আক্কেল দাঁত । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

আক্কেল দাঁত

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০৪:৩২ পিএম
আক্কেল দাঁত

২০২৩ সাল। আমার জীবনে বয়ে নিয়ে এল কু কু। খুলেই বলছি। বছরের প্রথম দিনেই ঘুম থেকে উঠে দেখি কথা বলতে পারছি না। গাল ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা। ব্যথার তীব্রতায় টিকতে না পেরে এলাকার এক ডাক্তার দেখালাম। তিনি দেখে এক গাল হেসে বলল, ‘দুশ্চিন্তার কিছু নেই, আক্কেল দাঁত উঠতেছে।’ভাবটা এমন দেখাল যেন ‘ঘরে নতুন অতিথি আসছে’ সেই খবরটা দিচ্ছে। আমি কু কু করে বললাম, ‘ব্যথা কমানোর জন্য কিছু দেন।’ তিনি পেইন কিলার দিয়ে দিলেন।বাসায় এসে আম্মাকে বলতেই আম্মা বলল, ‘যাক এতদিনে আক্কেল হবে।’

ছোট ভাই তার সব দাঁত দেখিয়ে হেসে বলল, ‘একটা উঠলে তো হবে না। তোমার তো আরও তিনটা আক্কেল দাঁত ওঠার কথা।’

আমি কিছুই বলতে পারলাম না। যেখানে সবসময় বলি সেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম, ‘হাতি গর্তে পড়লে খরগোশও টিটকারি মারে।’ ব্যথার চোটে প্রথমে খরগোশকে ‘খরগোশত’ লিখে ফেলেছিলাম। দুপুরে ব্যথার ওষুধ খেয়ে ঘুম দিলাম, মনে আশা ব্যথার যদি পরিবর্তন হয়। ঘুম থেকে উঠে দেখি দুটি জিনিস পরিবর্তন হয়েছে। গাল আরও ফুলেছে এবং ব্যথা আরও বেড়েছে।

ছোট ভাই সেলফি স্টিক নিয়ে আমার ফোলা গালের সঙ্গে সেলফি তুলতে আসছিল। সেলফি স্টিক দিয়ে পিডাই রুম থেকে বাইর করছি। ব্যথার অবস্থা দেখে বুঝে গেলাম, ডেন্টিস্টের কাছেই যাওয়া লাগবে। কয়দিন আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম ‘মহিলা ডাক্তারের কাছে রোগ নিরাময় দ্রুত হচ্ছে।’ সঙ্গে সঙ্গে বিখ্যাত মডেল কাম ডেন্টিস্ট ‘শায়লা নাইম’-এর কথা মন পড়ে গেল। অনেক কষ্টে তার কম্পাউন্ডারের নাম্বার জোগাড় করে কল দিলাম। নাম ধাম সব বলার পর তিনি বলল, ‘আপনার সিরিয়াল পড়ছে ৭২৩ নাম্বার। দেখাবেন ২০২৪ সালের জুনের ১৭ তারিখ।’

আমি কু কু করে বললাম, ‘ভাই ফাইজলামি করতেছেন নাকি?’

তিনি হেসে বলল, ‘ম্যাডামের সিরিয়াল লম্বা। কিছু করার নেই। এর আগে দেখানো সম্ভব না।’ আমি ফোন কেটে দিয়ে কাছেই এক ডেন্টিস্টের কাছে গেলাম। সিরিয়াল পড়ল ১৩। আমি বললাম, ‘ভাই ১৩ নাম্বারটা পরিবর্তন করা যায় না? এইটা আমার জন্য আনলাকি।’

ডেন্টিস্ট মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলল, ‘ভাই সরেন তো। দিকদারি কইরেন না। ১৩ না নিলে আর আছে ২৭। চলব?’

আমি দিকদারি না করে বসে পড়লাম। মাত্র পাঁচ নাম্বার সিরিয়াল চলছে। এতক্ষণ আর কী করব। মোবাইল বের করলাম ব্রাউজ করার জন্য। দেখি নেট শেষ। নেট ছাড়া ডাক্তারের চেম্বারে ওয়েট করা আর পানি ছাড়া টয়লেটে যাওয়া একই কথা। একটু পরেই খেয়াল করলাম ডাক্তারের চেম্বারে ওয়াই-ফাই সাইন। কম্পাউন্ডারকে পাসওয়ার্ড জিজ্ঞাসা করলাম। সে বলল, ‘Teeth007.’

