সব ব্যবসায়ীকে এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

সব ব্যবসায়ীকে এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪১ পিএম
সব ব্যবসায়ীকে এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে
হাবিব উল্লাহ ডন

ডলারসংকটের প্রভাব পড়েছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধি; অন্যদিকে এলসি খুলতে শতভাগ মার্জিন আরোপের কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ব্যাপক পতন হয়েছে। তাদের মতে, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আগের চেয়ে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে। বর্ধিত দামের ফলে দেশে গাড়ি বিক্রি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বিক্রি তলানিতে পৌঁছেছে।  রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসার বর্তমান সমস্যা, এ থেকে উত্তরণসহ নানা বিষয় নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী।

খবরের কাগজ:  রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা কেমন চলছে?  
হাবিব উল্লাহ ডন: বর্তমানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। করোনা মহামারির বছর থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসায়ে ধস নামে। করোনা কমতে থাকলে এ ব্যবসা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। এর রেশ না কাটতেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে আবারও এ ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে।
  
খবরের কাগজ: রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
হাবিব উল্লাহ ডন: মূলত ডলার সংকটের কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। আগে যে পরিমাণে বিক্রি হয়েছে, এখন তার অর্ধেকও বিক্রি হয় না। ডলার সংকটের কারণে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা এলসি বা ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। এলসি খুলতে না পারলে গাড়ি আমদানি কীভাবে হবে?  

খবরের কাগজ : অভিযোগ উঠেছে, অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এলসি খুলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
হাবিব উল্লাহ ডন: অভিযোগটি সত্য। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে তারাও যে তাদের চাহিদামতো আনতে পারছেন তা কিন্তু নয়। গাড়ির চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে গাড়ির আমদানি কমে গেছে। এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।
  
খবরের কাগজ: আন্তর্জাতিক বাজারেও রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? 
হাবিব উল্লাহ ডন: ঠিক বলেছেন। পাঁচ বছর ব্যবহৃত গাড়ি জাপান থেকে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা কিনে এনে দেশের মধ্যে বিক্রি করে থাকেন। করোনার পর ডলার সংকটের কারণে এরই মধ্যে অনেক বড় বড় গাড়ি উৎপাদনকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান  উৎপাদন কমিয়েছে। এতে করে নতুন গাড়ির দাম বেশি পড়ছে। নতুন গাড়ি ব্যবহারের পর বেশি দামে বিক্রি করছে তারা। ফলে ব্যবহৃত গাড়ি যখন আমরা কিনতে যাচ্ছি, তখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আমদানি খরচ বেশি পড়ায় দেশের মধ্যে গাড়ির দাম বেশি পড়ছে। ফলে ক্রেতাকে বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিতে হচ্ছে।
    
খবরের কাগজ : ডলার সংকটের কারণে সরকার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
হাবিব উল্লাহ ডন: সরকার বিলাসপণ্যের আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এলসি মার্জিন ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করেছে। আগে কোনো পণ্য আমদানি করতে হলে ব্যাংকে পণ্যমূল্যের ১০ শতাংশ টাকা জমা দিতে হতো। এখন পুরো টাকাটাই জমা দিতে হচ্ছে। ফলে  বড় ধরনের  আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে আমদানিকারকদের ওপর। কোনো কোনো ব্যাংক ব্যবসায়ীদের সমস্যা বিবেচনায় না এনে এলসি মার্জিন আরও বাড়িয়ে ১৫০ শতাংশও দাবি করছে। এমন পরিস্থিতিতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে।

খবরের কাগজ: সরকারের কাছে গাড়ি আমদানি শুল্ক কমানোর আবেদন করেছেন?
হাবিব উল্লাহ ডন: একদিকে যেমন ডলারের দাম বেড়েছে, তেমনি শুল্ক-করও বেড়েছে। বাড়তি শুল্ক গাড়ির দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। আগে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। এখন বেড়ে হয়েছে ১২৬/ ১২৭ টাকা। আগে ৮৫ টাকার ওপর শুল্ক দিতে হতো ১৩০ শতাংশ। এখন  ১২৬/১২৭ টাকার ওপর দিতে হচ্ছে। ফলে গাড়ির দাম ব্যাপক বেড়েছে। 

