতে যে পরিমাণ খরচ করতে হয় নগদ সহায়তার পরিমাণ তার চেয়ে অনেক কম। ফলে আমাদের লোকসান হয়। তা ছাড়া নগদ সহায়তা গ্রহণের বিপরীতে যাচাই-বাছাইয়ের নামেমিল মালিকদের নানা হয়রানি ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাতে করে যে পরিমাণ নগদ সহায়তা দেওয়া হয় তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। অর্থাৎ খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। তার মানে নীতি সহায়তা দেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না। নগদ সহায়তা না দিয়ে বরং পাট খাতকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করে তার আওতায় সব সুযোগ-সুবিধা দিলে একদিকে যেমন প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হবে অন্যদিকে ঝামেলা কমবে। 

খবরের কাগজ: বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বাড়াতে কোন ধরনের প্রস্তুতি দরকার?

জহিরউদ্দিন রাজিব: পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাটই একমাত্র পণ্য যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এর চাহিদা পরিবেশবাদী জনগোষ্ঠী তথা সচেতন মহলের কাছে দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। বর্তমানে চাহিদার ৪০ শতাংশ প্রতি বছর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এরকম অবস্থা বিরাজমান থাকলে ঘাটতির হার বাড়বে বলে আমি মনে করি। আর এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন থেকেই সরকারকে অধিক মনোযোগ দিতে হবে। সরকারি আওতাধীন বন্ধ মিলগুলোকে পুনরায় চালু, পাট খাতকে কৃষিপণ্য ঘোষণাসহ ব্যাংক সুদ হার ৪ শতাংশ নির্ধারণ, রপ্তানি নীতিমালা সহজীকরণ, জাহাজ ভাড়ার স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি। পাটকলগুলোর জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করলে এ খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। 

খবরের কাগজ: আপনার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কিছু বলুন।

জহিরউদ্দিন রাজিব: আমাদের প্রতিষ্ঠান একেবারেই অজোপাড়াগায়ে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পর্যায়ক্রমে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১২০-১৫০ টন প্রতিদিন গড় উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে। আর এসব উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের প্রায় ৪০টির মতো দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। উন্নয়নের ছোঁয়া এখানে এখনো পুরোপুরি লাগেনি। আমরা মূলত এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলাম। বর্তমানে এখানে প্রায় ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আরও কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়িত হলে হয়তো আরো ৩-৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। 

খবরের কাগজ: আপনারা এখন কোন কোন দেশে পণ্য রপ্তানি করছেন? 

জহিরউদ্দিন রাজিব: আগেও বলেছি, আমাদের পণ্যগুলো প্রায় ৪০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশ হলো- চীন, ভারত, রাশিয়া, বেলজিয়াম, তুরস্ক, দুবাই, সৌদি আরব, মেক্সিকো, স্পেন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, কেনিয়া, জাপান, আইভরিকোস্ট, পোল্যান্ড ইত্যাদি। উক্ত দেশগুলোতে আমাদের সব উৎপাদিত পণ্যের (জুট ইয়ার্ন, জুট ব্যাগ, জুট হ্যান্ডিক্রাফট) চাহিদা রয়েছে। উৎপাদনকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে উন্নত মেশিন, দক্ষ জনবল, ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক উন্নতমানের পণ্য তৈরি এবং সরবরাহ ছাড়াও সময়মতো শিপমেন্ট সম্পন্ন করা হয়। 

খবরের কাগজ: উৎপাদন খরচ কমিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে আপনারা কোন ধরনের কৌশল গ্রহণ করেছেন?

জহিরউদ্দিন রাজিব: উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে যত কম দামে মাল কেনা যাবে তত বেশি মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে। সাধারণত আমরা মৌসুমের শুরুতে আমাদের বাৎসরিক মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ কাঁচা পাট সংগ্রহ করে মজুত করি। বাকি ৫০ শতাংশ ক্রেতার চাহিদামতো সারা বছর কেনা হয়। এতে করে কাঁচামালের সরবরাহ যেমন সহজ হয় তেমনি উৎপাদন খরচও সাশ্রয় করা সহজ হয়। 

খবরের কাগজ: আপনি কি মনে করেন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ উদ্যোগ পাট খাতকে এগিয়ে নেবে?

