আসছে ১৬ই ডিসেম্বর। বাঙালির মুক্তির লড়াইয়ের আরেকটি বিজয় দিবস। এই বিজয় দিবস সম্পর্কে, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের শিশুদের জানানোর দায়িত্বটাও আমাদের। ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক সাতটি জাদুঘর রয়েছে। এ জাদুঘরগুলো সম্পর্কে জানাচ্ছেন আহমেদ রিয়াজ।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
দুর্লভ সামগ্রীসহ ২১ হাজার স্মারক প্রদর্শন করা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অবস্থান আগারগাঁওয়ে। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিশেষায়িত এই জাদুঘরের বিশেষ লক্ষ্য। স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ দিনে এ জাদুঘর বিভিন্ন আয়োজনও করে থাকে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ও গ্রন্থাগারও পরিচালনা করা হচ্ছে এ জাদুঘরের উদ্যোগে।
কবে কখন খোলা থাকে
রোববার ছাড়া যেকোনো দিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।
শীতকালে (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত।
রমজানে সকাল দশটা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত।
প্রবেশ মূল্য: বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা। শিশুদের জন্য ২০ টাকা। বিদেশিদের জন্য ৫০০ টাকা। সার্ক দেশগুলোর দর্শনার্থীদের জন্য ৫০ টাকা। প্রত্যেক টিকেটের সঙ্গে অতিরিক্ত ৪% সার্ভিস চার্জ যুক্ত হবে।
আবার কেউ চাইলে ঘরে বসে অনলাইনেও জাদুঘরের ভিজুয়াল উপভোগ করতে পারবে।
বিজয়কেতন জাদুঘর
ঢাকা সেনানিবাসে বিজয় কেতন জাদুঘরের অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের স্মরণে নির্মিত এ জাদুঘর চালু হয় ২০০০ সালের ২১ নভেম্বর। ছয়টি গ্যালারিতে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বাংলাদেশের সামরিক যোদ্ধাদের নানা কীর্তি, স্মৃতিস্মারক, সেক্টর কমান্ডারদের আলোকচিত্র ও পরিচিতি, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত রাইফেল, কামান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের মরদেহ বহনের কফিন ইত্যাদিসহ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত আরো অনেক সামগ্রী রয়েছে।
কবে কখন খোলা থাকে
শনি থেকে মঙ্গলবার এবং বৃহষ্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
স্বাধীনতা জাদুঘর
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। তাই এ উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর। এ জাদুঘরে রয়েছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, তিনটি জলাধার, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্রবিশিষ্ট একটি ম্যুরাল এবং ১৫৫ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম। আর রয়েছে ৫০ মিটার দীর্ঘ একটি আলোক স্তম্ভ, যা স্বাধীনতা স্তম্ভ নামে পরিচিত। এ স্তম্ভের নিচেই অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর।
কবে কখন খোলা থাকে
শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০.৩০ থেকে বিকাল ৫.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
এই জাদুঘরটি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। এর শীতকালীন সময়সূচি প্রতি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা। গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি প্রতি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা। শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে এই জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
প্রবেশ মূল্য
২০ টাকা ও শিশু-কিশোরদের জন্য ১০ টাকা। বিদেশিদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা আর সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা।
বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীর বীরত্বগাথা ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সেসময় পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত রাইফেল, বন্দুক, মর্টারশেল, হাতব্যাগ, টুপি, চশমা, মানিব্যাগ, ইউনিফর্ম, বেল্ট, টাই, স্টিক, ডায়েরি, বই, পরিচয়পত্র, কলম, মেডেল, বাঁশি, মাফলার, জায়নামাজ, খাবারের প্লেট, পানির মগ, পানির গ্লাস, রেডিও, শার্ট, প্যান্ট, র্যাংক ব্যাজসহ টিউনিক সেট, ক্যামেরা, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, লোহার হেলমেট, হ্যান্ড মাইক, রক্তভেজা প্যান্ট-শার্ট, দেয়ালঘড়ি, এমএম রাইফেল, মর্টার, মর্টার শেল, সার্চ লাইট, রায়ট রাবার শেল, রিভলবার, এলএমজি, মেশিনগান, এমএম এলএমজি, বোর রিভলবার, রাইফেল, বোর শটগান, এমএম এসএমজিসহ নানারকম স্মারক প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।
এছাড়াও এখানে বঙ্গবন্ধু গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা প্রায় দুই হাজার বইয়ের সমন্বয়ে গড়া লাইব্রেরি। এখানে বসে বই তো পড়াই যাবে, কেনাও যাবে।
কবে কখন খোলা থাকে
সাপ্তাহিক ছুটি বুধবার। শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। গ্রীষ্মকালে (মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং শীতকালে (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা।
প্রবেশমূল্য
১০ টাকা। এছাড়া ডিসেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের জন্য এবং সব জাতীয় দিবসে সব দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে ঘুরতে পারেন এই জাদুঘরে।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি আসলে ছিল স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন। এ বাড়ির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে নাম দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। এখানকার কক্ষগুলোয় এখন প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারবর্গের নানা স্মৃতি চিহ্ন, যা কেবল একটি পারিবারের স্মৃতিচিহ্ন নয়, বাঙালি জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
সময়সূচি
বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ১ মে, বিজয়া দশমী, শব-ই-বরাত, শব-ই-কদর, ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে জাদুঘর বন্ধ থাকে। ভিভিআইপি অতিথিদের আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে জাদুঘর বন্ধ থাকতে পারে।
প্রবেশমূল্য
প্রবেশ মূল্য ৫ টাকা। তিন বছরের কম বয়সীদের কোনো টিকিটের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র শুক্রবার ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য প্রবেশমূল্য ফ্রি।
বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার কারা স্মৃতি জাদুঘর
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর করার পর ২০১০ সালের ৯ই মে নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর গড়ে তোলা হয় দুটি ঐতিহাসিক জাদুঘর-‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর’ ও ‘জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি জাদুঘর’। এ দুটি জাদুঘর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের সেলে প্রতিষ্ঠিত।
জাদুঘরে পাকিস্তান সরকারের সময় দীর্ঘকাল কারাগারে কাটানো বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত খাবার প্লেট, বিছানাপত্র, চেয়ার টেবিলসহ নানা জিনিস পত্র রাখা আছে। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো কামিনী ও ছফেদাগাছও রয়েছে সেখানে।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট চার সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে যে ঘরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, সেই কক্ষটিতে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের অবদান ও ভূমিকা এবং তার ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রুমীর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০০৭ সালের ২৪ জুন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় জাদুঘরটি। জাদুঘরটি গড়ে তোলেন জাহানারা ইমামের ছোট সন্তান সাইফ ইমাম জামী। এখানে রয়েছে ইমাম পরিবারের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী।
ঠিকানা
বাড়ি-৩৫৫ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সরণি, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা। ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীত গলির শেষপ্রান্তে।
সময়সূচি
শনিবার সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি। মধ্যাহ্ন বিরতির জন্য দুপুর দেড়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে এই জাদুঘর। আর শীতকালে এটি বিকাল চারটা পর্যন্ত খোলা থাকে। এ জাদুঘরে কোনো প্রবেশমূল্য নেই।
এছাড়াও জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ বিমান জাদুঘর, বাঙালি সমগ্র জাদুঘর, ডাকসু সংগ্রহশালা, বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর ইত্যাদি জাদুঘরেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত সামগ্রী রয়েছে।
জাহ্নবী