![সব ব্যবসায়ীকে এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে](uploads/2024/02/11/1707633679.Habibullah-Don.jpg)
ডলারসংকটের প্রভাব পড়েছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধি; অন্যদিকে এলসি খুলতে শতভাগ মার্জিন আরোপের কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ব্যাপক পতন হয়েছে। তাদের মতে, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আগের চেয়ে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে। বর্ধিত দামের ফলে দেশে গাড়ি বিক্রি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বিক্রি তলানিতে পৌঁছেছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসার বর্তমান সমস্যা, এ থেকে উত্তরণসহ নানা বিষয় নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী।
খবরের কাগজ: রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা কেমন চলছে?
হাবিব উল্লাহ ডন: বর্তমানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। করোনা মহামারির বছর থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসায়ে ধস নামে। করোনা কমতে থাকলে এ ব্যবসা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। এর রেশ না কাটতেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে আবারও এ ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে।
খবরের কাগজ: রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
হাবিব উল্লাহ ডন: মূলত ডলার সংকটের কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। আগে যে পরিমাণে বিক্রি হয়েছে, এখন তার অর্ধেকও বিক্রি হয় না। ডলার সংকটের কারণে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা এলসি বা ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। এলসি খুলতে না পারলে গাড়ি আমদানি কীভাবে হবে?
খবরের কাগজ : অভিযোগ উঠেছে, অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এলসি খুলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
হাবিব উল্লাহ ডন: অভিযোগটি সত্য। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে তারাও যে তাদের চাহিদামতো আনতে পারছেন তা কিন্তু নয়। গাড়ির চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে গাড়ির আমদানি কমে গেছে। এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।
খবরের কাগজ: আন্তর্জাতিক বাজারেও রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
হাবিব উল্লাহ ডন: ঠিক বলেছেন। পাঁচ বছর ব্যবহৃত গাড়ি জাপান থেকে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা কিনে এনে দেশের মধ্যে বিক্রি করে থাকেন। করোনার পর ডলার সংকটের কারণে এরই মধ্যে অনেক বড় বড় গাড়ি উৎপাদনকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়েছে। এতে করে নতুন গাড়ির দাম বেশি পড়ছে। নতুন গাড়ি ব্যবহারের পর বেশি দামে বিক্রি করছে তারা। ফলে ব্যবহৃত গাড়ি যখন আমরা কিনতে যাচ্ছি, তখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আমদানি খরচ বেশি পড়ায় দেশের মধ্যে গাড়ির দাম বেশি পড়ছে। ফলে ক্রেতাকে বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিতে হচ্ছে।
খবরের কাগজ : ডলার সংকটের কারণে সরকার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
হাবিব উল্লাহ ডন: সরকার বিলাসপণ্যের আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এলসি মার্জিন ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করেছে। আগে কোনো পণ্য আমদানি করতে হলে ব্যাংকে পণ্যমূল্যের ১০ শতাংশ টাকা জমা দিতে হতো। এখন পুরো টাকাটাই জমা দিতে হচ্ছে। ফলে বড় ধরনের আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে আমদানিকারকদের ওপর। কোনো কোনো ব্যাংক ব্যবসায়ীদের সমস্যা বিবেচনায় না এনে এলসি মার্জিন আরও বাড়িয়ে ১৫০ শতাংশও দাবি করছে। এমন পরিস্থিতিতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে।
খবরের কাগজ: সরকারের কাছে গাড়ি আমদানি শুল্ক কমানোর আবেদন করেছেন?
হাবিব উল্লাহ ডন: একদিকে যেমন ডলারের দাম বেড়েছে, তেমনি শুল্ক-করও বেড়েছে। বাড়তি শুল্ক গাড়ির দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। আগে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। এখন বেড়ে হয়েছে ১২৬/ ১২৭ টাকা। আগে ৮৫ টাকার ওপর শুল্ক দিতে হতো ১৩০ শতাংশ। এখন ১২৬/১২৭ টাকার ওপর দিতে হচ্ছে। ফলে গাড়ির দাম ব্যাপক বেড়েছে।
খবরের কাগজ: আসন্ন বাজেটে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে কী দাবি করবেন?
হাবিব উল্লাহ ডন: বেশকিছু দাবি আছে। তার মধ্যে অন্যতম দাবি এলসি মার্জিন আগের মতো করতে হবে। সবাইকে এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে। আমদানি শুল্ক কমাতে হবে এবং পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানির সুযোগ দিতে হবে।
খবরের কাগজ: গাড়ি আমদানি ও বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায়ে কী প্রভাব পড়েছে?
হাবিব উল্লাহ ডন: গাড়ি আমদানি ও বিক্রি কমে যাওয়ায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খাত থেকে রাজস্ব আদায় কমেছে। আগে বছরে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খাত থেকে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেত। এখন তার অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এনবিআর যদি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির খাত থেকে আগের মতো রাজস্ব আদায় করতে চায়, তবে আগামী বাজেটে যে হারে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে, সেই হারে শুল্ক কমাতে হবে।