বমি বমি ভাব এবং বমি হচ্ছে এমন উপসর্গ যা আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময় অনুভব করেছি। এগুলো শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক যে কারও হতে পারে। তবে গর্ভবতী মহিলা এবং যারা ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অ্যাপোলো হসপিটালস অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম
বমি বমি ভাব এবং বমি কী?
বমি বমি ভাব হলো পেটের অস্বস্তিকর অনুভূতি, যা বমি হওয়ার অনুভূতি দিয়ে থাকে। বমি হলো মুখের মাধ্যমে পেটের বিষয়বস্তুর অনৈচ্ছিক বা স্বেচ্ছায় বেরিয়ে আসা। বমি শুধু পেটের সমস্যার কারণেই হয়, এমনটা নয়। এটি মাথা ঘোরা, ভ্রমণ জটিলতা, এমনকি মস্তিষ্কের আঘাত, মস্তিষ্কের সংক্রমণ, টিউমার এবং মাইগ্রেনের মাথাব্যথা থেকেও হতে পারে।
এটি কীভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
বমি বমি ভাব এবং বমি করার অনেক কারণ হতে পারে। তাই সঠিক চিকিৎসা করার জন্য নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করাটা জরুরি। এই উপসর্গগুলো কী কারণে দেখা দিচ্ছে তা বোঝার জন্য রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস এবং তার ব্যক্তিগত ইতিহাস জানতে হতে পারে। অন্য নির্দিষ্ট উপসর্গগুলোও রোগের কারণ বুঝতে সাহায্য করে। ইমেজ স্টাডিং, রক্ত পরীক্ষা বা কোনো নির্দিষ্ট রোগের জন্য পরীক্ষা করা যেতে পারে, যাতে ডাক্তার রোগের অবস্থা জানতে পারেন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
সাধারণত বমি বমি ভাব বা এ-জাতীয় সমস্যা কিছু সময়ের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন- কয়েক দিন ধরে এই সমস্যা থাকলে এবং নিজে থেকে সেরে না উঠলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। এ ছাড়া নিয়মিত অথবা ঘন ঘন এমন সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তার দেখানো যেতে পারে। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমস্যার কারণ চিহ্নিত করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারবেন।
জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে কখন?
যদি হঠাৎ করে বমি বমি ভাব হয় এবং সেই সঙ্গে এমনভাবে বুকে ব্যথা হতে থাকে, যাতে মনে হয় যে বুকে কিছু একটা চাপ দিয়ে আছে অথবা বুক ভার হয়ে আছে- তাহলে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। এ ছাড়া বুকের ব্যথাটি যদি হাতে, পিঠে, গলায়, ঘাড়ে অথবা চোয়াল পর্যন্ত ছড়াতে থাকে- তাহলেও হাসপাতালে যেতে হবে। বমির সঙ্গে দম বন্ধ হয়ে এলে অথবা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে সেটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। তাই এমন অবস্থায় দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণ
বমি বমি ভাব শুরু হলে অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া যেতে পারে। খাবারটি প্রোটিনসমৃদ্ধ হতে পারে। পনির, চর্বিহীন মাংস বা বাদাম (ঘুমাতে যাওয়ার আগে) খেতে পারেন। মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ এটা পেটকে আরও খারাপ করতে পারে। গরম পানীয়ের বদলে ঠাণ্ডা পানীয় নিন। খাওয়ার পর মাথা উঁচু করে বিশ্রাম নিন।
দূর করার উপায়
বমি বমি ভাব দূর করতে খোলা হাওয়া বা বিশুদ্ধ বাতাসে বুকভরে শ্বাস নিতে পারেন। এ ছাড়া অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। যেমন- গান শোনা, বই পড়া অথবা কোনো মুভি দেখা। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি নিয়ে তাতে কিছুক্ষণ পরপর চুমুক দিতে পারেন। অনেকের ক্ষেত্রে কোক, ফান্টা বা এ-জাতীয় কোমল পানীয় পান করলে বমি বমি ভাব সেরে যায়।
আদা বা পুদিনা / পেপারমিন্ট দিয়ে চা খেতে পারেন। ভালো পরিমাণে আদা আছে এমন খাবার খেতে পারেন। যেমন- বাজারে জিনজার বিস্কুট পাওয়া, আদার ফ্লেভার যুক্ত কিছু পানীয়ও পাওয়া যায়। একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া পরিহার করা উচিত। এর পরিবর্তে ঘন ঘন ও কম পরিমাণে খাবার খাওয়া যেতে পারে।
যা এড়িয়ে চলতে হবে
বমি বমি ভাব হলে খুব তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার রান্না করলে বা খেলে বমি ভাব বেড়ে যেতে পারে। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে। খুব গরম, ভাজা-পোড়া অথবা তেল চুপচুপে খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। খাওয়ার সময় আস্তে-ধীরে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাড়াহুড়ো করা যাবে না।
খাওয়ার সঙ্গে বা খাওয়ার পরে খুব বেশি পরিমাণে পানি বা পানীয় পান করা যাবে না। খাবার খাওয়ামাত্র শুয়ে পড়া উচিত নয়। পেটের দিকে টাইট হয়ে থাকে এমন কাপড় বা টাইট প্যান্ট/পায়জামা পরলে অস্বস্তি থেকে বমি বমি ভাব হতে পারে। তাই এ সমস্যা থাকলে এমন কাপড় পরা থেকে বিরত থাকা উচিত।
জাহ্নবী