নসরুল হামিদ ২০১৪-১৮, ২০১৯-২০২৩ সালে সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদপ্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবারও তিনি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, জ্বালানি তেলের মূল্যে ডায়নামিক অ্যাডজাস্টমেন্ট, এলপিজি আমদানি, রিনিউয়েবল এনার্জির সোর্স, বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে ভর্তুকিসহ নানা বিষয় নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তাপসী রাবেয়া আঁখি
খবরের কাগজ: এই গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ভাবনা কী?
নসরুল হামিদ: এবার গ্রীষ্ম নিয়ে আমাদের যে প্ল্যান, দেয়ার উইল বি নো ক্রাইসিস, ইফ মানি...মানি ক্রাইসিস তো আছেই। প্ল্যানে আমাদের কোনো সংকট নাই। আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে, কোলবেইজড পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে, বেজলট পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে, গ্যাসবেইজড পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে, এভরিথিং ইজ অন। ট্রান্সমিশন লাইন কভার দেওয়ার মতো মোটামুটি ঠিক আছে, ডিস্ট্রিবিউশন লাইন আছে, ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লো যদি ঠিক থাকে, দেয়ার উইল বি নো প্রবলেম।
খবরের কাগজ: সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কী?
নসরুল হামিদ: আমাদের একটাই পরিকল্পনা, পাওয়ার দিতে গেলে এনার্জি লাগবে। আর এনার্জি যদি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হয় তাহলে প্রপার টাইমলি টাকা লাগবে।
খবরের কাগজ: এলএনজি আমদানি করতে হবে কি?
নসরুল হামিদ: অবশ্যই এলএনজি আমদানি করতে হবে। আমদানি বাড়াতেও হবে। এখন একটা এফএসআরইউ দিয়ে দেশ চলছে। এ জন্য গ্যাসেরসংকট চলছে। ২০ মার্চ দ্বিতীয় এফএসআরইউ আসবে যেটা সংস্কার করতে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১১০০ এমএমসিএফ আমদানি করা গ্যাস লাগবে দুটা এফএসআরইউতে। এই গ্যাস আমদানিতে সময়মতো অর্থ যোগানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এখানে ভাটা পড়লে সব জায়গায় ভাটা পড়বে। (আমদানি করা এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনের পর পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য দেশে ভাসমান টার্মিনাল যার নাম ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট বা এফএসআরইউ)।
খবরের কাগজ: বিদ্যুৎ খাতে বড় কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
নসরুল হামিদ: বড় পরিকল্পনা ২টা, যত দ্রুত রিনিউয়েবল এনার্জির দিকে যাওয়া যায়, ততই ভালো। সোলার প্রজেক্ট বাংলাদেশে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই এনার্জির দিকে যাওয়া সম্ভব না, কারণ জায়গাসংকট। বাট রিনিউয়েবল বলতে হাইড্রো পাওয়ারে যাওয়া, নেপাল-ভুটান থেকে নিয়ে আসা। এ মাসের মধ্যে নেপালের সঙ্গে ৪০ মেগাওয়াট ট্যারিফ নেগোসিয়েশন ফাইনাল করব। আমরা আরও বেশি পাওয়ার আনার জন্য ইতোমধ্যে ভুটান ও নেপালের সঙ্গে কাজ করছি। ভবিষ্যতের রিনিউয়েবল এনার্জি এখন মূল টার্গেট। প্রাইস নিয়ে নেগোসিয়েশন এখন ফাইনাল হবে। এক বছর ধরে ৭০০ মেগাওয়াট নিয়ে জিএমআরের সঙ্গে চুক্তির জন্য বসে আছি।
খবরের কাগজ: রাজনৈতিক কি চাপ অনুভব করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাত নিয়ে?
নসরুল হামিদ: পলিটিক্যাল প্রেশার হচ্ছে মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, জ্বালানি চায়। পলিটিক্যালি মানুষ দেখতে চায় দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকুক। কিন্তু বিষয়টা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডলারে যে ডিফারেন্স তৈরি হয়েছে, যেমন আমরা চিন্তা করেছিলাম কয়লা দিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করব সেটা সবচেয়ে চিপেস্ট হবে। এতে দাম বাড়ানো লাগবে না বা অ্যাডজাস্টমেন্ট লাগবে না। কিন্তু কয়লা এবং ডলারের দাম এত বেড়েছে তার প্রভাব পড়েছে প্রাইসে। আমাদের উৎপাদন খরচ ডাবল হয়েছে। যে দামে বিক্রি করি কিন্তু উৎপাদন খরচ তার ডাবল হয়েছে। আগে এক দুই টাকা ডিফারেন্স হলে এখন ৬ টাকা ডিফারেন্স। এটা অ্যাডজাস্টমেন্টে আনতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি যারা বড় গ্রাহক তারা যেন ভর্তুকি পায়। তাদের ভর্তুকি অংশ থেকে বের হয়ে তাদের দামের জায়গায় অ্যাডজাস্টমেন্টে আসার চেষ্ট করব। এটা দিয়ে আগামী ধীরে ধীরে দুই তিন বছরের মধ্যে ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসব। একটা এডজাস্টমেন্টে চলে আসব।
খবরের কাগজ: বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে পলিসিগতসংকট আছে, আপনি কি তা-ই মনে করেন?