জহিরউদ্দিন রাজিব: আসলে আমার মতামত পাবলিক-প্রাইভেট এখানে ততটা মুখ্য নয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে সফলতা আসবে। 

খবরের কাগজ: একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?

জহিরউদ্দিন রাজিব: বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কার্যাবলিকে একত্রিত করে বৃহৎ আকারে সফলভাবে শেষ করার মাধ্যমেই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সম্পূর্ণ হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি, গুণগত মানসম্মত পণ্য চূড়ান্তভাবে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে। এতে করে ক্রেতা ও বিক্রেতার সম্পর্ক ভালো থাকে ও পণ্যের চাহিদা বাড়ে। 

খবরের কাগজ: পাটশিল্পে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনি কী পরামর্শ দেবেন?

জহিরউদ্দিন রাজিব: অনুকূল পরিবেশগত কারণে পাট বাংলাদেশের জন্য আল্লাহর এক অশেষ নেয়ামত। আমরা ভাগ্যবান হিসেবে এই পাটের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের আয় সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিজেকে নিবেদিত করতে পারি। এর মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা। পণ্যের প্রকৃত ব্যবহার করে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে হবে।

বিশেষ সাক্ষাৎকারে ডা. শাহাদাত হোসেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ত্রুটিপূর্ণ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ত্রুটিপূর্ণ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে যে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। স্লুইস গেটগুলোর প্রশস্ততা কম। যে কারণে পানি নিষ্কাশন কম হবে। তা ছাড়া প্রকল্পের কাজ শেষে সেটির পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের বিষয়টি প্রকল্পের মধ্যে নেই। অথচ এটি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে বিশাল অঙ্কের অর্থ এবং জনবলের প্রয়োজন, যা প্রকল্পটির বড় ত্রুটি। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা এবং তা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের চট্টগ্রামের ব্যুরোপ্রধান ইফতেখারুল ইসলাম
 
খবরের কাগজ: কীভাবে চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে চান?
ডা. শাহাদাত হোসেন: তিন ধাপে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে চাই। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি। প্রাথমিক ধাপে শহরের ৫৬টি খালের মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৩৬টি খালের সংস্কারকাজ করছে। চসিক করছে বারৈপাড়া খাল খননের কাজ। বাকি খালগুলোও আমাদের সংস্কার করতে হবে। প্রাথমিক স্টেজে আমরা আবর্জনা পরিষ্কার করছি। যাতে আসন্ন বর্ষা আমরা সামাল দিতে পারি। আমাদের কাজ ঠিকমতো চলছে। এই কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারলে জলাবদ্ধতার অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের মধ্যে রয়েছে ২১টি খালের সংস্কারকাজ। এ নিয়ে চায়না পাওয়ারসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। তারা খাল সংস্কার করে দেবে।

খবরের কাগজ: চসিক শতভাগ আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারে না। অন্যদিকে মানুষও খাল-নালায় ময়লা ফেলে। এ বিষয়ে চসিকের পরিকল্পনা কী?
ডা. শাহাদাত হোসেন: তৃতীয় পর্যায় তথা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই কাজটি করছি। আপনারা দেখেন, জনগণকে এত সচেতন করার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। জনগণ প্লাস্টিক, পলিথিন, ককশিট ব্যবহার করছে। খালকে গার্বেজ স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা আমাদের বড় সমস্যা। ময়লাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, জাপানের বেশ কিছু কোম্পানি এই কাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের সঙ্গে একমত হলে আমরা চুক্তিতে যাব। তারা আবর্জনা থেকে বায়ুগ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। তখন আবর্জনা আর খালে পড়বে না। আমরা এ কাজে শিশুদেরও সম্পৃক্ত করতে চাই। তাদের হেলথ কার্ড দিচ্ছি। আবর্জনা কোথায় ফেলবে, কীভাবে পরিষ্কার হবে সেসব শেখানোর চেষ্টা করছি। এই কর্মসূচিতে সিটি করপোরেশনের স্কুলের পাশাপাশি বাইরের স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে শিশুরা সচেতন হলে তারা যখন বড় হবে নগরবাসী তখন এর সুফল পাবে। তা ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান করার চিন্তা করছি।

