আসবাবপত্র শিল্পকে রপ্তানিমুখী করার কথা বলেছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য সরকারের সহযোহিতা চান তারা। এ ছাড়া আসবাবপত্র তৈরির কাঁচামাল আমদানিতেও রেয়াতি সুবিধা দিতে দীর্ঘদিনের দাবি জানিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ আসবাবপত্র শিল্প মালিক সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ছৈয়দ এ এস এম নূরউদ্দীনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুস সাত্তার
খবরের কাগজ: আমাদের দেশে আসবাবপত্র ব্যবসার সম্ভাবনার দিকগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
ছৈয়দ এ এস এম নূরউদ্দীন: বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় আসবাবপত্র ব্যবসা। আগে পৃথিবীর সব থেকে বেশি আসবাবপত্র রপ্তানি করত চীন। তার পরে ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, থাইল্যান্ড। আমরা চাই, আমাদের ব্যবসায়ীরাও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আসবাবপত্র রপ্তানি করুক। সে জন্য আমাদের কাঁচামাল আমদানি করে নতুন নতুন আসবাবপত্র তৈরি করতে হবে। এ শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার একটি সুন্দর সম্ভাবনা রয়েছে। এখন আমাদের আন্তর্জাতিক মানের আসবাবপত্র তৈরি হচ্ছে। সে জন্য আমরা আসবাবপত্রে দেশীয় চাহিদা পূরণ ও বিদেশে রপ্তানি করতে চাই।
খবরের কাগজ: দেশের আসবাবপত্র শিল্পের বিকাশে বাধা কী?
নূরউদ্দীন: আমরা যে কাঁচামাল আমদানি করি, সেগুলো উচ্চ ডলার মূল্য দিয়ে আমদানি করতে হচ্ছে। মূলত আধুনিক আসবাবপত্র তৈরি কাঁচামালগুলো বিদেশে থেকে এলসি (ঋণপত্র) খোলার মাধ্যমে আমদানি করতে হয়। এতে আমাদের ডলার মূল্য উচ্চহারে দিতে হচ্ছে। এটিই এ সময়ের মূল সমস্যা। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকই শতভাগ মার্জিন দিয়েও এলসি দিচ্ছেন না। এতে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আসবাবপত্র ব্যবসার সঙ্গে ছোটবড় ব্যবসায়ীরা যুক্ত রয়েছেন। সবার পক্ষে নগদ টাকা দিয়ে আমদানি করা সম্ভব নয়। সুতরাং ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে বর্তমানেও কাঁচামালসংকটে ভুগছি আমরা। তবে আমরা নিজেদের তৈরি আসবাবপত্রকে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে পারছি না।
আবার শুল্কায়নের ক্ষেত্রে আমাদের রেয়াতি সুবিধা দিলে ভালো। আমাদের যে পরিমাণ কাচাঁমাল আমদানি হয়, তা যদি শুল্কমুক্ত হয় তাহলেই এ শিল্প এগিয়ে যাবে। এতে আমরাও উৎসাহ পাব। আন্তর্জাতিক মার্কেট ধরার জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। দেশেরও রাজস্ব বাড়বে।
খবরের কাগজ: এই শিল্পের সমস্যাগুলো দূর করতে আপনার পরামর্শ কী?
নূরউদ্দীন: আসবাবপত্র শিল্পের সমস্যাগুলোর দূর করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার চাইলে এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যাক টু ব্যাক সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের কম শুল্কে আমদানি করার সুযোগ দিতে হবে। এতে তৈরি করা আসবাবপত্র সাধারণ ও মধ্যবিত্তরাও ক্রয় করতে পারবে। এখন আমাদের তৈরি আসবাবপত্র উচ্চবিত্ত ক্রেতারা ক্রয় করছেন। তখন সাধারণ ক্রেতারাও ক্রয় করতে পারবেন। অথাৎ, এ শিল্পকে সাধারণের ক্রেতাদের দৌরগোড়ায় নিয়ে আসতে হবে।
খবরের কাগজ: করোনা মহামারি এবং চলমান দুটি যুদ্ধের প্রভাব এ শিল্পে কেমন?
