এমনিতে সারা বছর সর্দি-কাশি ও ফ্লু থাকলেও শীত এলে সমস্যাগুলো বেড়ে যায়। তবে এসব রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার হয় না। কিছু উপদেশ মেনে চললে ঘরে বসেই রোগীর যত্ন নেওয়া যায়।
লক্ষণ
ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির লক্ষণ প্রায় একই রকম। তবে সাধারণ সর্দি-কাশির তুলনায় ফ্লুর লক্ষণগুলোর তীব্রতা বেশি হতে পারে এবং সেরে উঠতেও বেশি সময় লাগতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো লক্ষণগুলো বড়দের তুলনায় বেশিদিন ধরে থাকতে পারে।
এ ছাড়া ফ্লুতে শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের পাশাপাশি ডায়রিয়া ও বমির সমস্যা বেশি দেখা যায়। সেই সাথে শিশুর কান ব্যথা হতে পারে এবং চঞ্চলতা কমে যেতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
সহজ কিছু পদক্ষেপ নিলে এসব রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। চলুন দেখে নেই সেগুলো কী।
নিয়মিত কুসুম গরম পানি ও সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। যদি পানি-সাবান হাতের কাছে না থাকে তাহলে অ্যালকোহল জাতীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না। অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। তাদের ব্যবহৃত জিনিস ও বাসনপত্রও ব্যবহার করা যাবে না।
আক্রান্ত ব্যক্তির করণীয়
সর্দি-কাশি ও ফ্লু একজন থেকে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই আক্রান্ত হলে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।
মানুষের সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকতে হবে। সম্ভব হলে নিজেকে আলাদা ঘরে সরিয়ে নিতে হবে। ফ্লু হলে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর অন্তত ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগ পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। এক্ষেত্রে জ্বর কমানোর ওষুধ খাওয়া ছাড়াই জ্বর চলে যাওয়া উচিত।
সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। কারও সাথে হ্যান্ডশেক অথবা কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকুন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময়ে অন্যদের থেকে দূরে সরে যান এবং টিস্যু দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকুন। ব্যবহারের পর টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিন। হাতের কাছে টিস্যু না থাকলে কনুইয়ের ফাঁকে হাঁচি-কাশি দিন। হাঁচি-কাশি দিয়ে সাথে সাথে হাত ধুয়ে ফেলুন।
দরজার হাতল, মোবাইল ফোন ও শিশুদের খেলনার মতো দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসগুলো কিছুক্ষণ পরপর জীবাণুমুক্ত করুন। বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।
যাদের জন্য ফ্লু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ
যে কেউই ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারেন এবং ফ্লু সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগতে পারেন। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ফ্লু হওয়ার পর ভোগার সম্ভাবনা বেশি। যেমন ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তি। গর্ভবতী নারী। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। ইতোমধ্যে কোনো রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি।
ঘরোয়া চিকিৎসা
কারণ ও লক্ষণে পার্থক্য থাকলেও ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা প্রায় কাছাকাছি। রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি তরল খাবারও খেতে হবে। যেমন ফলের জুস, চিড়া পানি, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি। পানিশূন্যতা এড়াতে এমন পরিমাণে তরল খাওয়া উচিত যেন প্রস্রাবের রঙ স্বচ্ছ অথবা হাল্কা হলুদ থাকে।
গলা ব্যথা উপশমের জন্য লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা যেতে পারে। শিশুরা ঠিকমতো গড়গড়া করতে পারে না বলে তাদের ক্ষেত্রে এই পরামর্শ প্রযোজ্য নয়। কাশি উপশমের জন্য মধু খাওয়া যেতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যেমন ফ্লুর ক্ষেত্রে সাত দিনের বেশি এবং সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লক্ষণ থাকলে। তিন মাসের কম বয়সী শিশুর জ্বর এলে অথবা খুব নিস্তেজ হয়ে পড়লে। বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে কিংবা গর্ভবতী হলে। দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে। যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও ফুসফুসের রোগ। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এমন চিকিৎসা নিলে। যেমন কেমোথেরাপি ও লম্বা সময় ধরে স্টেরয়েড সেবন। অনেক জ্বর এলে অথবা জ্বরের সাথে কাঁপুনি থাকলে।
মোহনা জাহ্নবী