গ্রামের খালাতো ভাই তমাল ছয় বছর পর চায়না থেকে দেশে ফিরেই দেমাগে মাটিতে পা রাখছেন না। মুখে সারাক্ষণ চায়নার গল্প। চায়নার রাস্তা কত সুন্দর, চায়নার স্কুল-কলেজ কত সুন্দর, চাইনিজ ক্যারাটে, চাইনিজ খাবার হেনতেন।
যাইহোক, গ্রামের বাড়িতে পা দিয়েই তমাল ভাই প্রথম যে কথাটা বললেন তা হচ্ছে, এসি নাই? আমার তো গরম লাগছে।
অথচ তিনি খুব ভালো করেই জানেন তাদের বাড়িতে এসি নাই, এখানেই তার জন্ম এখানেই তার বেড়ে ওঠা। কিন্তু ভাবটা এমন করলেন যেন তিনি
এসির মধ্যেই পয়দা হয়েছেন, এসির মধ্যেই বড় হয়েছেন।
কল থেকে পানি তুলতে গিয়েও আরেক বিপত্তি। বাংলাদেশের গ্রামের আচার ব্যবস্থার আরেক দফা পিণ্ডি চটকাতে চটকাতে চাপকল থেকে পানি তুলতে লাগলেন তমাল ভাই।
আমি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। গম্ভীর গলায় বললাম, দুপুরে কী খাবা? সাপ?
তমাল ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, চায়না নিয়ে মজা করবি না। চায়নাদের যে আচার ব্যবস্থা, যে আতিথেয়তা তার ধারে-কাছেও তোরা নাই
সাপ খাবা কি না বলো। আমাদের দেশে আর কিছু না থাক চায়নাদের পছন্দের এই একটা খাদ্য আছে। গ্রামের পুকুরে প্রচুর সাপ আছে।
তমাল ভাই ধমক দিয়ে বললেন, চুপ কর!
আমি চুপ করলাম না। আগ্রহের সঙ্গে বললাম, কী ধরনের সাপ খেতে তোমরা পছন্দ করো? অজগর নাকি চন্দ্রবোড়া? এখানকার পুকুরে অবশ্য প্রচুর ঢোঁড়া সাপ আছে। ওইগুলার স্বাদ কেমন? একটা ধরে দেই খাও।
তমাল ভাইয়া কথা না বাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।
কিন্তু আমি ঠিক করেছি তাকে সাপ না খাইয়ে ছাড়ব না। চায়না থেকে এসেছে। এখানে তার যত্ন নেওয়ার মতো সাপ ছাড়া আর কিছুই নেই।
বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি তমাল ভাইয়া চেটেপুটে কই মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। যদিও চায়নার মানুষের এসব ভালো লাগার কথা না।
ততক্ষণে গ্রামের এক পাগলকে দিয়ে আমি সাপ ধরিয়ে এনেছি। সে তমাল ভাইয়ার প্লেটের পাশে সাপ রাখতে রাখতে বলল, আপাতত এইটা খান। পরে আরও ব্যবস্থা করছি। আমাদের এসি নাই তো কী হয়েছে। সাপ তো আছে।
তমাল ভাইয়া লাফ মেরে ওঠে কোনোমতে বমি আটকিয়ে কলঘরের দিকে দৌড় দিলেন।
সেই পাগল ও সাপ হাতে তার পেছন পেছন দৌড়।
'সাপ খাবি না? সাপ খা। পুড়িয়ে খা, না হয় ভর্তা করে খা।’
চাইনিজ ফেরত তমাল ভাইয়া পাগলের হাত থেকে বাঁচার জন্য এদিক-ওদিক ছুটতে ছুটতে একটা গাছের অর্ধেকটা ওঠে পড়লেন। পাগল গিয়ে তার এক ঠ্যাং ধরে টানতে লাগল।
তমাল ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করলেন, লাবণ্য বাঁচা।
আমি এগোলাম না। নিচ থেকে গম্ভীর গলায় বললাম, চায়নিজ ক্যারাটে ট্রাই করো।
কলি