নূরউদ্দীন: করোনার মহামারিতে দেশের সব শিল্পের ওপর প্রভাব পড়ে। আমাদের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। অনেকে ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত। মাসের মাসের পর শোরুম বন্ধ রাখতে হয়েছে। বিক্রি ছিল না। কর্মীদের বেতন ভাতা দিতে পারেননি। এরপর বৈশ্বিক মন্দা ও যুদ্ধের প্রভাব এই শিল্পে মারাত্মকভাবে পড়েছে। কারণ এ সমস্যাগুলো থেকে কেউ বাদ যায়নি। আমরা ভুক্তভোগী। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে আমদানি পণ্য বা কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়। ডলারের দাম বেড়ে যায়। সেই সংকট এখনো চলছে।
আমি মনে করি, মানুষ যখন ভালো থাকে, রোজগার ভালো হয়, তখন তারা বিলাসিতার কথা ভাবতে পারে। আমাদের পণ্যগুলো বিলাসবহুল। সুতরাং মানুষের চিন্তা-চেতনা সৌন্দর্যের সঙ্গে নির্ভর করে আমাদের পণ্যের ব্যবহার। তবে আমরা ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
খবরের কাগজ: বর্তমানে বাসাবাড়ি বা অফিসের আসবাবপত্র কেনায় কেমন সাড়া পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা?
নূরউদ্দীন: আসবাবপত্র একসময় বিলাসী পণ্য ছিল। কিন্তু এখন দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। এক সময় মানুষ মাটিতে বসে ভাত খেতো, পরে পাটিতে বা পিঁড়ায় বসে এবং বর্তমানে চেয়ারে বসে খায়। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাচেতনার উন্নয়ন হয়েছে। এখন সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে সোফাসেট আছে। আমাদের তৈরি আসবাবপত্র ও গ্রামের কারিগরদের তৈরি আসবাবপত্র মানের তারতম্য হতে পারে। কিন্তু সেগুলোও মানুষকে উন্নত করেছে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হয়েছে আসবাবপত্র। নিম্নবিত্তরা আসবাবপত্র ব্যবহার করে, মধ্যবিত্তরাও করে এবং বিত্তশালীরাও করে। সুতরাং মান ভেদে দামের তারতম্য আছে মাত্র। তবে, মৌলিক চাহিদা না হলেও রুচিশীল ও শৌখিন মানুষের প্রথম পছন্দ আধুনিক ডিজাইনের আসবাবপত্র। অফিস ও ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও মানুষের আগ্রহ সব সময় আসবাবপত্রের নিত্য নতুন ও আধুনিক ডিজাইনের দিকে। প্রযুক্তির কল্যাণে আসবাবপত্রের নিত্য নতুন ডিজাইন এখন মানুষের হাতে মুঠোয়। মানুষ সেসব ডিজাইনের আসবাবপত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠানেও খুঁজে বেড়ায়।
খবরের কাগজ: ব্যবসা পরিচালনায় কাস্টমস, ভ্যাট বা ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের হয়রানির অভিযোগ আছে?
নূরউদ্দীন: কাস্টমস, ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্সের বিভিন্ন নীতির কারণে আমরা হয়রানির শিকার হই। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কারণে হয়রানির সম্মুখীন হন, আমাদের সমিতির কাছে বারবার অভিযোগ আসে। আমরা যদি নিজের ট্যাক্স নিজে দিতে, পারি তাহলে হয়রানি থেকে বাঁচব। কিন্তু সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। বড় কর্মকর্তারা যদি সঠিকভাবে তদারকি করেন, তাহলে আমরা ছোট কর্মকর্তাদের হয়রানি থেকে রেহায় পেতাম। এই ব্যবসায় সব ধরনের মানুষ জড়িত। আমরা যেন সৎভাবে ব্যবসা করতে পারি, সরকারকেও যেন সঠিকভাবে শুল্ক-কর দিতে পারি, সে প্রত্যাশা করছি।
খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
ছৈয়দ এ এস এম নূরউদ্দীন: খবরের কাগজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।