খবরের কাগজ: আসন্ন বাজেটে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে কী দাবি করবেন?
হাবিব উল্লাহ ডন: বেশকিছু দাবি আছে। তার মধ্যে অন্যতম দাবি এলসি মার্জিন আগের মতো করতে হবে। সবাইকে এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে। আমদানি শুল্ক কমাতে হবে এবং পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানির সুযোগ দিতে হবে। 
  
খবরের কাগজ: গাড়ি আমদানি ও বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায়ে কী প্রভাব পড়েছে?
হাবিব উল্লাহ ডন: গাড়ি আমদানি ও বিক্রি কমে যাওয়ায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খাত থেকে রাজস্ব আদায় কমেছে। আগে বছরে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খাত থেকে  চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেত। এখন তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। 
এনবিআর যদি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির খাত থেকে আগের মতো রাজস্ব আদায় করতে চায়, তবে আগামী বাজেটে যে হারে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে, সেই হারে শুল্ক কমাতে হবে।

একান্ত সাক্ষাৎকারে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ৪ বছরে ন্যাশনাল ব্যাংক আর্থিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করবে

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১০:০৫ এএম
৪ বছরে ন্যাশনাল ব্যাংক আর্থিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করবে
আলহাজ খলিলুর রহমান

ন্যাশনাল ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কেডিএস গ্রুপের কর্ণধার আলহাজ খলিলুর রহমান বলেছেন, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সবাই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তাদের সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাংকটির আর্থিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধারে চার বছরের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনায় প্রথমেই আছে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে গ্রাহককে অনুপ্রাণিত করা। তাতে কাজ না হলে পরবর্তী সময়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ। আমানতকারীদের স্বার্থের পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়া এবং নতুন আমানত সংগ্রহ অভিযান জোরদার করাও এ পরিকল্পনার অংশ। তিনি জানান, এসবের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে পূর্বের ন্যায় লাভজনক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। 

খবরের কাগজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আলহাজ খলিলুর রহমান আরও বলেন, ব্যাংকটির সম্পদ ও দক্ষ জনবল আছে। একই সঙ্গে আছে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকটির ব্যবসায়িক সুনাম। আমি সবাইকে অনুরোধপূর্বক নির্দেশ দিয়েছি যেন গ্রাহকের সঙ্গে বিনয়ী ব্যবহার করা হয়। গ্রাহকসংখ্যা বাড়াতে হলে, ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে হলে গ্রাহক তথা জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৫ টাকা থেকে প্রায় ৭ টাকা হয়েছে। আমি পর্ষদ সদস্যদের নিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করব যেন ব্যবসায়ীদের অধিকহারে ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত করা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক কার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কীভাবে টাকা গেছে, তার সবকিছুই সবাই জানে। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা একত্রিত হয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে সেটা বলেছি। কষ্ট করে চালাব। পরিশ্রম এবং সততা থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। যাদের কাছে টাকা পাওনা রয়েছে তা আদায় করতে হবে। তাদের বোঝাব। ডিপোজিট আনব। ব্যবসা করব। একসময় বছরে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা লাভ করেছি। ৯০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছি। সেই ইতিহাস আমাদের আছে। 

খলিলুর রহমান বলেন, আমিসহ পর্ষদের সব সদস্য দায়িত্ব নিয়েই খেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

তিনি জানান, কিছু বড় ঋণখেলাপির সঙ্গে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করলে তারা তাকে কথা দিয়েছেন টাকা ফেরত দেবেন। জমি বিক্রি করে হলেও টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। 

নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ভুয়া কাগজপত্রের বিপরীতে নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের চিহ্নিত করতে সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করা হবে। প্রয়োজনে ঋণ অনুমোদন ও ছাড়ের পর ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ইস্যু করা চেক কোন ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারিং করা হয়েছে, তা অনুসন্ধান করা হবে। তারপর ওই সব খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে খুঁজে বের করে ব্যাংকের টাকা উদ্ধার করা হবে। তিনি জানান, ব্যাংকটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের শাখাপ্রধানদের এক মতবিনিময় সভায় এসব পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের নিজেদের স্বার্থে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা ও সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা অর্থ জনগণের আমানত। আমরা সে অর্থের খেয়ানত বরদাশত করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে বর্তমান পর্ষদ খুবই কঠোর হবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আগামী চার বছরে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। 

অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের মাত্র ২৫ শতাংশ খেলাপি। এখনো ব্যাংকের হাজার হাজার গ্রাহক ও তাদের আমানত আছে। তারা নিয়মিত লেনদেন করছেন ব্যাংকে। এটিই আমাদের শক্তি। ব্যাংকটি একীভূত করার কথা বলা হয়েছে। যখন এটা জানতে পেরেছি তখন ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বসে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা একীভূত হব না। কারণ যে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলা হচ্ছিল ওই ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক অনেক শক্তিশালী। আমরা কেন তাদের সঙ্গে একীভূত হব। প্রয়োজনে নতুন পর্ষদ গঠন করে ব্যাংক চালাব। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছি অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার বিষয়টি। 

তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করার পর এটি দেশের শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিল। একীভূতকরণের কারণে এ ব্যাংকের কারও জীবিকার্জনের ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাক সেটি আমরা চাই না। ব্যাংকটির সব কর্মীরও একই মতামত। তারা ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনে সফল হবে বলে বিশ্বাস করেন। এটিও আমাদের ভরসার স্থান। 

খলিলুর রহমান বলেন, আমরা জানি ব্যাংক কীভাবে চালাতে হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি বাংলাদেশের এক নম্বর কাতারে ছিল। এটি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক। আমাদের যারা পরিচালক ছিলেন সবাই অভিজ্ঞ। পরিচালকরা সবাই ব্যবসায়ী ছিলেন। অভিজ্ঞতা দিয়েই ব্যাংকটিকে তারা এত দূর নিয়ে এসেছেন। আমি নিজেই অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়েছি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। প্রচুর মানুষকে চাকরি দিয়েছি। আমার একমাত্র চাওয়া-পাওয়া হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। আমার কাছে এসে কেউ সহযোগিতা না পেয়ে ফেরত যায়নি। ইন্শাআল্লাহ এই ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ফেরাতেও সক্ষম হব।

সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা সব সূচকেই ইসলামী ব্যাংক শীর্ষে

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
সব সূচকেই ইসলামী ব্যাংক শীর্ষে
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অ্যান্ড সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা

ইসলামী ব্যাংক ৪২ বছরে পদার্পণ করেছে ৩০ মার্চ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শরিয়াহভিত্তিক সেবা দিয়ে আসছে ব্যাংকটি। আমদানি, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্সসহ সব সূচকেই ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। দীর্ঘ এই যাত্রায় ব্যাংকের সেবা, সাফল্য এবং ব্যাকিং খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অ্যান্ড সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এম মনিরুল আলম। 

খবরের কাগজ: বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ব্যাংক মার্জার বা একীভূতকরণ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? সুশাসন ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেসক্রিপশন বা সাম্প্রতিক উদ্যোগ (রোডম্যাপ) কি কাজে আসবে?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ব্যাংক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। বাংলাদেশে মোট ৬১টি ব্যাংক কাজ করছে। এর মধ্যে অনেকগুলো ব্যাংক ভালো করছে আবার কয়েকটি ব্যাংক তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয় বিবেচনা করে পেছনে থাকা ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যেই এটি বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সংস্কারের অংশ হিসেবে একীভূতকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অবশ্যই সময়োপযোগী এবং প্রশংসার দাবি রাখে। ব্যাংক খাতের নানা সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এটি ব্যবসা পুনরুজ্জীবিত বা সম্প্রসারণ বা সবল করার কৌশল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই রোডম্যাপ ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। 

খবরের কাগজ: ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর প্রধান চ্যালেঞ্জ কী কী? সম্ভাবনাই বা কতটুকু? 

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে ৪১ বছর আগে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং গাইডলাইনের আলোকে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এই দীর্ঘ ৪১ বছরের পথ চলায় ব্যবসায়িক প্রতিটি সূচকেই ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এসবের মধ্যেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকিং আইন এখন সময়ের দাবি। ইসলামী ব্যাংকিং সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একটি ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো এ ব্যবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। তাদের মাঝে এ ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পৌঁছাতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে সিলেবাস প্রণয়ন করা জরুরি। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সঠিক ধারণা সবার মাঝে পৌঁছাতে পারলে আশা করা যায় এ ব্যবস্থা আরও বেগবান হবে।

ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালিত হয় মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে। সম্পদভিত্তিক বিনিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে ইসলামী ব্যাংক। ফলে প্রকৃত আর্থিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন সাধিত হয়। ইসলামী ব্যাংকের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আরও অনেকগুলো ব্যাংক আংশিকভাবে ইসলামী পদ্ধতিতে ব্যাংকিং পরিচালনা করছে। আশা করা যায়, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ইসলামী ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

খবরের কাগজ: কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের প্রথমার্ধ থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল, ভেঙে পড়েছিল উৎপাদন ও বিপণনব্যবস্থা। সেই সময় শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ব্যাংক খাত চালু ছিল। করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করছিল, এমন সময়েই শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর এর কঠিন প্রভাব পড়েছে। ইউরোপে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেশে ডলার আসা কমে যায়। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার অপ্রতুলতা এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ আরও বৃদ্ধি পায়। এলসিতে পণ্যভেদে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন আরোপ করা হয়। করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের কারণে আমেরিকা, ইউরোপ, চীনসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফরওয়ার্ড লিংকেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এটাই স্বাভাবিক। এসব কারণে ব্যাংকও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডলারসংকট অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করলেও বর্তমানে তা স্বাভাবিকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

খবরের কাগজ: এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব কি?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: কোভিড-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার কিছুটা শুরু হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বিশ্বের সাপ্লাই চেইন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বিশেষভাবে খাদ্যপণ্য সরবরাহ ব্যাপক মাত্রায় বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ দেড় দশক ধরে একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৩ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত মনিটরি পলিসিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ব্যাংকিং সেক্টরের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে আমানত ও বিনিয়োগের ক্যাপ প্রত্যাহার করেছে। সংকট কাটিয়ে উঠতে অ্যাসেট কোয়ালিটি নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা আনয়ন, জনগণের আস্থা তৈরি, বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধি, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আমি মনে করি। 

খবরের কাগজ: খেলাপি ঋণের সমস্য সমাধানে আপনার পরামর্শ কী? ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ায় নিয়মনীতির যথাযথ অনুসরণ। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ প্রদানের সময় নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে এবং ঋণ আদায়ে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনের শক্ত প্রয়োগ এবং খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেউলিয়াত্ব আইনে কিছু সংশোধনী আনা যেতে পারে, যাতে খেলাপি ঋণসংক্রান্ত বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়। এমন সামাজিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে খেলাপিদের জন্য ঋণ ফেরত দেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ বিষয়ে সরকারের নতুন পদক্ষেপটি প্রশংসনীয়। 

খবরের কাগজ: দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলার জট লেগে রয়েছে, তা দ্রুত নিষ্পত্তিতে আপনার পরামর্শ বলবেন কি? 

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ আদায়ে দীর্ঘসূত্রিতা একটি বড় বিষয়। এর মধ্যে অনেক ঋণ আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। মামলার কারণে যেসব ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না, তা কীভাবে আদায় করা যায় এটা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমাদের অর্থঋণ আদালতকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ জরুরি। 

খবরের কাগজ: চলমান ডলারসংকটের সমাধান কবে হবে?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: দেশের বিরাজমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ডলারের প্রয়োজন আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারী শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি ও বড় বড় প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় নির্বাহের জন্যই ডলারের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণের অনেক পণ্যের দামও বেড়েছে। বিশ্ববাজারের স্থিতিশীলতা ও দেশীয় বড় প্রকল্পের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে চলমান ডলারসংকট সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে আমি মনে করি। ইতোমধ্যে ডলারের দাম কমতে শুরু করেছে।

খবরের কাগজ: রেমিট্যান্সপ্রবাহে আপনার ব্যাংক শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। এটি কী করে সম্ভব হলো? 

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংকের ২৯ জন প্রতিনিধি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় সভা ও বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করছেন। বিশ্বের ৬৪টি দেশের ৫৯৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয়কে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আনার জন্য ২১ দেশের ১৫৫টি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের চুক্তি রয়েছে, যার মাধ্যমে ২০০-এর অধিক দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেনিফিশিয়ারির হিসাবে অর্থ জমা হয়। ইসলামী ব্যাংকের ৩৯৪টি শাখা, ২৪৯টি উপশাখা, ২ হাজার ৭৭৬টি এজেন্ট ব্যাংক ও ২ হাজার ৯৯৪টি এটিএম/সিআরএমের সমন্বয়ে গঠিত দেশের সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বেনিফিশিয়ারিরা তাৎক্ষণিক রেমিট্যান্সের টাকা সংগ্রহ করতে পারেন। প্রবাসী ও তাদের সুবিধাভোগীদের আরও দ্রুত ও উন্নত সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের প্রত্যেকটি শাখায় রেমিট্যান্স লাউঞ্জ রয়েছে, যা বিশেষভাবে সেবা প্রদান করছে। 

ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রবাসী আয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে শীর্ষস্থানে রয়েছে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে নিজস্ব আমদানি ব্যয় পরিশোধের পর এ পর্যন্ত সরকারি রিজার্ভে ১৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি যোগ করে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখেছে এই ব্যাংক। 

খবরের কাগজ: আপনার নিজের ব্যাংকটির বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দেশের আমানত, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্সসহ সব সূচকেই শীর্ষ ব্যাংক। এ ব্যাংকের পরিচালনগত সাফল্যের জন্য বিগত সময়ে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ব্যাংক সর্বোচ্চ ক্রেডিট রেটিং ট্রিপল এ রেটেড ব্যাংক। আমানত, বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানিসহ সব সূচকেই ব্যাংকের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। সব মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক ভালো অবস্থানে রয়েছে।     

খবরের কাগজ: ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ সময়ে আগামী দিনে আপনার ব্যাংক নিয়ে পরিকল্পনা কী? 

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর অতিক্রম করছে। এই দীর্ঘ যাত্রায় ইসলামী ব্যাংক অর্জন করেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। ইসলামী ব্যাংক দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক। এ ব্যাংকের আন্তর্জাতিক সুনাম রয়েছে। এ ব্যাংকের সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি পরিচালনা পরিষদ নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে স্মার্ট অর্থনীতি বাস্তবায়নে ইসলামী ব্যাংক কাজ করছে। ব্যাংকের সব কার্যক্রমে শরিয়াহর নীতিমালা শতভাগ পরিপালন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত শুদ্ধাচার যথাযথ অনুসরণ, জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ও আরও উন্নত সেবা প্রদানের মাধ্যমে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান আরও সুসংহত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

রপ্তানি বাড়াতে বন্ড সুবিধা চাই

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
রপ্তানি বাড়াতে বন্ড সুবিধা চাই
বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্পমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস সরকার।

ফার্নিচারের বাজার দিন দিন বাড়ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে নানামুখী সংকটে রয়েছে উদীয়মান এই শিল্প। ডলার সংকটের কারণে ফার্নিচার তৈরিতে খরচ বেড়েছে। প্রয়োজনীয় এলসির অভাবে কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফার্নিচার শিল্পের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্পমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস সরকারের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা রশিদ লাবনী

খবরের কাগজ: ফার্নিচার শিল্পের সমস্যা সম্পর্কে কিছু বলুন। 

ইলিয়াস সরকার: ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিক্রি কমে যাওয়ায় কঠিন সময় পার করছে ফার্নিচার শিল্প। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে বিক্রি কমেছে। আমাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের সহায়তা লাগবে। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পের সম্ভাবনা কেমন?

ইলিয়াস সরকার: বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের মতোই ফার্নিচার খাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে ফার্নিচার শিল্প গড়ে তোলার মতো পরিবেশ আছে। 

খবরের কাগজ: চীন সারা বিশ্বে ফার্নিচার রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানে আছে। বাংলাদেশ ফার্নিচার রপ্তানিতে আরও সফলতা দেখানোর জন্য আপনার পরামর্শ কী? 

ইলিয়াস সরকার: ফার্নিচার শিল্পে রপ্তানিতে বড় সাফল্য পেতে হলে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে সরকারকে। আমাদের তৈরি করা ফার্নিচারের মান উন্নত হলেও আমরা প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। আমি প্রতি বছরই বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে গিয়ে কীভাবে, কী কৌশলে উৎপাদন করছে তা দেখি। চীনে ফার্নিচার শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি অনেক বেশি। এখানে আমাদের একটা সুযোগ আছে। মজুরি বাড়ায় চীনের ফার্নিচার শিল্পে খরচ বাড়ছে। খরচ বাড়ার কারণে চীনের অনেক ফার্নিচার কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখনো এ দেশে শ্রমিকের মজুরি কম। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে যদি কাঁচামাল কম দামে কেনার সুবিধা দেওয়া হয় তবে আমরাও রপ্তানি বাড়াতে পারব। আমাদের পণ্যের পরিচিতি বাড়াতে বিদেশে স্টল নিতে পারি। সেখানকার মানুষের সামনে ফার্নিচার নিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচারের চাহিদা। এখানে বায়ারের রুচি ও চাহিদামতো সরবরাহ করতে হবে। আমরা সেদিকেই যাচ্ছি। আশাকরি সরকারের সহযোগিতা পেলে রপ্তাতিতে বড় ধরনের সফলতা দেখাতে পারব। 