খবরের কাগজ: আমরা জানি সিডিএও মাস্টারপ্ল্যান করছে। তাতে কি চসিকের সঙ্গে সিডিএর কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হবে না?
ডা. শাহাদাত হোসেন: আমাদের স্টাডিতে থাকবে কোন খাল কোন পয়েন্ট থেকে উৎপন্ন হয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। তার শাখা খাল কী ছিল সব কটি বের করা। আমরা শুধু ৫৭টি খাল নিয়ে কাজ করব। পানিপ্রবাহের বাধা কোথায়। এসব বের করব। তাই দ্বন্দ্ব হওয়ার সুযোগ নেই।

খবরের কাগজ: শহরের খালে নৌযান চালানোর কোনো পরিকল্পনা আছে?
ডা. শাহাদাত হোসেন: আমার বাড়ি বাকলিয়া ডিসি রোডের পাশে। ছোটকাল থেকেই দেখেছি চাক্তাই খালে নৌযান প্রবেশ করছে। আমার আগে যারা মেয়র ছিলেন, তারা মনে করেছেন খালের তলা পাকা করলে আবর্জনা জমবে না। কিন্তু এই ভুল সিদ্ধান্ত খালের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তলা পাকা করার কারণে ভূগর্ভে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। যে কারণে খালের চরিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে। আল্লাহ একেক জিনিসকে একেকভাবে সৃষ্টি করেছেন। নদী, খাল, পাহাড়, ছড়ার ওপর গবেষণা করতে গিয়ে যদি উল্টাপাল্টা করে ফেলি, তাহলে তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া হবে। নদীপ্রবাহ বন্ধ করছি, পাহাড় কাটছি, তার প্রতিশোধ প্রকৃতি নেবে। আমাদের দোষে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। মহেশ খালে এখনো নৌযান চলে। অন্যান্য খালেও নৌযান চালানোর পরিকল্পনা আছে।

খবরের কাগজ: খাল বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছেন। এ নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনা দুটিই আছে। 
ডা. শাহাদাত হোসেন: জিইসি মোড়ে জলাবদ্ধতা হয়। অনেক প্রকৌশলীকে সেখানে পাঠিয়েছি। তারা ধরতে পারেননি। খাল বিশেষজ্ঞ ঠিকই সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট এবং নাসির খাল আগ্রাবাদ এলাকার পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বক্স কালভার্টটি নির্মাণের ২৭ বছর পর প্রথমবার পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে খাল বিশেষজ্ঞ শাহরিয়ার খালেদের পরামর্শে। তাকে নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন, তার পরামর্শ কেন নিচ্ছি। তিনি যা জানেন এখানে অনেক প্রকৌশলীও তা জানেন না। তিনি যদি খুনি না হন। রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর না হন। তাহলে নগরবাসীর স্বার্থে তার পরামর্শ নিতে অসুবিধা কোথায়। অতীতে খাল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমরা নিইনি। অস্ট্রেলিয়ার ড্রেনেজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক গবেষক ড. আবদুল্লাহ আল মামুনকে নিয়ে এসেছি। তাতে আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। 
 
খবরের কাগজ: সিডিএর কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন?
ডা. শাহাদাত হোসেন: মানুষ এত বেড়ে গেছে যে, সড়ক এবং খাল দখল করে আমরা ভবন নির্মাণ করছি। সিডিএর একটি বিল্ডিং কোড আছে। কত শতাংশ জমি ছাড়তে হবে তা নির্ধারণ করা আছে। কেউ তা মানছে না। সিডিএকে শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। আজ অনেক জায়গায় ভবন হেলে পড়ছে। দেবে যাচ্ছে। কারণ ভূগর্ভ ফাঁপা হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। সব পাকা করে ফেলছি। এখন আমরা খাবারের জন্য যুদ্ধ করছি। একসময় আমাদের পানির জন্য যুদ্ধ করতে হতে পারে। 

