![‘ব্যাংকান্স্যুরেন্স চালু হওয়ায় বিমা খাতে মানুষের আস্থা বাড়বে’](uploads/2024/03/01/1709278431.Republic-Insurance-CEO-1111.jpg)
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ‘ব্যাংকান্স্যুরেন্স’। এর ফলে এখন থেকে দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক বিমা কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবে। একই সঙ্গে বিমাসেবা বিপণন ও বিক্রির ব্যবসা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। ফলে একজন গ্রাহক ব্যাংকেও বিমা করতে পারবেন। দেশের বিমা খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে খবরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার শাহ আলম নূরের সঙ্গে কথা বলেছেন রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ কে এম সারোয়ার জাহান জামীল।
খবরের কাগজ: দেশের অর্থনীতিতে বিমা খাত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ খাতের অবদান সম্পর্কে কিছু বলুন।
সারোয়ার জাহান জামীল: দেশের অর্থনীতিতে বিমা খাত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, এ কথা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশে বিমাশিল্পের উন্নয়ন ও সুরক্ষার সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বিশ্বে বিমার মৌলিক কাজ হলো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য অর্থনীতিকে রক্ষা করা। দেশে বর্তমানে ৮১টি বিমা কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ৩৫টি জীবন বিমা এবং ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানি।
বাংলাদেশের জিডিপিতে বিমা কোম্পানিগুলোর অবদান ১ শতাংশেরও কম (বর্তমানে প্রায় শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ)। তবে অর্থনীতিতে ইন্স্যুরেন্স পেনিট্রেশনের হার বাড়লে তা সুরক্ষার পরিমাণ বাড়াবে, নতুন সুবিধা সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্স পেনিট্রেশনের হার ১ শতাংশ বৃদ্ধি করা গেলে বিমা খাত জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
খবরের কাগজ: আমাদের দেশে বিমা করার হার কম। আরও বেশি মানুষকে বিমার আওতায় আনতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?সারোয়ার জাহান জামীল: জাতীয় অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বিমা খাত এখনো পিছিয়ে রয়েছে। তবে এখানে অগ্রগতির অনেক জায়গা রয়েছে। মানুষের জীবন ও সম্পদকে যথাযথ বিমার আওতায় আনতে হবে। এ জন্য বিমা খাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। বর্তমানে দেশ ডিজিটাল হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বিমাশিল্পের বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বিমা কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি সরকারকেও আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলে এ খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে। দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বিমার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৩ সাল থেকে। এখন পর্যন্ত ৮১টি বিমা কোম্পানি কাজ করছে। কিন্তু ৫০ বছরের বেশি সময় পার হলেও বাংলাদেশের বিমা খাত সেভাবে বিস্তৃত হয়নি। সরকারি হিসাবে বিমার আওতায় আছেন মাত্র ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ।
খবরের কাগজ: এখনো অনেক খাত বিমার বাইরে। এর কারণ কী?
সারোয়ার জাহান জামীল: এটি সত্য, দেশে এখনো অনেক খাত বিমার বাইরে রয়েছে। মানুষের মধ্যে বিমা জনপ্রিয় করতে সরকারিভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সবাইকে বিমার আওতায় আনতে বিমা সেবা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সদ্য বিলুপ্ত মোটর থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স পুনর্বহাল করতে হবে। গাড়ি বিমার আওতায় আনা হলেও বিমার আওতার বাইরে থাকছেন যাত্রী বা চালক। করপোরেট সুশাসন, অদক্ষ মানবসম্পদ, বিমাপণ্য প্রণয়ন ও সম্পদ-দায়ের ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আছে এখনো। ফলে বিমাশিল্প থেকে আর্থিক খাত প্রত্যাশিত সুফল পাচ্ছে না। সার্বিক আর্থিক খাত, বিশেষ করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পরিসর বাড়াতে বিমা খাত যতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে, তা এখানো হচ্ছে না।
দেশে বিমা খাতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার পরও এগিয়ে যাওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রধান কারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি। দেশে প্রতি হাজারে মাত্র চারজনের জীবন বিমা আছে। কৃষি বিমা, সর্বজনীন স্বাস্থ্য বিমা, দুর্যোগ বিমা নেই। অনেক সুউচ্চ ভবন, বড় প্রকল্প এখনো বিমার বাইরে, যদিও উন্নত দেশে বিমার বিস্তারে এসব খাতে বিমা বড় ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা ও প্রবাসীদের বিমা নিশ্চিত করেও এ খাতের সম্প্রসারণ সম্ভব। আরেকটি বড় সম্ভাবনা হচ্ছে স্বাস্থ্য বিমা। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকে স্বাস্থ্য বিমার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
খবরের কাগজ: বর্তমানে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংকান্স্যুরেন্স চালু হয়েছে। এ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
সারোয়ার জাহান জামীল: একসময় বিমা পেশা ছিল অনেক অবহেলিত। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন যুগ পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ বিমা সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। জাতীয়ভাবে বিমা দিবস পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যাংকান্স্যুরেন্স চালু হয়েছে। ব্যাংকগুলোও বিমা কোম্পানির করপোরেট এজেন্ট হিসেবে ব্যাংকান্স্যুরেন্স বিপণন করবে। ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা পলিসি বিপণনের ফলে গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং বিমা ব্যবসা অনেক প্রসারিত হবে।
খবরের কাগজ: বিমা দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন।
সারোয়ার জাহান জামীল: জাতীয় পর্যায়ে বিমা দিবস পালন করার কারণে বিমা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দূর হচ্ছে। বিমা দিবসের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। জাতীয় বিমা দিবস এলে দেশে বিমা কোম্পানিগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সরকারি পর্যায়েও জেলা ও উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা ও সভা-সেমিনার করা হয়। এটা বিমা খাতের জন্য সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক খাতে বিমা খাতের অবদান বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।