বাহ, জেমস বন্ডের দাঁত! ফ্রি ওয়াই-ফাই পেয়ে স্লগ ওভারের মতো শট শুরু করলাম। নেট ইউজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেলাম। আমার ডাক আসছে না। বসে থাকতে থাকতে ডেন্টিস্ট নিয়ে জোকস মনে পড়ে গেল। এক ডেন্টিস্ট এক রোগীকে দাঁত তোলার সময় অনেকক্ষণ ধরে অভয় দিচ্ছিল। একদমই ব্যথা পাবেন না, এইতো হয়ে যাবে। একটু পর খুব সহজে দাঁত চলে এল। ‘এই দেখেন কোনো ব্যথাই পাননি।’ পরে দেখা গেল দাঁত না, রোগীর আলজিহ্বা চলে এসেছে।

অবশেষে আমার ডাক পড়ল। ডাক্তারের রুমে ঢুকে দেখি ডাক্তার আর তার দুই পাশে দুই সুন্দরী। এরা নিশ্চয় ইন্টার্ন করছে।

‘কী সমস্যা?’ ডাক্তার জিজ্ঞাসা করল।

‘আমার আক্কেল দাঁত উঠছে।’ আমার কথা শুনে দুই সুন্দরী খুক খুক করে হেসে ফেলল। মানুষের কষ্টে আজকাল সবাই হাসে। এই হলো দেশের অবস্থা।

‘কোনো সমস্যা নেই। ওয়াশ করে দিচ্ছি। নীলা তাকে ওয়াশ করে দাও।’ ডাক্তার এক ইন্টারনিকে আদেশ দিল। নীলা ওয়াশ করতে লাগল আর আমি ব্যথায় নীল হতে থাকলাম।

শেষ হলে ডাক্তারের ভিজিট ৫০০ টাকা দিয়ে বের হয়ে এলাম। আক্কেল দাঁতের আক্কেল সেলামি ৫০০ টাকা। আসার সময় কম্পাউন্ডারকে বললাম, ‘এই যে জেমস বন্ড ভাই গেলাম।’

কম্পাউন্ডার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে ওষুধ কিনতে গেলাম। সব ওষুধ দিয়ে ছেলেটি বলল, ‘ভাই ৪৫০ টাকা আসছে।’ আমি ৪৫০ টাকা দিয়ে চলে আসার আগে, কী মনে করে

বললাম, ‘ভাই সব ওষুধের দাম পাশে লিখে একটা ক্যাশ মেমো দেন।’ দোকানের ছেলেটা দেখলাম গাঁইগুঁই শুরু করল। ‘ভাই এখন ঝামেলা বেশি।’

‘আরে কীসের ঝামেলা? দেন দেন।’

ছেলেটি স্লিপ করে বলল, ‘ভাই ভুল হইছে। আসলে ৩৫০ টাকা আসছে।’

‘চমৎকার! একটা ভুলে ১০০ টাকা। এরকম দিনে ১০টা ভুল করলে তো দুদিন পর আপনি হাসপাতাল দিতে পারবেন।’

আমার দেখাদেখি আশপাশের আরও অনেকে ক্যাশ মেমো চাইতে লাগল। এইবার লও ঠেলা! বের হওয়ার আগে এক লোক বলল, ‘ভাই ক্যাশ মেমো ধইরা বুদ্ধির কাম করছেন।’

আমি আক্কেল দাঁত দেখিয়ে হেসে ফেললাম। মাত্র তো আক্কেল দাঁত উঠতেছে, সবই তার কেরামতি।

কলি 

অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৫১ পিএম
অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ

অভিযোগ আছে, নামি-দামি হোটেলগুলোতেও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। বিশেষ করে খাবার রাখার স্থান ও রান্নাঘর নোংরা। কিন্তু কেন এই অবস্থা। সম্ভাব্য কারণ জানাচ্ছেন মো. রাকিব

ধনী-দরিদ্রের মাঝে সাম্যাবস্থা আনয়ন করার জন্যই দামি হোটেলের পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন। ব্যাপার হচ্ছে, সস্তা হোটেলের পরিবেশ তো এমনিতেই খারাপ। তাই দামি হোটেলের পরিবেশ ইচ্ছা করেই খারাপ করে রাখা হয় যাতে ধনীরা বুঝতে পারে এ দেশের গরিবরা কতটা কষ্ট করে হোটেলে খায়। গরিবদের দুঃখ অনুধাবন করানোর জন্যই নোংরা পরিবেশ বজায় রাখা হয়েছে।