খবরের কাগজ: মেগা প্রকল্পের সুফল নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
ডা. শাহাদাত হোসেন: স্লুইস গেটগুলো পরিকল্পিতভাবে হয়নি। আবার সব কটির কাজও শেষ হয়নি। সেগুলোর নির্মাণে ত্রুটি আছে। শেষ প্রান্তে গিয়ে খাল সংকুচিত হয়ে গেছে। তা ছাড়া স্লুইস গেটগুলো মেইনটেইন এবং ম্যানেজমেন্ট করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। লোকবল নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই কাজের জন্য চসিকের একটি বিশাল বাজেট লাগবে। প্রকল্পে এই বিষয়টি নেই। সেটি কীভাবে আসবে, কোথা হতে আসবে তা আমার জানা নেই। খালগুলো চসিককে বুঝিয়ে দেওয়ার পর লোকবল প্রশিক্ষণের জন্য তারা কোনো বাজেটও দেয়নি। এটি প্রকল্পের বড় ধরনের ত্রুটি। অর্থ এবং লোকবল তারা প্রকল্পে রাখেনি। তা প্রকল্পের সাফল্যের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

খবরের কাগজ: ২৯৮ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি না পাওয়ার জন্য সরকারকে দুষছেন?
ডা. শাহাদাত হোসেন: ২০২২ সালে ৩৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ কোটি টাকা কেটে ২৯৮ কোটি টাকা করা হয়। এই টাকা দিয়ে খাল-নালা পরিষ্কারের ইক্যুইপমেন্ট কেনার কথা ছিল। বর্তমানে চসিকে যেসব ইক্যুইপমেন্ট রয়েছে, সেগুলো বেশির ভাগ দুর্বল। এসব ঘন ঘন নষ্ট হয়। তা মেরামত করতে প্রচুর টাকা এবং সময় নষ্ট হয়। তারা যদি টাকা দিতে না চায়, তাহলে ইক্যুইপমেন্ট কিনে দিলেও হয়। কী কী জিনিস লাগবে প্রকল্পে সব লেখা আছে।

খবরের কাগজ: জলাবদ্ধতা সমস্যার আসল সমাধান কোথায়?
ডা. শাহাদাত হোসেন: এখন যে সমস্যাগুলো তার সব কটি মানবসৃষ্ট। খাল-নালায় আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে পাহাড় থেকে বালু এসে খাল ভরে যাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধান করতে সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রকৃতিকে যত ধ্বংস করব, প্রকৃতি তত বেশি প্রতিশোধ নেবে। তবে শেষ কথা হলো শহরের খালগুলো চসিককেই পরিষ্কার করতে হবে। সিডিএকে সব দায়িত্ব দিলে হবে না। যার কাজ তাকে করতে হবে। বর্তমান জলবদ্ধতা হলো অপরিকল্পিত নগরয়াণের ফসল। এই সমস্যা সমাধানে দরকার নগর সরকার। নগর সরকার না হলে পরিকল্পিত নগরায়ণ সম্ভব নয়।

বিশেষ সাক্ষাৎকার চট্টগ্রাম শহরে মেগা প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিয়ে সংশয় আছে

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:০৪ এএম
চট্টগ্রাম শহরে মেগা প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিয়ে সংশয় আছে
মো. আবু ঈসা আনছারী

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাময়িক উপকার পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিয়ে সংশয় রয়েছে। পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না গেলে জলাবদ্ধতার সমস্যা সহজে সমাধান হবে না। এ নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিডিএর ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজ চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ইফতেখারুল ইসলাম 

খবরের কাগজ: চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে যে প্রকল্পের কাজ চলছে তার সুফল নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
মো. আবু ঈসা আনছারী: জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পে সাময়িক উপকার হলেও দীর্ঘমেয়াদি এর সুফল নিয়ে সংশয় রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের মতো একটি শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি প্রকল্প যতটা টেকসই হওয়া দরকার, বর্তমানে চলমান প্রকল্পটি ততটা টেকসই নয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। 

খবরের কাগজ: সংশয়ের কারণ কী?
মো. আবু ঈসা আনছারী: ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অনেক পরে সেই মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে কিছু কাজ করা হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যানটি যখন তৈরি করা হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট এবং চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান চিত্রের মধ্যে তুলনা করলে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি খুব বেশি সুফল আশা করা ঠিক হবে না। ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ চলে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম ওয়াসা সেই পরিকল্পনাটা স্টাডি করে কিছু পরিকল্পনার কথা বলেছে। সিডিএ তাদের সেই প্রস্তাবনাটা নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এখানে নতুন কিছু নেই। 