খবরের কাগজ: দেশে-বিদেশে ফার্নিচার রপ্তানি বাড়াতে সরকারের কাছে কোন ধরনের নীতি সহায়তা চেয়েছেন? 

ইলিয়াস সরকার: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ফার্নিচার খাতে ১০০ ভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির আওতায় সমপরিমাণ অর্থের বিপরীতে আংশিক শুল্ক বন্ড সুবিধা প্রদানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা রাজস্ব বোর্ডে আমাদের দাবি জানিয়ে আবেদন করেছি। 

খবরের কাগজ: ফার্নিচার শিল্পে কর্মরতদের সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ে দাবি। এ দায় কিন্তু বেসরকারি খাতেরও আছে। এ বিষয়ে আপনারা কী করছেন? 

ইলিয়াস সরকার: বেসরকারি খাতের দায় থাকলেও সরকারের দায় বেশি। আমরা ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারকের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করছি। এক দিনে হবে না। সময় লাগবে। 


খবরের কাগজ: অভিযোগ আছে ব্র্যান্ডের ফার্নিচারের দাম বেশি। আপনারা উচ্চবিত্তের জন্যই ফার্নিচার বানিয়ে থাকেন। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? 

ইলিয়াস হোসেন: আমরা গুণগত মানের ফার্নিচার বানাই। আমাদের পণ্যের চাহিদা আছে বলেই প্রায় সব বিভাগ ও জেলায় ব্র্যান্ডের ফার্নিচারের শোরুম আছে। এসব জায়গায় বিক্রিও হচ্ছে। এ ছাড়া এসব ফার্নিচার দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করা যায়। একসময় ব্র্যান্ডের ফার্নিচার উচ্চবিত্তের জন্য ছিল। এখন এ অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন সবার জন্য ফার্নিচার বানানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মেলাতে তুলনামূলক কম দামে ফার্নিচার বিক্রি করা হয়। ঈদ বা বড় আয়োজন উপলক্ষে ছাড় দিয়ে ফার্নিচার বিক্রি করা হয়। 

খবরের কাগজ: সম্ভাবনাময় এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা বাড়াতে আপনারা কী করছেন? 

ইলিয়াস সরকার: নতুন উদ্যোক্তা আসছে। যেহেতু প্রতিকূল পরিবেশেও ফার্নিচারের চাহিদা আছে। তাই নতুন উদ্যোক্তা আসার সম্ভাবনা আছে। বিভিন্ন মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব মেলাতে ভালো, গুণগতের মানের ফার্নিচার বানানোর জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এতে পুরোনো প্রতিষ্ঠান ভালো ফার্নিচার বানাতে উৎসাহিত হবে। ভালো পণ্য বানিয়ে সাধারণ মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকতে পারলে ব্যবসা বন্ধ করার প্রশ্নই উঠবে না। 

খবরের কাগজ: অনেকে ফার্নিচার খাতের জন্য বন্ড সুবিধার দাবি করেন। এর কারণ কী? 

ইলিয়াস সরকার: ফার্নিচার খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা প্রয়োজন। এতে বিশ্ববাজারে ফার্নিচারের রপ্তানি বাড়বে। 

খবরের কাগজ: পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে আপনার প্রতিষ্ঠান কী করেছে? 