সরকারকে সাহায্য করার জন্যই ইচ্ছা করে দামি হোটেলের পরিবেশ খারাপ করে রাখা হয়েছে। বুঝিয়ে বলছি। সরকারের বাজেটে লাখ কোটি টাকার ঘাটতি। এ অবস্থায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে সরকারি লোকরা হোটেলকে জরিমানা করে যেন টুপাইস কামাতে পারে এবং বাজেটের ঘাটতি লাঘব করতে পারে, সেজন্যই নোংরা পরিবেশ।

ক্ষুদ্র প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করার জন্যই দামি হোটেলের পরিবেশ নোংরা রাখা হয়েছে। আসলে মাছি তেলাপোকা কেন্নো এদেরও তো ইচ্ছা করে দামি হোটেলে খেতে। কিন্তু সেখানকার পরিবেশ যদি পরিচ্ছন্ন রাখা হয় তাহলে এরা খাবে কীভাবে। সে কারণেই পোকাদের সুবিধার্থে দামি হোটেলের পরিবেশ নোংরা রাখা হয় যেন পোকারা এসে ভরপেট খেতে পারে।

কলি

রিয়েল লাইফ ফান

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম
রিয়েল লাইফ ফান

নতুন টিউশনি। প্রথম দিন পড়াতে গেলাম। সন্ধ্যায় বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ফোন দিলাম, ‘আমি বাসার নিচে।’
জি ভাইয়া এক্ষুনি আসছি, একটু দাঁড়ান।
গেট খুলেই আবছা আলোয় দেখা পেলাম, ছাত্রী ভালোই।
আদব-কায়দা অবশ্য একটু কম জানে, প্রথম দেখা, এরপরও সালাম দেয় নাই। সমস্যা নাই, শিখায়া নিতে হবে। শিক্ষক হিসেবে নিজের ব্যবহার দেখানো শুরু করে দিলাম।
কেমন আছো?
হ্যাঁ, ভালো। বাসা খুঁজে পেতে সমস্যা হয় নাই?
বাসা এত্ত চিপার মধ্যে কেন? বাসা খুঁজতে নিজের মাথা আউলায়া গেছে। তা থাকো কয় তালায়?
তিন তালায়।
তোমার আম্মুর সঙ্গে কথা হইছিল। কখন পড়াতে হবে কিছু বলেন নাই। আন্টি বাসায় আছেন তো?
(ছাত্রী চুপ)
আর আমাকে স্যার ডাকার দরকার নাই, ভাইয়া ডাকলেই হবে। স্যার ডাকলে কেমন জানি বুইড়া বুইড়া লাগে।
(এবারও ছাত্রী চুপ)
বলতে বলতে বাসার গেটে পৌঁছে গেলাম। ভদ্রভাবে সোফায় বসে পা নাড়াচ্ছি। কিছুক্ষণ বাদেই লজ্জা শরম আর অপমানের শরবত মিক্স করে পান করতে হবে তখনো বুঝি নাই। 
যাকে ছাত্রী ভেবে এতক্ষণ বকবক করলাম, তাকেই ‘আন্টি’ হিসেবে সালাম দিতে গিয়ে চোখমুখ লাল হয়ে গেল। 
লাল চোখ দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম আন্টির ঠোঁটের কোণের ব্যঙ্গাত্মক মুচকি হাসি!

কলি

একটি চিঠি

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৪১ পিএম
একটি চিঠি

পুরোনো ডায়াল ফোনের কাছে স্মার্টফোনের লেখা একটি চিঠি ফাঁস হয়েছে। সেটাই এবার থাকছে আপনাদের জন্য। লিখেছেন মেহেদী