খবরের কাগজ: আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন?
মো. আবু ঈসা আনছারী: ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের চিত্রটা যদি একবার চিন্তা করেন, সেসময় আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, বগারবিল, অক্সিজেনের আশপাশসহ এমন অনেক নিচু এলাকা ছিল, যেখানে শহরের পানি ধারণ করতো। সে সময় শহরের পানি প্রথমে সেখানে জমা হতো। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন খালের মাধ্যমে কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ত। প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হলেও শহরের কোনো সমস্যা হতো না। গত তিন দশকে সেসব নিচু এলাকা ভরাট হয়ে আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। পানি ধারণ করার জায়গাগুলোতে স্থাপনা হয়ে গেছে। সেই পানি এখন উপচে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। 

খবরের কাগজ: সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
মো. আবু ঈসা আনছারী: বর্ষায় কর্ণফুলীতে পানি নেই। অথচ শহরে জলাবদ্ধতা। তার মানে কোথাও পানিটা আটকে আছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। পানির একটি সাধারণ ধর্ম হলো, উঁচু থেকে নিচের দিকে যাবে। নিচু এলাকার পানি উঁচু জমিতে আসতে পারবে না। নিচু জমিগুলো ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। নগরায়ণের মাধ্যমে মালভূমি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে বেশ কিছু নতুন খাল খননের প্রস্তাবনা ছিল। এ ছাড়া বেশ কিছু জলাধার খননেরও প্রস্তাব ছিল। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সময় তাদের ধারণা ছিল, নিচু এলাকাগুলোতেও একসময় নগরায়ণ হবে। সেটা ধরে নিয়েই তারা নতুন খাল এবং জলাধার খননের প্রস্তাব রেখেছিল। তা ছাড়া বিদ্যমান খালগুলো বড় করতে বলেছে। যেমন: বাড়ৈপাড়া খালের পাশে ৯ হেক্টরের একটি জলাধার খননের প্রস্তাব মাস্টারপ্ল্যানে ছিল। কারণ পরিকল্পনাবিদরা তখন মনে করেছিলেন, বারৈপাড়া খাল হয়তো দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে পারবে না। তাই কিছুক্ষণের জন্য পানি জমা রাখতে এই জলাধারের প্রস্তাব। পানির সঙ্গে যানবাহনের গতিকে মেলাতে পারেন। সেখানে পার্থক্য হলো, গাড়ি উপচে পড়ে না। পানি উপচে পড়ে। স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম শহরে অনেক নতুন সড়ক হয়েছে। ছোট সড়কগুলোর প্রশস্ততা বেড়েছে। কিন্তু নতুন কয়টি খাল খনন হয়েছে? কয়টি জলাধার খনন হয়েছে? ৭২টি খালের কথা বলা হচ্ছে। কখনো ৫৭টি খালের কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে সেটা হওয়া উচিত ছিল, দ্বিগুণেরও বেশি খাল। স্বাধীনতার পর খাল খনন করা হয়নি। বরং ভরাট করা হয়েছে। নগরায়ণ হওয়া স্বাভাবিক। এটাকে আটকানোর সুযোগ নেই। তার সঙ্গে সঙ্গে নতুন খাল, জলাধার খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক খাল থেকে অন্য খালে পানি নেওয়ার জন্যও খাল দরকার। সেটা কখনো হয়নি। সেই কাজটি করতে হবে।

খবরের কাগজ: ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানের নতুন যে তিনটি খাল খননের প্রস্তাব ছিল, তা কি এখনো কার্যকর?
মো. আবু ঈসা আনছারী: হ্যাঁ। এর মধ্যে তো একটি খাল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন খনন করছে। সেটি বহদ্দারহাট বারৈপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত। এ ছাড়া চান্দগাঁও শমসেরপাড়া আইইউসি ডেন্টাল কলেজের পাশ দিয়ে একটি নতুন খাল খননের প্রস্তাব ছিল। শমসের পাড়া লেভেল ক্রসিং থেকে বাহির সিগন্যাল পর্যন্ত ২ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। সেটি হয়নি। এ ছাড়া সল্টগোলা থেকে কাঠগড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার খাল খননের পাশাপাশি কিছু সেকেন্ডারি খালের প্রস্তাব ছিল, যা কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। এসব করতে পারলে শহরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি পাবে।