![কিছু ব্যবসায়ীর লোভ বেড়ে গেছে](uploads/2024/02/18/1708234820.Golam.jpg)
দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি থামছেই না। লাগাম টানতে পারছে না কেউ। ভোক্তাদের স্বার্থে সোচ্চার থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বিভিন্ন কর্মসূচি, বক্তৃতা, বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। কিছুতেই কোনো সুফল আসছে না। কোথায় সমস্যা, সমাধান কীভাবে- এসব বিষয়ে দৈনিক খবরের কাগজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খোলামেলা কথা বলেছেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার চন্দনা বিশ্বাস।
খবরের কাগজ: দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে, আবার কিছুদিন বাড়িভাড়া নিয়েও শোরগোল পড়েছিল। এ বিষয়ে আপনার কী মত?
গোলাম রহমান: যখন চাহিদা বাড়ে, সে অনুযায়ী যদি সরবরাহ না বাড়ে তাহলে দাম বাড়বেই। সেটা যেকোনো কিছু হতে পারে। ঢাকা শহরে স্বল্পবিত্ত বা নিম্নআয়ের মানুষ খুব বেশি। কিন্তু সে অনুযায়ী বাড়িঘরের সরবরাহ খুব কম। তাই ভাড়া বাড়ছে লাগামহীন। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে বাড়িভাড়া বাড়ছে।
খবরের কাগজ: এ ক্ষেত্রে ক্যাব তো সোচ্চার থাকার চেষ্টা করে। প্রকৃতপক্ষে ক্যাবের সীমানা কতদূর?
গোলাম রহমান: ক্যাব আসলে কোনো দায়িত্ব নিতে পারে না, ক্যাব বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। এতটুকুই। ক্যাব তো ব্যবসাও করে না আবার কোনো রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানও না। আর এ কারণেই ক্যাব কোনো নিয়ম মানতে বাধ্য করে না। আমরা বলতে পারি, আমরা সোচ্চার হতে পারি, আমরা বিভিন্ন ভাবে ভোক্তাকে সচেতন করতে পারি, আমরা আন্দোলন করতে পারি, কিন্তু আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি না। কারণ আমরা তো ব্যবসা করি না। এমনকি সরকারি কোনো ক্ষমতাও আমাদের নেই।
খবরের কাগজ: কিন্তু ক্যাব তো করণীয় বিষয়গুলো সরকারের কাছে উত্থাপন করতে পারে, নাকি?
গোলাম রহমান: সরকারি বিভিন্ন কমিটিতে ক্যাবের প্রতিনিধি আছে। সেসব কমিটিতে ক্যাব তাদের বক্তব্য তুলে ধরে। এ ছাড়াও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে কী করা প্রয়োজন তা তুলে ধরে। দেশের মানুষের কাছে, কর্তৃপক্ষের কাছে। বর্তমানে ভোক্তার সবচেয়ে বড় সংকট উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি যদি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, মানুষের আয়-রোজগার যদি বাড়ে তবেই শুধু মানুষের জীবন-মানে যে ধস নেমেছে তার থেকে উত্তরণ সম্ভব।
খবরের কাগজ: দেশে মুদ্রাস্ফীতি কমছে না। তার প্রভাব পড়ছে পুরো অর্থনীতির ওপরই। ভোক্তারা ভুগছে? এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
গোলাম রহমান: ‘বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি শুরু হয় বিদেশ থেকে। কারণ আমাদের বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমরা বিদেশ থেকে আনি। কোভিডের পর যখন বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ সংকট দেখা দেয়, তখন সবকিছুর মূল্যই বেড়ে গেছে। সেটা সব দেশেই বেড়েছে। আমদানি মূল্য যেহেতু বেড়েছে সে ক্ষেত্রে দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। দেখুন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ২টি সোর্স। একটা হলো রপ্তানি, আরেকটা হলো রেমিট্যান্স। ওই দুই ক্ষেত্রে যে আয় হয়েছে, আমদানিতে ব্যয় হয়েছে তার চেয়ে বেশি। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুল্ক করও বেড়ে গেছে। আর সবকিছু মিলিয়েই ভোক্তার ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
খবরের কাগজ: দেশের ব্যবসায়ীরা হুট করেই প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন, কোনো মনিটরিং নেই এ বিষয়ে। সরকারও সময়মতো এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত মনে করেন আপনি?
গোলাম রহমান: এক রাতে হঠাৎ করে এই যে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেল, এটা কোন সিন্ডিকেট? এটা কিন্তু কোনো সিন্ডিকেট না। দেশের সব ব্যবসায়ীর লোভ বেড়ে গেছে। ভাবছে, এই তো মওকা পাওয়া গেল। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিল, আর এরা দাম বাড়িয়ে দিল। আসলে প্রথমে মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানা উচিত। অনেক দেশই লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে কিন্তু আমাদের দেশ পারেনি। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের। আমাদের দেশে গত কয়েক বছর মুদ্রানীতির ব্যবহার খুব একটা হয় না। বরং বিপরীত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যেমন আগে সুদের হার নয়-ছয়ের একটা ব্যাপার ছিল। পৃথিবীর সব দেশে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদনীতিকে ব্যবহার করে। আমাদের দেশে ১ টাকা ছাপানো হলে মুদ্রাস্ফীতি ৫ টাকা বাড়ে। এর মানে বাজারে যদি ১ লাখ টাকা ছাপিয়ে ছাড়া হয় তার পরিমাণ হবে ৫ লাখ টাকা। এ কথা সাদামাটাভাবেই বলা হয়।
খবরের কাগজ: ক্যাব আসলে এসব ক্ষেত্রে কীভাবে তার দায়িত্ব পালন করে?
গোলাম রহমান: মুদ্রা সরবরাহ যত বাড়বে মুদ্রাস্ফীতিও তত বাড়বে। ক্যাব আসলে শুধু সেমিনার করে, সংবাদ সম্মেলন করে, মানববন্ধন করে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া ক্যাবের হাতে কিছু নেই।