শবেবরাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। এ রাতের ইবাদত বেশ ফজিলতপূর্ণ। হাদিসের ভাষ্যমতে, এ রাতে সবাইকে ক্ষমা করা হয়। তবে এমন কিছু দুর্ভাগাও রয়েছে, যারা এ রাতেও ক্ষমা পায় না। তবে যদি সে তওবা করে এবং আল্লাহতায়ালার কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চায়, তা হলে তিনি তাকেও ক্ষমা করবেন। শবেবরাতেও যারা ক্ষমা পায় না, তারা হলো—
মুশরিক: শিরকের মতো জঘন্য পাপে লিপ্ত ব্যক্তিরা শবেবরাতেও ক্ষমা পান না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সঙ্গে শিরক করে। এর চেয়ে নিম্নস্তরের পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮)
মুশাহিন: মুশাহিন অর্থ বিদ্বেষ পোষণকারী। দ্বীনি কারণ ছাড়া যে অন্যের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে এ রাতে ক্ষমা করবেন না। ইমাম আওজায়ি (রহ.) বলেন, মুশাহিন হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে সাহাবিদের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ লালন করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘বিদ্বেষ পোষণকারী দুই ব্যক্তি পারস্পরিক সন্ধি করার আগ পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করা হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৫)
হত্যাকারী: কাউকে হত্যা করা কুফরের সমপর্যায়ের অপরাধ। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া জঘন্য পাপ আর কোনো মুসলমানকে হত্যা করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস: ৭০৭৬)
এ ছাড়াও হত্যা সেই সাতটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, হাদিসে যেগুলোকে ‘সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস’ বলা হয়েছে। (বুখারি, হাদিস: ২৭৬৬)
সম্পর্ক ছিন্নকারী: আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গুনাহ। যারা এমন কাজ করে, তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা অভিসম্পাত করেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহতায়ালা অভিসম্পাত করেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২-২৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৯৮৪)
টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী: পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরা নাজায়েজ। এটি অহংকারের প্রতীক। ইসলামে অহংকার নিষেধ। অহংকারবশত যে পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখবে, হাদিসে তার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারের কারণে কাপড় ঝুলিয়ে চলবে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামত দিবসে তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৬৬৫)
এমনভাবে পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত এবং নেশায় আসক্ত ব্যক্তিও শবেবরাতে ক্ষমালাভের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়। তবে উল্লিখিত পাপে নিমজ্জিত কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা করে, ভবিষ্যতে এমন গর্হিত কোনো কাজ করবে না বলে আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়, তা হলে আল্লাহতায়ালা তাদের ক্ষমা করবেন। তওবার মাধ্যমে যাবতীয় গুনাহ থেকে ক্ষমালাভ করা যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তবে কেউ তওবা করলে, ইমান আনলে এবং সৎকর্ম করলে, আল্লাহ এমন লোকদের পাপরাশিকে পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭০)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