![তামাপিঠ লাটোরা](uploads/2023/12/30/1703911980.bird.jpg)
ঢাকার পূর্বাচলে এখনো কিছু খোলা প্রান্তর, পতিত জমি ও ঝোপঝাড় টিকে আছে। প্রচুর সবজির বাগানও হয়েছে। প্রান্তরের খোলা মাঠের কাছে ঝোপঝাড়ে কয়েক প্রজাতির পাখির শীতকালীন আবাস। তাদের মধ্যে চার প্রজাতির লাটোরা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে যে কয়েক প্রজাতির লাটোরা দেখা যায়, তাদের মধ্যে তামাপিঠ লাটোরা বিরল।
জানা মতে, ঢাকার দিয়াবাড়ি, পূর্বাচল, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে তামাপিঠ লাটোরা দেখা গেছে। ২০১৫ সালে তামাপিঠ লাটোরা ঢাকার পূর্বাচলে প্রথম দেখা যায়। এর আগের বছর দেখা গিয়েছিল চট্টগ্রামে।
ঢাকায় থাকাকালীন প্রধানত সপ্তাহের অফিস ছুটির দিনে আমাদের পাখি দেখতে ঢাকার আশপাশের গ্রামে যাওয়া হতো। পূর্বাচলের খোলা মাঠে হাঁটতে হাঁটতে বালু নদীর দিকে প্রায় কাছাকাছি যাওয়ার পরই একটি ছোট নিমগাছের ডালে বাইনোকুলার দিয়ে তামাপিঠ লাটোরাকে প্রথম দেখি। তারপর নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে খুব ভালো করে পাখিটির সবকিছু পর্যবেক্ষণ করি। বাহারি সব মনকাড়া রঙের পালকে সজ্জিত এক সুন্দর পাখি। আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশে দেখা সবচেয়ে সুন্দর প্রজাতির লাটোরা সে।
আবাদি জমির কাছে নিম ও কড়ই গাছের ডালে বসে পাখিটি ভূমির দিকে নজর রাখছিল পোকামাকড় ধরার জন্য। চোখের দৃষ্টি কোনো পতঙ্গের দিকে পড়তেই উড়ে গিয়ে পোকাটি ধরে ফেলে। অন্য প্রজাতির টেরিটরিতে (বিচরণ এলাকা) যায় না। নিজের বিচরণ এলাকায় স্ব-প্রজাতির পাখি এলে উচ্চ স্বরে হাঁকডাক করে তাড়িয়ে দেয়।
পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি পরিযায়ী বর্মি লাটোরা ও আবাসিক ল্যাঞ্জা লাটোরাকে তামাপিঠ লাটোরা তার বিচরণ এলাকায় এলে তাড়িয়ে দেয়। তামাপিঠ লাটোরা ধীর হয়ে এক স্থানে প্রায় অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। শিকার চোখে পড়লে দ্রুত উড়ে গিয়ে ধরে ফেলে। কোনো বিপদের আঁচ পেলে উড়ে গিয়ে নিরাপদ জায়গা বা গাছের উঁচু ডালে বসে।
তামাপিঠ লাটোরা সাধারণত আবাদি জমি, বনের ধারে খোলা মাঠ, ছোট ঝোপ ও সবজি বাগানে উড়ে বেড়ায়। বসে থাকা স্থান থেকে উড়ে গিয়ে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পোকা ধরে। পোকা ধরার পর অন্য কোনো ডালে গিয়ে বসে খায়। শীতের আবাসে একই স্থানে দিনের পর দিন বিচরণ ও শিকার করে।
তামাপিঠ লাটোরা বাদামি চোখ ও কপালে কালো পট্টিওয়ালা পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১৮ সেমি, ওজন ২০ গ্রাম। প্রাপ্ত বয়স্ক পাখির পিঠ কালো, সাদা ও তামাটে রঙে বৈচিত্র্যময়। শরীরের নিচের দিক সাদা। কালো লেজের আগা ও পাশ সাদা। মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছনের রং ফিকে ধূসর। লেজের পালক কালো ও সাদা। কোমর ও গলার পালক সাদাটে। উভয় পাখির চোখ বাদামি, ঠোঁট কালচে ও বাদামি। পা ও পায়ের পাতা ও নখর শিং কালো। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে পঙ্গপাল, ঝিঁঝি পোকা, ফড়িং, টিকটিকি ছোট ইঁদুর ইত্যাদি।
তামাপিঠ লাটোরার বৈজ্ঞানিক নাম Lanius vittatus| ইংরেজি নাম Bay-backed Shrike| বাংলাদেশ বাদে ভারত, নেপাল, ভুটান, ইরান, তুরস্ক ও পাকিস্তানে দেখা যায় এদের। তামাপিঠ লাটোরা বিশ্বে বিপন্মুক্ত পাখি বলে বিবেচিত। প্রজনন মৌসুমে মাটি থেকে ২-৪ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে বাসা বানায়। বাসাটি পাখির পালক, শুকনো পাতা, মাকড়সার জাল ও ঘাস দিয়ে জড়ানো বাটির মতো। চাঁপাই নবাবগঞ্জের বাবুডাং এলাকায় মার্চ-এপ্রিল মাসে এরা বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে।
প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার
[email protected]