শ্রদ্ধেয় ডায়াল ফোন
স্টোর রুমের খুপরিতে খুব ভালো যে নেই তা আমি বুঝি। তবু তো আছেন। কটকটিওয়ালার হাতে পড়ে ধোলাইখালে গিয়ে যে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হননি, এই ভাগ্য। একটা সময় আপনি ছিলেন আভিজাত্যের প্রতীক। আহ! কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই...আজ আর নেই।
আমি এ যুগের সন্তান। নাম স্মার্টফোন। টিপে টিপে কল করা, খুদে বার্তা লেখা এখন পুরোনো। আমার এতই অধঃপতন হয়েছে, আমাকে স্পর্শ করলেই লেখা হয়ে যায়। ছুঁয়ে দিলেই আমাকে দিয়ে ছবি তোলা যায়। এই ছবির গোলামির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো ফেসবুক, ভাইবার, স্কাইপি নামের কিছু বেত্রাঘাত। ছেলেপেলে সারাক্ষণ এগুলো নিয়ে পড়ে থাকে, আর আমার ব্যাটারি ডাউন মারতে থাকে।
শুনলে কষ্ট পাবেন, আমাকে আঁকিয়ে-বাঁকিয়ে, সোজা করে, উল্টো করে দুষ্টুগুলো খালি সেলফি তোলে। আবার আমার গলায় সেলফি স্ট্যান্ড দিয়ে ধরে দমবন্ধ করে ফেলে। সারা দুনিয়ায় এই সেলফির জন্য ট্যারা রোগ বেড়ে গেছে, তবু ওদের হুঁশ নেই। আমাকে দিয়ে কথা বলার খরচও অনেক কমে গেছে। টিভিতে ‘ওরে কত কথা বলেরে’ ডায়লগটা শুনলে কান্না পায়। আপনি কী সুন্দর ড্রইংরুমে টেবিলের ওপর রাজার মতো বসে থাকতেন। আর আমার স্থান এখন প্যান্টের পকেটে। ঘামের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই, আঙ্কেল আমার ডায়াল করার দিন গেল কই?
আহা, সেই একটা দিন ছিল আপনাদের। পরিবারের কর্তা আপনাকে আগলে রাখত। দরকারে কত আদর করে ডায়াল তুলে নম্বর ঘুরাত। আর আপনার সে কী মুড! ১৫-২০ বার ঘুরানোর পর, ১০-১২ বার রং নম্বর পেরিয়ে অপর পাশে কথা বলা যেত। ক্ষীণ শব্দের জন্য যখন চিৎকার করে ‘হ্যালো’ বলতে হতো, আর ড্রাইভার, কাজের বুয়া, পিচ্চি পোলাপান জাতীয় লোকজন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত, তখন কী আনন্দই হতো আপনার! আর এখন আনস্মার্ট লোকজনও আমাকে মুঠোতে পুরে ঘোরে!

ইদানীং খুব পরিচয় সংকটে ভুগছি। অনেকেই স্মার্টফোনের নামে নকল ফোন বিক্রি করে আমার বদনাম করছে। ব্যবহারে বংশের পরিচয়। বংশ না থাকলে আর থাকেইবা কী? দোয়া চাই, নকল ভাইদের উপদ্রব থেকে যেন বেঁচে থাকতে পারি।

ইতি
স্মার্টফোন

কলি 

হায় ডিম, মস্তক ঝিমঝিম!

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম
হায় ডিম, মস্তক ঝিমঝিম!
কইনচাইন কী করা?
ডিম আচানক চড়া!
মানিব্যাগটা কাহিল বলে
খাচ্ছি খাবি, ধরা!
 
দেড়শ ট্যাকা ডজন
খরিদ করে কজন?
ডিমেও নাকি সিন্ডিকেট
‘মবিল’ ফোনে বান্ধে রেট।
 
বৈদেশ থন আসবে নাকি
ডিমের চালান, কই?
 সেই ভরসায় আম পাবলিক
মিথ্যে আশায় রই।
মুরগিরা টং, ডিম নিয়ে সব
ভ্যাজর ভ্যাজর ক্যান কলরব?
আমরা কী কম দামি?
আমরা কী কও ডামি?

কলি

ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি ল

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৩২ পিএম
ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি ল

পাপ্পুর বাসায় কল করলেই টেলিফোন রিসিভ করেন ওর বাবা। ফোন রিসিভ করেই আঙ্কেলের প্রথম প্রশ্নই হয় ‘রোল নম্বর কত?’

রোল এক থেকে তিনের মধ্যে হলে পাপ্পুর সঙ্গে কথা বলার দুর্লভ সুযোগ পাওয়া যায়; অন্যথায় হাজার লিটার চোখের পানি ফেলেও কোনো লাভ হয় না। সংগত কারণেই পাপ্পুর বাসায় ফোন করলে আমার রোল হয়ে যায় ‘দুই’। এক দিন আমার কণ্ঠে রোল নম্বর ‘দুই’ শুনে আঙ্কেলের সন্দেহ হলো! তিনি মেঘগম্ভীর স্বরে বললেন, ‘এ প্লাস বি হোল স্কয়ারের সূত্র বলো’।

ক্লাসের লাস্ট বয় হলেও প্র্যাকটিক্যাল লাইফে গাধা ছিলাম না। গণিতের বই সামনে নিয়েই ফোন করেছিলাম! পাপ্পুর দারোগা বাবার গুগলি প্রশ্নের জবাবে বাউন্ডারি হাঁকালাম। ক্লাস সেভেনের ঘটনা এটি। তারপর পদ্মার বুকে কত পলি জমল, কত ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়ে গেল; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও বড় হলাম।