নসরুল হামিদ: আমরা এ পর্যন্ত এসেছি একটা মাস্টারপ্ল্যানকে বেজ ধরে। যার জন্য শতভাগ বিদ্যুৎ এসেছে, কানেকটিভিটি এসেছে। এখন আমাদের মেইন তিনটা টার্গেট ধীরে ধীর অ্যাফরডেবল পাওয়ার, আনইনটারাপটেড পাওয়ার, রিলায়েবল পাওয়ার নিশ্চিত করা।
খবরের কাগজ: আইএমএফের প্রস্তাব নিয়ে কী ভাবছেন?
নসরুল হামিদ: আগামী এপ্রিল থেকে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ডায়নামিক প্রাইসে যাব।
খবরের কাগজ: ভোক্তা পর্যায়ে এর সুফল কী হবে?
নসরুল হামিদ: ভোক্তারা অবশ্যই সুফল পাবে। দুইটা জিনিস হবে, এই যে এখন কিছু সময়ের জন্য জ্বালানি পাচ্ছি আবার পাচ্ছি না, এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রাইসিং কম দেখে কিনতে পারছি না, সরকার টাকা দিচ্ছে না। এ সময়ের মধ্যে যদি বৈশ্বিক ক্রাইসিস কমে যায় আমাদের ক্রাইসিসও কমে যাবে। বিশ্ব বাজারে দাম বাড়লে আমাদের দাম বাড়বে কমলে আমাদের কমে যাবে। এটা নিয়ে আন্দোলনের সুযোগ হবে না। ভারতে দাম বাড়লেও কোনো আওয়াজ পাওয়া যায় না।
খবরের কাগজ: এই দাম নিয়ে জনগণকে কীভাবে আশ্বস্ত করবেন?
এসব কনভিন্স করার জন্যই পলিটিক্যালি আমি কাজ করব। একটা জিনিস আছে, মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ দেওয়া যায় তবে দাম নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারি সেটা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে না। গ্যাসই যদি মানুষ রান্নার জন্য না পায় দাম নিয়ে প্রশ্নতো আসবেই। এটা ঠিক হবে না। এ জন্য আগে মিটারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
খবরের কাগজ: ডায়নামিক প্রাইসিংয়ে কেমন সুফল পাবে সাধারণ ভোক্তা?
নসরুল হামিদ: অবশ্যই সুফল আসবে বলে করা হচ্ছে। দাম কেমন কমবে এটা নির্ভর করবে বিশ্ব বাজারের দাম কেমন হবে।
খবরের কাগজ: সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান বিষয়ে কী ভাবছেন?
নসরুল হামিদ: সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য আমরা বিডিং করার অনুমতি পেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর। বিডিং এর প্ল্যান করছি। এর সঙ্গে বিভিন্ন কান্ট্রির অংশ নেয়ার জন্য আমরা রোড শো করব। বিডিং রাউন্ডে অংশ নিতে রোড শো করব। আমাদের যে পটেনশিয়ালিটি আছে তা বড় বড় বিডারদের বোঝাতে রোড শো করতে হবে। পৃথিবীতে তিন চার জায়গায় পটেনশিয়ালিটি তুলে ধরতে কাজ হয় একটা হচ্ছে হিউস্টন, লার্জেস্ট এরিয়া গ্যাসের জন্য। এখানে বিশ্বের সব বড় বড় কোম্পানির অফিস আছে। গ্যাসট্যাকে একটা বড় মেলা হয়, শেরাইউকে বড় মেলা হয়। সবাই জড়ো হয়। আইডিয়া শেয়ার হয়। টেন্ডারের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা হয়। সাউথইস্ট এশিয়ার সিংগাপুর। মিডল ইস্টের দুবাই। আমাদের টার্গেট বেটার অফার দেখার জন্য বিডিং এর প্ল্যান করছি এ বছরই। আমাদের কাছে ডেটা আছে। শেভরন আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিডিংয়ে। বিডিংয়ে গেলে বুঝা যাবে। আমরা ডিপ সি তে ডেটা পেয়েছি।
খবরের কাগজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
নসরুল হামিদ: আপনাদের জন্য শুভকামনা। ধন্যবাদ।