ইলিয়াস সরকার: আমার প্রতিষ্ঠানের সব শাখায় ডেলিভারির (সরবরাহ) ব্যবস্থা আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানের পণ্য টেকসই, মানসম্মত ও ক্রেতার পছন্দমতো বানানোর চেষ্টা করি।

সাক্ষাৎকারে এম মনিরুল আলম সরবরাহ কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪, ০১:২০ পিএম
সরবরাহ কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ

রমজানের বাকি আছে আর দুইদিন। এরই মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বাজারে সরবরাহ আছে। তার পরও দাম কমেনি। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগও কাজে আসছে না। রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি, মজুত, দাম, সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এম মনিরুল আলম

খবরের কাগজ:  রমজান সামনে রেখে ৮ নিত্যপণ্য আমদানিতে ডেফার্ড পেমেন্ট বা বাকিতে আমদানির সুবিধা কতখানি কার্যকর হবে?
আশরাফ আহমেদ: আসলে রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের আমদানি পরিকল্পনার অধিকাংশই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে পরিপালন হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ, পণ্য আমদানির সঙ্গে পরিবহন ও বাজারজাতকরণের বিষয় জড়িত। সে জন্য আগাম সময়ও দরকার হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। তবে এর ফলাফল পেতে পেতে মার্চ ও এপ্রিল পর্যন্ত গড়াবে। কারণ, জানুয়ারিতে দেওয়া ওই সুবিধার আওতায় ঋণপত্র খোলা হলে তা রমজানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে। 

খবরের কাগজ: পণ্য সরবরাহ ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ কতটা সফল?
আশরাফ আহমেদ: পণ্য হিসেবে যদি আমরা মূল্যায়ন করি তা হলে চাল সরবরাহে সরকার বেশি গুরুত্ব দেয়। রমজান মাসে যদিও অনেক পণ্য ভোক্তার তালিকায় থাকে, তার পরও চালের চাহিদা প্রায় একই রকম থাকে। একটা সমস্যা ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি যে, সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি হওয়ায় কখনো ঢাকায় কম সরবরাহ হয়েছে, আবার অন্য শহরে একটু বেশি হয়েছে। এমন অসম সরবরাহ দুই ক্ষেত্রেই দামে প্রভাব ফেলে। রমজানে ভোগ্যপণ্যের মধ্যে মাছ, মুরগি, সবজি ও ডিমের সরবরাহও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। আমরা আশাবাদী যে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রী ও আমলা দ্রব্যমূল্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছেন।

খবরের কাগজ: সরকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়! এ ব্যাপারে কিছু বলবেন? 
আশরাফ আহমেদ: সিন্ডিকেট যে আছে তার তো কোনো প্রমাণ বা লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। এর অস্তিত্ব নিয়ে আমার দ্বিধা-সন্দেহ আছে। এটা কি কাল্পনিক নাকি এর অস্তিত্ব আদৌ আছে- বিষয়টা জানতে ইচ্ছে করে।

খবরের কাগজ: অর্থনীতির বাইরে কোন কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে বলে আপনি মনে করেন?
আশরাফ আহমেদ: কারণ অবশ্যই আছে। ঢাকায় ৪০-৫০ বছর পূর্বে যে বাজার অবকাঠামো ছিল সেটাই এখনো আছে। এসব বাজার বা আড়তকে সরবরাহ পয়েন্ট বা সাপ্লাই পয়েন্ট ধরলে তার সংখ্যা বাড়েনি। অর্থাৎ যে মোহাম্মদপুর টাউন হল বা কারওয়ান বাজার বা সোয়ারীঘাট আগে ঢাকা মহানগরীর ৫০ লাখ মানুষের পণ্য সরবরাহ করত, এখন তা ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণ করে। 

নগরায়ণের পরিকল্পনায় এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বাড়ানোর চিন্তা করা হয়নি। ফলে একই পয়েন্টে আগে আসত ১০০ ট্রাক। এখন আসে ৫০০ ট্রাক। এতে করে ট্রাফিকসহ ও জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কয়েক দফা চাঁদাবাজি হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে দ্রব্যমূল্যে। এগুলো ভাবতে হবে।

খবরের কাগজ: সরকার জ্বালানির দাম কিছুটা কমিয়েছে। যেহেতু পরিবহনে জ্বালানি ব্যয় একটি বড় বিষয়, এর কোনো প্রভাব বাজারদরে পড়বে কি?
আশরাফ আহমেদ: এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমি মনে করি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে। কারণ এতে পরিবহন ব্যয় সামান্য হলেও কমবে। 

উৎপাদক ও আমদানিকারক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত পরিবহন ব্যয় কমলে দ্রব্যমূল্য কম হবে এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, শাকসবজি, মাছ, মাংস ও ডিম পরিবহনে ব্যয় বেশি হয়।