পাপ্পু বেচারাকে নিয়ে তার বাবার বিশাল পরিকল্পনা। ছেলেকে তিনি এমনভাবে গড়ে তুলতে চান, যেন আইনস্টাইন-নিউটনের নামের পাশে উচ্চারিত হবে আরেকটি নাম ‘পাপ্পু’।

বাপের চোখে স্বপ্ন, কিন্তু ছেলের চোখে সরষে ফুল! পিচ্চি পাপ্পু ক্লাস ওয়ানে যখন সবে উনিশের ঘরের নামতা মুখস্থ বলতে পারে, তখনই তার চোখে উঠল উত্তলাবতল (উত্তল+অবতল) লেন্সের চশমা। যে ওজনের ব্যাগ কাঁধে চেপে আমাদের মুসা ইব্রাহিম এভারেস্ট জয় করে ফেলেছেন, তেমনি ভারী ব্যাগ কাঁধে চাপিয়ে পাপ্পু হাজির হতো ক্লাসে।

জীবনে পাপ্পুকে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে দেখেছি একবারই। সে সময়ও তার সঙ্গে ছিল পাঁচ টন ওজনের স্কুলব্যাগ। তখন থেকে পাপ্পুর নাম হয়ে গেল ‘সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন’!

আমরা যখন ‘ফালুদা’ খেতে খেতে ‘ফেলুদা’ পড়তাম, পাপ্পু তখন অনুশীলনীর উপপাদ্য সমাধান করায় ব্যস্ত থাকত। কৃষি শিক্ষায় গরু মোটা-তাজাকরণের চ্যাপ্টার পড়ানোর সময় হাতে-কলমে জ্ঞান লাভের জন্য পাপ্পুর বাবা একটি ফ্রিজিয়ান গাভি কিনে ছেলেকে উপহার দিয়েছিলেন। টেস্ট পরীক্ষার প্র্যাকটিক্যালে কুনোব্যাঙ ব্যবচ্ছেদ করতে হয় বলে আঙ্কেল অর্ডার দিয়ে গ্রাম থেকে ব্যাঙ আনিয়েছিলেন। টাকার লোভে নাকি পুরো গ্রামে কয়েক শ ব্যাঙ ধরেছিল গ্রামবাসী। এই অভিযানে বিরল প্রজাতির দু-একটা ব্যাঙও যে বিলুপ্ত হয়েছে, তা গবেষণা করলেই বেরিয়ে আসবে। এতকিছুর পরও ছেলেটার রোল নম্বর দেখলে বড় মায়া হতো!

পাপ্পুর জীবনেও একবার প্রেম এসেছিল নীরবে। সুপ্ত প্রেম যখন উপযুক্ত আলো-বাতাস পেয়ে অঙ্কুরোদগমের অপেক্ষায়, তখনই দৃশ্যপটে দুঃস্বরপ্নর মতো হাজির হলেন ‘রোগা দারোগা’ (আঙ্কেলের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে এ নামটি আমরা তাঁকে দিয়েছিলাম)। তার প্যাদানির মহিমায় প্রেমের ফুল ফুলদানিতেই শুঁটকি হলো। শৈশব-কৈশোরহীন পাপ্পু যথারীতি নতুন পড়া গিলতে আর পুরোনো পড়া জাবর কাটতে শুরু করল।

ঘটনা ঘটল এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন। পরীক্ষার হলে এক ঘণ্টার মাথায় পাপ্পু হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল। বেচারার কী দোষ, আগের চার রাত না ঘুমিয়ে শুধুই পড়াশোনা করেছে। অসুস্থতার কারণে পাপ্পু আর কোনো পরীক্ষাই দিতে পারল না। কাজের সময় আট ঘণ্টা করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল লেবার ল হয়েছে; কিন্তু পড়াশোনার সময়সীমা নির্ধারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি ল নেই। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়! ছাত্রসমাজের উচিত, লেখাপড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের দাবিতে ফেসবুকের মাধ্যমে আপসহীন ডিজিটাল আন্দোলন গড়ে তোলা।

রেজাল্টের দিন যখন আমরা মিষ্টি বিতরণ করছি, তখন পাপ্পু পরের বছরের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ব্রেকিং নিউজ হচ্ছে, বাবার তাড়নায় ছেলে কলেজের ‘ক্যালকুলাস’ করাও শুরু করেছে। একটু এগিয়ে থাকা আরকি।

কলি