ঈদের ছুটিতে বেশির ভাগ মানুষই গ্রামে চলে যায় বলে ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা থাকে। তাই ঈদের ছুটিতে ঢাকায় বেড়ানোর ভালো সুযোগ। ঢাকা বা এর আশপাশে একাধিক জনপ্রিয় বেড়ানোর স্থান রয়েছে, ঈদের দিন অথবা পরের যেকোনো দিন চাইলেই আপনি পরিবার নিয়ে ঘুরতে পারবেন। জেনে নিন প্রিয় মানুষকে নিয়ে যেতে পারেন এমন কিছু জায়গার অবস্থান ও পরিচিতি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সৈয়দ শিশির
ঈদের ছুটিতে বিশেষ করে বিকেলে ফাঁকা ঢাকায় পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন নগরবাসী। আমাদের প্রিয় রাজধানীতে আছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুন্দর ও নির্মল কিছু জায়গা। দূরে কোথাও না গিয়ে অনেকেই খুঁজেন আশপাশে অবসর কাটানোর ঠিকানা। তেমনি কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের কথা জেনে নেওয়া যাক-
ফ্যান্টাসি কিংডম
রাজধানীর অদূরে সাভারের ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের পাশে জামগড়া এলাকায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম পার্ক। প্রায় ২০ একর জায়গায় স্থাপিত এটি। পার্কটিতে ওয়াটার কিংডম, ফ্যান্টাসি কিংডম, রিসোর্ট আটলান্টিকা, এক্সট্রিম রেসিং (গো-কার্ট) ও হেরিটেজ কর্নার নামে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা রোমাঞ্চকর অনুভূতি ও শিহরণ জাগানো রাইড রোলার কোস্টার এ পার্কের জনপ্রিয় রাইডগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। হেরিটেজ কর্নারে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর রেপ্লিকা। এখানে রয়েছে তিন তারকা মানের রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এবং অন্যান্য দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পার্কটি খোলা রাখে। চাইলে মতিঝিল থেকে মঞ্জিল পরিবহন ও হানিফ মেট্রো সার্ভিসে যেতে পারেন।
নুহাশ পল্লী
নুহাশ পল্লী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে ৪০ বিঘা জমিতে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত বাগানবাড়ি। এটি নুহাশ চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। এখানে ঢুকে নামাজের ঘরের পাশেই দেখবেন তিনটি পুরোনো লিচুগাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান। এর উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান।
এখানকার নানা স্থাপনা আর অসংখ্য ফলজ ও বনজ গাছের গায়ে সেটে দেওয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। বাগানের এক পাশে ‘বৃষ্টি বিলাস’ নামে একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ ‘লীলাবতী দীঘি’। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নুহাশ পল্লী দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি টিকিট লাগবে ২০০ টাকা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গুলিস্তান থেকে প্রভাতী-বনশ্রী বাসে হোতাপাড়া বাজারে নেমে সেখান থেকে টেম্পুতে করে যেতে পারবেন এ পল্লীতে।
জাতীয় চিড়িয়াখানা
ঢাকার যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র হচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। ঈদ এলেই এখানে প্রাণীপ্রেমীদের ভিড় লেগে যায়। তাই ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ থেকে শুরু করে চেনা-অচেনা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেখতে পাবেন। দুই বছরের ঊর্ধ্বের বয়সী সবাইকে ৫০ টাকার টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে। আর চিড়িয়াখানার ভেতরে অবস্থিত প্রাণী জাদুঘরে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা।
আহসান মঞ্জিল
ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি স্পট আহসান মঞ্জিল। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকার নবাবদের আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে বিখ্যাত স্থান এটি। ওয়াইজঘাটে এসে বুলবুল ফাইন আর্টস একাডেমির সামনে গেলেই ঐতিহাসিক ভবনটি নজর কাড়বে। এটি ব্রিটিশ ভারতের উপাধিপ্রাপ্ত ঢাকার নবাব পরিবারের বাসভবন ও সদর কাচারি ছিল। ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ক্রমবিকাশের বহু স্মরণীয় ঘটনাসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্মৃতি বিজড়িত এ ‘আহসান মঞ্জিল’। এর তোষাখানা ও ক্রোকারিজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র এবং নওয়াব এস্টেটের পুরোনো অফিস অ্যাডওয়ার্ড হাউস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শন করা হয়েছে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে।
লালবাগ কেল্লা
মুঘল আমলে নির্মিত একটি অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত লালবাগ কেল্লা। প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে লাল ইটের দর্শনীয় এ কেল্লা। এর তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে যে দরজাটি বর্তমানে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত- সেটি দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়বে পরী বিবির সমাধি। এর চত্বরে আরও রয়েছে দরবার হল ও হাম্মামখানা, উত্তর-পশ্চিমাংশে শাহি মসজিদ। ঢাকায় এত পুরোনো মসজিদ খুব কমই আছে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার থেকে টেম্পুযোগে যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। এ ছাড়া নিউমাকের্ট এলাকা থেকে সরাসরি রিকশায় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়।
জিন্দা পার্ক
পূর্বাচল হাইওয়ের কাছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত জিন্দা পার্কে সারা দিন সবুজের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে ফিরে আসতে পারেন কিংবা থেকে যেতে পারেন রাতেও। প্রায় ১৫০ একর জমির ওপর অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জিন্দা পার্ক। পার্কটি গাছপালা, পাখপাখালি, জলাধারে ভরপুর। এটি এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গড়ে উঠেছে। জিন্দা পার্কে বিশাল লেকে নৌবিহারেরও ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে বিশাল লাইব্রেরি, ট্রি হাউস। জলাধারের ভেতর ঘুরে বেড়ানোর জন্য এই পার্কে আছে পরিবেশবান্ধব সাঁকো। জিন্দাপার্কের ভেতরে খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোডে পূর্বাচল হাইওয়ে অর্থাৎ ৩০০ ফিট রোড দিয়ে গেলে সবচেয়ে সহজ উপায়ে যেতে পারবেন এ পার্কে। চাইলে ঢাকা থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পাড় হয়ে ভুলতা যাবেন তারপর বাইপাস হয়ে জিন্দা পার্ক যেতে পারেন। প্রতিদিন সকাল ৯টায় খোলা হয় এ পার্ক এবং সপ্তাহে প্রতিদিনই খোলা থাকে।
বিশেষ পরামর্শ
সাধারণত সরকারি ছুটির দিনগুলোয় এসব স্থান খোলা থাকে। তবে সংস্কার কাজ ও অন্যান্য সমস্যার কারণে অনেক সময় কর্তৃপক্ষ সেগুলো বন্ধ রাখতে পারে। তাই বাসা থেকে বের হওয়ার আগে খোলা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নেবেন।ৎে
বেড়াতে যাওয়ার আগে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন- নিজের এবং প্রিয়জনদের নিরাপত্তা সবার আগে। কোনো নিরিবিলি এলাকায় গেলে চেষ্টা করুন সন্ধ্যার আগেই চলে আসতে।
কলি