বিমা খাত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও অন্য খাতের মতো তাল মিলিয়ে এগোতে পারছে না। জনগণের আস্থার সংকটই কি মূল কারণ। প্রতিবন্ধকতা কোথায়? এসব ব্যাপার জানতে খবরের কাগজ কথা বলেছে বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বি এম ইউসুফ আলীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।
খবরের কাগজ: বিমা খাত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
বি এম ইউসুফ আলী: অবশ্যই অবদান রাখছে। এ খাতের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। সরকারের নীতি ও নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। আবার মাঠ পর্যায়ে এজেন্টদের নিয়েও কাজ করতে হয়। এভাবে বিমা খাতের সম্প্রসারণ হচ্ছে। অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এ পর্যন্ত দেশের প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ বিমার আওতায় আছে। তবে জিডিপির আকার যেভাবে বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোনো যায়নি।
খবরের কাগজ: বাংলাদেশে বিমা ব্যবসার বিকাশে প্রধান প্রতিবন্ধকতা কী? এ থেকে কীভাবে উত্তরণ সম্ভব?
বি এম ইউসুফ আলী: বিমা খাতের বিকাশে সমস্যা সচেতনতা ও আস্থার সংকট। এ জন্য স্বাধীনতার অনেক পরেও তেমন বিকাশ লাভ করেনি। আগে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছিল না। বিমা খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার ২০১১ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ (আইডিআরএ) গঠন করেছে। সংস্থাটি বিভিন্ন নীতিমালা দিয়ে ইতিবাচক ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সরকার ১ মার্চকে বিমা দিবস হিসেবে পালন করছে।
খবরের কাগজ: বিমা খাতে এত আস্থার সংকট কেন?
বি এম ইউসুফ আলী: প্রিমিয়ামের মেয়াদ পূর্ণ হলে তাদের দাবি পূরণ করতে হয়। অনেকে হয়তো এটা করে না। এ জন্য অনেকের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়। করোনাকালে অনেকেই বিমা দাবি নিষ্পত্তি করতে পারেনি। অনেক দুর্নাম হয়েছে। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছে বিমা খাত। আমার প্রতিষ্ঠান পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোনো ধরনের বিমা দাবি বকেয়া নেই। করোনাকালেও বিমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
খবরের কাগজ: বর্তমানে জীবন ও সাধারণ মিলে ৭৯টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। আপনি কী মনে করেন আরও প্রয়োজন আছে?
বি এম ইউসুফ আলী: অর্থনীতিতে বিমার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে স্বাধীনতার পর যেভাবে বিমা কোম্পানির বিকাশের প্রত্যাশা ছিল, সে রকম হয়নি। তবে ধীরে ধীরে বিমা কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে ৭৯টি বিমা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। আগের ধারাবাহিকতায় আগামীতে আরও প্রতিষ্ঠান আসবে। আগামী এক দশক হবে বিমা খাতের। আগামীতে বিমা খাতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আসবে।
খবরের কাগজ: বিমা খাত নিয়ন্ত্রণে আইডিআরএ কেমন ভূমিকা পালন করছে?
বি এম ইউসুফ আলী: বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে গঠন করা হয়েছে আইডিআরএ। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নীতি সহায়তা দিচ্ছে। সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। কেউ অমান্য করলে বা কথা না শুনলে বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। লাইসেন্সও বাতিল করে দিতে পারে। ব্যাংক খাতের জন্য যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে, আইডিআরএ তেমনই আমাদের বিমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাদের নির্দেশনা মেনেই ভালোভাবে আমাদের চলতে হবে।
খবরের কাগজ: অনেকেই বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির এজেন্ট গ্রাহকের প্রিমিয়াম নিয়ে কোম্পানিতে জমা দেয় না। এগুলো কী এখনো আছে?
বি এম ইউসুফ আলী: আগে এক সময়ে এগুলো ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহারে এগুলো আর সম্ভব না। জীবন বিমায় এটা সম্ভব নয়। তবে সাধারণ বিমায় এ ধরনের অভিযোগ বেশি শোনা যায়। স্বচ্ছতার স্বার্থে কোম্পানির জন্য তিনটি ব্যাংক হিসাব সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে আইডিআরএ। তারা এই নির্দেশনা প্রতিপালনে যথেষ্ট তদারকিও করছে। বিভিন্ন জায়গায় তদন্ত দল পাঠাচ্ছে। এর ফলে এজেন্টদের প্রিমিয়াম জমা না দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এ ছাড়া বিমা কোম্পানির পক্ষ থেকেও খুব কাছ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।
খবরের কাগজ: আজ ১ মার্চ বিমা দিবস পালন করা হচ্ছে। এর প্রভাব মানুষের মধ্যে কেমন বলে মনে করছেন?
বি এম ইউসুফ আলী: জাতীয় বিমা দিবস বিমা খাতের উন্নয়নসহ মানুষের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কারণ এই দিনে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে বিমাবিষয়ে প্রচার হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি হাজারে মাত্র চারজনের বিমা পসিলি রয়েছে। যা আশাব্যঞ্জক নয়। সরকার দেশের শতভাগ জীবন ও সম্পদ বিমার আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। জাতীয় বিমা দিবস উপলক্ষে বিমা খাতের প্রচার বৃদ্ধিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বছরব্যাপী এ প্রচার চালাতে হবে।
খবরের কাগজ: বিমা দিবসে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম কী ভূমিকা পালন করছে?
বি এম ইউসুফ আলী: বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম বিমাশিল্পের মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন। বিমা দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের সংগঠন সহযোগী ভূমিকা পালন করছে। সংগঠনটি আইডিআরএর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে। বিমা খাতের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে যে আইন ও বিধি রয়েছে সেগুলো পরিপালনে সিইওরা মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিধন্য বিমা খাতকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ফোরাম নিরলস ও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ বঙ্গবন্ধু ১৯৬০ সালে ১ মার্চ আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেছিলেন। সেই দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিমাশিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ মার্চকে বিমা দিবস ঘোষণা করেছেন।
খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
বি এম ইউসুফ আলী: খবরের কাগজকেও ধন্যবাদ।