ধরা যাক, এক ট্রাক পণ্য পরিবহনে আগে ২০ হাজার টাকা ভাড়া ছিল। ওই ট্রাকে ১০ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করা গেলে পণ্যের পরিমাণ হয় ১০ হাজার কেজি। এতে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে ২ টাকা ভাড়া পড়ত। পথে আরও খরচ আছে। যেটা আমরা সবাই জানি। তা হলে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪ টাকা কমলে মোট জ্বালানি ব্যয়ে কিছুটা সাশ্রয় হবে। তাতে প্রতি ১০০ লিটার জ্বালানিতে একটি ট্রাকের ব্যয় সাশ্রয় হবে ৪০০ টাকা। ব্যয় হ্রাসের এই অংশ থেকে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন। তাই জ্বালানির দাম কমাতে বাজারে নিত্যপণ্যের দামও কমার কথা। এ ছাড়া, সারা দুনিয়াতেই জ্বালানির দাম ওঠানামা করলে সব ধরনের পণ্যের দামে তার প্রভাব পড়ে।

বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে নারীদের

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে নারীদের
শাহীন আকতার

শাহীন আকতার। চ্যালেঞ্জ নিয়ে মার্লিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করে চলেছেন। তার ব্যবসা এবং এগিয়ে চলা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে শাহীন আকতারের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী

খবরের কাগজ: কত দিন আগে ব‍্যবসা শুরু করেন? 
শাহীন আকতার: সাত বছর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ব্যবসা শুরু করি।

খবরের কাগজ: শুরুতে কত টাকা পুঁজি ছিল? 
শাহীন আকতার: ৫ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম।

খবরের কাগজ: ব‍্যবসায়ে আসার ক্ষেত্রে কী ধরনের বাধার মুখে পড়েছেন?
শাহীন আকতার: ব্যবসায় আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করা, যা আমার মতো চাকরিজীবীর জন্য অসম্ভব। তার পরও মনে সাহস নিয়ে শুরু করেছি, কষ্ট হয়েছে অনেক, এখনো কষ্ট হচ্ছে। কারণ, এই ব্যবসায় টাকাই টাকা আনে, এই ব্যবসায় যত বেশি টাকা বিনিয়োগ করা যাবে, ব্যবসার পরিধি তত বেশি বাড়বে।

খবরের কাগজ: এসব বাধা কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন?
শাহীন আকতার: ব্যবসায় নতুন বাধা আসবেই, সব বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতা আল্লাহপাক মানুষকে দেননি। পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক বাধা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা এখনো করছি।

খবরের কাগজ: আপনার ব‍্যবসায় অন‍্যতম প্রতিবন্ধকতা কী কী?    
শাহীন আকতার: আমার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা কম্পিটিটিভ মার্কেট। উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল অ্যাপস এবং বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে ঘরে বসেই মানুষ টিকিট, হোটেল ভাড়া করতে পারে, তাহলে কেন আমার মতো ট্রাভেল এজেন্সির কাছে আসবে? ব্যাংকগুলো বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দিচ্ছে গ্রাহকদের, সব এখন গ্রাহকদের অনুকূলে, লাভ করার সুযোগ খুব কম, কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠানের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কিছু খরচ থাকে, কিছু লাভ যদি না থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠান চলবে কী করে?

খবরের কাগজ: এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে কী করছেন?
শাহীন আকতার: এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সর্বোচ্চ মানের সেবা দিতে চেষ্টা করছি। দিন-রাত যেকোনো সময় গ্রাহক আমাদের পাচ্ছে, দিনের ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাত দিনই সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। যেকোনো দেশের ভিসা জটিলতা থেকে শুরু করে হোটেল, ট্যুর প্যাকেজ, বিমান টিকিট কম দামে সর্বোচ্চ সেবার নিশ্চয়তা দিয়ে আমাদের পথচলা।

খবরের কাগজ: নতুন নারী উদ‍্যোক্তাদের জন‍্য আপনার পরামর্শ কী?
শাহীন আকতার: নতুনদের জন্য আমার একটাই উপদেশ, বাধা আসবেই। সব বাধা কাটিয়ে উঠে এগিয়ে যেতে হবে। মনোবল শক্ত করে পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে যেকোনো পছন্দমতো ব্যবসা শুরু করুন, কঠিন পরিশ্রম করুন। সফলতা আসবেই। কারণ, পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না।